আল্লাহর কিতাব ও রাসূলের সুন্নাতে এমন অনেক দলীল রয়েছে, যা প্রমাণ করে আল্লাহ তা‘আলা কিয়ামতের দিন জান্নাতবাসী এবং অন্যান্যদের সাথে কথা বলবেন। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, سَلَامٌ قَوْلًا مِّن رَّبٍّ رَّحِيمٍ ‘‘দয়াময় রবের পক্ষ থেকে তাদেরকে সালাম বলা হবে’’। (সূরা ইয়াসীন: ৫৮)
জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, নাবী ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জান্নাতবাসীগণ যখন নেয়ামতের মধ্যে থাকবে, তখন তাদের জন্য একটি নূর প্রকাশিত হবে। তারা দৃষ্টি উঠাবে। দৃষ্টি উঠিয়ে তারা দেখবে যে, তাদের মহান প্রভু উপর থেকে তাদের দিকে দৃষ্টি দিচ্ছেন। তখন তাদের প্রভু বলবেন, السلام عليكم يا أهل الجنة এটিই হলো আল্লাহ তা‘আলার উপরোক্ত বাণীর ব্যাখ্যা। এরপর তারা যতক্ষণ আল্লাহ তা‘আলার দিকে তাকিয়ে থাকবে, ততক্ষণ জান্নাতের আর কোনো নেয়ামতের দিকে তাকিয়েই দেখবে না। এমনকি আল্লাহ তা‘আলার নূর তাদের থেকে আড়াল হওয়ার পরও তার বরকত ও নূর অবশিষ্ট থাকবে’’।[1]
ইমাম ইবনে মাজাহ এবং অন্যান্য ইমামগণ হাদীছটি বর্ণনা করেছেন। এ হাদীছে আল্লাহ তা‘আলার জন্য কথা বলা বিশেষণ সাব্যস্ত করা হয়েছে। সে সঙ্গে আরো সাব্যস্ত করা হয়েছে যে, কিয়ামতের দিন মুমিনগণ আল্লাহ তা‘আলাকে দেখতে পাবে। এখান থেকে আরো জানা গেল যে, আল্লাহ তা‘আলা সকল সৃষ্টির উপরে।
সুতরাং এত দলীল থাকা সত্ত্বেও কিভাবে বলা যেতে পারে যে, আল্লাহ তা‘আলার সকল বাণী মিলে মূলতঃ একটিই। অর্থাৎ তিনি কথা বলার বিশেষণে বিশেষিত এবং তার কথা তার সত্তার সাথেই প্রতিষ্ঠিত। এমনটি নয় যে, তিনি একাধিকবার একাধিক নাবী-রাসূলের সাথে কথা বলেছেন কিংবা কিয়ামতের দিন মুমিনদের সাথে কথা বলবেন। এ কথা সম্পূর্ণ ভুল। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يَشْتَرُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَأَيْمَانِهِمْ ثَمَنًا قَلِيلًا أُوْلَئِكَ لَا خَلَاقَ لَهُمْ فِي الْآخِرَةِ وَلَا يُكَلِّمُهُمْ اللَّهُ وَلَا يَنْظُرُ إِلَيْهِمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلَا يُزَكِّيهِمْ وَلَهُمْ عَذَابٌ أَلِيْمٌ
‘‘যারা আল্লাহর নামে কৃত অঙ্গীকার এবং প্রতিজ্ঞা সামান্য মূল্যে বিক্রি করে আখেরাতে তাদের কোন অংশ নেই। তাদের সাথে কিয়ামতের দিন আল্লাহ কথা বলবেন না। তাদের প্রতি করুণার দৃষ্টিতে তাকাবেন না। আর তাদেরকে গুনাহ থেকে পবিত্রও করবেন না। বস্তুত তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রনাদায়ক আযাব’’। (সূরা আলে ইমরান: ৭৭)
সুতরাং যারা সামান্য মূল্যে আল্লাহর অঙ্গিকার বিক্রি করে, তাদের সাথে কথা না বলার মাধ্যমে তিনি তাদেরকে অপমানিত করবেন। এখানে উদ্দেশ্য হলো, তাদের সাথে এমন কথা বলবেন না, যার মাধ্যমে তাদেরকে সম্মানিত করা হবে। আয়াতের এ ব্যাখ্যাই সঠিক। কেননা অন্য আয়াতে রয়েছে যে, আল্লাহ তা‘আলা জাহান্নামীদেরকে বলবেন,
قَالَ اخْسَئُوا فِيهَا وَلَا تُكَلِّمُونِ
‘‘তোমরা হীন অবস্থায় এখানেই পড়ে থাকো এবং আমার সাথে কথা বলো না’’। (সূরা মুমিনুন: ১০৮)
আল্লাহ তা‘আলা যদি তার মুমিন বান্দাদের সাথে কথা না বলেন, তাহলে এতে মুমিনগণ ও তার শত্রুগণ সমান হয়ে যাবে এবং তার শত্রুদের সাথে কথা বলা বর্জন করার মধ্যে কোনো ফায়দা থাকে না। ইমাম বুখারী তার ছহীহ গ্রন্থে বলেন,
باب كلام الرب تبارك وتعالى مع أهل الجنة ‘‘অধ্যায়: জান্নাতবাসীদের সাথে আল্লাহ তা‘আলার কথা বলা’’। এ অধ্যায়ে তিনি একাধিক হাদীছ বর্ণনা করেছেন। জান্নাতবাসীদের সর্বোত্তম নেয়ামত হলো আল্লাহ তা‘আলার চেহারার দিকে তাকিয়ে থাকা এবং মুমিনদের সাথে তার কথা বলা। সুতরাং এটিকে অস্বীকার করা জান্নাতের মূল, সর্বোচ্চ ও সর্বোত্তম নেয়ামতকে অস্বীকার করার নামান্তর। যা ব্যতীত জান্নাতবাসীদের জীবন পরিপূর্ণ হবে না।