ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেন, (مُمِيتٌ بِلَا مَخَافَةٍ بَاعِثٌ بِلَا مَشَقَّةٍ) তিনি নির্ভয়ে প্রাণ হরণকারী এবং বিনা ক্লেশে পুনরুত্থানকারী।
.......................
ব্যাখ্যা: মৃত্যু একটি বিশেষণ। এর অস্তিত্ব রয়েছে। তবে দার্শনিক এবং তাদের অনুসারীরা এতে ভিন্ন মত পোষণ করেছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا وَهُوَ الْعَزِيزُ الْغَفُورُ
তিনি মৃত্যু ও জীবন সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে পরীক্ষা করার জন্য কে তোমাদের মধ্যে আমলের দিক দিয়ে সর্বোত্তম। আর তিনি পরাক্রমশালী ও ক্ষমাশীল। (সূরা মূলক: ২)
সুতরাং যার কোনো অস্তিত্ব নেই, তাকে সৃষ্টি হিসাবে বিশেষিত করা হয় না। হাদীছে রয়েছে, নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
أَنَّهُ يُؤْتَى بِالْمَوْتِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى صُورَةِ كَبْشٍ أَمْلَحَ فَيُذْبَحُ بَيْنَ الْجَنَّةِ وَالنَّارِ
‘‘কিয়ামতের দিন সাদা-কালো মিশ্রিত রঙ্গের ভেড়ার আকৃতিতে মৃত্যুকে নিয়ে আসা হবে। অতঃপর তাকে জান্নাত ও জাহান্নামের মাঝে রেখে যবেহ করা হবে’’।[1]
যদিও মৃত্যু একটি বিশেষণের নাম, তথাপিও আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন উহাকে আকৃতি দান করবেন। যেমন বান্দার সৎ আমলের ব্যাপারেও বলা হয়েছে যে, উহা সুদর্শন যুবকের আকৃতিতে আমলকারীর নিকট আগমন করবে। আর মন্দ আমল আসবে নিকৃষ্ট আকৃতিতে।[2]
কুরআনের ব্যাপারে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি উহা পাঠ করবে, কিয়ামতের দিন তা ফ্যাকাশে ও মলিন চেহারা বিশিষ্ট যুবকের আকৃতিতে উপস্থিত হবে।[3] অতঃপর বলবে, আমি তোমাকে রাতে জাগ্রত রেখেছিলাম এবং দিনের বেলায় পিপাসিত রেখেছিলাম।
অন্যান্য আমলের ব্যাপারে কথা হলো তা কিয়ামতের দিন মীযানের পাল্লায় রাখা হবে। এতে বুঝা যাচ্ছে যে, বান্দার আমলগুলো কিয়ামতের দিন আকৃতি প্রদান করা হবে। কেননা আকৃতিহীন বস্তু মীযানের পাল্লায় রেখে ওজন করা যায় না।
সূরা বাকারা ও সূরা আল-ইমরানের ফযীলতে বর্ণিত হয়েছে যে, তারা উভয়েই উহার পাঠকারীকে কিয়ামতের দিন ছায়া দিবে। মনে হবে তারা যেন দু’টি মেঘখন্ড অথবা ডানা প্রসারণকারী সারিবদ্ধ দু’ঝাক পাখি।[4]
ছহীহ বুখারীতে আরো বর্ণিত হয়েছে যে, বনী আদমের আমল আসমানে উঠে। এ ব্যাপারে কবর থেকে পুনরুত্থিত হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা করার সময় আরো বিস্তারিত আলোচনা আসবে। ইনশা-আল্লাহ।
[2]. বারা বিন আযিব থেকে বর্ণিত হাদীছে এ কথা এসেছে। হাদীছটি দলিলসহ সামনে আসছে।
[3]. দুনিয়াতে কুরআন তেলাওয়াত নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে যেহেতু কারীগণের শরীর দুর্বল হয়ে যায় এবং তাদের চেহারার রং পরিবর্তন হয়ে যায়, তাই তাদের দুনিয়ার আকৃতিতেই তাদের কুরআন তেলাওয়াতের আমল উপস্থিত হবে। এর মাধ্যমে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, কুরআন পাঠকারী কিয়ামতের দিন তার আমলের পূর্ণ প্রতিদান পাবে।
[4]. শারহুন নববীসহ সহীহ মুসলিম, হা/১৩৩৭।