عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ يَّدْخُلُ الْجَنَّةَ يَنْعَمُ وَلَايَبْأَسُ وَلَا يَبْلَى ثِيَابُهُ وَلَا يَفْنَى شَبَابُهُ.
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে সে সেখানে সুখ-স্বাচ্ছন্দে, ভোগ-বিলাসে ডুবে থাকবে। কোন প্রকার দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনা তাকে পাবে না। পোশাক পরিচ্ছদ ময়লা বা পুরাতন হবে না। আর তার যৌবন কাল কখনও শেষ হবে না (মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮০)। প্রথমে বলা হয়েছে জান্নাত যে কি আরাম আয়েশের জায়গা তার বিবরণ দেওয়া মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। যেমন অত্র হাদীছে বলা হ’ল জান্নাত এক চির সুখ-স্বাচ্ছন্দ ও আরাম-আয়েশের জায়গা। যেখানে কোনদিন দুশ্চিন্তা ও দুর্ভাবনার চিহ্ন আসবে না। পোশাক কোনদিন পুরাতন বা ময়লা হবে না, যৌবনও কোনদিন শেষ হবে না।
عَنْ اَبِىْ سَعِيْدِ الْخُدْرِىّ وَ اَبِىْ هُرَيْرَةَ اَنَّ رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يُنَادِىْ مُنَادٍ اِنَّ لَكُمْ اَنْ تَصِحُّوْا فَلَا تَسْقَمُوْا اَبَدًا وَاِنَّ لَكُمْ اَنْ تَحْيَوْا فَلَا تَمُوْتُوْا اَبَدًا وَاِنَّ لَكُمْ اَنْ تَشِبُّوْا فَلَا تَهْرَمُوْا اَبَدًا وَاِنَّ لَكُمْ اَنْ تَنْعَمُوْا فَلَا تَبَأْسُوْا اَبَدًا.
আবু সা‘ঈদ খুদ্রী ও আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, জান্নাতীগণ জান্নাতে প্রবেশ করার পর একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিবেন, তোমরা চিরদিন সুস্থ থাকবে আর কখনও অসুস্থ হবে না। তোমরা সর্বদা জীবিত থাকবে আর কখনও মৃত্যুবরণ করবে না। তোমরা চিরদিন যুবক থাকবে আর কোনদিন বৃদ্ধ হবেনা। তোমরা চিরদিন সুখ-স্বাচ্ছন্দে ও আরাম-আয়েশে থাকবে, কখনও হতাশা ও দুশ্চিন্তা তোমাদেরকে স্পর্শ করবে না (মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮১)।
عَنْ اَبِىْ سَعِيْدِ الْخُدْرِىِّ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ قَالَ اِنّ اَهْلَ الْجَنّةِ يَتَرَاؤنَ اَهْلَ الْغُرَفِ مِنْ فَوْقِهِمْ كَمَا تَتَرَائُوْنَ الْكَوْكَبَ الدُّرِّىَ الْغَابِرَ فِى الْاُفُقِ مِنَ الْمَشْرِقِ اَوِ الْمَغْرِبِ لِتَفَاضُلِ ماَ بَيْنَهُمْ قَالُوْا يَا رَسُوْلَ اللهِ تِلْكَ مَنَازِلُ الْاَنْبِيَاءِ لَايَبْلُغُهَا غَيْرُهُمْ قَالَ بَلى والّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِه رِجَالٌ اَمَنُوْا بِاللهِ وَصَدّقُوْا الْمُرْسَلِيْنَ.
আবু সা‘ঈদ খুদ্রী (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, নিশ্চয়ই জান্নাতবাসীগণ তাদের উর্ধের বালাখানার বাসীন্দাগণকে এমনভাবে দেখতে পাবে, যেমনভাবে তোমরা আকাশের পূর্ব দিকে কিংবা পশ্চিম দিকে একটি তারা দেখতে পাও। তাদের মধ্যে মর্যাদার পার্থক্যের কারণে এরূপ হবে। ছাহাবীগণ বললেন, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! সে স্থান তো হবে নবীগণের, অন্যেরা তো সেখানে পৌঁছতে পারবে না। রাসূল(সা.) বললেন, না; বরং সে সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ রয়েছে, যে সমস্ত লোকেরা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনবে এবং রাসূলগণের সত্যতা স্বীকার করবে তারাও সেখানে পৌঁছতে সক্ষম হবে (মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮২)। জান্নাতে মানুষের মর্যাদার খুব তারতম্য হবে। যমীন ও তারকার যেমন একটা অপরটা থেকে নীচে ও উপরে রয়েছে, তেমন জান্নাতীদের মান-মর্যাদার পার্থক্য হবে। তবে অসম্মানিত হবে না।
عَنْ اَبِىْ سَعِيْدِ الْخُدْرِىّ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اِنّ اللهَ تَعَالى يَقُوْلُ لِاَهْلِ الْجَنّةِ يَااَهْلَ الْجَنّةِ فَيَقُوْلُوْنَ لَبّيْكَ رَبّنَا وَسَعْدَيْكَ وَالْخَيرُ كُلُّهُ فِى يَدَيْكَ فَيَقُوْلُ هَلْ رَضِيْتُمْ فَيَقُوْلُوْنَ وَمَالنَا لِانَرْضَ يَارَبّ وَقَدْ اَعْطَيْتَنَا مَالَمْ تُعْطِ اَحَدًا مِنْ خَلْقِكَ فَيَقُوْلُ الَااُعْطِيْكُمْ اَفْضَلَ مِنْ ذلِكَ فَيَقُوْلُوْنَ يَارَبّ وَاَىُّ شَيْئٍ اَفْضَلُ مِنْ ذلِكَ فَيَقُوْلُ اُحِلّ عَلَيْكُمْ رِضْوَانِىْ فَلَا اَسْخَطُ عَلَيْكُمْ بَعْدَهُ اَبَدًا.
আবু সা‘ঈদ খুদরী (রা.) বলেন, রাসূল(সা.) বলেছেন, আল্লাহ জান্নাতবাসীগণকে লক্ষ্য করে বলবেন, হে জান্নাতবাসীগণ! তখন তারা বলবেন, ‘‘আমরা উপস্থিত। সৌভাগ্য তোমার নিকট থেকেই অর্জিত এবং যাবতীয় কল্যাণ তোমারই হাতে।’’ তখন আল্লাহ বলবেন, তোমরা কি সন্তষ্ট? তারা বলবেন, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা কেন সন্তুষ্ট হব না আপনিই তো আমাদের এমন জিনিস দান করেছেন যা আপনার সৃষ্টি জগতের আর কাউকেও দান করেন নি। তখন আল্লাহ বলবেন, আমি কি এর চেয়ে উত্তম জিনিস তোমাদেরকে দান করব না? তারা বলবে, হে আমাদের প্রতিপালক! এর চেয়ে উত্তম কি হ’তে পারে? তখন আল্লাহ বলবেন, আমি তোমাদের উপর আমার সন্তুষ্টি দান করছি, এরপর থেকে আমি আর কখনও অসন্তুষ্ট হব না (বুখারী, মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮৪)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, জান্নাতে আল্লাহর সন্তষ্টি সবচেয়ে উত্তম জিনিস। আর তা হচ্ছে আল্লাহ নিজেই বলবেন, আমি তোমাদের প্রতি সন্তুষ্ট হ’লাম, আর কোনদিন অসন্তুষ্ট হব না।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ أنَّ رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ اِنّ اَدْنى مَقْعَدِ اَحَدِكُمْ مِنَ الْجَنّةِ اَنْ يَقُوْلَ لَهُ تَمَنّ فَيَتَمَنّى وَيَتَمَنّى فَيَقُوْلُ لَهُ هَلْ تَمَنّيْتَ فَيَقُوْلُ نَعَمْ فَيَقُوْلُ لَهُ فَاِنّ لَكَ مَا تَمَنّيْتَ وَمِثْلُهُ مَعَهُ.
আবু হুরায়রা (রা.) হ’তে বর্ণিত, রাসূল(সা.) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জান্নাতে সর্বাপেক্ষা নিম্নমানের হবে, তাকে বলা হবে তুমি তোমার আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ কর। তখন সে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করবে আরও আশা-আকাঙ্খা ব্যক্ত করবে অর্থাৎ বারবার অনেক অনেক আশা প্রকাশ করবে। তখন আল্লাহ তাকে জিজ্ঞেস করবেন, কি তোমার আশা-আকাঙ্খা শেষ হয়েছে? সে বলবে হ্যাঁ। অতঃপর আল্লাহ বলবেন, তুমি যা আশা করেছ তা দেওয়া হ‘ল এবং তার সমপরিমাণ দ্বিগুণ দেওয়া হ’ল (মুসলিম, বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮৫)। মানুষ চাইবে তার বিবেক অনুযায়ী, আর আল্লাহ দিবেন তাঁর মর্যাদা অনুযায়ী আল্লাহ মানুষকে এত কিছু দিবেন যা মানুষের অন্তর পরিকল্পনা করতে পারে না। মানুষ যা চোখেও দেখে না, কানেও শোনে না ভাবতেও পারে না।
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ قَالَ قُلْتُ يَا رَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِمّ خُلِقَ الْخَلْقُ قَالَ مِنَ الْمَاءِ قُلْنَا الْجَنّةُ مَا ِبنَائُهَا قَالَ لَبِنَةٌ مِنْ ذَهَبٍ وَلَبِنَةٌ مِنْ فِضَّةٍ وَمَلَاطُهَا الْمِسْكُ الاَذْفَرُ وَحَصْبَاءُهَا اللُؤْلُؤُ وَالْيَاُقْوتُ وَتُرْبَتُهَا الزَّعْفَرَانُ مَنْ يَدْخُلُهَا يَنْعَمُ وَ لَايَبَأْسُ وَيَخْلُدُ وَلَا يَمُوْتُ وَلَا يَبْلى ثِيَابُهُمْ وَلَا يَفْنَى شَبَابُهُمْ.
আবু হুরায়রা (রা.) হ’তে বর্ণিত। আমি রাসূল(সা.) -কে জিজ্ঞেস করলাম, হে আল্লাহর রাসূল(সা.) ! আল্লাহ তার সমস্ত মাখলূক্বকে কি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন? নবী করীম(সা.) বললেন, পানি দ্বারা। আবার জিজ্ঞেস করলাম জান্নাত কি দ্বারা নির্মাণ করেছেন? নবী করীম(সা.) বললেন, এক ইট স্বর্ণের আর এক ইট রূপার এভাবে জান্নাত নির্মাণ করেছেন। আর তার মসল্লা হল সুগন্ধময় কস্ত্তরী এবং তার কংকর হ‘ল মনি-মুক্তা আর মাটি হ‘ল জাফরানের তৈরী। যে ব্যক্তি তাতে প্রবেশ করবে সে সুখে স্বাচ্ছন্দে থাকবে, সে কখনও হতাশা বা দুশ্চিন্তায় পতিত হবে না। সেখানে চিরস্থায়ী থাকবে কখনও মরবে না। তাদের পোশাক পরিচ্ছদ ময়লা বা পুরাতন হবে না এবং তাদের যৌবন শেষ হবে না (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত হা/৫৬৩০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৮৮)।
عَنْ اَنَسٍ عَنِ الّنِبّى صَلّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلّمَ اَنَّ رَسُوْلَ الله صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ يُعْطَى الْمُؤمِنُ فِى الْجَنّةِ قُوّةً كَذا وَكذَا مِنَ الْجِمَاعِ قِيْلَ ياَ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلمَ اَو يُطِيْقُ ذلِكَ قَالَ يُعْطَى قُوّةً مِئَةٍ.
আনাস (রা.) হ’তে বর্ণিত। নবী করীম(সা.) বলেছেন, জান্নাতী মুমিনদেরকে এত এত সহবাসের শক্তি প্রদান করা হবে। জিজ্ঞেস করা হ’ল হে আল্লাহর রাসূল! এক ব্যক্তি এত শক্তি রাখবে কি? নবী করীম(সা.) বললেন, একশত পুরুষের শক্তি প্রদান করা হবে (তিরমিযী, মিশকাত হা/৫৬৩৬; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৯৪, হাদীছ ছহীহ)। অত্র হাদীছ দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, জান্নাতে পুরুষদের স্ত্রী মিলন ক্ষমতা অনেক অনেক গুণ বেশি করে দেওয়া হবে। জান্নাত অনাবিল শান্তির জায়গা, এটা তার একটা বড় মাধ্যম।
عَنْ سَعَدِ بْنِ اَبِىْ وَقّاصِ عنْ الّنِبّى صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَنّهُ قَالَ لَوْ اَنّ مَا يُقِلُّ ظُفْرٌ مِمّا فِى الْجَنّةِ بَدَأ لَتَزَخْرَفَتْ لَهُ مَا بَيْنَ خَوَافَقِ السّمَوَاتِ والْاَرْضِ ولَوْ اَنّ رَجُلًا مِنْ اَهْلِ الْجَنّةِ اِطَّلَعَ فَبَدَأ اَسَاوِرُهُ لَطَمِسَ ضؤْهُ ضُوْءَ الشّمْسِ كَمَا تَطْمَسُ الشّمْسُ ضُوْءَ النُّجُوْمِ.
সা‘দ ইবনে আবু ওয়াককাছ (রা.) হ’তে বর্ণিত, নবী(সা.) বলেছেন, যদি জান্নাতের বস্ত সমূহ হ’তে নখ এর চেয়ে কম একটি ক্ষুদ্র বস্তুও পৃথিবীতে প্রকাশ হয়ে যায়, তবে আসমান ও যমীনের সমগ্র পার্শ্ব শেষ প্রান্তসহ উজ্জ্বল আলোকে সুসজ্জিত হয়ে যাবে। আর যদি জান্নাতের কোন ব্যক্তি দুনিয়ার দিকে উঁকি মারে এবং তার হাতের কংকন প্রকাশ পায়, তাহ’লে এ ব্যক্তি এবং কংকনের আলো সূর্য্যের আলোকে এমনভাবে বিলিন করে দিবে, যেমন সূর্যের আলো তারকার আলোকে বিলিন করে দেয় (তিরমিযী, হাদীছ ছহীহ, মিশকাত আলবানী হা/৫৬৩০; বঙ্গানুবাদ মিশকাত হা/৫৩৯৫)। অত্র হাদীছে জান্নাতের সমস্ত বস্তর এমন উজ্জ্বলতা প্রমাণ করা হয়েছে যা মানুষের বিবেচনার বাইরে। কারণ একজন জান্নাত হ’তে উঁকি মারলে তার জ্যোতিতে সূর্যের জ্যোতি বিলীন হবে, এ বাক্যের ভাবধারা মানুষের বুঝা বড় কঠিন। এমন জান্নাতের আশা করা মানুষের জন্য যরুরী কর্তব্য।