আল্লামা শাওক্বানী (রহঃ) বলেছেন- “কিছু সংখ্যক আলেম আমাকে উপদেশ দিয়েছেন যে, লেখা ছেড়ে দেয়া আমার কখনও উচিত হবে না, যদি সে লেখা প্রতিদিন দু’লাইনও হয়। আমি এ উপদেশ অনুসারে কাজ করেছি এবং এর ফলও ভোগ করেছি।”
আর নিম্নোক্ত হাদীসের এটাই অর্থ-
خير العمل مادوام عليه صاحبه وان قل
ভাবার্থঃ “উত্তম আমল হলো তা যা আমলকারী নিয়মিত করে, যদিও তা অল্প।”
আর একথা বলা হয় যে, ফোটা ফোটা পানি (জমেই) মহাপ্লাবন ঘটায়।
আমরা সবকিছু একই সময়ে বা একসাথে করতে চাইলে সবকিছু তালগোল পাকিয়ে যাবে। তখন ফল যা হবে তা হলো বিরক্তি, ক্লান্তি ও সর্বাপেক্ষা খারাপ যা ঘটবে তাহলো কর্মত্যাগ। আমরা যদি আমাদের কাজকে বিভিন্ন স্তরে ভাগ করে এক সময়ে একটি মাত্র স্তরের কাজ করি বা একটি পদক্ষেপ নেই তবে আমরা অনেক বেশি অর্জন করতে পারব। সালাতের কথা ভেবে দেখুন। একদিনে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত বিভিন্ন সময়ে আমাদেরকে আদায় করতে আদেশ করা হয়েছে। বিভিন্ন সালাতের মধ্যবর্তী বিরতিসমূহের কারণে সালাত আদায়কারী ব্যক্তি অন্যান্য কাজ করার সুযোগ পায় এবং এক সালাত থেকে অপর সালাতের মাঝে ঠিক ততটা পর্যাপ্ত সময় থাকে যতটুকু সময়ের মধ্যে সালাত আদায়কারী ব্যক্তি উৎসাহভরে আবার আরেক সালাতের জন্য ফিরে আসতে পারে। সকল সালাত যদি একই সময়ে পড়া বাধ্যতামূলক হতো তাহলে সালাত আদায়কারী ব্যক্তি বিরক্ত ও ক্লান্ত হয়ে যেত।
একটি বিশেষ হাদীসের অর্থ এই যে, যে ব্যক্তি দীর্ঘ যাত্রাপথে তার ঘোড়াকে পূর্ণ বেগে দৌড়ানোর জন্য খোঁচা মারে সে শুধুমাত্র ঘোড়া হারাবে তা-ই নয়, অধিকন্তু সে তার গন্তব্যস্থলে পৌছতে পারবে না।
অনেক অভিজ্ঞতার মাধ্যমে নিম্নোক্ত কথাটি সত্য বলে প্রমাণিত হয়েছে (আর তা হলো): যে ব্যক্তি নির্দিষ্ট সময়ে নিয়মিত কাজ করে সে তার চেয়ে বেশি কাজ করতে পারে যে নাকি এক সময়ে সব কাজ করে।
সালাত যে আমাদেরকে আমাদের সময়ের ব্যাপারে সুনিয়ন্ত্রিত করে এতে এমন এক শিক্ষা আছে যা আমি জ্ঞানী লোকদের থেকে শিখেছি আর এ শিক্ষা আমার জীবনে আমাকে অনেক লাভবান করেছে। নিম্নোক্ত আয়াত থেকে এ শিক্ষা অনুমান করা যায়।
إِنَّ الصَّلَاةَ كَانَتْ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ كِتَابًا مَّوْقُوتًا
“নিশ্চয় সালাত মুমিনের ওপর নির্দিষ্ট সময়ে আদায় করা অত্যাবশ্যক।” (৪-সূরা আন নিসাঃ আয়াত-১০৩)
কোন লোক যদি তার পার্থিব ও ধর্মীয় কর্তব্যসমূহকে সালাতকে কেন্দ্র করে ভাগ করে নিত, তবে সে দেখতে পেত যে তার সময়ে বরকত হয়েছে এবং তার সময় উত্তমরূপে কাজে লেগেছে। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোন মুসলমান ছাত্র ফজরের সালাতের পরের সময়কে মুখস্ত করার জন্য, জোহরের সালাতের পরের সময়কে পড়ার জন্য বা পাঠ সমাবেশে উপস্থিত হওয়ার জন্য, মাগরিবের সালাতের পরের সময়কে মানুষের সাথে দেখা সাক্ষাৎ ও বিশ্রামের জন্য এবং এশার সলাতের পরের সময়কে সম-সাময়িক বিষয়ে অনেক কিছু পড়ার জন্য ও পরিবারের সদস্যদের সাথে বসার জন্য ভাগ করে নেয় তবে সে অনেক কিছু অর্জন করবে।
“হে ঈমানদারগণ, তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় কর তবে তিনি তোমাদের জন্য সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারী মানদণ্ড মনোনীত করবেন। তোমাদের পাপ মোচন করবেন এবং তোমাদেরকে ক্ষমা করবেন। আর আল্লাহ তো মহাকল্যাণের অধিকারী।” (৮-সূরা আনফালঃ আয়াত-২৯)