একটি মুসলিম দেশ থেকে একজন ছাত্র লন্ডনে পড়াশুনা করতে গিয়েছিল। তার ভাষাগত দক্ষতা বাড়ানোর জন্য সে এক ব্রিটিশ পরিবারের সাথে থাকত। সে তার ধর্মের মূলনীতির প্রতি একনিষ্ঠ ছিল এবং প্রতিদিন ভোররাত্রে ফজরের সালাত পড়ার জন্য উঠে পড়ত। সে অযু করত, সালাতের জায়গায় যেত, তার প্রভুর উদ্দেশ্যে সেজদা করত, তার (আল্লাহর) মহিমা গাইতো ও তার প্রশংসা করত। সে বাড়ির এক বৃদ্ধা মহিলা এ ছাত্রটির এ আজব (বৃদ্ধার নিকট) অভ্যাস পর্যবেক্ষণ করার জন্য প্রবল আগ্রহী ছিল। কয়েকদিন পর বৃদ্ধা ছাত্রটিকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কি করছ?

“আমার ধর্ম আমাকে এরূপ করার আদেশ করে” উত্তরে ছাত্রটি একথা বলল। পুরাপুরি বিশ্রাম করে আরেকটু পরে তুমি এ সালাত পড়তে পার না?” ছাত্রটি এ কথার উত্তরে বলল, “কিন্তু আমি যদি সালাতের নির্ধারিত সময়ের পরে তা আদায় করি তবে আমার প্রভু আমার পক্ষ থেকে তা গ্রহণ করবেন না।” তখন বৃদ্ধা মাথা নেড়ে বিস্ময়ে চিৎকার করে বলল, “এ এমন ইচ্ছা যা লৌহাকেও ভেঙ্গে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেয়।”

رِجَالٌ لَّا تُلْهِيهِمْ تِجَارَةٌ وَلَا بَيْعٌ عَن ذِكْرِ اللَّهِ وَإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ

“এমন কিছু লোক আছে যাদেরকে না ব্যবসা, আর না বিক্রয়, কোনটাই আল্লাহর জিকির থেকে ও সালাত আদায় করা থেকে ভুলিয়ে রাখতে পারে না।” (২৪-সূরা আন নূরঃ আয়াত-৩৭)

এ ধরনের কাজ কেবলমাত্র দৃঢ় ঈমান থেকেই উৎসারিত হয় যা ফেরাউনের যাদুকরদিগকে (ঈমান আনতে) প্রণোদিত করেছিল। যখন মূসা (আঃ) ও ফেরাউন একে অপরের সাথে তর্ক করছিল তখন তারা সবকিছুর প্রভু আল্লাহর প্রতি ঈমান আনতে প্রণোদিত হয়েছিল। তারা ফেরাউনকে বলেছিল “আমাদের নিকট যে স্পষ্ট নিদর্শন এসেছে তার উপর এবং যিনি আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন তার উপর আপনাকে আমরা কখনই প্রাধান্য দিব না, সুতরাং আপনার যা মনে চায় সে ফয়সালাই করুন।” (২০-সূরা ত্বাহাঃ আয়াত-৭২)

এটা ফেরাউনের বিরুদ্ধে এমন এক চ্যালেঞ্জ ছিল যা সে মুহুর্তের আগ পর্যন্ত (কখনও) শুনা যায়নি। উদ্ধত নাস্তিকের নিকট ইসলামের সত্য ও শক্তিশালী বার্তাকে পৌঁছে দেয়াই হঠাৎ করে (তৎক্ষণাৎ) তাদের ব্রত হয়ে গিয়েছিল। হাবীব ইবনে যায়িদ (রাঃ) মুসাইলামাকে ইসলামের দাওয়াত দিতে গিয়েছিলেন। উত্তরে মুসাইলামা তরবার দিয়ে হাবীব (রাঃ)-এর দেহ থেকে একের পর এক অঙ্গ কেটে ফেলতে লাগল। সে হাবীব (রাঃ)-এর ভোগান্তি বাড়ানোর জন্য এরূপে ধীরে ধীরে তাকে কষ্ট দিতে ছিল। এ সময় হাবীব (রাঃ) কান্নাকাটি হৈ চৈ ও নড়াচড়া করেননি, অবশেষে তিনি শহীদ হয়ে তার প্রভুর সাথে সাক্ষাৎ করতে চলে গেলেন।

وَالشُّهَدَاءُ عِندَ رَبِّهِمْ لَهُمْ أَجْرُهُمْ وَنُورُهُمْ

“আর শহীদগণ তাদের প্রভুর সান্নিধ্যে থাকবে, (সেখানে) তাদের জন্য রয়েছে তাদের পুরস্কার ও তাদের নূর।” (৫৭-সূরা আল হাদীদঃ আয়াত-১৯)