কিতাবটির বিষয় যেহেতু নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ছলাত সংক্রান্ত নির্দেশনার বর্ণনা দান, তাই স্বভাবতই আমি পূর্বোল্লিখিত কারণে কোন নির্দিষ্ট মাযহাবের অনুকরণ করবো না। বরং এতে কেবল ঐ হাদীছগুলিই উদ্ধৃত করব যা নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) থেকে সাব্যস্ত। যেমনটি অতীত ও বর্তমানের।[1] মুহাদ্দিছীনের[2] অনুসৃত পথ।
নিঃসন্দেহে সুন্দর বলেছেন যে ব্যক্তি (নিম্নোক্ত) কথাটি বলেছেন
أهل الحديث هم أهل النبي وإن لم يصحبوا نفسه أنفاسه صحبوا
অর্থঃ আহলুল হাদীছগণ নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর আপনজন, তারা যদিও তাঁর সংস্রব পায়নি। তবে তাঁর শ্বাসপ্রশ্বাসের সংস্রব পেয়েছে।[3] অর্থাৎ তারা তাঁর বাণীর সাথী হয়েছে, যে দিকে তাঁর বানী নির্দেশ করে তারা সে দিকে যায়।
আর এজন্যই মাযহাবগত তারতম্য থাকা সত্ত্বেও কিতাবটি হাদীছ ও ফিকহ-এর কিতাবাদিতে বিষয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিক্ষিপ্ত মাসআলাগুলোর সম্মিলন সাধন করবে ইনশাআল্লাহ। বলতে কি এই কিতাবে যে পরিমাণ হক্ কথার সমাহার ঘটেছে অন্য কোন কিতাব বা মাযহাবে ঘটেনি।
আর এই কিতাব অনুযায়ী আমলকারী ইনশাআল্লাহ ঐ সব লোকের অন্তর্ভুক্ত হবেন যাদেরকে আল্লাহ হেদায়াত করেছেনঃ
لِمَا اخْتَلَفُوا فِيهِ مِنَ الْحَقِّ بِإِذْنِهِ وَاللَّهُ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ إِلَىٰ صِرَاطٍ مُسْتَقِيمٍ
স্বীয় ইচ্ছায় সেই সত্যের জন্যে যাতে তারা মতভেদ করেছে, আল্লাহ্ যাকে ইচ্ছা সঠিক পথ প্ৰদৰ্শন করেন।[4]
আমি যখন নিজের জন্য এই নীতি নির্ধারণ করি যে, শুধু বিশুদ্ধ হাদীছ অবলম্বন করব এবং বাস্তবেও এই কিতাবসহ অন্য কিতাবাদিতে এই নীতি অবলম্বন করেছি। যেগুলো অচিরেই মানুষের মাঝে বিস্তার লাভ করবে: ইনশাআল্লাহ তা'আলা। তখন থেকেই আমি একথা জানতাম যে, আমার এই কাজ সব দল ও মাযহাব (এর লোক)-কে সন্তুষ্ট করতে পারবে না। বরং অচিরেই তাদের কেউ কেউ বা অনেকেই আমার প্রতি আঘাতমূলক কণ্ঠ ও দোষারোপের কলম ছুড়ে মারবে। তবে এতে আমার অসুবিধা নেই। কেননা আমি এটাও জানি যে, সকল মানুষের সন্তুষ্টি লাভ দুর্লভ ব্যাপার। আর নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেনঃ
من آرضی الناس بسخط الله و کله الله الی الناس
অর্থঃ যে ব্যক্তি আল্লাহকে অসন্তুষ্ট করার মাধ্যমে মানুষকে সন্তুষ্ট করে আল্লাহ তাকে মানুষের দায়িত্বে অৰ্পণ করেন।[5]
আল্লাহ! কবি কত সুন্দর না বলেছেন
ولست بناج من مقالة طاعن
ولوکنت فی غارعلی جبل وعر
ومن ذا الذی ینجؤمن الناس سالما
ولوغاب عنهم بين خافيتي نسر
তুমি দোষারোপকারীর কথার গ্লানি থেকে নিস্কৃতি পাবেই না, যদিও বা দুৰ্গম পাহাড়ের গুহায় আশ্রয় নেও।
আর কে আছে মানবের দোষারোপ থেকে মুক্তি পাওয়ার মত যদিও বা শকুনের ডানার তলে আড়াল হয় না কেন।
আমার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, এই (অনুসৃত) পথটাই হচ্ছে সর্বাধিক সঠিক পথ যার ব্যাপারে আল্লাহ তাঁর মুমিন বান্দাহগণকে আদেশ প্রদান করেছেন এবং রাসূলগণের প্রধান আমাদের নাবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দেখিয়ে দিয়েছেন। আর এটাই সেই পথ যার অনুসরণ করেছেন ছাহাবা, তাবিঈন ও তৎপরবর্তী সৎ পূর্বসূরীগণ, যাদের মধ্যে রয়েছেন ইমাম চতুষ্টয় যাদের নামে সৃষ্ট মাযহাবসমূহের সাথে আজকের জগতের বেশীরভাগ মুসলিম সম্পর্কযুক্ত। তাদের প্রত্যেকেই সুন্নাহ (হাদীছ) আঁকড়ে ধরা ও তাঁর দিকে প্রত্যাবর্তন করার অপরিহার্যতার ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন এবং তার বিপরীত যে কোন কথাকে পরিত্যাগ করতেও একমত ছিলেন- সে কথার প্রবক্তা যত বড়ই হোন না কেন, যেহেতু নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর মর্যাদা হচ্ছে তাদের তুলনায় অনেক বেশী এবং তাঁর পথ সর্বাধিক সঠিক। তাই আমি তাঁদের পথ ধরে চলেছি, আর তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করছি এবং হাদীছ আঁকড়ে ধরার ব্যাপারে তাদেরই নির্দেশসমূহ মেনে চলি। যদিও হাদীছটি তাদের কথার বিপরীতও হয়। তাদের এহেন নির্দেশনাবলীই সোজা পথে চলা ও অন্ধ অনুসরণ থেকে বিমুখ হওয়ার ব্যাপারে আমার উপর বিরাট প্রভাব ফেলেছে। আল্লাহ তা'আলা তাদেরকে আমার পক্ষ থেকে উত্তম প্রতিদান দান করুন।
فَمَنْ كَانَ يَرْجُو لِقَاءَ رَبِّهِ فَلْيَعْمَلْ عَمَلًا صَالِحًا
অর্থঃ “যে ব্যক্তি স্বীয় প্রতিপালকের সাক্ষাতের আশা রাখে সে যেন নেক আমল করে আর স্বীয় প্রতিপালকের ইবাদতে কাউকে অংশিদার না করে।”(সূরা কাহাফ ১১০)
আমি বলছিঃ দ্বিতীয় পন্থাটাই ভাল বরং অপরিহার্য, কেননা প্রথম পন্থটি অনেক বিষয়ে তার বাস্তবতা অসম্ভব হওয়া সত্ত্বেও তাতে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর এই নির্দেশটি প্রতিফলিত হয় না। صلوا كما رأيتموني اصلي অর্থঃ “তোমরা আমাকে যেভাবে ছলাত পড়তে দেখা ঠিক ঐভাবে ছলাত পড়”, কেননা এমতাবস্থায় তার ছলাতে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর ছলতের বিপরীত হওয়া অপরিহার্য হয়ে দাঁড়ায়। অতএব বিষয়টি অনুধাবন করুন।
[2] আবুল হাসনাত লাক্ষনোভী إمام الكلام فيما يتعلق بالقرءة خلف الإمام কিতাবের ১৫৬ পৃষ্ঠায় বলেনঃ যে ব্যক্তি ইনছাফের দৃষ্টিতে চিন্তা করবে এবং কোন রূপ গোড়ামি ব্যতিরেকে ফিকহ ও মূলনীতির সাগরে ডুব দিবে সে সুনিশ্চিতভাবে একথা জানতে পারবে যে, আলিমগণের মতভেদকৃত বেশীরভাগ মৌলিক ও অমৌলিক মাসআলায় অন্যদের তুলনায় মুহাদ্দিছগণের মাযহাবই শক্তিশালী। আমি যখন বিতর্কিত বিষয়ের শাখা প্রশাখায় ঘুরে বেড়াই তখন মুহাদ্দিছদের মাযহাবকে অন্যদের মাযহাব অপেক্ষা অধিকতর ইনছাফভিত্তিক পাই । আল্লাহ তা'আলা কতইনা ভাল করেছেন এবং এর উপরে তাদের কতনা শুকরিয়া-(প্রধান বক্তব্যে একথা এভাবেই এসেছে) আর কেনইবা এমন হবে না? তারা যে নাবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)-এর প্রকৃত উত্তরাধিকারী এবং তাঁর শরীয়তের সত্যিকার প্রতিনিধি। আল্লাহ আমাদেরকে তাদের দলভুক্ত করে হাশর করুন এবং তাদের ভালবাসা ও চরিত্রের উপর রেখে মৃত্যু দান করুন।
[3] হাফিয যিয়াউদ্দীন আল-মাকদিসী তার “ফাযলুল হাদীছ ওয়া আহলিহী” কিতাবে উল্লেখ করেন যে, এর রচয়িতা হচ্ছেন কবি হাসান বিন মুহাম্মদ আল নাসাবী।
[4] সূরা আল-বাকারা ২১৩ আয়াত।
[5] তিরমিযী, কুযাঈ, ইবনু বিশারান ও অপরাপরগণ (বর্ণনা করেছেন)। উক্ত হাদীছ ও তার সূত্রগুলোর উপর “শারহুল আকীদা আত-ত্বহাবিয়্যাহ” কিতাবের হাদীছ অনুসন্ধান করতে গিয়ে আলোকপাত করেছি। অতঃপর “সিলসিতুল আহাদীস আস-সহীহাহ” ২৩১১ নম্বরেও আলোচনা করেছি এবং বলেছি যে, একে যারা ছাহাবী পর্যন্ত ঠেকিয়েছেন (মাওকুফভাবে বর্ণনা করেছেন) এর ফলে তার কোন ক্ষতি সাধিত হবে না। আর একে ইবনু হিব্বান ছহীহ বলেছেন।