নবী (সা.) এর ছলাত সম্পাদনের পদ্ধতি সালাত বিষয়ে বিস্তারিত মুহাম্মাদ নাছিরুদ্দিন আলবানী (রহ.) ৮৬ টি

আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখনই ছলতে দাঁড়াতেন তখন ফরয হোক আর নফল হোক উভয় অবস্থায়ই কা'বার দিকে মুখ করতেন[1] এবং তিনি এ ব্যাপারে নির্দেশও দিয়েছেন।

তাইতো ছলাতে ক্ৰটিকারী ব্যক্তিকে তিনি বলেনঃ

إذا قُمْتَ إلَى الصَّلاةِ فَأَسْبغِ الوُضُوءَ، ثم أسْتَقْبِلِ القِبْلَةَ، فَكَبِّرْ

“যখন তুমি ছলাতে দাঁড়াবে, তখন পরিপূর্ণরূপে উযু করবে, অতঃপর কিবালামুখী হয়ে তাকবীর বলবে।”[2]

তিনি [নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম] সফরে স্বীয় বাহনের উপর নফল ছলাত পড়তেন এবং তার উপরে বিতরও পড়তেন, সে তাকে নিয়ে পূর্ব পশ্চিম যেদিকে মন সে দিকে নিয়ে যেত।[3] এ ব্যাপারেই আল্লাহর বাণী নাযিল হয়ঃ (فَأَيْنَمَا تُوَلُّوا فَثَمَّ وَجْهُ اللَّهِ) অর্থঃ তোমরা যেদিকেই মুখ ফিরাওনা কেন সেখানেই আল্লাহর চেহারা বিদ্যমান।[4] আবার (কখনও) স্বীয় উটনীর উপর নফল পড়তে চাইলে তাকে ক্বিলামুখী করে তাকবীর বলতেন, অতঃপর সে যে দিকেই তাঁকে নিয়ে যেত সেদিকেই ছলাত পড়তেন।[5] “তিনি স্বীয় বাহনের উপর মাথার ইঙ্গিত দ্বারা রুকু ও সাজদাহ করতেন, সাজদাহকে রুকুর তুলনায় অধিক নিম্নমুখী করতেন।”[6] “ফরয ছলাত পড়ার ইচ্ছা করলে অবতরণ করে কিবলামুখী হতেন।”[7]

তবে মারাত্মক ভয়ভীতির সময় নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাঁর উম্মতের জন্য আদর্শ রেখে গেছেন যে, তারা স্বীয় পদব্রজে অথবা আরোহী অবস্থায়, কিবলামুখী হয়ে অথবা অন্যমুখী হয়ে ছলাত পড়তে পারবে।[8] তিনি আরো বলেছেনঃ

إِذَا اخْتَلَطُوا فَإِنَّمَا هُوَ التَّكْبِيرُ وَالإِشَارَةُ بِالرَّأْسِ

অর্থঃ যখন তারা (দু'পক্ষ) সংঘর্ষে লিপ্ত হয় তখন কেবল তাকবীর ও মস্তকের ইঙ্গিতই যথেষ্ট।[9]

তিনি আরো বলেন,

مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ قِبْلَةٌ

অর্থঃ পূর্ব ও পশ্চিম এর মাঝেই কিবলা রয়েছে।[10]

জাবির (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ “আমরা রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর সাথে কোন সফর বা জিহাদী কাফেলায় ছিলাম। অতঃপর আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হওয়ার কারণে আমরা কিবলা নিয়ে মতানৈক্যে পড়ে যাই। প্রত্যেকে পৃথকভাবে ছলাত আদায় করি এবং ছলাতের অবস্থান জানার জন্য আমাদের একেকজন নিজের সম্মুখে দাগ কেটে রাখে। পরক্ষণে যখন প্রভাত হল। তখন দাগ দেখলাম তাতে প্রমাণিত হল যে, আমরা কিবলা ভুল করে অন্যদিকে ছলাত পড়েছি। আমরা এ ঘটনা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জানালাম, (তিনি আমাদেরকে পুনরায় ছলাত পড়তে বলেননি) বরং বললেনঃ (তোমাদের ছলাত যথেষ্ট হয়েছে)”।[11]

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) (কাবাকে সামনে রেখে) বাইতুল মাকদিসের দিকে ছলাত পড়তেন যে পর্যন্ত এই আয়াত অবতীর্ণ হয়নিঃ

قَدْ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجْهِكَ فِي السَّمَاءِ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبْلَةً تَرْضَاهَا فَوَلِّ وَجْهَكَ شَطْرَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ

অর্থঃ অবশ্যই (হে নবী) আমি তোমার মুখমণ্ডলকে আকাশ পানে বারবার ফিরাতে দেখছি, আমি অবশ্য অবশ্যই তোমাকে তোমার পছন্দনীয় কিবলার দিকে ফিরিয়ে দিব। অতএব, তোমার মুখমণ্ডলকে মাসজিদুল হারামের অভিমুখে ফিরিয়ে দাও।[12]

যখন এ আয়াত নাযিল হল তখন তিনি কাবামুখী হয়ে গেলেন। কুবাবাসীরা মসজিদে ফজরের ছলাত আদায়রত ছিল। এমতাবস্থায় হঠাৎ এক আগন্তুক এসে বললঃ আল্লাহর রাসূলের উপর গত রাতে কুরআন অবতীর্ণ হয়েছে, যাতে তাঁকে কাবামুখী হওয়ার জন্য আদেশ করা হয়েছে। সুতরাং তোমরাও তার দিকে মুখ ফিরাও। তাদের মুখগুলো তখন সিরিয়ার দিকে ছিল। খবর শ্রবণান্তে তারা সবাই ঘুরে গেল আর ইমামই তাদেরকে নিয়ে (বর্তমান) কিবলার দিকে ঘুরেছিলেন।[13]

[1] এ বিষয়টি বহু সূত্রে অব্যাহত ধারায় চূড়ান্তরূপে জানাশুনা বিধায় উদ্ধৃতি নিষ্প্রয়োজন; এছাড়া যে তথ্য আসছে তাতে এর নির্দেশ রয়েছে।

[2] বুখারী, মুসলিম, সাররাজ। প্রথমটি “আল-ইরওয়া” কিতাবে এসেছে (২৮৭)।

[3] প্রাগুক্ত।

[4] ইমাম মুসলিম এটা বর্ণনা করেছেন এবং ইমাম তিরমিযী একে ছহীহ বলেছেন।

[5] আবু দাউদ, ইবনু হিব্বান “আস-সিকাত” এর (১/১২) পৃষ্ঠায়, যিয়া “আল-মুখতারাহ” তে হাসান সনদে এটা বৰ্ণনা করেছেন আর ইবনুস্ সাকান একে ছহীহ বলেছেন, ইবনুল মুলাক্বকিনও “খুলাসাতু বাদরুল মুনীর” এর (১/২২) তে একে ছহীহ বলেছেন। আবার আব্দুল হক আল ইশবিলী তাদের পূর্বেই তাঁর “আহকাম” কিতাবে ছহীহ বলে রেখেছেন যা আমার যাচাইকৃত মুদ্রণের (১৩৯৪ নং হাদীছ) ইবনু হানী ইমাম আহমাদ থেকে তাঁর “মাসাইল” গ্রন্থের (১/৬৭) পৃষ্ঠায় বর্ণনা করেছেন তাতে ইমাম আহমাদের মতও এটাই।

[6] আহমাদ, তিরমিযী; তিরমিযী একে ছহীহ বলেছেন।

[7] বুখারী ও আহমাদ।

[8] বুখারী ও মুসলিম। এ হাদীছটি “আল ইরওয়া” ৫৮৮ পৃষ্ঠায় উদ্ধৃত হয়েছে।

[9] বুখারী ও মুসলিমের সনদে বাইহাকী।

[10] তিরমিযী, হাকিম; তারা উভয়ে একে সহীহ বলেছেন। আমি মানারুস সাবীল কিতাবের তাখরীজ বা হাদীছ যাচাইমূলক উদ্ধৃতি গ্রন্থ “ইরওয়াউল গালীল” এর ২৯২ নং হাদীছে উল্লেখ করেছি।

[11] দারাকুতনী, হাকিম, বায়হাকী, তিরমিযী ও ইবনু মাজহতে এর সাক্ষ্য মূলক বর্ণনা রয়েছে, অপর আরেক সাক্ষ্য ত্বাবরানীতে রয়েছে “আল-ইরওয়া” ২৯৬৷

[12] সূরা আল-বাক্বারা ১৪৪ আয়াত।

[13] বুখারী, মুসলিম, আহমাদ, আসসাররাজ ও ত্বাবরানী (৩/১০৮/২), ইবনু সা'দ (১/২৪৩), এটা আল ইরওয়া (২৯০)-তে রয়েছে।

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ফরয ও নফল ছালাতে সোজা হয়ে দাঁড়াতেন আল্লাহ তা'আলার এই বাণীর অনুসরণেঃ

وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ

অর্থঃ তোমরা আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয় ভরে দাঁড়াও।[1]

তবে সফরে নফল ছলাত তিনি বাহনের উপর পড়তেন এবং স্বীয় উম্মতের জন্য প্রচণ্ড ভীতির সময় পায়ে হাঁটা অথবা আরোহী অবস্থায় ছলাত পড়ার রীতি রেখে যান। যেমনটি ইতিপূর্বে উল্লেখ হয়েছে। আর তা হচ্ছে আল্লাহর এ বাণী অবলম্বনেঃ

حَافِظُوا عَلَى الصَّلَوَاتِ وَالصَّلَاةِ الْوُسْطَىٰ وَقُومُوا لِلَّهِ قَانِتِينَ ٭ فَإِنْ خِفْتُمْ فَرِجَالًا أَوْ رُكْبَانًا فَإِذَا أَمِنْتُمْ فَاذْكُرُوا اللَّهَ كَمَا عَلَّمَكُمْ مَا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ

অর্থঃ তোমরা ছলাতসমূহ, বিশেষ করে মধ্যবর্তী ছলাত[2] পূর্ণ নিয়মানুবর্তিতার সাথে পালন কর এবং আল্লাহর উদ্দেশ্যে বিনয় সহকারে দাঁড়াও, যদি ভীতিগ্রস্ত হও তবে পদব্রজে অথবা আরোহী অবস্থায় (ছলাত পড়)। অতঃপর যখন নিরাপদ হও তখন তোমরা আল্লাহকে স্মরণ কর যেভাবে তিনি তোমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন, যা তোমরা (আগে) জানতে না।[3]

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মৃত্যুর রোগকালীন অবস্থায় বসে ছলাত আদায় করেছেন।[4]

ইতিপূর্বেও তিনি যখন অসুস্থ হয়েছিলেন তখন আরো একবার বসে ছলাত আদায় করেন। লোকেরা তার পিছনে দাঁড়িয়ে ছলাত পড়ছিল। তিনি তাদেরকে ইঙ্গিতে বললেন বস, তখন তারা সবাই বসে যায়। ছলাত শেষ করে বললেনঃ

ان کنتم آنفا لتفعلون فعل فارس والروم یقومون علی ملوکهم و هم قعود فلا تفعلوا إنما جعل الإمام ليؤتم به فإذا ركع فاركعوا وإذا رفع فارفعوا وإذا صلى جالساً فصلوا جلوسا (أجمعون

কিছুক্ষণ পূর্বে তোমরা পারস্য ও রোম সম্প্রদায়ের কাজ করতে শুরু করেছিলো। তারা তাদের রাজা-বাদশাদেরকে উপবিষ্ট অবস্থায় রেখে নিজেরা দাঁড়িয়ে থাকে। তোমরা এমনটি করো না। ইমামকে কেবল অনুকরণের জন্যই নিয়োগ করা হয়। তাই তিনি যখন রুকু করেন তখন তোমরা রুকু কর, আর তিনি যখন মাথা উঠান তখন তোমরাও মাথা উঠাও, তিনি যখন বসে ছলাত আদায় করেন তখন তোমরা সবাই বসে ছলাত আদায় করা।[5]

[1] সূরা আল-বাকারাহ ২৩৮ আয়াত।

[2] অধিকাংশ উলামার বিশুদ্ধ মত অনুযায়ী সে ছলাতটি হচ্ছে আছরের ছলাত। তাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম আবু হানীফা এবং তাঁর সাথীদ্বয়, এ বিষয়ে অনেক হাদীছ রয়েছে। হাফিয ইবনু কাছীর এগুলোকে তাঁর তাফসীর গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন।

[3] সূরা আল-বাকারাহ ২৩৮-২৩৯ আয়াত।

[4] তিরমিযী একে বর্ণনা করে ছহীহ বলেছেন, আহমাদও এটি বর্ণনা করেন।

[5] বুখারী, মুসলিম; এটি আমার কিতাব “ইরওয়াউল গালীল” এর ৩৯৪ নং হাদীছের আওতায় উদ্ধৃত হয়েছে।
صلاة المريض جالسا পীড়িত ব্যক্তির বসে ছলাত আদায়

'ইমরান বিন হুছাইন (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ আমি অর্শ[1] রোগে আক্রান্ত ছিলাম, রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেনঃ

صَلِّ قَائِمًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَقَاعِدًا فَإِنْ لَمْ تَسْتَطِعْ فَعَلَى جَنْبٍ

দাঁড়িয়ে ছলাত পড়, যদি তা না পার তবে বসে পড়বে। যদি তাও না পার তবে কাত হয়ে দেহের পার্শ্বদেশের ভরে শুয়ে পড়বে।[2] তিনি আরো বলেনঃ আমি নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে বসে ছলাত আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলাম, তিনি বললেনঃ

مَنْ صَلَّى قَائِمًا فَهْوَ أَفْضَلُ وَمَنْ صَلَّى قَاعِدًا فَلَهُ نِصْفُ أَجْرِ الْقَائِمِ وَمَنْ صَلَّى نَائِمًا (وفى رواية: مضطجعا) فَلَهُ نِصْفُ أَجْرِ الْقَاعِدِ

যে কোন ব্যক্তির দাঁড়িয়ে ছলাত পড়াই উত্তম। যে ব্যক্তি বসে ছলাত পড়বে সে দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারীর অর্ধেক ছওয়াব পাবে, আর যে শুয়ে (অপর বর্ণনায় পার্শ্ব দেশের উপর) ছলাত পড়বে সে বসে ছলাত আদায়কারীর অর্ধেক ছওয়াব পাবে।[3]

এ হাদীছে পীড়িত ব্যক্তির কথাই বুঝানো হয়েছে। আনাস (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ

خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم على ناس وهم يصلون قعودا من مرض، فقال: إن صلاة القاعد على النصف من صلاة القائم

রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদল লোকের নিকট গমন করে দেখলেন তারা অসুস্থতার দরুণ বসে ছলাত পড়ছে। এদেখে তিনি বললেন- বসে ছলাত আদায়কারীর ছওয়াব দাঁড়িয়ে ছলাত আদায়কারীর অর্ধেক।[4]

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এক পীড়িত ব্যক্তিকে পরিদর্শন করতে গিয়ে তাকে বালিশের উপর ছলাত আদায় করতে দেখে তিনি তা টেনে নিয়ে দূরে নিক্ষেপ করেন। অতঃপর সে ব্যক্তি একখণ্ড কাঠ[5] নিলেন এর উপর ছলাত পড়ার জন্য। তিনি তাও টেনে নিয়ে ফেলে দেন এবং বলেনঃ যদি সম্ভব হয় তবে মাটির উপর ছলাত পড়বে তা না হলে ইশারা করে পড়বে এবং সাজদাকে রুকু অপেক্ষা বেশী নিচু করবে।[6]

[1] যে শব্দ দ্বারা অৰ্শরোগ বুঝানো হয়েছে তাকে একবচনে باسور -ও বলা হয়। শেষের অক্ষর তখন হবে (ر) রা। এর অর্থ নিতম্বের অভ্যন্তরীণ ফোঁড়া বিশেষ। আবার একে باسون-ও বলা হয়, শেষের অক্ষর (ن) নুন সহকারে যার অর্থ এমন ফোড়া বিশেষ যাতে রক্ত থাকা পর্যন্ত আরোগ্য লাভ হয় না। (ফতহুল বারী)

[2] বুখারী, আবু দাউদ ও আহমাদ।

[3] বুখারী, আবু দাউদ ও আহমাদ। ইমাম খাত্ত্বাবী বলেনঃ ইমরান (রাযিআল্লাহু আনহু)-এর হাদীছ দ্বারা ঐ পীড়িত ফরয আদায়কারী ব্যক্তিকে বুঝানো হয়েছে, যে কষ্ট করে হলেও দাঁড়াতে পারে। এমতাবস্থায় বসা ব্যক্তির ছওয়াব দাঁড়ানো ব্যক্তির ছওয়াব অপেক্ষা অর্ধেক করা হয়েছে তাকে দাঁড়ানোর প্রতি প্রেরণা দান করার উদ্দেশ্যে যদিও (এ অবস্থায়) বসা জাইয রয়েছে। হাফিয ইবনু হাজার ফাতহুল বারীতে বলেছেন (২/৪৬৮) এটি যুক্তি সঙ্গত ব্যাখ্যা।

[4] আহমাদ ও ইবনু মাজাহ, সনদ ছহীহ।

[5] “লিসানুন আরব” অভিধানে রয়েছে, (উদ) কাঠ বলতে চিকন কাঠ বুঝায়। আবার এও বলা হয়েছে যে, যে কোন বৃক্ষের কাঠ চাই তা চিকন হোক বা মোটা হোক । আমি বলবোঃ হাদীছ দ্বিতীয় অর্থকেই সমর্থন করে। কেননা প্রথম অর্থ দ্বারা ব্যাখ্যা করা দুর্বোধ্য হবে।

[6] ত্বাবরানী, বাযযার, ইবনুস সাম্মাক স্বীয় হাদীছ গ্রন্থে (২/৬৭) বাইহাকী, এর সনদ ছহীহ যেমনটি আমি বর্ণনা করেছি “ছহীহা” (৬২৩ হাঃ)।

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-কে নৌযানে সালাত আদায় সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেনঃ (صَلِّ فِيهَا قَائِمًا، إِلا أَنْ تَخَافَ الْغَرَقَ) ডুবে যাওয়ার আশঙ্কা না করলে তার উপর দাঁড়িয়ে ছলাত আদায় করবে।[1]

বয়স বেশী হলে ও বার্ধক্যে উপনীত হলে তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার ছলাতের স্থানে স্তম্ভ বানিয়ে নেন যার উপর তিনি ভর দিতেন।[2]

[1] বাযযার (৬৮) দারাকুতনী, আব্দুল গনী আল মাক্বদ্দিসী “সুনান” এর (২/৮২) পৃষ্ঠায় হাকিম একে ছহীহ বলেছেন এবং যাহাবী তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। (ফায়েদাহঃ) বিমানে ছলাত পড়ার বিধান নৌযানে ছলাত পড়ার মতই। যদি সম্ভব হয় তবে দাঁড়িয়ে ছলাত পড়বে, তা না হলে বসেই ইশারার মাধ্যমে রুকু সাজদা করে পূর্বোল্লিখিত পদ্ধতি অনুযায়ী ছলাত পড়বে।

[2] আবু দাউদ, হাকিম, তিনি ও যাহাবী একে ছহীহ বলেছেন। আমি একে “ছহীহা” (৩১৯) ও “ইরওয়া” এর (৩৮৩) নং হাদীছে উদ্ধৃত করেছি।
القيام والقعود فى صلاة الليل রাত্রিকালীন ছলতে দাঁড়ানো ও বসা

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দীর্ঘরাত ধরে দাঁড়িয়ে আবার কখনও দীর্ঘরাত ধরে বসে ছলাত পড়তেন। তিনি যখন দাঁড়িয়ে কিরা’আত পড়তেন তখন দাঁড়িয়ে রুকু করতেন আর যখন বসে কির’আত পড়তেন তখন বসে রুকু করতেন।[1] তিনি কখনও বসে ছলাত আদায়কালে যখন বসে কিরা'আত পড়তেন তখন ত্রিশ বা চল্লিশ আয়াত অবশিষ্ট থাকতে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং দাঁড়ানো অবস্থায় সেগুলো পড়ে রুকুতে যেতেন ও সাজদা করতেন। অতঃপর দ্বিতীয় রাকাআতেও এ রকম করতেন। [2]

তিনি কেবল বৃদ্ধ হলেই শেষ বয়সে মৃত্যুর এক বৎসর পূর্বে বসে নফল ছলাত পড়েছেন।[3]

তিনি আসন পেতে (চারজানু হয়ে) ছলাতে বসতেন। অর্থাৎ ডান পায়ের তলা বাম উরুর নীচে ও বাম পায়ের তলা ডান উরুর নীচে করে বসতেন।[4]

[1] মুসলিম ও আবু দাউদ।

[2] বুখারী ও মুসলিম।

[3] মুসলিম ও আহমাদ।

[4] নাসাঈ, ইবনু খুযাইমাহ স্বীয় “ছহীহ” এর (১/১০৭/২) আব্দুল গনী আল মাকদিসী। “আস সুনান” এর (১/৮০) ও হাকিম, তিনি একে বলেছেন ও যাহাবী তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
الصلاة في النعال والأمر بها জুতা পরে ছলাত ও তার আদেশ

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কখনও খালি পায়ে দাঁড়াতেন। আবার কখনও জুতা পরে দাঁড়াতেন।[1] আর উম্মতের জন্য এটা বৈধ রেখেছেন। তিনি বলেছেনঃ তোমাদের কেউ যখন ছলাত পড়বে তখন সে যেন স্বীয় জুতা জোড়া পরে নেয়, অথবা খুলে নিয়ে স্বীয় পদদ্বয়ের মধ্যভাগে রেখে দেয়, সে দুটির দ্বারা যেন অপরকে কষ্ট না দেয়।[2]

কখনও জুতা পরে ছলাত আদায়ের উপর জোর (তাগিদ) দিয়ে বলেছেনঃ

خالفوا اليهود فإنهم لا يصلون في نعالهم ولا خفافهم

তোমরা ইয়াহুদদের বিরোধিতা কর কেননা তারা জুতা এবং মোজা পরে ছলাত পড়ে না।[3]

কখনও ছলাতাবস্থাতেই স্বীয় পদযুগল থেকে জুতা জোড়া খুলে ছলাত চালিয়ে যেতেন।

যেমন আবু সাঈদ খুদরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু) বলেনঃ

আমাদেরকে নিয়ে একদা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছলাত পড়েছিলেন, ছলাতের এক পর্যায়ে তিনি স্বীয় জুতা জোড়া খুলে তার বাম পার্শ্বে রেখে দিলেন। এ দেখে লোকজনও তাদের জুতা খুলে ফেলল, তিনি ছলাত সম্পন্ন করে বললেনঃ তোমাদের কী হল যে, তোমরা জুতা খুলে রেখে দিলে? তারা বললঃ আমরা আপনাকে জুতাদ্বয় খুলে রাখতে দেখেছি তাই আমরাও আমাদের জুতাগুলো খুলে ফেলেছি।

তিনি বললেনঃ জিবরীল এসে আমাকে বললেন, জুতায় ময়লা (অথবা বললেনঃ কষ্টদায়ক বস্তু) (অপর বর্ণনায় অপবিত্র বস্তু) রয়েছে। তাই আমি জুতাদ্বয় খুলে ফেলেছি। অতএব তোমাদের কেউ যখন মসজিদে আসবে তখন সে যেন স্বীয় জুতাদ্বয়ের প্রতি লক্ষ করে, তাতে যদি ময়লা (অথবা বললেনঃ কষ্টদায়ক বস্তু) (অপর বর্ণনায় অপবিত্র বস্তু) দেখে তবে যেন জুতাদ্বয়কে মুছে নেয় এবং তা পরিধান করে ছলাত পড়ে।[4]

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন জুতাদ্বয় খুলতেন তখন তাঁর বাম পার্শ্বে রাখতেন।[5] তিনি বলতেনঃ তোমাদের কেউ যখন ছলাত পড়বে তখন স্বীয় জুতাদ্বয় যেন তার ডান পার্শ্বে না রাখে। আর অন্যের ডানে হলে বাম পার্শ্বেও না রাখে তবে বাম পার্শ্বে কেউ না থাকলে সে পাশ্বেই রাখবে। অন্যথায় জুতাদ্বয় স্বীয় পদদ্বয়ের মধ্যস্থানে রাখবে।[6]

[1] আবু দাউদ, ইবনু মাজাহ। হাদীছটি মুতাওয়াতির যেমন ইমাম ত্বাহাবী উল্লেখ করেছেন।

[2] আবু দাউদ, বাযযার (স্বীয় যাওয়াইদে ৫৩) হাকিম একে ছহীহ বলেছেন এবং যাহাবী তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

[3] আবু দাউদ, বাযযার (স্বীয় যাওয়াইদে ৫৩) হাকিম একে ছহীহ বলেছেন এবং যাহাবী তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।

[4] আবু দাউদ, ইবনু খুযাইমাহ, হাকিম; তিনি একে ছহীহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী ও নববী তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। প্রথম হাদীছটি “আল ইরওয়া”-তে উদ্ধৃত হয়েছে (২৮৪ নং হাদীছ)।

[5] আবু দাউদ, নাসাঈ, ইবনু খুযাইমা (১/১১০/২) ছহীহ সনদে।

[6] আবু দাউদ, ইবনু খুযাইমাহ, হাকিম; তিনি একে ছহীহ বলেছেন এবং ইমাম যাহাবী ও নববী তার সাথে ঐকমত্য পোষণ করেছেন। প্রথম হাদীছটি “আল ইরওয়া”-তে উদ্ধৃত হয়েছে (২৮৪ নং হাদীছ)।

তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) একদা মিম্বরের উপর ছলাত পড়েন। (অপর বর্ণনায় এটি ছিল তিন স্তর বিশিষ্ট)[1] তিনি এর উপর দাঁড়ালেন এবং আল্লাহু আকবার বললেন, লোকেরাও তাঁর পিছনে আল্লাহু আকবার বলল। তখনও তিনি মিম্বরে অবস্থানরত [অতঃপর মিম্বরের উপরেই রুকু করলেন] তারপর সোজা হয়ে পিছনে সরে অবতরণ করলেন এবং মিম্বরের পাদদেশে সাজদাহ করলেন। অতঃপর প্রত্যাবর্তন করলেন [এবং দ্বিতীয় রাকাআতে প্রথম রাক’আতের ন্যায় আমল করলেন] শেষ পর্যন্ত ছলাত সম্পন্ন করে লোকজনের দিকে মুখ করে বললেনঃ

يا أيها الناس! إني صنعت هذا لتأتموا بي، ولِتَعلَّموا صلاتي

হে লোক সমাজ! আমি এমনটি এজন্য করেছি যেন তোমরা আমার অনুকরণ করতে পার এবং আমার ছলাত শিখতে পারো।[2]

[1] মিম্বরের ক্ষেত্রে এই তিন স্তর হওয়াই সুন্নাত, এর চেয়ে বেশী নয়। বেশী করা হচ্ছে উমাইয়াদের কর্তৃক প্রবর্তিত বিদআত যা অনেক ক্ষেত্রে ছফ বিচ্ছিন্ন করে ফেলে। আবার এই পরিস্থিতি থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য মসজিদের পশ্চিম পার্শ্বে অথবা মিহরাবে রাখা এটি আরেকটি বিদআত। এমনিভাবে একে দক্ষিণ দেয়ালে উচু করে। বারান্দার মত বানানো যাতে প্রাচীর ঘেষা সিড়ি দিয়ে উঠতে হয় (এটিও বিদআত)। বস্তুত সর্বোত্তম আদর্শ হচ্ছে মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আদর্শ। দেখুন “ফাতহুল বারী” (২/৩৩১)।

[2] বুখারী ও মুসলিম এবং অপর বর্ণনাটিও মুসলিমের, ইবনু সা'দ (১/২৫৩)। এটি ইরওয়াতে উদ্ধৃত হয়েছে (৫৪৫)।
السترة ووجوبها সুতরা বা আড়াল ও তার ওয়াজিব হওয়া প্ৰসঙ্গ

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সুতরার নিকটবর্তী হয়ে (ছলাতে দাঁড়াতেন। তাঁর ও দেয়ালের মধ্যে তিন হাতের ব্যবধান থাকত।[1] তাঁর সাজদার স্থান ও দেয়ালের মধ্যে একটি বকরী অতিক্রম করার মত ব্যবধান থাকত।[2] তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতেনঃ

لا تُصَلِّ إِلا إِلَى سُتْرَةٍ وَلا تَدَعْ أَحَدًا يَمُرُّ بَيْنَ يَدَيْكَ فَإِنْ أَبَى فَلْتُقَاتِلْهُ فَإِنَّ مَعَهُ الْقَرِينَ

সুতরা ব্যতীত ছলাত পড়বে না, আর তোমার সম্মুখ দিয়ে কাউকে অতিক্রম করতে দিবে না, যদি সে অগ্রাহ্য করে তবে তার সাথে লড়াই করবে, কেননা তার সাথে কারীন (শয়ত্বন) রয়েছে।[3]

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলতেনঃ

إذا صلّی أحدکم إلی السّترة فلیدن منها لایقطع الشّیطان علیه صلاته

তোমাদের কেউ যখন সুতরার অভিমুখে ছলাত পড়তে দাঁড়ায় তখন যেন তার নিকটবর্তী হয় (যাতে) শয়ত্বান তার ছলাত বিনষ্ট না করতে পারে।[4]

কোন কোন সময় তিনি তার মসজিদে অবস্থিত স্তম্ভের নিকট ছলাত পড়ার চেষ্টা করতেন।[5]

তিনি যখন [মরুভূমিতে ছলাত পড়তেন যেখানে সুতরা (আড়াল) করার কিছুই নেই] তখন তাঁর সামনে একটি বর্শা গেড়ে তার দিকে ছলাত পড়তেন এবং লোকজন তাঁর পিছনে (ছলাত পড়তে) থাকত।[6] আবার কখনো তিনি আড়াআড়িভাবে স্বীয় বাহনকে রেখে ওর দিকে ছলাত আদায় করতেন।[7]

এটা উট রাখার স্থানে ছলাত পড়ার বিধানের বিপরীত।[8] কেননা সেখানে ছলাত পড়তে তিনি নিষেধ করেছেন।[9]

কখনোবা বাহন ধরে তাকে সোজা করে তার পিছনের কাঠ খণ্ডের দিকে ছলাত পড়তেন।[10] তিনি বলতেনঃ

إِذَا وَضَعَ أَحَدُكُمْ بَيْنَ يَدَيْهِ مِثْلَ مُؤَخِّرَةِ الرَّحْلِ فَلْيُصَلِّ وَلَا يُبَالِ مَنْ يَمُرُّ وَرَاءَ ذَلِكَ

তোমাদের কেউ যখন বাহনের পিছনের কাঠখণ্ড সদৃশ কোন বস্তু সামনে রাখে তখন এর পিছন দিক দিয়ে কে অতিক্রম করে এর পরোয়া না করে নিঃসঙ্কোচে তার দিকে মুখ করে ছলাত আদায় করবে।[11]

একবার তিনি একটি বৃক্ষের দিকে মুখ করে ছলাত পড়েছেন।[12] কখনোবা তিনি খাট (পালঙ্ক) এর দিকে মুখ করে ছলাত পড়তেন। অথচ আইশা (রাদিয়াল্লাহু আনহা) তার উপর কাৎ হয়ে (স্বীয় চাদরের নীচে) শুয়ে থাকতেন।[13]

নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার এবং সুতরার মধ্য দিয়ে কোন বস্তুকে অতিক্রম করতে দিতেন না। এক সময় তিনি ছলতে পড়তে ছিলেন হঠাৎ একটি ছাগল তার সম্মুখ দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছিল। তিনি তার সাথে পাল্লা দিয়ে তার পেটকে দেয়ালে লাগিয়ে দিলেন (ফলে সে তাঁর পিছন দিয়ে অতিক্রম করে)।[14]

কোন এক ফরয ছলাত পড়াকালীন অবস্থায় স্বীয় হাত জড় করে ফেললেন যখন ছলাত শেষ করলেন ছাহাবাগণ বললেন, হে আল্লাহর রসূল! ছলাতে কি কিছু ঘটেছে? তিনি বললেন, না, তবে শয়ত্বান আমার সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করতে চেয়েছিল তাই আমি তার গলা চেপে ধরেছিলাম। এমনকি আমি তার জিহ্বার শীতলতা আমার হাতে অনুভব করেছি। আল্লাহর শপথ তার ব্যাপারে যদি আমার ভাই সুলাইমান (আঃ) আমাকে অতিক্রম না করতেন (অর্থাৎ জ্বিন-শয়তান আয়ত্ব করার ক্ষমতা শুধু তাকে দেয়া হোক এ মর্মে দুআ না করতেন)। তবে তাকে মসজিদের কোন খুঁটির সঙ্গে বেঁধে রাখা হত এমনকি মদীনার শিশুরা তাকে নিয়ে ঘুরে বেড়াতা। [সুতরাং যে ব্যক্তির কিবালা ও তার মধ্যে কেউ অন্তরায় না হোক এ ব্যাপারে ক্ষমতা রাখে সে যেন তা করে।]।[15]

তিনি বলেছেনঃ

إِذَا صَلَّى أَحَدُكُمْ إِلَى شَيْءٍ يَسْتُرُهُ مِنْ النَّاسِ، فَأَرَادَ أَحَدٌ أَنْ يَجْتَازَ بَيْنَ يَدَيْهِ فَلْيَدْفَعْ فِي نَحْرِهِ (وليدرأ مااستطاع) (وفى رواية: فليمنعه مرتين) فَإِنْ أَبَى فَلْيُقَاتِلْهُ، فَإِنَّمَا هُوَ شَيْطَانٌ

তোমাদের কেউ যখন এমন বস্তুর দিকে মুখ করে ছলাত পড়ে যা তাকে লোকজন থেকে আড়াল করে। এরপরও কেউ যদি তার সম্মুখ দিয়ে অতিক্রম করতে চায় তবে যেন তার বক্ষ ধরে তাকে প্রতিহত করে, (এবং সাধ্যমত তাকে বাধা প্ৰদান করে) অপর বর্ণনায়ঃ তাকে যেন দু’বার বাধা দেয়, তাও যদি সে অমান্য করে তবে যেন তার সাথে লড়াই করে কেননা সে হচ্ছে শয়ত্বান।[16]

তিনি বলতেনঃ

لَوْ يَعْلَمُ الْمَارُّ بَيْنَ يَدَيْ الْمُصَلِّي مَاذَا عَلَيْهِ، لَكَانَ أَنْ يَقِفَ أَرْبَعِينَ، خَيْرًا لَهُ مِنْ أَنْ يَمُرَّ بَيْنَ يَدَيْهِ

ছলাত আদায়কারীর সম্মুখ দিয়ে অতিক্রমকারী যদি জানত এতে কী পরিমাণ (গুনাহ) রয়েছে। তবে চল্লিশ (বৎসর) দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করা তার পক্ষে উত্তম (মনে) হত।[17]

[1] বুখারী ও আহমাদ।

[2] বুখারী ও মুসলিম।

[3] ইবনু খুযাইমা স্বীয় “ছহীহ” গ্রন্থে (১/৯৩/১) উত্তম সনদে।

[4] আবু দাউদ, বাযযার (৫৪ পৃঃ যাওয়াইদ) হাকিম; তিনি একে ছহীহ বলেছেন এবং যাহাবী ও নববী তার সমর্থন দিয়েছেন।

[5] আমি বলিঃ ইমাম ও একাকী উভয়ের ক্ষেত্রেই সুতরা জরুরী। যদিও তা বিশাল মসজিদে হয়। ইবনু হানী ইমাম আহমাদ থেকে স্বীয় মাসা-ইল গ্রন্থে বলেন (১/৬৬)- “আমাকে আবু আবদিল্লাহ (অর্থাৎ ইমাম আহমাদ) একদা আমার সম্মুখে সুতরাবিহীন অবস্থায় ছলাত পড়তে দেখেন, আমি তার সাথে জামে মসজিদে ছিলাম। তিনি আমাকে বললেনঃ কোন কিছু দিয়ে আড়াল কর, আমি একটি লোক দ্বারা আড়াল করলাম।”

আমি বলবঃ এ ঘটনায় এ কথার প্রতি ইঙ্গিত রয়েছে যে, ইমাম সাহেবের মতে সুতারার বেলায় বড় মসজিদ আর ছোট মসজিদের মধ্যে কোন ব্যবধান নেই। আর এটাই হক কথা । অথচ যতগুলো দেশ ভ্ৰমণ করেছি তাতে দেখেছি অধিকাংশ ইমাম ও মুছল্লীগণ এ বিষয়ে ত্রুটি করেন। ঐসব দেশের মধ্যে রয়েছে সৌদি আরব, যা ভ্রমণে প্রথম বারের মত সুযোগ হয়েছিল ১৪১০ হিজরী রজাব মাসে। তাই আলিম সম্প্রদায়ের দায়িত্ব হবে লোকজনকে এ বিষয়ে অবগত করা, তাদেরকে উৎসাহ দান করা এবং তাদেরকে এর বিধান বর্ণনা করা । আর এ বিধান দুই হারামকেও (অর্থাৎ মক্কা ও মদীনার মসজিদকেও) শামিল করে।

[6] বুখারী, মুসলিম ও ইবনু মাজাহ।

[7] বুখারী ও আহমাদ।

[8] বুখারী ও আহমাদ।

[9] অর্থাৎ উটের বাসস্থান ও গোয়ালে।

[10] মুসলিম, ইবনু খুযাইমাহ (২/৯২) ও আহমাদ।

[11] মুসলিম ও আবু দাউদ।

[12] নাসাঈ ও আহমাদ, ছহীহ সনদে।

[13] বুখারী, মুসলিম, আবু ইয়ালা (৩/১১০৭) আল-মাকতাবুল ইসলামী ফটোস্ট্যাট কপি।

[14] ইবনু খুযাইমা স্বীয় “ছহীহ” (১/৯৫/১) এবং ত্বাবারানী (৩/১৪০/৩) এবং হাকিম তিনি একে ছহীহ বলেছেন আর যাহাবী তার সমর্থন দিয়েছেন।

[15] আহমাদ, দারাকুতুনী ও ত্বাবরানী ছহীহ সনদে। এই হাদীছের মর্ম বুখারী, মুসলিমসহ অন্যান্য কিতাবে একদল ছাহাবা থেকে বর্ণিত হয়েছে। এটি সেই সব অসংখ্য হাদীছের একটি যেগুলোকে কাদিয়ানীরা অস্বীকার করে। কেননা তারা কুরআন সুন্নাহয় উল্লেখিত জ্বিন (দানব) জগৎকে বিশ্বাস করে না। কুরআন হাদীছের বাণী প্রত্যাখ্যানের ব্যাপারে তাদের কৌশল সবারই জানা। যদি কুরআনের বাণী হয় তবে তার অর্থ পরিবর্তন করে ফেলে যেমন আল্লাহর বাণীঃ (قُلْ أُوحِيَ إِلَيَّ أَنَّهُ اسْتَمَعَ نَفَرٌ مِنَ الْجِنِّ) অর্থঃ বলো (হে নবী!)। আমার প্রতি প্রত্যাদেশ করা হয়েছে যে, জিনদের একটি দল (কুরআন) শ্রবণ করেছে। তারা বলে জিন অর্থ মানব। তারা “জিনকে” “ইনস” এর সমাৰ্থবোধক গণ্য করে। যেমন “বাশার” শব্দ “ইনস” এর অর্থ দেয়। এ ধরনের অর্থ করার মাধ্যমে তারা অভিধান এবং শরীয়ত থেকে বেরিয়ে আছে । আর যদি তা (দলীল) হাদীছ হয় তাহলে অপব্যাখ্যা দ্বারা পরিবর্তন করা সম্ভব হলে তাই করে। আর তা না হলে একে বাত্ত্বিল বলে দেয়া তাদের নিকট অতি সহজ ব্যাপার- যদিও হাদীছ শাস্ত্রের সব ইমাম এবং তাদের সাথে উম্মতের প্রত্যেক ব্যক্তি এর ছহীহ হওয়ার উপর বরং মুতাওয়াতির হওয়ার উপর একমত হয়ে যায়। আল্লাহ তাদেরকে হিদায়াত দিন ।

[16] বুখারী ও মুসলিম।

[17] বুখারী, মুসলিম ও ইবনু খুযাইমাহ্ (১/৯৪/১)।

নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতেনঃ

يقطع صلاة الرجل إذا لم يكن بين يديه كآخرة الرحل : المرأة (الحائض) والحمار والكلب الأسود قال أبو ذر : قلت يارسول الله ! ما بال الأسود من الأحمر؟ فقال : الكلب الأسود شيطان

কোন ব্যক্তির সম্মুখে বাহনের পিছনের কাষ্ঠ খণ্ডের ন্যায় কিছু (সুতরা) না থাকলে (সাবালিকা) মহিলা[1], গাধা ও কাল কুকুরের অতিক্রমণ তার ছলাত ভঙ্গ করে ফেলে ।

আবু যর বলেন, আমি বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল, লাল কুকুর ও কাল কুকুরের মধ্যে ব্যবধান হল কেন? তিনি বললেনঃ “কাল কুকুর হচ্ছে শয়ত্বান।[2]

[1] (الحائض) শব্দ দ্বারা সাবালিকা মহিলা উদ্দেশ্য। আর ছালাত ভঙ্গ বলতে বাতিল হওয়া উদ্দেশ্য; পক্ষান্তরে لا يقطع الصلاة شئ অর্থঃ কোন কিছুই ছালাত ভঙ্গ করেনা উক্ত হাদীছটি দুর্বল, আমি “তামামুল মিন্নাহ” কিতাবের ৩০৬ পৃষ্ঠায় ও অন্যান্য কিতাবে এর তথ্য তুলে ধরেছি।

[2] মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনু খুযাইমাহ (১/৯৫/২), আরো দেখুন আমার স্বরচিত “কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করা সম্পর্কে সাবধানবানী” ও “আহকামুল জানাইয ওয়া বিদাউহা” গ্রন্থদ্বয়।
الصلاة تجاه القبر কবরের দিকে ছলাত (এর বিধান)

তিনি কবরের দিকে মুখ করে ছলতে পড়তে নিষেধ করতেন। তিনি বলতেনঃ

لا تُصَلُّوا إِلَى الْقُبُورِ وَلا تَجْلِسُوا عَلَيْهَا

অর্থঃ তোমরা কবরের দিকে মুখ করে ছলাত পড়বে না এবং তার উপর বসবেও না।[1]

[1] মুসলিম, আবু দাউদ, ইবনু খুযাইমাহ (১/৯৫/২), আরো দেখুন আমার স্বরচিত “কবরকে মসজিদ হিসেবে গ্রহণ করা সম্পর্কে সাবধানবানী” ও “আহকামুল জানাইয ওয়া বিদাউহা” গ্রন্থদ্বয়।
দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ৮৬ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 3 4 5 6 7 8 9 পরের পাতা »