আল্লাহর কালাম বা কথা বলা বিশেষণের মাস‘আলায় আলেমদের নয়টি মত রয়েছে।
(১) আল্লাহর কালাম বলতে এমন অর্থ উদ্দেশ্য, যা সক্রিয় সত্তা (আল্লাহ তা‘আলা) বা অন্য কারো পক্ষ হতে মানুষের অন্তরের মধ্যে প্রবেশ করে। এটি নাস্তিক, বে-দ্বীন ও দার্শনিকদের মত।
(২) কুরআন আল্লাহর কালাম নয়; বরং এটি মাখলুক। আল্লাহ তা‘আলা তার নিজের সত্তার বাইরে একে আলাদা করে সৃষ্টি করেছেন। এটি মুতাযেলাদের মত।[1]
(৩) আল্লাহর কালাম এমন একটি অর্থ, যা আল্লাহর সত্তার সাথে প্রতিষ্ঠিত। এটিকেই আল্লাহর আদেশ, নিষেধ ও সংবাদ বলা হয়। আরবীতে আল্লাহর এ কালামকে প্রকাশ করা হলে তাকে কুরআন বলা হয়। ইবরানী ভাষায় ব্যাখ্যা করা হলে তাকে তাওরাত বলা হয়। ইবনে কুল্লাব এবং আশআরীদের মধ্য থেকে যারা তার অনুসরণ করেছে, এটি তাদেরই মত।
(৪) কালামের অক্ষর ও শব্দ রয়েছে, যা আল্লাহ তা‘আলার সত্তার সাথে অনাদিতেই একত্রিত অবস্থায় বিদ্যমান। যুক্তিবাদীদের এক শ্রেণী এবং একদল আহলে হাদীছও এ কথা বলেছেন।
(৫) আল্লাহর কালামের অক্ষর, শব্দ ও আওয়াজ রয়েছে। তবে প্রথমে তিনি কথা বলার বিশেষণে বিশেষিত ছিলেন না; অতঃপর তিনি নিজের সাথে তাকে মিলিয়েছেন এবং কথা বলেছেন। কার্রামিয়া সম্প্রদায় এবং অন্যরা এ কথা বলেছে।
(৬) আল্লাহর কালাম দ্বারা তার ঐ ইলম উদ্দেশ্য, যা তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং ঐ ইচ্ছা উদ্দেশ্য, যা তার সত্তার সাথে প্রতিষ্ঠিত রয়েছে। মু’তাবার গ্রন্থকার এ কথা বলেছেন। ফখরুদ্দীন রাযিও তার অন্যতম গ্রন্থ মাতালেবে আলীয়াতে এ মতকে সমর্থন করেছেন।
(৭) আল্লাহর কালাম এমন অর্থ বহন করে, যা আল্লাহ তা‘আলার সত্তার সাথে যুক্ত রয়েছে এবং তিনি এটি অন্যের মধ্যে সৃষ্টি করেছেন। আবু মানসুর আল-মাতুরীদি এ কথা বলেছেন।
(৮) আল্লাহর কালাম এমন একটি যৌগিক বিষয়, যা তার সত্তার সাথে প্রতিষ্ঠিত অনাদি অর্থ এবং তিনি অন্যের মধ্যে যে আওয়াজ সৃষ্টি করেন তার সমন্বয়ে গঠিত। এটিই আবুল মাআলী আল-জুওয়াইনী এবং তার অনুসারীদের মত।
(৯) আল্লাহ তা‘আলা অনাদি থেকেই যখন ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা কথা বলার বিশেষণে বিশেষিত। তিনি এ বিশেষণের মাধ্যমে এমন আওয়াজের সাথে কথা বলেন, যা শুনা যায়। কথা বলা বিশেষণ আল্লাহ তা‘আলার অনাদি সিফাতের মধ্যে গণ্য। যদিও নির্দিষ্ট শব্দে কথা বলা কাদীম বা অনাদি নয়।[2] আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের ইমামদের থেকে এ কথাই বর্ণিত হয়েছে।
শাইখের উক্তি, وَإِنَّ الْقُرْآنَ كَلَامُ اللَّهِ এখানে إن এর হামযার নীচে জের দিয়ে পড়তে হবে। কারণ এ বাক্যটিকে إِنَّ اللَّهَ وَاحِدٌ لَا شَرِيكَ لَهُ বাক্যের উপর সম্পর্ক করা হয়েছে। অতঃপর শাইখ বলেছেন, وَإِنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ الْمُصْطَفَى এখানেও হামযাহর নীচে জের দিয়ে পড়া হয়েছে। উপরোক্ত তিন স্থানেই হামযাহর নীচে জের দিয়ে পড়া হয়েছে। কারণ এ সবগুলো বাক্যই কাউলের মা’মুল। অর্থাৎ কিতাবের শুরুতে তার উক্তি: نَقُولُ فِي تَوْحِيدِ اللَّهِ إِنَّ الله........ এর আওতাধীন।
অতঃপর শাইখ বলেছেন, كَلَامُ اللَّهِ، مِنْهُ بَدَا بِلَا كَيْفِيَّةٍ قَوْلًا ‘‘আল্লাহর কালাম তার নিকট থেকেই কথা হিসেবে শুরু হয়েছে, তবে এর কোনো ধরণ নির্ধারণ করা যাবে না’’। এতে মুতাযেলা এবং অন্যদের মতবাদের জবাব দেয়া হয়েছে। কেননা মুতাযেলারা মনে করে কুরআন আল্লাহ তা‘আলার নিকট থেকে আসেনি। যেমন উপরে তাদের কথা আলোচিত হয়েছে। তারা বলে থাকে, কালামকে তার দিকে কেবল সম্মানার্থেই সম্বন্ধ করা হয়েছে। যেমন বলা হয়েছে বাইতুল্লাহ, নাকাতুল্লাহ ইত্যাদি। তারা আল্লাহর কালামকে যথাস্থান থেকে সরিয়েছে। তাদের কথা সম্পূর্ণ বাতিল। কেননা আল্লাহ তা‘আলার দিকে যাকিছু সম্বন্ধ করা হয়, তা দু’প্রকার। (১) অনুভবযোগ্য ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য জিনিসসমূহ (২) অর্থ, গুণাবলী ও বিশেষণসমূহ।
অনুভবযোগ্য ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য যেসব বস্তু আল্লাহ তা‘আলার দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে, তা কেবল সম্মানার্থেই তার দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে। এগুলোর সবই আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি। যেমন بَيْتِ اللَّهِ، وَنَاقَةِ اللَّهِ (আল্লাহর ঘর, আল্লাহর উটনী) ইত্যাদি। কিন্তু যেসব গুণাবলী আল্লাহর দিকে সম্বন্ধ করা হয়েছে, এর বিপরীত। অর্থাৎ তা সৃষ্টি নয়। যেমন আল্লাহর ইলম, আল্লাহর কুদরত, আল্লাহর ইজ্জত, আল্লাহর বড়ত্ব, আল্লাহর অহংকার, আল্লাহর কালাম, আল্লাহর হায়াত, আল্লাহর উলু (সৃষ্টির উপর সমুন্নত হওয়া), আল্লাহর প্রতাপ ইত্যাদি। এসব কিছুই আল্লাহ তা‘আলার সিফাত। এখান থেকে কোনো কিছুই সৃষ্টি নয়।
কথা বলা পূর্ণতার অন্যতম বিশেষণ। আর এটি দ্বারা আল্লাহ তা‘আলাকে বিশেষিত না করা তার সিফাতের মধ্যে ত্রুটি-বিচ্যুতি সাব্যস্ত করার অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
وَاتَّخَذَ قَوْمُ مُوسَىٰ مِن بَعْدِهِ مِنْ حُلِيِّهِمْ عِجْلًا جَسَدًا لَّهُ خُوَارٌ أَلَمْ يَرَوْا أَنَّهُ لَا يُكَلِّمُهُمْ وَلَا يَهْدِيهِمْ سَبِيلًا اتَّخَذُوهُ وَكَانُوا ظَالِمِينَ
‘‘মূসার অনুপস্থিতিতে তার জাতির লোকেরা নিজেদের অলংকার দিয়ে বাছুরের মূর্তি তৈরী করলো। তার মুখ দিয়ে গরুর মত হাম্বা হাম্বা আওয়াজ বের হতো। তারা কি দেখতে পেতো না যে, ঐ বাছুর তাদের সাথে কথা বলে না আর তাদেরকে কোনো পথও দেখায় না? এরপর ও তাকে মাবুদে পরিণত করলো। বস্তুত তারা ছিল বড়ই যালেম’’। (সূরা আরাফ: ১৪৮)
সুতরাং বাছুর পূজাকারীরা কুফুরী করলেও তারা আল্লাহ সম্পর্কে মুতাযেলাদের চেয়ে অধিক জানতো। তারা মুসাকে বলেনি যে, তোমার রবও কথা বলতে পারে না। বাছুর ও বাছুর পূজাকারীদের সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
أَفَلَا يَرَوْنَ أَلَّا يَرْجِعُ إِلَيْهِمْ قَوْلًا وَلَا يَمْلِكُ لَهُمْ ضَرًّا وَلَا نَفْعًا
‘‘তারা কি দেখছিল না যে, সে তাদের কথারও জবাব দেয় না এবং তাদের উপকার ও ক্ষতি করার কোনো ক্ষমতাও রাখে না?’’ (সূরা ত্বহা: ৮৯)
এতে বুঝা গেল কথার জবাব না দিতে পারা এবং কথা বলার ক্ষমতা না রাখা এমন ত্রুটি, যা দ্বারা দলীল গ্রহণ করা যায় যে, বাছুর কখনো ইলাহ হতে পারে না।
আল্লাহ তা‘আলার কালাম নাকোচ করার ব্যাপারে তাদের সর্বোচ্চ দলীল হলো, তারা বলে থাকে, যদি বলা হয় যে, তিনি কথা বলেন, তাহলে তার জন্য মানুষের সাদৃশ্য গ্রহণ করা এবং তাদের মত দেহ ধারণ করা আবশ্যক হয়।[3]
তাদের জবাবে বলা হবে যে, আমরা যখন বলবো আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্ব ও মর্যাদার জন্য যেভাবে কথা বলা শোভনীয়, তিনি সেভাবেই কথা বলেন, তখনই তাদের এ সন্দেহ বিদূরিত হয়ে যাবে। আপনি কি দেখেন না আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
الْيَوْمَ نَخْتِمُ عَلَىٰ أَفْوَاهِهِمْ وَتُكَلِّمُنَا أَيْدِيهِمْ وَتَشْهَدُ أَرْجُلُهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ
‘‘সেদিন আমি এদের মুখ বন্ধ করে দিবো, এদের হাত আমার সাথে কথা বলবে এবং এদের পা সাক্ষ্য দেবে এরা দুনিয়ায় কি উপার্জন করে এসেছে’’। (সূরা ইয়াসীন: ৬৫)
আমরা বিশ্বাস করি কিয়ামতের দিন মানুষের হাত-পা কথা বলবে। তবে আমরা জানি না কিভাবে বলবে। এমনি আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
وَقَالُوا لِجُلُودِهِمْ لِمَ شَهِدْتُمْ عَلَيْنَا قَالُوا أَنْطَقَنَا اللَّهُ الَّذِي أَنْطَقَ كُلَّ شَيْءٍ
‘‘তারা তাদের শরীরের চামড়াসমূহকে বলবে, তোমরা আমাদের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিলে কেন? তারা জবাব দেবে, আল্লাহই আমাদের বাকশক্তি দান করেছেন যিনি প্রতিটি বস্তুকে বাকশক্তি দান করেছেন’’। (সূরা হা-মীম সাজদাহ: ২১)
এমনি পাথরের তাসবীহ পাঠ, খাবারের কথা, তাসবীহ পাঠ, পাথরের সালাম দেয়া ইত্যাদি। এগুলোর কথা বলা ছহীহ হাদীছে বর্ণিত হয়েছে। এগুলো মুখ, জিহবা, দাঁত, অক্ষর উচ্চারণের মাখরাজ ছাড়াই কথা বলেছে। যে শ্বাসনালী থেকে আওয়াজ বের হয়, তা ছাড়াই কথা বলেছে। তবে এগুলোর কথা বনী আদমের নিকট পরিচিত কথা ছিল না।
এ দিকে ইঙ্গিত করেই ইমাম ত্বহাবী রহিমাহুল্লাহ বলেছেন, مِنْهُ بَدَا بِلَا كَيْفِيَّةٍ قَوْلًا ‘‘আল্লাহর কালাম তার নিকট থেকেই কথা হিসেবে শুরু হয়ে এসেছে, তবে এর কোনো ধরণ নির্ধারণ করা যাবে না’’। অর্থাৎ তার কাছ থেকেই প্রকাশিত হয়েছে। তবে আমরা জানি না, তিনি কিভাবে উহার মাধ্যমে কথা বলেছেন। قولا কথার মাধ্যমে শাইখ এ অর্থকেই শক্তিশালী করেছেন। তিনি قولا কে এমন মাসদার হিসাবে ব্যবহার করেছেন, যা প্রকৃত অর্থকেই নির্দিষ্ট করে দেয়।
আল্লাহ তা‘আলার বাণী: كلم الله موسى تكليما এর মধ্যেও আল্লাহ তা‘আলার কথা বলাকে এমন মাসদারের মাধ্যমে সাব্যস্ত করেছেন, যা রূপক অর্থকে নাকোচ করে দেয়। এভাবে সত্যকে সুস্পষ্ট করে বর্ণনা করার পরও যারা তা থেকে দূরে থাকবে, তাদের জন্য গোমরাহী ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না।
জনৈক মুতাযেলী আলেম সুপ্রসিদ্ধ সাত কারীর অন্যতম কারী আবু আমর ইবনুল আলা রহিমাহুল্লাহকে বললেন, আমি চাই, তুমি আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী:
وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَى تَكْلِيْماً এর মধ্যে ‘আল্লাহ’ শব্দের শেষ অক্ষরে যবর দিয়ে পাঠ করবে। যাতে করে অর্থ হয় যে, মুসা আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন’’, আল্লাহ তা‘আলা নন।[4] তখন আমর বললেন, ঠিক আছে আমি তোমার চাহিদা মোতাবেক এ আয়াত পড়ে দেবো, কিন্তু আল্লাহ তা‘আলার এ বাণী কিভাবে পাঠ করবে, যেখানে আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন,
وَلَمَّا جَاءَ مُوسَى لِمِيقَاتِنَا وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ
‘‘অতঃপর মূসা যখন আমার নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলেন এবং তার রব তার সাথে কথা বললেন’’। (সূরা আরাফ: ১৪৩)
এতে সে মুতাযেলী আলেম হতবুদ্ধি হয়ে গেল। অর্থাৎ আমর রহিমাহুল্লাহ মুতাযেলীকে দেখিয়ে দিলেন যে, وَكَلَّمَ اللَّهُ مُوسَى تَكْلِيْماً এর মধ্যে আল্লাহ শব্দের উপর যবর দিয়ে পাঠ করে আয়াতটি বিকৃতি করে আরবী ব্যকরণের কোনো পদ্ধতিকে দলীল হিসাবে দাড়া করা সম্ভব হলেও وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ আয়াতাংশকে কোনোভাবেই বিকৃতি করা সম্ভব নয়। কেননা আরবী ব্যকরণে এমন কোনো নিয়ম নেই যে, وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ এর মধ্যে ربه এর মধ্যকার ‘বা’ অক্ষরের উপর যবর দিয়ে পড়া যেতে পারে। যাতে করে এখানেও এ অর্থ হয় যে, মুসা তার রবের সাথে কথা বলেছেন, তার রব তার সাথে কথা বলেননি।
[2]. অর্থাৎ আল্লাহ তা‘আলার কালাম একদিক থেকে কাদীম এবং অন্যদিক থেকে কাদীম নয়। তিনি অনাদি থেকেই কথা বলার বিশেষণে বিশেষিত, তার কালামের কোনো শুরু ও শেষ নেই। যেমন তার সত্তার কোনো শুরু ও শেষ নেই। তিনি সর্বদাই কথা বলার বিশেষণে বিশেষিত। এ দিক থেকে তার কালাম কাদীম বা অনাদি সিফাত। কিন্তু নির্দিষ্ট শব্দ ও আওয়াজের মাধ্যমে তার কথা কাদীম নয়। অর্থাৎ এটি তার ইচ্ছার সাথে সম্পৃক্ত। যখন ইচ্ছা, যেভাবে ইচ্ছা তিনি কথা বলেন।
[3]. অর্থাৎ তাদের মতে যদি বলা হয়, আল্লাহ তা‘আলা কথা বলেন, তাহলে তার জন্য মানুষের মত জিহবা, দাঁত, ঠোঁট কণ্ঠণালী থাকা আবশ্যক হয়। শাইখ ইবনে আবীল ইয্ রহিমাহুল্লাহ তাদের এ কথার যে জবাব দিয়েছেন, তাদের প্রতিবাদের জন্য উহাই যথেষ্ট। আল্লাহ তা‘আলার সিফাতসমূহ অস্বীকার করার ক্ষেত্রে বিদ‘আতীরা একই কথা বারবার বলে থাকে। তারা এমন কিছু আকলী যুক্তি পেশ করে থাকে, যা তারা তাদের ত্রুটিযুক্ত বিবেক-বুদ্ধির উপর নির্ভর করেই তৈরী করেছে। তারা বলে থাকে, আল্লাহর জন্য এ সিফাত সাব্যস্ত করা হলে এটি আবশ্যক হয়, ওটি আবশ্যক হয়........ইত্যাদি।
এখানে ভারতবর্ষের অধিকাংশ অঞ্চল বিজেতা সুলতান মাহমুদ বিন সুবক্তগীনের ঘটনা উল্লেখ করা যেতে পারে। তার দরবারে একদা আশায়েরা আলেম ইবনে ফাওরাক প্রবেশ করলেন। তিনি একবার সুলতানের দরবারে আলোচনা করছিলেন। সে সময় সুলতানের দরবারে একজনু সুন্নী আলেমও ছিলেন। তখন ইবনে ফাওরাককে আল্লাহ তা‘আলার উলু (সৃষ্টির উপর সমুন্নত হওয়া) সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি উহা অস্বীকার করলেন। তিনি সুলতানকে যুক্তি দেখিয়ে বললেন, আপনি যদি আল্লাহর জন্য উপর সাব্যস্ত করেন, তাহলে তার জন্য নীচ সাব্যস্ত করাও আবশ্যক হয়। সুলতান ইলমে কালাম এবং আকলী যুক্তি সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। তিনি তার কথার স্বভাব প্রসূত ও সহজ-সরল জবাব প্রদান করতে গিয়ে বললেন, আমার উপর কিছুই আবশ্যক হয় না। কেননা আল্লাহ তা‘আলা সংবাদ দিয়েছেন যে, তিনি উপরে। এ ব্যাপারে আমি তাই বলবো, যা আল্লাহ তাআলা বলেছেন। এ ক্ষেত্রে আমার উপর যদি আবশ্যক কিছু থাকে, তাহলে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা‘আলার জন্যও উহা আবশ্যক হয়। কারণ তিনিই উহা বলেছেন। আল্লাহ তা‘আলার উপর কিছু আবশ্যক করার কেউ আছে কি? কেউ কি বলতে পারবে, হে আমার রব! তুমি তোমার নিজের জন্য উপর সাব্যস্ত করেছো, সুতরাং তোমার উপর তোমার সত্তার জন্য নীচ সাব্যস্ত করাও আবশ্যক? নাউযুবিল্লাহ। সুতরাং সুলতান মাহমুদ যে ফিতরাতী জবাব দিয়েছেন আল্লাহর সিফাত নাকোচকারী বিদ‘আতীদের সকল সন্দেহের সেটিই সঠিক জবাব। সুতরাং আমরা যখন বলবো, এটি হলো আল্লাহর কথা ও তার রাসূলের কথা, তখন আমাদের এ কথার সামনে তাদের বিবেক-বুদ্ধির আবশ্যকীয় যুক্তিগুলো ভেঙ্গে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে। যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের উপর কিছু আবশ্যক করতে চায়, তারা তা করুক। কিন্তু আমাদের উপর আল্লাহর কালাম ও রাসূলের কালামের উপর ঈমান আনয়ন করা ব্যতীত অন্য কিছুই আবশ্যক নয়।
[4]. আল্লাহ তা‘আলার কথা বলা বিশেষণকে অস্বীকার করার জন্যই মুতাযেলী আলেম এ কৌশল অবলম্বন করতে চেয়েছিল। কিন্তু সুন্নী কারী ও আলেমের বুদ্ধিমত্তা ও বিচক্ষণতার সামনে বিদ‘আতীর অপকৌশল ধরা পড়ে।