এখানে তাকদীর সম্পর্কিত কয়েকটি গল্প লেখা হলো।
বুডলী অনেক পুস্তক লিখেছেন। (কমপক্ষে ১৬টি হবে) তার মধ্যে আছে প্রেরিত পুরুষ (The Massenger)। ১৯১৮ সালে তিনি উত্তর-পশ্চিম আফ্রিকায় যাযাবর রাখাল জাতীয় মরুবাসীদের মাঝে বসতি স্থাপন করেন। এসব মুসলমানগণ সালাত পড়তেন, রোযা রাখতেন ও আল্লাহর জিকির করতেন। তিনি (বুডলি) পরবর্তীতে তাদের সম্বন্ধে তার কিছু অভিজ্ঞতার কথা লিখেন। এভাবেই তিনি এক বিশেষ গল্প শুরু করেন-
“একদিন এক ভীষণ বালি ঝড় শক্তি সঞ্চয় করতে শুরু করল (অর্থাৎ তা ক্রমান্বয়ে ভীষণ থেকে ভীষণতর হতে লাগল)। প্রচণ্ড বায়ুপ্রবাহ অনেক ধ্বংস সাধন করল। আমার মনে হয়েছিল যেন পাগল হয়ে যাচ্ছি। আমার নিকট আশ্চর্য লাগে যে, তবুও (এত কষ্টকর অবস্থা সত্বেও) আরবরা আদৌ কোন অভিযোগ করল না। তারা আত্মসমর্পণের সাথে কাঁধ ঝাড়া দিয়ে বলল যে, এটা তাদের তাকদীরে লিখা ছিল। তখনই তারা শক্তিমত্তার সাথে তাদের দৈনন্দিন কাজে লেগে গেল। দলপতি বললেন, আমরা যদি মনে করি যে, আমাদের সব কিছু হারানোর কথা ছিল তবে আমরা খুব বেশি হারাইনি। বরং সকল প্রশংসা ও কৃতজ্ঞতা (হামদ ও শুকর) আল্লাহরই প্রাপ্য; আমাদের এখনও চল্লিশ শতাংশ পশু সম্পদ আছে আর আমরা নতুনভাবে জীবন যাত্রা শুরু করতে পারি।”
আরেকটি ঘটনা
“আমরা যখন গাড়িতে করে মরুভূমির মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করছিলাম তখন আমাদের গাড়ির একটি চাকা ফেটে গেল। আরো ভীষণ বিপদের কথা হলো যে, ড্রাইভার অতিরিক্ত চাকা সাথে নিতে ভুলে গিয়েছিল। আমার রাগও হলো আবার দুশ্চিন্তাও হলো। আমি আমার আরব সঙ্গীদেরকে জিজ্ঞেস করলাম যে আমরা কি করতে যাচ্ছি? (এখন আমরা কী করব? এখন আমাদের উপায় কি হবে?) তারা শান্তভাবে আমাকে মনে করিয়ে দিল যে, রাগ করে কোন লাভ হবে না বরং অবস্থা আরো খারাপ হবে, আমরা তিনটি ভালো চাকা ও একটি ফাটা চাকার উপর ভর করে অত্যন্ত বিরক্তকর ধীরগতিতে অগ্রসর হতে লাগলাম।
ক্রমেই আমরা একেবারে থেমে গেলাম (আমাদের যাত্রা একেবারেই বন্ধ হয়ে গেল)। চাকার অবস্থা এর কারণ ছিল না, বরং আমাদের গাড়ির জ্বালানি (তেল)ও ফুরিয়ে গিয়েছিল। এ ঘটনা যখন ঘটল এমনকি তখনও আমার সঙ্গীগণ শান্ত থাকলেন। অধিকন্তু তারা হাসি মুখে সুরের তালে তালে গান গাইতে গাইতে পদযাত্রা শুরু করলেন। এই আরব্য যাযাবর জাতীয় রাখালদের সাথে সাত ঘণ্টা সময় কাটানোর পর আমার পুরাপুরি দৃঢ় বিশ্বাস জন্মাল যে, ইউরোপ ও আমেরিকার সুবিস্তৃত মাতলামি, পাগলামি বা মানসিক রোগ ও হতাশা হলো ব্যস্ততম শহুরে জীবনের ফল।”
তিনি আরো বলেছেন- “মরুভূমিতে বাসকরাকালীন আমি কখনও টেনশন অনুভব করিনি। আমার মনে হয়েছিল আমি যেন আল্লাহর জান্নাতে অবস্থান করছি। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমি প্রশান্তি ও পরিতৃপ্তি খুঁজে পেয়েছি। অনেক লোক আরবদের অদৃষ্টবাদী (তাকদীরে) বিশ্বাসকে অবজ্ঞাভরে উপহাস করে। কিন্তু কে জানে? হয়তোবা অবশেষে আরবদের নিকট সত্য আছে; কারণ, অতীত সম্বন্ধে আমার যেমনটি মনে পড়ে এতে আমার নিকট এটা স্পষ্ট যে, আমার জীবনটা কিছু বিক্ষিপ্ত সময় নিয়ে গঠিত যা (এমন) কতগুলো ঘটনা-দুর্ঘটনার ফল যা আমার পছন্দ ছাড়াই ঘটেছিল।
আরবরা এসব ঘটনাকে আল্লাহর তকদীর (পূর্বনির্ধারিত বিধান বা অদৃষ্ট বা ভাগ্যলিপি) বলে। সংক্ষেপে বলছি, আমি মরুভূমি ছেড়ে এসেছি সতেরো বছর হয়ে গেল, এখনও আমি আল্লাহর তকদীর সম্বন্ধে আরবদের উন্নততর মনোভাব সূচক দৃষ্টিভঙ্গিকে আঁকড়িয়ে ধরে আছি। যে ঘটনা আমার নিয়ন্ত্রণের বাইরে সে সব ঘটনাকে আমি সৌম্যতা, শান্তভাব, স্থৈর্য বা আত্ম সংবরণের সাথে গ্রহণ করি। এই যে গুণ যা আমি আরবদের কাছ থেকে শিখেছি তা আমার স্নায়ুকে শান্ত করতে ও আমার টেনশনের মাত্রাকে কমাতে যা করেছে তা ঘুমের বড়ির হাজারো প্রেশক্রিপশন যা করতে পারে তার চেয়েও বেশি।”
বুড়লীর কথার উপর মন্তব্য করার জন্য আমি প্রথমেই উল্লেখ করতে চাই যে, আরবদের বিশ্বাসের উৎস ছিলেন আল্লাহর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। তার বাণীর মূলকথা ছিল মানুষদেরকে হতাশ বিভ্রান্তি থেকে রক্ষা করা- তাদেরকে অন্ধকার থেকে বের করে আনা ও তাদেরকে আলোর দিকে নিয়ে যাওয়া। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার বাণীতে শান্তি ও মুক্তির রহস্য ছিল, অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা সব কিছু পূর্বেই নির্ধারিত করে রেখেছেন একথা বুঝা। অপরপক্ষে, কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছার জন্য প্রত্যেককে অবশ্যই কাজ (আমল) করতে হবে এবং তাদের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালাতে হবে। বিশ্বজগতে আপনার স্থান বা অবস্থান দেখানোর জন্য ইসলামের মহান বাণী এসেছে, যাতে করে আপনি এমন আদর্শ ব্যক্তি হতে পারেন যে নাকি মানব জীবনের রহস্য ও উদ্দেশ্য জানে।