کان صلی الله علیه وسلم کما أمره الله تعالی یرتل القرآن ترتیلا، لا هذا ولا عجلة، بل قراءة مفسرة حرفا حرفا حتی کان يرتل السورة حتی تکون اطول من اطول منها
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী ধীরস্থিরভাবে কুরআন পাঠ করতেন। তাড়াহুড়া বা ঝটপট করে নয় বরং অক্ষর, অক্ষর করে সুস্পষ্টভাবে তিনি কুরআন পাঠ করতেন।[1] তিনি এমনি ধীরস্থিরভাবে কুরআন পাঠ করতেন যে, তাতে সূরা দীর্ঘ থেকে আরো দীর্ঘতর হয়ে যেত।[2]
তিনি বলতেনঃ
یقال لصاحب القرآن : اقرأ و ارتق ورتل کما کنت ترتل فی الدنیا، فإن منزلك عند آخر آية تقرؤها
কুরআনধারীকে বলা হবে পড়তে থাক যেভাবে দুনিয়াতে ধীরস্থিরভাবে পড়তে এবং উপরে উঠতে থাক। তোমার অবস্থানস্থল সেখানেই হবে, যেখানে সর্বশেষ আয়াতটি পাঠ করবে।[3]
তিনি মাদের (টেনে পড়ার) অক্ষরে টেনে পড়তেন। (بسم الله) আল্লাহ শব্দ টেনে পড়তেন (الرحمٰن) এর মীমকে টেনে পড়তেন (الرحيم) এর ইয়াকে টেনে পড়তেন।[4] (نضيد) এর ইয়াকে[5] এবং এ ধরনের মদের স্থানগুলোতে টেনে পড়তেন। তিনি আয়াতের শেষ মাথায় থামতেন যেমনটি পূর্বেই উল্লেখ হয়েছে।[6]
তিনি কখনো স্বীয় স্বরকে (তরঙ্গ সদৃশ) ক্ৰমাগতভাবে প্রবাহিত করতেন[7] যেমন মক্কা বিজয়ের দিন করেছিলেন। তিনি তখন উষ্ট্রীর উপর কোমল কণ্ঠে সূরা ফাত্হ (৪৮ : ২৯) পড়ছিলেন।[8] আব্দুল্লাহ বিন মুগাফফাল তাঁর পুনরাবৃত্তিকে এভাবে উল্লেখ করেন (آ آ آ)।[9] তিনি সুললিত কণ্ঠে কুরআন পাঠের নির্দেশ দিতেন। তিনি বলতেনঃ
زینوا القرآن باصواتکم فان الصوت الحسن یزید القرآن حسنا
অর্থঃ তোমরা কুরআনকে তোমাদের কণ্ঠ দ্বারা সৌন্দর্যমণ্ডিত কর কেননা সুললিত কণ্ঠস্বর কুরআনের সৌন্দর্যবর্ধক।[10] তিনি আরো বলতেনঃ
إن من أحسن الناس صوتاً بالقرآن، الذي إذا سمعتموه يقرأ حسبتموه یخشی الله
ঐ লোকের কুরআন পাঠের সুর সর্বাপেক্ষা সুন্দর যার পাঠ শ্রবণে তোমাদের মনে হয় যে, সে আল্লাহকে ভয় করছে।[11]
তিনি সুর দিয়ে কুরআন পড়তে নির্দেশ দিতেন। তিনি বলতেনঃ
تعلموا کتاب الله، و تعاهدوه، و اقتنوه، و تغنوا به، فوالذي نفسی بیده، لهو آشد تفلتا من المخلص فی العقل
তোমরা আল্লাহর কিতাব শিখ, এর সাথে লেগে থাক ও একে আকড়িয়ে ধরে রাখ এবং সুললিত কণ্ঠে পাঠ করা। ঐ আল্লাহর শপথ যার হাতে আমার জীবন রয়েছে, রশি দিয়ে উট বেঁধে রাখা অপেক্ষা কুরআন মনে রাখা কঠিন।[12]
তিনি আরো বলতেনঃ ليس منا من لم يتغن بالقرآن
যে ব্যক্তি ভাল স্বরে কুরআন পড়েনা সে আমার দলভুক্ত নয়।[13]
তিনি আরো বলতেনঃ
ما أذن الله لشيء ما أذن (وفي لفظ : كأذنه) لنبي حسن الصوت (وفي لفظ : حسن الترنم) یتغنی بالقرآن (یجهر به)
আল্লাহ তা'আলা নবী কর্তৃক সুর দিয়ে কুরআন পাঠ যেভাবে শ্রবণ করেন সেভাবে অন্য কোন কথা শ্রবণ[14] করেন না।[15]
তিনি আবু মূসা আশা আরী (রাযিয়াল্লাহু আনহু)-কে বলেনঃ গত রাত্রে আমি যখন তোমার কুরআন পাঠ শ্রবণ করছিলাম তখন যদি তুমি আমাকে দেখতে, নিঃসন্দেহে তুমি দাউদ (আলাইহিস সালাম)-এর সুমধুর সুর[16] প্রাপ্ত হয়েছ। এতদ শ্রবণে আবু মূসা বলেনঃ যদি আমি আপনার উপস্থিতি টের পেতাম তাহলে আপনার উদ্দেশ্যে সুরকে আরো সুন্দর ও আবেগ পূর্ণ করে তুলতাম।[17]
[2] মুসলিম ও মালিক।
[3] আবু দাউদ ও তিরমিযী এবং তিনি একে ছহীহ বলেছেন।
[4] বুখারী ও আবু দাউদ।
[5] বুখারী “আফআলুল ইবাদ” গ্রন্থে ছহী সনদে।
[6] সূরা ফাতিহা পাঠ অধ্যায় দ্রষ্টব্য।
[7] يرجع শব্দটি ترجيع ‘তারজী’ শব্দ থেকে রূপান্তরিত। হাফিজ ইবনু হাজার বলেনঃ এটা (ترجيع) কুরআন পাঠের সময় হরকতসমূহ উচ্চারণের টান কাছাকাছি হওয়া, এর মূল কথা হচ্ছে পুনরাবৃত্তি করা। স্বরকে পুনঃ পুনঃ আওড়ানো বলতে কণ্ঠ নালীতে তাকে ক্রমাগতভাবে ছাড়া বা প্রবাহিত করা বুঝায়। মানাওয়ী বলেনঃ এটা সাধারণত প্রশান্তি ও উৎফুল্ল অবস্থায় হয়ে থাকে। নবী মুছতফা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) মক্কা বিজয়ের দিনে এমনটি পরিপূর্ণভাবে অনুভব করেন।
[8] বুখারী ও মুসলিম।
[9] হাফিয ইবনু হাজার তার (آ آ آ) কথার বাখ্যায় বলেনঃ যবর যুক্ত হামযা, তার পরে সার্কিন যুক্ত আলিফ অতঃপর অপর হামযা। শাইখ আলী আলকারী অন্যদের থেকেও একই ব্যাখ্যা বর্ণনা করেছেন। অতঃপর বলেন, স্পষ্টত এগুলো তিনটি আলিফ মামদূদাহ মাত্র।
[10] মুআল্লাক বা সনদবিহীনভাবে বুখারী, আবু দাউদ, দারিমী, হাকিম ও তাম্মাম রাযী দুটি ছহীহ সনদে। জ্ঞাতব্যঃ প্রথম হাদীছটি কোন কোন বর্ণনাকারীর নিকট উলট-পালট হয়ে যায় ফলে তিনি বর্ণনা করেন- زینوا اصواتکم باالقرآن অর্থঃ তোমরা কুরআন দ্বারা স্বীয় কণ্ঠস্বরকে সুন্দর কর। এটা বৰ্ণনাসূত্র ও মর্ম উভয় দিক দিয়ে স্পষ্ট ভুল। তাই যে ব্যক্তি একে বিশুদ্ধ বলেছেন তিনি ভুলে নিমজ্জিত হয়েছেন। কেননা এটা অত্র বিষয়ের ব্যাখ্যাদানকারী অনেক বিশুদ্ধ হাদীছ বিরোধী বরং এটা উলট-পালট হাদীছের দৃষ্টান্ত হওয়ার যোগ্য। বিস্তারিত আলোচনার জন্য “ছিলছিলা যঈফাহ” (৫৩২৮) দ্রষ্টব্য।
[11] হাদীছটি ছহীহ, ইবনুল মুবারক “আয যুহুদ” গ্রন্থে (১৬২/১) “আল কাওয়াকিব” ৫৭৫ থেকে। দারিামী, ইবনু নাছর, ত্বাবরানী, আবু নুআইম “আখবারু আসবাহান” গ্রন্থে ও আযযিয়া “আল মুখতারাহ” গ্রন্থে।
[12] দারিমী ও আহমাদ, ছহীহ সনদে। এখানে المخاض শব্দের অর্থ হচ্ছে উট। العقل শব্দের অর্থ হচ্ছে ঐ রশি যেটা দিয়ে উট বাধা হয়।
[13] আবু দাউদ, হাকিম এবং তিনি একে ছহীহ বলেছেন ও যাহাবী এতে ঐকমত্য পোষণ করেছেন।
জ্ঞাতব্যঃ অত্র স্থানে উল্লেখিত হাদীছের সনদ নিয়ে আব্দুল কাদির আরনাউত ও তার সহযোগী কর্তৃক শাইখ আলবানীর বিরুদ্ধে উত্থাপিত একটি আপত্তি এবং শাইখ আলবানী কৃর্তৃক তার খণ্ডনমূলক পর্যালোচনা সম্বলিত একটি দীর্ঘ টীকা ছিল। পাঠকের সুবিধার্থে তার অনুবাদ করা হলনা। (অনুবাদক ও সম্পাদক)
[14] মুনযিৱী বলেনঃ أذن (ذ) যালের নীচে যের দিয়ে অর্থ হবেঃ আল্লাহ তা'আলা সুমধুর সূরে কুরআন পাঠকারীর পড়া শ্রবণের ন্যায় লোকজনের কথা শ্রবণ করেন। না। সুফইয়ান বিন উয়াইনা ও অন্যান্যদের মধ্যে যারা বলেন تغنی بالقرآن অর্থঃ ‘কুরআন দ্বারা অমুখাপেক্ষিতা অনুভব করা’ এ ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যাত।
[15] বুখারী, মুসলিম, ত্বাহাবী, ইবনু মান্দাহ “আত তাওহীদ” (৮১/১)
[16] আলিমগণ বলেনঃ এখানে مزمار দ্বারা উদ্দেশ্য হলো সুললিত কণ্ঠ। (যদিও) এর প্রকৃত অর্থ গান। أل داؤد বলতে এখানে স্বয়ং দাউদ আলাইহিস সালামকেই বুঝানো উদ্দেশ্য। কখনো কখনো ওমুকের পরিবার বলে তাকেই বুঝানো হয়ে থাকে। দাউদ (আলাইহিস সালাম) ছিলেন দারুন সুন্দর সুরের অধিকারী। ইমাম নববী একথা মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন।
[17] এখানে جبرت শব্দের অর্থ হচ্ছে সুরকে সুন্দর ও আবেগপূর্ণ করা ‘নিহায়াহ’। আব্দুর রাযযাক “আল-আমালী” গ্রন্থে (২/৪৪/১) বুখারী, মুসলিম, ইবনু নাছর ও হাকিম।