যারকালির ‘আ’লাম’ (اعلام للزر كلبى) নামক কিতাবে প্রাচ্যের ও প্রাতীচ্যের (পাশ্চাত্যের) রাজনীতিবিদ, পণ্ডিত, লিখক ও চিকিৎসকদের জীবনী আলোচনা করা হয়েছে। প্রথমত যে কারণে তাদের সম্বন্ধে লেখা হয়েছে তা তাদের সবার মাঝেই সাধারণ (ব্যাপক) আর তা হলো তাদের প্রত্যেকেরই অন্যদের উপর গভীর প্রভাব ছিল। তাদের জীবনী পড়ার পর আমি আল্লাহর অঙ্গীকার ও কর্মপদ্ধতি বুঝতে শুরু করলাম (আর তা হলো) : এ দুনিয়াতে কেউ কোন কিছু পেতে চেষ্টা করলে সে তার উদ্দেশ্য অনুযায়ী বিখ্যাত, জনপ্রিয়, ক্ষমতাশালী অথবা ধনী হওয়ার মাধ্যমে তার ন্যায্য অংশ বা অধিকার পায়। (এ দুনিয়াতে যে যা পাওয়ার বা হওয়ার চেষ্টা করে সে তা পায় বা হয়। আর এ পাওয়া বা হওয়া তার চেষ্টার কারণে এবং আল্লাহর অঙ্গীকারের কারণে তার ন্যায্য অধিকারও বটে। -অনুবাদক)

আর যে ব্যক্তি পরকালের জন্য চেষ্টা করে সে অন্যদের উপকার করার মাধ্যমে ও আল্লাহর পক্ষ থেকে পুরস্কার গ্রহণ করার মাধ্যমে দুনিয়াতে ও আখেরাতে উভয়স্থানেই ফল পাবে।

كُلًّا نُّمِدُّ هَٰؤُلَاءِ وَهَٰؤُلَاءِ مِنْ عَطَاءِ رَبِّكَ وَمَا كَانَ عَطَاءُ رَبِّكَ مَحْظُورًا

আমি এদেরকে এবং তাদেরকে প্রত্যেককেই তোমার প্রতিপালকের দান থেকে সাহায্য করে থাকি। আর তোমার প্রভুর দান নিষিদ্ধ নয়।” (১৭-সূরা বনী ইসরাইলঃ আয়াত ২০)

আমি যারকালির পুস্তক পড়ার সময় লক্ষ্য করেছি যে, অমুসলিম ব্যক্তিত্বরা বিশেষ করে যারা শিল্পকলা নিয়ে চেষ্টা করেছে তারা নিজেদেরকে সুখ না দিয়ে বরং অন্যদেরকে সুখ দিয়েছে। তাদের কেউ কেউ শোচনীয়ভাবে ব্যক্তিগত জীবন যাপন করেছে, অন্যরা সর্বদাই অতৃপ্ত ছিল, যখন নাকি কেউ কেউ এমনকি আত্মহত্যার দ্বারপ্রান্তেও গিয়েছিল। আমি নিজেকে জিজ্ঞাসা করলামঃ নিজে শোচনীয় থেকে অন্যদেরকে আনন্দিত বা সন্তুষ্ট করে কি লাভ? একজন কবি বলেন-

“তুমি অনেককে সুখ দিলে অথচ তুমি নিজে অসুখী,

তুমি মানুষদেরকে হাসালে অথচ তুমি নিজে কাঁদছ।”

আমি দেখতে পেলাম যে, আল্লাহ তার অঙ্গীকার বাস্তবায়ন কল্পে তাদের প্রত্যেককে যে যা প্রত্যাশা করেছিল তাই দিয়েছিলেন। তাদের কেউ কেউ নোবেল পুরস্কার পেয়েছিল, কারণ, তারা তাই চেয়েছিল এবং এর জন্য চেষ্টাও করেছিল, অন্যরা বিখ্যাত হয়েছিল, কারণ এটাই ছিল তাদের উচ্চতর লক্ষ্য; অন্যরা তাদের অর্থপ্রীতি ও আরাম প্রীতির কারণে ধনী হয়েছিল। যা হোক, আল্লাহর এমন কিছু ধাৰ্মিক বান্দাও ছিল যারা দুনিয়া ও আখেরাতের পুরস্কার লাভ করেছিল; এরা এমন লোক যারা আল্লাহর করুণা ও সন্তুষ্টিই অর্জন করতে চেষ্টা করেছেন।

আরব উপদ্বীপের একজন সাধারণ মেষপালকও (রাখাল) মনের দিক থেকে টলষ্টয়ের চেয়েও সুখী। কেন? রাখাল সরল, অকৃত্রিম জীবন-যাপন করতেন, তিনি জানতেন যে, দুনিয়া ও আখিরাতে তার গন্তব্য কোথায় বা তিনি কোথায় যাচ্ছেন। টলষ্টয় কখনও তার আকাঙ্ক্ষা পুরাপুরি মিটাতে পারেনি এবং সে কোথায় যাচ্ছে সে সম্বন্ধে তার কোন ধারাণা ছিল না।

মানুষের জানা সর্বশ্রেষ্ঠ ঔষুধ মুসলমানদের আছে। আর তা হলো স্বর্গীয় বিধান তথা তাকদীরে বিশ্বাস। এ সম্বন্ধে এ পুস্তকে আমি প্রায়ই আলোচনা করেছি আর তা করেছি একটি বিশেষ উদ্দেশ্যেই। আমি জানি যে, আমি ও আমার মতো অনেকেরই অবস্থা যখন আমাদের পছন্দমত চলে তখন আমরা তাকদীর সম্বন্ধে ইসলামী আকীদায় বিশ্বাস করি; কিন্তু অবস্থা যখন আমাদের মনের চাহিদার বিপরীতে যায় তখন আমরা অভিযোগ করার প্রবণতা দেখাই। আর এ কারণেই আমাদের ঈমানের একটি শর্ত হলো

أن تؤمن بالقدر خيره وشره، حلوه ومره

ভাবাৰ্থঃ “তাকদীরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা- তা মিষ্ট হোক বা তিক্ত হোক