ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন,
وَكَمَا أَنَّهُ مُحْيِي الْمَوْتَى بَعْدَمَا أَحْيَا اسْتَحَقَّ هَذَا الِاسْمَ قَبْلَ إِحْيَائِهِمْ كَذَلِكَ اسْتَحَقَّ اسْمَ الْخَالِقِ قَبْلَ إِنْشَائِهِمْ
মৃতদেরকে জীবন দান করার পর যেমন তিনি জীবনদানকারী নাম ও বিশেষণে বিশেষিত ঠিক তেমনি তাদেরকে জীবনদান করার পূর্বেও তিনি এ নামের অধিকারী ছিলেন। অনুরূপ তিনি সৃষ্টিকুলের সৃজনের পূর্বেই স্রষ্টা নাম ও গুণের অধিকারী ছিলেন।[1]
..............................................................
ব্যাখ্যা: অর্থাৎ আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা এভাবে বিশেষিত যে, তিনি মৃতদেরকে জীবিত করার পূর্বেই জীবিতকারী। ঠিক একইভাবে সৃষ্টিজগৎ সৃষ্টি করার পূর্বে তাকে খালেক (স্রষ্টা) বিশেষণে বিশেষিত করা হবে।
মুতাযেলাদের প্রতিবাদ করতে গিয়ে ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ একথা বলেছেন। যেমন ইতিপূর্বে অতিক্রান্ত হয়েছে।[2] ইতিপূর্বে সাব্যস্ত করা হয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা অনাদি থেকেই যা ইচ্ছা তাই করেন।
আল্লাহ তা‘আলার এসব গুণবাচক নাম, সিফাতে কামালিয়া ও কর্মসমূহ যদি সৃষ্টিজগৎ সৃষ্টি করার সাথে সম্পৃক্ত হতো অর্থাৎ মাখলুকের সাথে আল্লাহর কর্মের সম্পর্ক হওয়ার কারণে যদি এ সকল গুণবাচক নাম অর্জিত হতো, তাহলে এসব গুণবাচক নাম সৃষ্টিজগৎ সৃজনের পূর্বে আল্লাহ তাআলার সাথে সম্পৃক্ত হতো না।
অনুরূপভাবে এ সকল গুণবাচক নাম অনাদি-অনন্ত অস্তিত্বশীল এবং সমস্ত সিফাতে কামালিয়ার সমষ্টিগত নাম আল্লাহ শব্দের সাথে মাযী মুতলাক তথা সাধারণ অতীতের শব্দের সাথে উল্লেখ করা হতো না। অতএব কুরআনে এ অতীতকালীন শব্দ ব্যবহার থেকে বুঝা যায় যে, অস্তিত্বশীল আল্লাহ তা‘আলার এ সব সিফাতে কামালিয়া অনাদিকাল থেকে ছিল এবং অনন্তকাল থাকবে। এগুলো তার কোনো কর্ম সংঘটনের উপর নির্ভরশীল নয়। বরং কর্ম সম্পাদনের পূর্বে যেমন ছিল, পরেও তেমনি আছে এবং থাকবে।
আবার দেখা যায় কুরআনে আল্লাহ তা‘আলার অনেক গুণবাচক নাম রয়েছে, যেগুলো তার সত্তার সাথে কোনো কালের সাথে সংযুক্ত না হয়ে ব্যবহৃত হয়েছে। যেমন আল্লাহ তা‘আলা সূরা হাশরের শেষ আয়াতগুলোতে বলেন,
هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ هُوَ الرَّحْمَٰنُ الرَّحِيمُ هُوَ اللَّهُ الَّذِي لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْمَلِكُ الْقُدُّوسُ السَّلَامُ الْمُؤْمِنُ الْمُهَيْمِنُ الْعَزِيزُ الْجَبَّارُ الْمُتَكَبِّرُ سُبْحَانَ اللَّهِ عَمَّا يُشْرِكُونَ هُوَ اللَّهُ الْخَالِقُ الْبَارِئُ الْمُصَوِّرُ لَهُ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ يُسَبِّحُ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَهُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ
‘‘তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ (অদৃশ্য ও প্রকাশ্য সব কিছু সম্পর্কে অবগত), তিনি رحْمَنُ (পরম করুনাময়) এবং رَحِيمُ (অসীম দয়ালু)। তিনিই আল্লাহ, যিনি ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই। তিনি مَلِك (মালিক), قُدُّوس (অতি পবিত্র) سَلَام (পরিপূর্ণ শান্তিদাতা) مؤْمِن (নিরাপত্তা দানকারী), مُهَيْمن (রক্ষক), عَزِيز (পরাক্রমশালী), جَبَّار (প্রতাপশালী) এবং مُتَكَبِّر (মহিমান্বিত)। তারা যাকে আল্লাহর শরীক সাব্যস্ত করে আল্লাহ তা‘আলা তা থেকে পবিত্র। তিনিই আল্লাহ, خَالِق (সৃষ্টিকারী), بَارِي (উদ্ভাবক) এবং مُصَوِّر (রূপদাতা), তার জন্য রয়েছে অনেক সুন্দরতম নাম। আর তিনিই عَزِيز (পরাক্রমশালী) ও حَكِيم (প্রজ্ঞাবান)’’।
উপরোক্ত আয়াতে আল্লাহ তা‘আলার সিফাতী নামগুলো কোনো কালের সাথে সীমাবদ্ধ না হওয়াতে এ কথা বুঝায় যে, তিনি মাখলুক সৃষ্টির পূর্ব হতে অনাদিকাল সৃষ্টিকর্তা, রূপদানকারী ও নব উদ্ভাবক ছিলেন এবং মাখলুক সৃষ্টির পরেও অনন্তকাল তিনি এসব গুণে গুণান্বিত থাকবেন। অন্যথায় আল্লাহ তা‘আলার সিফাতী নামগুলো তার সত্তার উপর প্রয়োগ হতো কোনো কালের সাথে সীমাবদ্ধ করার মাধ্যমে। সুতরাং এ কথা প্রমাণিত হলো যে, আল্লাহ তাআলা সিফাতে কামালিয়াসহ অনাদিকাল থেকে বিশেষিত ছিলেন এবং অনন্তকাল থাকবেন।
যেমন কোনো ব্যক্তির লিখার যোগ্যতা রয়েছে, তখন তাকে লেখক বলে সম্বোধন করা হয়। আর যখন কোনো কিছু না লিখে তখনো তাকে পূর্বের লেখনের কারণে লেখক বলে সম্বোধন করা হয়। উক্ত ব্যক্তিকে লেখক বলা হয়, তার লিখার যোগ্যতা থাকার কারণে। তার লিখা নামক ক্রিয়ার কারণে নয়। চাই সে বর্তমানে লেখুক বা না লেখুক। (আল্লাহ তা‘আলাই সর্বাধিক অবগত রয়েছেন)
[2]. তারা বলে থাকে সৃষ্টি করার পর তিনি নিজের জন্য এ নাম ধারণ করেছেন। এর আগে তার এ নাম ছিল না। আল্লাহর অন্যান্য নাম ও গুণের ক্ষেত্রেও তারা এমন কথা বলে থাকে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের কথা হলো, আল্লাহর অতি সুন্দর নাম ও সুউচ্চ গুণাবলীর কোনো কিছুই নতুন নয়।