প্রথম প্রকার শাফা‘আত বা শাফা‘আতে উযমা (বৃহৎ)

(১) প্রথম প্রকার শাফা‘আত বা শাফা‘আতে উযমা (বৃহৎ): শাফা‘আতে উযমা হবে হাশরের মাঠে। এটি হবে বান্দাদের মধ্যে ফায়ছালা করার জন্যে আল্লাহ্ তা‘আলা যখন হাশরের ময়দানে আগমন করবেন। এটি হবে সমস্ত নাবী-রসূলদের মধ্য থেকে শুধু আমাদের নাবী মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্যে নির্দিষ্ট। সমস্ত নাবী-রসূলদের উপর আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ হতে শান্তি বর্ষিত হোক। শাফা‘আতের হাদীছগুলো ছহীহ বুখারী, মুসলিম এবং অন্যান্য হাদীছের কিতাবে একদল ছাহাবী থেকে বর্ণিত হয়েছে।

আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা নাবী করীম ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট মাংস পেশ করা হলো। এ সময় তাকে রানের মাংস দেয়া হলো। তিনি রানের মাংস খুব পছন্দ করতেন। এ থেকে তিনি চাকু দিয়ে কেটে কেটে খেলেন। অতঃপর তিনি বললেন, আমি কিয়ামতের দিন মানুষের সরদার হবো। তোমরা কি জানো কেন আমি সরদার হবো? কিয়ামতের দিন আল্লাহ তা‘আলা সমস্ত বনী আদমকে একটি মাটিতে একত্র করবেন। তখন লোকদের একজন অন্যজনকে বলবে, তোমরা কি দেখছো না যে, তোমরা কী অবস্থায় আছো? তোমরা কি দেখছো না তোমাদের কেএ কষ্ট হচ্ছে? তোমরা কি এমন কাউকে খুঁজবে না, যিনি তোমাদের জন্য তোমাদের প্রভুর নিকট সুপারিশ করবেন? তখন লোকদের কেউ কেউ বলবে, তোমাদের পিতা আদম এ কাজ করবেন। এরপর তারা আদমের কাছে যাবে। আদমের কাছে গিয়ে বলবে, হে আদম! আপনি আবুল বাশার। আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না, আমরা কী পরিমাণ অসুবিধার মধ্যে রয়েছি? আপনি দেখছেন না, আমাদের কী পরিমাণ কষ্ট হচ্ছে? আদম তখন বলবে,

إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثلَهُ وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثلَهُ، وَإِنَّهُ قَدْ نَهَانِي عَنِ الشَّجَرَةِ فَعَصَيْتُهُ، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى نُوحٍ، فَيَأْتُونَ نُوحًا، فَيَقُولُونَ: يَا نُوحُ، إِنَّكَ أَنْتَ أَوَّلُ الرُّسُلِ إِلَى أَهْلِ الأَرْضِ، وَقَدْ سَمَّاكَ اللَّه:ُ عَبْدًا شَكُورًا، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلا تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيه؟ِ فَيَقُولُ: إِنَّ رَبِّي عَزَّ وَجَلَّ قَدْ غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثلَهُ وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثلَهُ، وَإِنَّهُ قَدْ كَانَتْ لِي دَعْوَةٌ دَعَوْتُهَا عَلَى قَوْمِي، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى إِبْرَاهِيمَ، فَيَأْتُونَ إِبْرَاهِيمَ، فَيَقُولُونَ: يَا إِبْرَاهِيمُ أَنْتَ نَبِيُّ اللَّهِ وَخَلِيلُهُ مِنْ أَهْلِ الأَرْضِ: اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَيَقُولُ لَهُمْ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثلَهُ وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثلَهُ، وَإِنِّي قَدْ كُنْتُ كَذَبْتُ ثَلاَثَ كَذِبَاتٍ، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى مُوسَى، فَيَأْتُونَ مُوسَى، فَيَقُولُونَ: يَا مُوسَى، أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ، فَضَّلَكَ اللَّهُ بِرِسَالَتِهِ وَبِكَلامِهِ عَلَى النَّاسِ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَيَقُولُ: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثلَهُ وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثلَهُ؟ وَإِنِّي قَدْ قَتَلْتُ نَفْسًا لَمْ أُومَرْ بِقَتْلِهَا، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى عِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ، فَيَأْتُونَ عِيسَى، فَيَقُولُونَ: يَا عِيسَى، أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِنْهُ، وَكَلَّمْتَ النَّاسَ فِي الْمَهْدِ صَبِيًّا، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَيَقُولُ عِيسَى: إِنَّ رَبِّي قَدْ غَضِبَ الْيَوْمَ غَضَبًا لَمْ يَغْضَبْ قَبْلَهُ مِثلَهُ قَطُّ وَلَنْ يَغْضَبَ بَعْدَهُ مِثلَهُ، وَلَمْ يَذْكُرْ ذَنْبًا، نَفْسِي نَفْسِي نَفْسِي، اذْهَبُوا إِلَى غَيْرِي، اذْهَبُوا إِلَى مُحَمَّدٍ، فَيَأْتُونَ مُحَمَّدًا، فَيَقُولُونَ: يَا مُحَمَّدُ، أَنْتَ رَسُولُ اللَّهِ، وَخَاتِمُ الأَنْبِيَاءِ، وَقَدْ غَفَرَ اللَّهُ لَكَ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِكَ وَمَا تَأَخَّرَ، اشْفَعْ لَنَا إِلَى رَبِّكَ، أَلاَ تَرَى إِلَى مَا نَحْنُ فِيهِ؟ فَأَنْطَلِقُ، فَآتِي تَحْتَ الْعَرْشِ، فَأَقَعُ سَاجِدًا لِرَبِّي عَزَّ وَجَلَّ، ثمَّ يَفْتَحُ اللَّهُ عَلَيَّ مِنْ مَحَامِدِهِ وَحُسْنِ الثنَاءِ عَلَيْهِ شَيْئًا لَمْ يَفْتَحْهُ عَلَى أَحَدٍ قَبْلِي، ثمَّ يُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ، ارْفَعْ رَأْسَكَ، سَلْ تُعْطَهْ، وَاشْفَعْ تُشَفَّعْ، فَأَرْفَعُ رَأْسِي، فَأَقُولُ: أُمَّتِي يَا رَبّ، أُمَّتِي يَا رَبِّ، أُمَّتِي يَا رَبِّ، فَيُقَالُ: يَا مُحَمَّدُ، أَدْخِلْ مِنْ أُمَّتِكَ مَنْ لا حِسَابَ عَلَيْهِمْ مِنَ الْبَابِ الأَيْمَنِ مِنْ أَبْوَابِ الْجَنَّةِ، وَهُمْ شُرَكَاءُ النَّاسِ فِيمَا سِوَى ذَلِكَ مِنَ الأَبْوَابِ، ثمَّ قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ إِنَّ مَا بَيْنَ الْمِصْرَاعَيْنِ مِنْ مَصَارِيعِ الْجَنَّةِ كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَحِمْيَرَ أَوْ كَمَا بَيْنَ مَكَّةَ وَبُصْرَى»

‘‘আমার প্রভু আজ এমন রাগান্বিত হয়েছেন, যেমন রাগান্বিত আর কখনও হননি। আজকের পরে আর কখনও এমন রাগান্বিত হবেন না। তিনি আমাকে একটি গাছের নিকট যেতে বারণ করেছিলেন। আমি তার আদেশ লঙ্ঘন করেছি। হায়! আমার কি দশা হবে! হায়! আমার কি দশা হবে! হায়! আমার কি দশা হবে! তোমরা অন্য কারও কাছে যাও। তোমরা নূহ (আ.) এর কাছে যাও।

তারা নূহ (আ.) এর কাছে গিয়ে বলবে, হে নূহ! আপনি তো পৃথিবীবাসীর নিকট প্রথম রসূল। আপনাকে আল্লাহ্ তা‘আলা একজন কৃতজ্ঞ বান্দা হিসেবে অবিহিত করেছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি রকম কষ্টে আছি? তিনি বলবেন, আমার প্রভু আজ এমন রাগান্বিত হয়েছেন, যেমন রাগান্বিত আর কখনও হননি। আজকের পরে আর কখনও এমন রাগান্বিত হবেন না। আর আমাকে একটি দু‘আ করার অধিকার দেয়া হয়েছিল। আমি তা আমার জাতির বিরুদ্ধে করে ফেলেছি। হায়! আমার কি দশা হবে! হায়! আমার কি দশা হবে! হায়! আমার কি দশা হবে! তোমরা অন্য কারও কাছে যাও। তোমরা ইবরাহীমের কাছে যাও।

তারা ইবরাহীম (আ.) এর কাছে গিয়ে বলবে, হে ইবরাহীম! আপনি তো আল্লাহর নাবী এবং পৃথিবীবাসীর মধ্যে আপনিই আল্লাহর বন্ধু। আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি রকম কষ্টে আছি? তিনি বলবেন, আমার প্রভু আজ এমন রাগান্বিত হয়েছেন, যেমন রাগান্বিত আর কখনও হননি। আজকের পরে আর কখনও এমন রাগান্বিত হবেন না। আর ইতিপূর্বে আমি তিনটি মিথ্যা কথা বলে ফেলেছি। হায়! আমার কি দশা হবে! হায়! আমার কি দশা হবে! হায়! আমার কি দশা হবে! তোমরা অন্য কারও কাছে যাও। তোমরা মূসার কাছে যাও।

তারা মূসা (আ.) এর কাছে গিয়ে বলবে, হে মূসা! আপনি তো আল্লাহর রসূল। আল্লাহ্ আপনাকে রিসালাত দিয়ে এবং আপনার সাথে কথা বলে সমগ্র মানুষের মধ্যে আপনাকে বিশেষ মর্যাদায় উন্নীত করেছেন। আপনি আমাদের জন্য আপনার প্রভুর নিকট সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি রকম কষ্টে আছি? তিনি বলবেন, আমার প্রভু আজ এমন রাগান্বিত হয়েছেন, যেমন রাগান্বিত আর কখনও হননি। আজকের পরে আর কখনও এমন রাগান্বিত হবেন না। আর আমি পৃথিবীতে এক ব্যক্তিকে হত্যা করেছিলাম। অথচ তাকে হত্যা করার জন্য আমাকে আদেশ দেয়া হয়নি। হায়! আমার কি দশা হবে! হায়! আমার কি দশা হবে! হায়! আমার কি দশা হবে! তোমরা অন্য কারও কাছে যাও। তোমরা ঈসার কাছে যাও।

তারা ঈসা (আ.) এর কাছে গিয়ে বলবে, হে ঈসা! আপনি আল্লাহর রসূল এবং আপনি হচ্ছেন আল্লাহর সেই কালেমা, যা তিনি মারইয়ামের কাছে পাঠিয়েছেন। আর আপনি হচ্ছেন আল্লাহর রূহ। আপনি শিশুকালে মায়ের কোলে থেকেই মানুষের সাথে কথা বলেছেন। আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি রকম কষ্টে আছি? তিনি বলবেন, আমার প্রভু আজ এমন রাগান্বিত হয়েছেন, যেমন রাগান্বিত আর কখনও হননি। আজকের পরে আর কখনও এমন রাগান্বিত হবেন না। তিনি পৃথিবীতে থাকা কালে কোন পাপের কথা উল্লেখ করবেন না। তিনি বলবেন, হায়! আমার কি দশা হবে! হায়! আমার কি দশা হবে! হায়! আমার কি দশা হবে! তোমরা অন্য কারও কাছে যাও। তোমরা মুহাম্মাদের কাছে যাও।

তারা মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে গিয়ে বলবে, হে মুহাম্মাদ! আপনি আল্লাহর রসূল এবং সর্বশেষ নাবী। আল্লাহ আপনার আগের ও পরের সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দিয়েছেন। আপনি আমাদের জন্য সুপারিশ করুন। আপনি কি দেখছেন না আমরা কি রকম কষ্টে আছি? রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতঃপর আমি আরশের নীচে গিয়ে আমার প্রভুর জন্য সিজদায় নত হবো। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা আমার অন্তরে তার এমন কিছু প্রশংসা ও গুণগান ঢেলে দিবেন যা ইতিপূর্বে কাউকে দেন নি। (আমি সেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর প্রশংসা করবো) অতঃপর বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! মাথা উঠান। চান, আপনি যা চাইবেন, তাই দেয়া হবে। আপনি সুপারিশ করুন, আপনার সুপারিশ কবুল করা হবে। আমি তখন মাথা উঠিয়ে বলবো, হে আমার প্রভু! আমার উম্মাতকে বাঁচান। আমার উম্মাতকে বাঁচান। অতঃপর বলা হবে, হে মুহাম্মাদ! আপনার উম্মাতের মধ্যে যাদের উপর কোন হিসাব নেই, তাদেরকে জান্নাতের ডান দরজা দিয়ে প্রবেশ করান। তবে তারা চাইলে লোকদের সাথে জান্নাতের অন্যান্য দরজা দিয়েও জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে। অতঃপর তিনি বললেন, ঐ আল্লাহর শপথ! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, জান্নাতের একটি দরজার প্রশস্ততা হবে মক্কা ও হিএয়ার অথবা মক্কা ও বুসরার মধ্যকার দূরত্বের সমান’’।[1] হাদীছের মূল অর্থ ছহীহ বুখারী ও মুসলিমে রয়েছে। উপরোক্ত শব্দগুলো ইমাম আহমাদের।

আশ্চর্যের বিষয় হলো ইমামগণ এ হাদীছ বিভিন্ন সনদে বর্ণনা করেছেন ঠিকই; কিন্তু প্রথম প্রকার শাফা‘আত তথা শাফা‘আতে উযমার বিষয়টি কেউ উল্লেখ করেননি। অর্থাৎ হাশরের মাঠে বিচারের জন্য আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার আগমনের বিষয়টি উল্লেখ করেননি। যেমনটি সিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। এ স্থানে এ বিষয়টি বর্ণনা করাই উদ্দেশ্য। হাদীছের প্রথমাংশের বর্ণনা প্রসঙ্গের দাবিও এটি।

কিয়ামতের দিন লোকেরা পূর্বোক্ত পাঁচজন থেকে শুরু করে সমস্ত নাবীর কাছেই শাফা‘আত করার অনুরোধ করবে। যাতে করে আল্লাহ তা‘আলা মানুষের মধ্যে দ্রুত ফায়ছালা করেন এবং যাতে তারা হাশরের মাঠের কষ্ট থেকে নিষ্কৃতি পেয়ে যায়। সকল সনদে উপরোক্ত হাদীছের বর্ণনা প্রসঙ্গ এ কথারই প্রমাণ বহন করে। কিয়ামতের দিন ভালো-মন্দের বিনিময় প্রদানের বিষয়ে তারা যখন আলোচনা করেছেন, কেবল তখন তারা পাপীগণের শাফা‘আতের বিষয় এবং জাহান্নামের আগুন থেকে তাদের বের হওয়া প্রসঙ্গে আলোচনা করেছেন। সালাফদের উদ্দেশ্য ছিল হাদীছ থেকে শুধু এ পরিমাণ অংশের উপর নির্ভর করা। আর তা হলো খারেজী সম্প্রদায় এবং তাদের অনুসারী মুতাযেলা সম্প্রদায়ের প্রতিবাদ করা। কেননা তাদের কথা হলো যারা একবার জাহান্নামে প্রবেশ করবে, তাদের কেউ আর সেখান থেকে বের হবে না।

সুতরাং সালাফগণ কেবল হাদীছের সেই অংশই বর্ণনা করেছেন, যাতে সুস্পষ্টভাবেই খারেজীদের প্রতিবাদ করা হয়েছে। ছহীহ হাদীছের খেলাফে তারা যে বিদ‘আতী মতবাদ প্রকাশ করেছে, সালাফগণ কেবল তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে হাদীছের অংশবিশেষ উল্লেখ করেছেন। সিঙ্গায় ফুঁ দেয়ার হাদীছে তা সুস্পষ্ট করেই উল্লেখ করা হয়েছে। দীর্ঘ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলে পূর্ণ হাদীছটি উল্লেখ করতাম। তবে হাদীছের সারাংশ হলো, তারা প্রথমে আদম (আ.), অতঃপর নূহ (আ.), অতঃপর ইবরাহীম (আ.), অতঃপর মূসা (আ.), অতঃপর ঈসা আলাইহিস সালামের নিকট আগমন করবে। পরিশেষে আল্লাহর রসূল মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট আগমন করবে। তিনি তখন আরশের নীচে গিয়ে ‘ফাহাস’ নামক একটি স্থানে সিজদায় লুটিয়ে পড়বেন। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, তোমার কী হয়েছে? অথচ তিনিই এ বিষয়ে সর্বাধিক অবগত রয়েছেন। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আমি তখন বলবো, হে আমার রব! তুমি আমার শাফা‘আত কবুল করার ওয়াদা করেছো।

সুতরাং এখন তোমার সৃষ্টির ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করো এবং তাদের মাঝে ফায়ছালা করো। আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়া তা‘আলা তখন বলবেন, আমি তোমাকে শাফা‘আত করার অনুমতি দিলাম এবং আমি তোমাদের মাঝে আসবো এবং বান্দাদের মাঝে ফায়ছালা করবো। রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতঃপর আমি ফিরে এসে মানুষের সাথে দাঁড়াবো। অতঃপর রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আসমানসমূহ বিদীর্ণ হওয়ার এবং মেঘমালার ছায়াতে ফেরেশতাদের অবতরণের বিষয় উল্লেখ করেছেন। অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বানদাদের মাঝে ফায়ছালা করার জন্য আগমন করবেন। তখন কারুবীয়া ফেরেশতা এবং আল্লাহর নৈকট্যশীল অন্যান্য ফেরেশতাগণ বিভিন্ন প্রকার তাসবীহ পাঠ করতে থাকবে। নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা তার যমীনের যেখানে ইচ্ছা স্বীয় কুরসী স্থাপন করবেন। অতঃপর বলবেন, আমি যেদিন তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, সেদিন থেকে তোমাদের এ দিন পর্যন্ত চুপ ছিলাম। আমি তোমাদের কথাসমূহ শ্রবণ করতাম, তোমাদের কর্মসমূহ দেখতাম। সুতরাং এ নাও তোমাদের কর্ম এবং আমলনামাসমূহ। আজ তোমাদের জন্য এটি পাঠ করা হবে। তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এতে কল্যাণকর কিছু পাবে, সে যেন আল্লাহর প্রশংসা করে আর যে ব্যক্তি অন্য কিছু পাবে, সে যেন কেবল নিজেকেই দোষারোপ করে।

পরিশেষে জান্নাতীগণ যখন জান্নাতে প্রবেশের জন্য অগ্রসর হবে, তখন তারা বলবে, জান্নাতে প্রবেশের ব্যাপারে কে আমাদের রবের নিকট সুপারিশ করবে? তারা বলবে, তোমাদের পিতা আদম অপেক্ষা এ বিষয়ে কথা বলার জন্য আর কে বেশী অধিকার রাখে। আল্লাহ তা‘আলা তাকে নিজ হাতে সৃষ্টি করেছেন। তার মধ্যে তার নিজের রূহ ফুঁকে দিয়েছেন এবং সরাসরি তার সাথে কথা বলেছেন। অতঃপর তারা আদমের নিকট গিয়ে শাফাআতের আবেদন করবে। বর্ণনাকারী যথাক্রমে নূহ (আ.), ইবরাহীম (আ.), মুসা (আ.), ঈসা আলাইহিস্ সালাম, সর্বশেষে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে যাওয়ার কথাও উল্লেখ করেছেন। পরিশেষে উল্লেখ করেছেন যে, রসূল ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমি জান্নাতের নিকটবর্তী হয়ে উহার দরজার হাতল ধরবো এবং দরজা খুলতে বলবো। অতঃপর আমার জন্য জান্নাতের দরজা খোলা হবে। আমাকে জান্নাতে স্বাগতম জানানো হবে।

জান্নাতে প্রবেশ করে আমি আমার প্রভুকে দেখে সেজদায় লুটিয়ে পড়বো। এ সময় আমাকে তার এমন কিছু প্রশংসা ও গুণাবলী শিখানো হবে, যা দ্বারা আল্লাহ তা‘আলার প্রশংসা করার জন্য আর কাউকে অনুমতি প্রদান করা হয়নি।অতঃপর আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, হে মুহাম্মাদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তোমার মাথা উঠাও। সুপারিশ করো। তোমার সুপারিশ কবুল করা হবে। তুমি চাও। তোমাকে প্রদান করা হবে। আমি যখন মাথা উঠাবো, তখন আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, অথচ তিনি সবকিছু অবগত রয়েছেন। তোমার কী হয়েছে? আমি তখন বলবো, হে আমার রব! তুমি আমার শাফা‘আত কবুল করার ওয়াদা করেছো। সুতরাং আমাকে জান্নাতীদের ব্যাপারে শাফা‘আত করার অনুমতি দাও। যাতে তারা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলবেন, আমি তোমাকে শাফা‘আত করার অনুমতি দিলাম এবং তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশের অনুমতি দিলাম। ইমামগণ এ হাদীছ দুর্বল সূত্রে বর্ণনা করেছেন।[2] তাদের মধ্যে ইবনে জারীর আত্ তাবারী, তাবারানী, আবু ইয়ালা মুসেলী, বায়হাকী এবং অন্যান্য ইমাগণ রয়েছেন।

[1]. বুখারী ও মুসলিমের সনদে ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রহিমাহুল্লাহ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। দেখুন: ইমাম আলবানী রাহিমাহুল্লাহুর তাহকীকসহ শারহুল আকীদাহ আত্ তাহাবীয়া, টিকা নং- ১৯৮।

[2]. যঈফ: তাফসীরে তাবারী, তাফসীরে ইবনে কাসীর।