বনী আব্স গোত্রের একলোক তার হারিয়ে যাওয়া কতগুলো উটের সন্ধানে তার শহর ছেড়ে বেরিয়ে পড়লেন। তিন দিন সে তার বাড়ি থেকে দূরে ছিলেন। তিনি একজন ধনীলোক ছিলেন; আল্লাহ তাকে (উট,গরু, ছাগল ইত্যাদি) বহু সম্পদ ও একটি বড় পরিবার (বহু সন্তান-সন্তুতি) দান করে ধন্য করেছিলেন।
তার সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি এক বিশাল ভূ-সম্পত্তির উপর থাকত। তাকে ও তার পরিবারকে শান্তি ও সমৃদ্ধি ঘিরে রেখেছিল- কখনও তাদের কোন বিপর্যয় ঘটেনি।
তাদের পিতার অনুপস্থিতির সময়ে এক রাতে গোটা পরিবারই ঘুমিয়ে পড়েছিল। (তখন) আল্লাহ্ তাদের উপর প্রবল স্রোতপূর্ণ বন্যা পাঠিয়ে দিলেন যার সাথে এমনভাবে পাথর আসছিল যেমন নাকি প্রচণ্ড ঝঞা বায়ুর সাথে বালি উড়ে আসার আশা করা যায় (তার) বাড়িটি সমূলে উৎপাটিত হয়ে গেল এবং অনুপস্থিত পিতার গোটা পরিবার ও সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেল। আবহাওয়া শান্ত হওয়ার পর না থাকল পরিবারের কোন চিহ্ন, আর না থাকল সম্পদের কোন চিহ্ন। যেন তারা কখনও ছিল না পরিবেশ-পরিস্থিতি এমন হয়ে গেল। তিন দিন পরে সে তার বাড়িতে ফিরে এসে দেখতে পেল ফাঁকা ও শূন্য একটি ভূমি যাতে জীবনের কোন চিহ্নও দেখা গেল না। সে যে মানসিক আঘাত পেয়েছিল তাতে সে যে সবকিছু হারিয়েছিল তা সত্যবলে বিশ্বাস করতে কিছু সময় লেগেছিল।
তারপর আরো খারাপ ব্যাপার হলো যে, তার একটি উট পালিয়ে যেতে চেষ্টা করল। সে এটাকে লেজে ধরে রাখতে চেষ্টা করল, কিন্তু এটা এর পিছনের পা দিয়ে তার দু’চোখে লাথি মেরে তাকে অন্ধ বানিয়ে দিল। মরুভূমিতে একাকী লোকটি তাকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়ার কারো উদ্দেশ্যে চিৎকার করতে লাগল। দীর্ঘ সময় অতিবাহিত হওয়ার পর অবশেষে সে একজন মরুবাসী আরবকে তার ডাকে সাড়া দিতে শুনল, মরুবাসী আরব তাকে দামেস্কের খলিফা ওয়ালীদ ইবনে আব্দুল মালেকের নিকট নিয়ে গেল। লোকটি তার ঘটনা বলল, আর খলিফা তাকে জিজ্ঞেস করলেন, “(এখন) আপনি কেমন আছেন?” লোকটি দৃঢ়ভাবে উত্তর দিলেন, “আমি আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট আছি।”
এই যে মুসলিম- যার অন্তরে সত্যিকার তাওহীদ (ইসলামী একত্ববাদ) বহন করেছিল- তিনি এই যে ‘শক্তিশালী কথাগুলো’ বললেন- তা তার পরবর্তী জাতির জন্য শিক্ষা ও নৈতিক উপদেশ হয়ে গেল। কী ছিল এই নৈতিক শিক্ষা? (তা ছিল) সর্বদা আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট থাকা। যে লোক আল্লাহর প্রতি সন্তুষ্ট ও পরিতৃপ্ত নয় সে যদি চায় তবে সে অন্য পথ খোজার চেষ্টা করুক-
مَن كَانَ يَظُنُّ أَن لَّن يَنصُرَهُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ فَلْيَمْدُدْ بِسَبَبٍ إِلَى السَّمَاءِ ثُمَّ لْيَقْطَعْ فَلْيَنظُرْ هَلْ يُذْهِبَنَّ كَيْدُهُ مَا يَغِيظُ
“যে কেউ মনে করে, আল্লাহ তাকে কখনই দুনিয়া ও আখিরাতে সাহায্য করবেন না, সে আকাশের দিকে একটি রজ্জু প্রসারিত করুক; পরে তা বিছিন্ন করুক। অতপর সে দেখুক যে তার কৌশল তার ক্রোধ দূর করে কি-না। (২২-সূরা আল হাজ্জঃ আয়াত-১৫)