নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ছালাতে ক্ৰটিকারীকে প্রথম রাকাআতে সূরাহ ফাতিহাহ পাঠের নির্দেশ দেয়ার পর প্রত্যেক রাকাআতে তা পাঠ করার আদেশ দেন।[1] তিনি (তাকে প্রথম রাকাআতে এটা পাঠ করার আদেশ দিয়ে) বলেনঃ
ثم افعل ذلك في صلاتك كلها وفي رواية : في كل ركعة
অতঃপর তোমার পুরো ছালাতে এ রকম করবে।[2] অপর এক বর্ণনায় আছে- প্ৰত্যেক রাকাআতে এ রকম করবে।[3] তিনি মাঝে মধ্যে মুক্তাদীদেরকে আয়াত বিশেষ শুনাতেন।[4] ছাহাবাগণ কখনো রাসূলের কণ্ঠে “সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা” (৮৭ : ১৯) ও ‘হাল আতা-কা হাদীছুল গাশিয়াহ' (৮৮ : ২৬) পাঠ এর গুন-গুনানি শব্দ শুনতে পেতেন।[5]
কখনো তিনি ‘ওয়াস্সামা-ই যাতিল বুরুজ” (৮৫ : ২২) বা ‘ওয়াস সামা-ই ওয়াতত্বারিক' (৮৬ : ১৭) কিংবা এ ধরনের অন্য সূরা পাঠ করতেন।[6] কখনো ‘ওয়াল্লাইলি ইযা ইয়াগশা’ (৯২ : ২১) বা অনুরূপ সূরা পাঠ করতেন।[7]
৩। আছরের ছালাত (صلاة العصر)
আল্লাহর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রথম দুই রাকাআতে ‘সূরা ফাতিহা’ এবং অপর দু’টি সূরা পাঠ করতেন এবং প্রথম রাকাআতকে দ্বিতীয় রাকাআত অপেক্ষা দীর্ঘায়িত করতেন।[8] ছাহাবাগণ ধারণা করতেন যে, তার এরূপ করার পিছনে উদ্দেশ্য এটাই ছিল যে, লোকজন যেন রাকাআতটি পেয়ে যায়।[9] তিনি উভয় রাকাআতে আনুমানিক পনের আয়াত তথা যহরে প্রথম দুরাকাআতের অর্ধেকের মত পাঠ করতেন। শেষ দুরাকাআতকে প্রথম দুরাকাআতের অর্ধেকের মত সংক্ষিপ্ত করতেন।[10]
আবার তিনি এই উভয় রাকাআতে শুধু সূরা ফাতিহা পাঠ করতেন।[11] তিনি মাঝে মধ্যে ছাহাবাদেরকে আয়াত বিশেষ শুনাতেন।[12] যহরের ছালাতে উল্লেখিত সূরাগুলো তিনি এই ছালাতেও পাঠ করতেন।
৪। মাগরিবের ছালাত (صلاة المغرب)
নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)। এ ছালাতে কখনো কখনো মুফাছছাল অংশের সংক্ষিপ্ত সূরাগুলো “কিসারে মুফাসসাল” পাঠ করতেন।[13] তাঁর সাথে ছালাত শেষ করে ফিরার পথে যে কোন লোক স্বীয় তীর নিক্ষেপের স্থান দেখতে পেত।[14]
তিনি কোন এক সফরে মাগরিবের দ্বিতীয় রাক’আতে ‘ওয়াততীনি ওয়াযযাইতুন’ (৯৫ : ৮) পাঠ করেন।[15] কখনো তিনি দীর্ঘ বিস্তীর্ণ (طوال المفصل) এবং নাতি দীর্ঘ (أوسط) সূরা পাঠ করতেন। কখনো তিনি (الَّذِينَ كَفَرُوا وَصَدُّوا عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ) সূরা মুহাম্মাদ (৪৭ : ৩৮) পাঠ করতেন।[16] আবার কখনো ‘আত-তূর (৫২ : ৪৯)[17] এবং কখনো “আল মুরসালাত” (৭৭ : ৫০) পড়তেন। এই (শেষোক্ত) সূরাটি তাঁর জীবনের সর্বশেষ ছালাতে পাঠ করেন।[18] তিনি কখনো উভয় রাকাআতে সর্বাপেক্ষা দু’টি দীর্ঘ সূরার মধ্যে অপেক্ষাকৃত দীর্ঘ সূরা[19] “আল-আরাফ' (৭ : ২০৬) উভয় রাকাআতে পাঠ করতেন।[20] আর কখনো কখনো উভয় রাকাআতে “আল-আনফাল” (৮ : ৭৫) পাঠ করতেন।[21]
[2] বুখারী ও মুসলিম।
[3] উত্তম সনদে আহমাদ।
[4] বুখারী ও মুসলিম।
[5] ইবনু খুযাইমা স্বীয় “ছহীহ” গ্রন্থে (১/৬৭/২) এবং যিয়া আলমাকদিসী “আল-মুখতারাহ” গ্রন্থে ছহীহ সনদে।
[6] বুখারী জুযউল কিরা’আত গ্রন্থে ও তিরমিযী এবং তিনি একে ছহীহ বলেছেন।
[7] মুসলিম ও ত্বায়ালিসী।
[8] বুখারী ও মুসলিম।
[9] ছহীহ সনদে আবু দাউদ ও ইবনু খুযাইমাহ।
[10] আহমাদ ও মুসলিম।
[11] বুখারী ও মুসলিম।
[12] বুখারী ও মুসলিম।
[13] বুখারী ও মুসলিম।
[14] ছহীহ সনদে নাসাঈ ও আহমাদ।
[15] ছহীহ সনদে ত্বায়ালিসী ও আহমাদ।
[16] ইবনু খুযাইমা (১/১৬৬/২) ও ত্বাবারানী এবং মাকদিসী ছহীহ সনদে।
[17] বুখারী ও মুসলিম।
[18] বুখারী ও মুসলিম।
[19] এখানে طولى শব্দটি أطول এর স্ত্রী লিঙ্গ, আর الطولين শব্দটি হচ্ছে طولى শব্দের দ্বিবচন। দীর্ঘ দু'টি সূরা হচ্ছে “আল-আরাফ” ঐকমত্যে ও “আল-আনয়াম” সমধিক প্রাধান্য যোগ্য মতে। (ফতহুল বারী)
[20] বুখারী, আবু দাউদ, ইবনু খুযাইমা (১/৬৮/১) আহমাদ, সাররাজ ও মুখাল্লিছ।
[21] ত্বাবারানী ছহীহ সনদে “আল কাবীর” গ্রন্থে।