আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় ইলম অনুযায়ী যে তাকদীর নির্ধারণ করেছেন, তাতে অনেকগুলো মূলনীতি রয়েছে।

(১) আল্লাহ তা‘আলা যা কিছু নির্ধারণ করেছেন, তা নির্ধারণ করার পূর্ব থেকেই অবগত রয়েছেন। সুতরাং আল্লাহ তা‘আলার জন্য ইলমে আযালী তথা প্রাক্তন, অনাদি-অনন্ত এবং অবিনশ্বর ইলম সাব্যস্ত। সুতরাং যারা আল্লাহ তা‘আলার আযালী ইলমকে অস্বীকার করে, তাদের কথা প্রত্যাখ্যাত।

(২) তাকদীর বলতে সমস্ত সৃষ্টির পরিমাণ-পরিণতি ও যাবতীয় অবস্থা এবং সৃষ্টির বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট্য-স্বভাব ইত্যাদি উদ্দেশ্য। আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক সৃষ্টির জন্য নির্দিষ্ট পরিমাপ ও পরিমাণ নির্ধারণ করেছেন।

আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

وَخَلَقَ كُلَّ شَيْءٍ فَقَدَّرَهُ تَقْدِيرًا

‘‘তিনি প্রত্যেকটি জিনিস সৃষ্টি করেছেন তারপর তার একটি তাকদীর নির্ধারণ করে দিয়েছেন’’ (সূরা আল ফুরকান ২৫:২)।

সুতরাং সৃষ্টি করার জন্য পরিমাণ ও পরিমাপ নির্ধারণ করা জরুরী। কোনো জিনিসের তাকদীর নির্ধারণ করা অর্থ হলো তার জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাপ ও পরিমাণ নির্ধারণ করা। অস্তিত্বে আসার পূর্বেই তার পরিমাপ নির্ধারণ করা দরকার। প্রত্যেক সৃষ্টির জন্য যেহেতু নির্দিষ্ট একটি পরিমাণ, অবস্থা ও পরিমাপ নির্ধারণ করা হয়েছে, এতে প্রমাণিত হয় যে আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির ছোট-বড় সকল অবস্থাই অবগত রয়েছেন। এতে মুতাযেলাদের একটি সম্প্রদায় ভিন্ন মত পোষণ করেছে। তারা বলে, আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির মৌলিক বিষয়গুলো জানেন। কিন্তু আংশিক বিষয়সমূহ জানেন না।

তাকদীর নির্ধারণ করার মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, আল্লাহ তা‘আলা সৃষ্টির মৌলিক ও আংশিক সবকিছুই জানেন।

(৩) আল্লাহ তা‘আলা মাখলুকসমূহ সৃষ্টি করার আগেই বিস্তারিতভাবে সংবাদ দিয়েছেন এবং তা প্রকাশ করেছেন। এতে বুঝা যায় যে, মাখলুক সৃষ্টি করার আগেই বান্দাদেরকে সে সম্পর্কে বিস্তারিত সংবাদ দেয়া সম্ভব। বান্দাদের পক্ষে যখন মাখলুক সৃষ্টি হওয়ার আগেই তা জানা সম্ভব, তাই স্রষ্টার জন্য তা জানা আরো অধিক যুক্তিযুক্ত। তিনি যেহেতু সৃষ্টিকে জানান, তাই কিভাবে এ ধারণা করা যেতে পারে যে, তিনি জানেন না?

(৪) তাকদীরের বিষয়টি প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা‘আলা যা করেন, তা স্বীয় ইচ্ছাতেই করেন, যা সৃষ্টি করেন, তা তার ইচ্ছাতেই সৃষ্টি করেন। এমনটি নয় যে, সৃষ্টি করা তার সত্তার সাথে যুক্ত কোনো বিশেষণ, যা ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত নয়।

(৫) তাকদীরের মাস‘আলার মধ্যে এও রয়েছে যে, সৃষ্টিজগৎ অনাদি-অনন্ত ও অবিনশ্বর নয়। প্রথমে এটি ছিল না। পরে আবিস্কৃত হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা প্রথমে সৃষ্টির পরিমাণ ও পরিমাপ নির্ধারণ করেন। অতঃপর সৃষ্টি করেন।