অতঃপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) রুকু অবস্থা থেকে মেরুদণ্ডকে উঠাতেন এই বলতে বলতেঃ سمِعَ اللهُ لِمَن حمِدَه অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে তিনি তার কথা শুনেন।[1]
এ বিষয়ে তিনি ছালাতে ক্ৰটিকারীকে নির্দেশ দিয়েছিলেনঃ
لاتتم صلاة لأحد من الناس حتى ... یکبر ... ثم یرکع ... ثم یقول: سمِعَ اللهُ لِمَن حمِدَه حتی یستوي قائما
কোন ব্যক্তির ছালাত ততক্ষণ পর্যন্ত পূর্ণ হবে না যতক্ষণ না সে (الله اكبر) আল্লাহু আকবার বলবে অতঃপর রুকু করবে। অতঃপর سمِعَ اللهُ لِمَن حمِدَه বলে সোজা হয়ে দাঁড়াবে। আবু দাউদ, হাকিম এবং তিনি একে ছহীহ বলেছেন ও যাহাবী তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
وکان اِذا رفع رأسه استوی حتی یعود کل فقار مکانه
তিনি যখন রুকু থেকে মাথা উঠাতেন তখন এমনভাবে সোজা হতেন যে, মেরুদণ্ডের হাড়গুলো স্ব-স্ব স্থানে ফিরে যেত।[2] অতঃপর তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় বলতেন— ربَّنا (و) لك الحمدُ অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক সব প্রশংসা তোমার।[3] এ বিষয়ে তিনি মুক্তাদীসহ সকল প্রকার মুছল্লীকে নির্দেশ দিয়ে বলেনঃ (صلوا کمار آیتمونی اصلی) অর্থঃ আমাকে তোমরা যেভাবে ছালাত আদায় করতে দেখ ঠিক সেভাবে ছালাত আদায় কর।[4]
তিনি বলতেনঃ
إنَّمَا جُعِلَ الإِمَامُ لِيُؤْتَمَّ بِهِ ... وَإِذَا قَالَ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فَقُولُوا رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ، يَسْمَعُ اللَّهُ لَكُمْ، فَإِنَّ اللَّهَ تَبَارَكَ وَتَعَالَى، قَالَ عَلَى لِسَانِ نَبِيِّه صلى الله عليه وسلم : سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ
ইমামকে কেবল অনুসরণের উদ্দেশে নিয়োগ করা হয়. তিনি যখন سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলবেন তখন তোমরা বলবে অর্থাৎ- [اللهم] رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ হে আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ! তোমার জন্যই সব প্ৰশংসা। আল্লাহ তোমাদের কথা শ্রবণ করবেন, কেননা আল্লাহ তাবারাক ওয়াতা'আলা স্বীয় নবীর কণ্ঠে বলেছেনঃ سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَه যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রশংসা করে তিনি তা শ্ৰবণ করেন।[5]
উপরোক্ত নির্দেশের কারণ দর্শিয়ে অপর হাদীছে তিনি বলেনঃ
فَإِنَّهُ مَنْ وَافَقَ قَوْلُهُ قَوْلَ الْمَلَائِكَةِ غُفِرَ لَهُ مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِهِ
কেননা যার কথা ফিরিশতাদের কথার সাথে মিলে যাবে তার পূর্বকৃত গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।[6] তিনি রুকু থেকে সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় দু’হাত উঠাতেন।[7] তাকবীরে তাহরীমায় উল্লেখিত নিয়মানুসারে এবং তিনি দাঁড়ানো অবস্থায় ইতিপূর্বে যেমন উল্লেখ হয়েছে বলতেনঃ[8]
رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ
কখনো বলতেনঃ[9]
رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ
কখনো এই শব্দ দুটোর اللهم শব্দ যোগ করতেন।[10]
তিনি এ বিষয়ে নির্দেশ দিয়ে বলতেনঃ
إذا قال الإمام سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ فقولوا اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ فإنه من وافق قوله قول الملائكة غفر له ما تقدم من ذنبه
ইমাম যখন- سَمِعَ اللَّهُ لِمَنْ حَمِدَهُ বলেন তখন তোমরা বলবে, اللَّهُمَّ رَبَّنَا لَكَ الْحَمْدُ কেননা যার কথা ফিরিশতাদের কথার সাথে মিলবে তার পূর্বকৃত পাপ মাফ করে দেয়া হবে।[11] কখনো তিনি এরসাথে নিম্নোক্ত দুআগুলোর যে কোন একটি বৃদ্ধি করতেনঃ
مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَمِلْءَ الْأَرْضِ وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ
অর্থঃ আসমান ভর্তি, যমীন ভর্তি এবং তদুপরি তুমি আরো যা চাও তাও ভর্তি তোমার প্রশংসা।[12]
مِلْءَ السَّمَاوَاتِ وَ(مِلْءَ) الْأَرْضِ وَمَا بَيْنَهُمَا وَمِلْءَ مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ
অর্থঃ আসমান ভর্তি, যমীন ভর্তি, এতদুভয়ের মধ্যে যাকিছু আছে তা ভর্তি ও তদুপরি তুমি আরো যা চাও তাও ভর্তি তোমার প্রশংসা।[13]
কখনো উপরোক্ত দু'আর সাথে এই কথা যোগ করতেনঃ
أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
অর্থঃ হে প্রশংসা ও মর্যাদার অধিকারী! তুমি যা দাও তা রোধকারী কেউ নেই, তুমি যা রোধ করা তা দানকারী কেউ নেই। আর কোন বিত্তশালী ব্যক্তির সম্পদ[14] তোমার কাছে কোন উপকার করতে পারে না।[15]
কখনো তিনি এই শব্দগুলো বৃদ্ধি করতেনঃ
مِلْء السَّمَوَاتِ وَالْأَرْضِ، وَمِلْء مَا شِئْتَ مِنْ شَيْءٍ بَعْدُ، أَهْلَ الثَّنَاءِ وَالْمَجْدِ، أَحَقّ مَا قَالَ الْعَبْدُ، وَكُلُّنَا لَكَ عَبْدٌ، اللَّهُمَّ لَا مَانِعَ لِمَا أَعْطَيْتَ، وَلَا مُعْطِيَ لِمَا مَنَعْتَ، وَلَا يَنْفَعُ ذَا الْجَدِّ مِنْكَ الْجَدُّ
অর্থঃ আসমান, জমিন এবং তদুপরি তুমি যা চাও তাও ভরতি তোমার প্ৰশংসা। হে প্ৰশংসা ও মর্যাদার অধিকারী, বান্দার প্রশংসা পাওয়ার সর্বাধিক যোগ্য, আমরা সবাই তোমার বান্দাহ, তুমি যা দাও তা রোধকারী কেউ নেই এবং তুমি যা রোধ করা তা দানকারী কেউ নেই, আর কোন বিত্তশালী ব্যক্তির সম্পদ তোমার নিকট কোন উপকার করতে পারবে না।[16]
কখনো তিনি রাত্রের ছালাতে বলতেনঃ
لِرَبِّي الْحَمْدُ لِرَبِّي الْحَمْدُ
আমার প্রতিপালকের জন্য সকল প্রশংসা। আমার প্রতিপালকের জন্য সকল প্রশংসা। এই দু'আটি বারংবার পাঠ করতেন যার ফলে তার রুকুর পর দাঁড়ানোর সময় রুকুর সময়ের কাছাকাছি হয়ে যেত। যে রুকু প্রাথমিক দাঁড়ানার প্রায় সমপরিমাণ ছিল যার ভিতর তিনি সূরা আল-বাকারা পাঠ করেছেন।[17]
رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ ، حَمْدًا كَثِيرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا فِيهِ مُبَارَكًا عَلَيْهِ كَمَا يُحِبُّ رَبُّنَا وَيَرْضَى
অর্থঃ হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার জন্য সব প্ৰশংসা। অত্যধিক পবিত্র প্রশংসা যার মধ্যে ও উপরে বরকত নিহিত। ঠিক ঐভাবে যেভাবে আমাদের প্রতিপালক ভালবাসেন ও সন্তুষ্ট হন।
এ দু'আটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর পিছনে ছালাত আদায়কারী এক ব্যক্তি ঐ সময় বলেছিল যখন তিনি রুকু থেকে মাথা উঠান এবং সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা বলেন। ছালাত শেষে রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ এক্ষণি (ছালাতে) কে কথা বলেছি? লোকটি বললঃ হে আল্লাহর রাসূল আমি বলেছি! রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেনঃ আমি তেত্ৰিশের ঊর্ধ্বে ফেরেশতাকে এ বিষয়ে প্রতিযোগিতা করতে দেখলাম যে, তাদের কে কার পূর্বে তা লিপিবদ্ধ করবে।[18]
[2] বুখারী ও আবু দাউদ, 'ছহীহ আবু দাউদ (৭২২)। الفقار যবর দ্বারা এর অর্থ মেরুদণ্ডের হাড় যা ঘাড় থেকে নিয়ে পশুর লেজের সূচনাস্থল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। ‘কামূস’ ও ফাতহুল বারী দ্রষ্টব্য। (২/৩০৮)
[3] বুখারী ও আহমাদ।
[4] বুখারী ও আহমাদ।
[5] মুসলিম, আবু আওয়ানা, আহমাদ ও আবু দাউদ। জ্ঞাতব্যঃ এই হাদীছ মুক্তাব্দীর “সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা” বলার সাথে ইমামের শরীক না হওয়ার প্রতি নির্দেশ করে না। অদ্রুপ “রব্বানা লাকাল হামদ” বলতে ইমামের মুক্তাব্দীর সাথে শরীক না হওয়ার প্রতি নির্দেশ করে না। কেননা হাদীছটি ইমাম ও মুক্তাদী এ রুকনাটিতে কী পাঠ করবে তা বলার জন্য আসেনি বরং এসেছে এটা বৰ্ণনা করার জন্য যে, ইমামের “সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা” বলার পর মুক্তাদী “রব্বানা লাকাল হামদ” বলবে। এই ব্যাখ্যার সমর্থনে রয়েছে, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ইমাম হওয়া সত্ত্বেও “রব্বানা লাকাল হামদ” বলার হাদীছ, এমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাদীছটির সাধারণ ভঙ্গিও এর সমর্থন করে- “তোমরা আমাকে যেভাবে ছালাত আদায় করতে দেখ ঠিক সেইভাবে ছালাত আদায় কর”। এ হাদীছের দাবী হচ্ছে- ইমাম যা করবে মুক্তাদীও তাই করবে। যেমন, সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদা ও অন্যান্য কার্যাদি। এ বিষয় নিয়ে আমার সাথে যে বিদ্বানগণ বুঝাপড়া করেছিলেন তাদের চিন্তা করা উচিত। আশা করি যা উল্লেখ করেছি তাই যথেষ্ট। অধিক জানার জন্য হাফিয সূয়ুতীর এ বিষয়ে লিখিত পুস্তিকা “দফ উততাশনী’য় ফীহুকামিত্ তাসমী।” যা তার কিতাব “আল-হাবী-লিল ফাতাউয়ি (১/৫২৯)-এর অন্তর্ভুক্ত।
[6] বুখারী, মুসলিম ও তিরমিযী এবং তিনি একে ছহীহ বলেছেন।
[7] বুখারী ও মুসলিম। এ হস্ত উত্তোলন নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে মুতাওয়াতির সূত্রে সাব্যস্ত। কিছু সংখ্যক হানাফী আলিমসহ বেশিরভাগ আলিম হাত উঠানাের পক্ষে মত পোষণ করেন।
[8] বুখারী ও মুসলিম।
[9] বুখারী ও মুসলিম।
[10] বুখারী, আহমাদ, ইবনুল কাইয়িম প্ৰমাদ বশতঃ এই “আল্লাহুম্মা” ও “ওয়াও” এর সমন্বয়ে বর্ণিত হাদীছ অর্থাৎ اللَّهُمَّ رَبَّنَا وَلَكَ الْحَمْدُ এর বিশুদ্ধতাকে যাদুল মা'আদ’ গ্রন্থে অস্বীকার করেন। অথচ তা বুখারী, মুসনাদে আহমাদ ও নাসাঈতে আবু হুরাইরা থেকে দুটি সূত্রে বর্ণিত হয়েছে। এমনিভাবে ইবনু উমার থেকে দারিামীতে ও আবু সাঈদ খুদরী থেকে বাইহাকীতে ও আবু মূসা আশা আরী থেকে নাসাঈর এক বর্ণনায়ও তা রয়েছে।
[11] বুখারী, মুসলিম, তিরমিযী একে ছহীহ বলেছেন।
[12] মুসলিম ও আবু আওয়ানাহ।
[13] মুসলিম ও আবু আওয়ানাহ।
[14] এখানে الجد শব্দটি বিশুদ্ধ মতানুসারে যবর দ্বারা হবে যার অর্থঃ ভাগ্য, বড়ত্ব ও রাজত্ব। অর্থাৎ পৃথিবীতে সন্তান, বড়ত্ব ও রাজত্ব লাভে ভাগ্যবান কোন ব্যক্তির এসব উপকারে আসবে না তথা তার সম্পদ তাকে মুক্তি দিতে পারবে না। বরং তার উপকার ও মুক্তির জন্য নেক আমলই কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে।
[15] মুসলিম ও আবু আওয়ানাহ।
[16] মুসলিম, আবু আওয়ানাহ ও আবু দাউদ।
[17] ছহীহ সনদে আবু দাউদ ও নাসাঈ, এটি ‘আল-ইরওয়া’তে উদ্ধৃত হয়েছে। (৩৩৫)
[18] মালিক, বুখারী ও আবু দাউদ।