তিনি ছিলেন দরিদ্র, মলিন ও দুর্বল। তিনি বহুতালি বিশিষ্ট ছেড়া পোশাক পরতেন। তিনি ছিলেন নগ্নপদ ও ক্ষুধার্ত। অজ্ঞাতকুল হওয়ার পাশাপাশি তার না ছিল কোন সামাজিক মর্যাদা, না ছিল কোন সম্পদ আর না ছিল কোন পরিবার। আশ্রয় নেয়ার জন্য তার কোন ছাদওয়ালা ঘর ছিল না, তিনি মসজিদে ঘুমাতেন ও সরকারী ঝর্ণার পানি পান করুতেন। তার বালিশ ছিল ভূমি। কিন্তু তিনি সর্বদা তার প্রভুকে স্মরণ করতেন ও সর্বদা আল্লাহর কিতাবের আয়াত তেলাওয়াত করতেন। তিনি সালাতের ও যুদ্ধের প্রথম কাতার থেকে অনুপস্থিত থাকতেন না।
একদিন তিনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সাথে সাক্ষাৎ করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখে তার নাম ধরে ডেকে বললেন, “হে জুলাইবীব! তুমি কি বিয়ে করবে না?” তিনি (রাঃ) নম্র ও ভদ্রভাবে উত্তর দিলেন, “কে আমাকে তাদের কন্যা দিবে?” তিনি (রাঃ) আরো দুজনের সাথে সাক্ষাৎ করলেন তারাও তাকে একই প্রশ্ন করলেন এবং তিনি (রাঃ) সে প্রশ্নের একই উত্তর দিলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, “তুমি অমুক আনসারীর নিকট গিয়ে তাকে বুল, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আপনাকে সালাম জানিয়েছেন এবং “আপনার মেয়েকে আমার সাথে বিয়ে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন।”
সে আনসারী ছিলেন মহান ও শ্রদ্ধেয় পরিবারের। জুলাইবীব (রাঃ) যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আদেশ পালন করলেন তখন আনসারী উত্তর দিলেন, “এবং আল্লাহর রাসূলের উপরও শান্তি বর্ষিত হোক। হে জুলাইবীব! আমি কীভাবে তোমার নিকট আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে পারি, যখন নাকি তোমার কোন সম্পদও নেই এবং পদমর্যাদাও নেই?” তার স্ত্রীও সংবাদটি শুনে বিস্ময়ে চিৎকার করে বলে উঠল, “জুলাইবীব যার কোন সম্পদও নেই, কোন সামাজিক মর্যাদাও নেই।”
কিন্তু তাদের ঈমানদার কন্যা জুলাইবীবের কথা শুনল, তার সম্বন্ধে কথা, যাতে আল্লাহর রাসূলের বাণী আছে। তিনি তার পিতাকে বললেন, “আপনারা কি আল্লাহর রাসূলের অনুরোধকে অগ্রাহ্য করছেন? আল্লাহর কসম, তা হবে না। সাথে সাথে সে বরকতময় বিয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। তাদের বাসর রাতে রাস্তায় এক ঘোষক আসন্ন জিহাদের ঘোষণা দিচ্ছিল। জুলাইবীব অবিলম্বে যুদ্ধের ময়দানের উদ্দেশ্য বের হয়ে গেলেন। নিজ হাতে সাতজন কাফেরকে হত্যা করে জুলাইবীব নিজেও শহীদ হয়ে গেলেন। আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে এবং যে আদর্শের জন্য তিনি নিজের জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন তার প্রতি সন্তুষ্ট হয়ে তিনি মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছিলেন। লোকজন রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে নিহতদের সম্বন্ধে জানাতে লাগলেন।
কিন্তু তারা জুলাইবীবকে তার পরিচয়হীনতার কারণে ভুলে গেলেন। তা সত্ত্বেও নবীজীর কিন্তু তার কথা মনে পড়ে গেল এবং তিনি বললেন, “কিন্তু আমি জুলাইবীবকে হারিয়েছি”। তারপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জুলাইবীবের মৃতদেহ খুঁজে বের করলেন, যার মুখ ধূলিতে ঢেকে ছিল। রাসূল করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মুখ থেকে ধূলি ঝেড়ে ফেললেন এবং বললেন, “তুমি সাতজনকে হত্যা করে তুমি নিজেই নিহত হলে! তুমি আমার, আমি তোমার; তুমি আমার, আমি তোমার; তুমি আমার, আমি তোমার!” আল্লাহর রাসূলের পক্ষ থেকে এই সম্মান-পদবীই অনেক বড় পুরস্কার।
আল্লাহর রাসূলের প্রতি ও যে আদর্শের জন্য তিনি (জুলাইবীব) নিহত হয়েছেন তার প্রতি ঈমান ও ভালোবাসার কারণেই জুলাইবীব (রাঃ)-এর এতটা মূল্য হয়েছিল। তাঁর দীন-হীন অবস্থা এবং অজ্ঞাতকুল পরিচয় তাকে তার মহা সম্মান থেকে ফিরিয়ে রাখতে পারেনি। তার অল্প সম্পদ নিয়ে তিনি শাহাদাত, সন্তুষ্টি এবং পৃথিবী ও পরকালের সুখ অর্জন করেছিলেন।
“আল্লাহ নিজ অনুগ্রহ থেকে তাদেরকে যা দান করেছেন, তাতে তারা আনন্দিত এবং তাদের জন্য আনন্দ প্রকাশ করে যারা তাদের পিছনে রয়ে গেছে, এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি। এ কারণে (আনন্দ প্রকাশ করে) যে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুশ্চিন্তগ্রস্তও হবে না।” (৩-সূরা আলে ইমরানঃ আয়াত-১৭০)
অতএব, একথা মনে রাখুন যে, আপনার আদর্শ ও চরিত্রই আপনার মূল্য নির্ধারণ করে। মর্যাদার পথে ও উচ্চতর লক্ষ্য অর্জনের পথে দারিদ্র কখনও অনঢ় হয়ে দাঁড়ায়নি।