আপনি যখন প্রত্যুষে জেগে উঠবেন তখন সন্ধ্যাকে প্রত্যক্ষ করার আশা করবেন না বরং এমনভাবে জীবনযাপন করুন যেন আজই আপনার শেষ সকাল। গতকাল ভালোয় আর মন্দে কেটে গেছে, আর আগামীকালতো এখনও আসেনি। আপনার জীবনকাল মাত্র একদিন, আপনি যেন আজই জন্মগ্রহন করেছেন আর দিনের শেষ মারা যাবেন। এ মনোভাব থাকলে আপনি অতীতের সকল দুশ্চিন্তা ও ভবিষ্যতের সকল অনিশ্চিত আশার নেশায় ব্যস্ত হয়ে থাকবেন না। কেবল আজকের দিনটির জন্যই যেন বেঁচে থাকবেন; সারাটা দিন আপনার উচিত জাগ্রত হৃদয়ে প্রার্থনা করা, বুঝে-শুনে কুরআন তিলাওয়াত করা, মহান আল্লাহ্‌কে অধিক পরিমাণে স্মরণ করা। প্রতিটি দিনেই আপনার কাজকর্মে ভারসাম্যতা বজায় রাখা, তাক্বদীরের প্রতি সন্তুষ্ট থাকা এবং আপনার স্বাস্থ্য ও বাহ্যাকৃতি তথা সাজসজ্জা, রূপচর্চা, বেশভূষা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ও পোশাক পরিচ্ছদ সম্বন্ধে সতর্ক থাকা উচিত।

নোটঃ যারা কুরআন তিলাওয়াত করার সময় পান না তাদের জন্য একটি পরামর্শ হচ্ছে- পুরুষগণ প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্ত জামাতের কিছু সময় আগে মসজিদে চলে যান ও জামাতের পূর্বেকার অতিরিক্ত সময়টুকু কুরআন তিলাওয়াতে অতিবাহিত করুন আর মহিলারা প্রতিদিন প্রতি ওয়াক্ত সালাতের পর কিছু সময় সালাতের জায়গায় বসে কুরআন তিলাওয়াত করুন – মোঃ রফিকুল ইসলাম।

দিনের প্রতিটি মুহূর্তকে সঠিকভাবে পরিচালিত করুন বা যথাযথভাবে কাজে লাগান, যাতে করে আপনি কয়েক মিনিটে কয়েক বছরের ফায়দা এবং কয়েক সেকেন্ডে কয়েক মাসের ফায়দা হাসিল করতে পারেন। আপনার প্রভুর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করুন, তাঁর জিকির করুন, এ ধরাধাম (দুনিয়া) থেকে শেষ বিদায়ের জন্য প্রস্তুত থাকুন এবং অবশিষ্ট সময়টুকুতে সুখ-শান্তিতে বেঁচে থাকুন। আপনার রিযিক, আপনার স্ত্রী, আপনার সন্তানাদি, আপনার কাজ, আপনার গৃহ এবং আপনার জীবনযাপনের উপর সন্তুষ্ট থাকুন।

فَخُذْ مَا آتَيْتُكَ وَكُنْ مِنَ الشَّاكِرِينَ

আমি আপনাকে যা দান করেছি তা গ্রহণ করুন এবং কৃতজ্ঞদের অন্তর্ভুক্ত হোন। (৭-সূরা আল আ'রাফ: আয়াত-১৪৪)

আজকের দিনটি দুঃখ-বেদনা, বিরক্তি, ক্রোধ ও হিংসা-বিদ্বেষমুক্ত অবস্থায় কাটান। আপনার হৃদয়ের মণিকোঠায় একটি কথা সোনার হরফে খোদাই করে লিখে রাখুন, আর সেটা হচ্ছে- “আজই আমার একমাত্র দিন।"

আজ যদি আপনি টাটকা খাবার খেয়ে থাকেন তবে গতকালের বাসী খাবার ও আগামীকালের প্রত্যাশিত খাবারে তেমন কী আসে যায়?

আপনার নিজের উপর যদি আপনার আস্থা থেকে থাকে এবং আপনার যদি একটা দৃঢ়, বলিষ্ঠ, অনড় ও স্থির সংকল্প থেকে থাকে তবে আপনি নিজেই সন্দেহাতীতভাবে পরবর্তী কথাটির উপর দৃঢ় প্রত্যয় উৎপাদন করতে পারবেন: (কথাটি হল) “আজই আমার জীবনের শেষ দিন।”

যখন আপনি এই মনোভাব অর্জন করতে পারবেন তখন আপনি আপনার ব্যক্তিত্বকে উন্নত করে, আপনার ক্ষমতা ও দক্ষতা বাড়িয়ে এবং আপনার কাজকর্মকে পরিশুদ্ধ করে আপনার দিনের প্রতিটি মুহুর্ত হতেই মুনাফা অর্জন করতে পারবেন। তারপর আপনি মনে মনে বলুন আজ আমি আমার কথাবার্তাকে পরিশুদ্ধ করব এবং কোনোরূপ মন্দ ও অশ্লীল কথা উচ্চারণ থেকে বিরত থাকব। আমি কারো গীবতও করব না। আজ আমি ঘর ও অফিস গুছাবো। সেগুলো অগোছালো ও এলোমেলো থাকবে না, বরং গোছালো ও ফিটফাট থাকবে।

আজ আমি আমার শরীরের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও বাইরের ঠাঁট সম্বন্ধে বিশেষ যত্নবান হব। আমি আমার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পবিত্রতা সম্বন্ধে অতিশয় সতর্ক হব এবং আমার চলাফেরা, কথাবার্তা ও কাজকর্মে ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান বজায় রাখব।

আজ আমি আমার প্রতিপালকের প্রতি অনুগত থাকতে, সম্ভাব্য সর্বোত্তম পদ্ধতিতে সালাত আদায় করতে, অধিক নফল ইবাদত করতে, কুরআন তিলাওয়াত করতে এবং উপকারী বই-পুস্তক ও ভালো কিতাবাদি পড়তে আপ্রাণ চেষ্টা করব। আজ আমি আমার অন্তরে ভালো কাজের বীজ বপন করব এবং অহংকার, হিংসা-বিদ্বেষ, ভণ্ডামি, কপটতা ও মোনাফেকির মতো মন্দ কাজের মূলোৎপাটন করব।

আজ আমি অন্যদেরকে সাহায্য করার (তথা রোগী দেখতে যাবার, জানাযার সালাতে উপস্থিত হবার, পথহারাকে পথ দেখানোর এবং ক্ষুধার্তকে খাবার খাওয়ানোর) চেষ্টা করব। আজ আমি মজলুমের পাশে দাঁড়াব। আমি বিজ্ঞ জনকে (জ্ঞানীকে বা আলেমকে) সম্মান প্রদর্শন করব, দয়াৰ্দ্ৰ হব আর বৃদ্ধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হব।

হে অতীত! তুমিতো বিদায় হয়ে চলে গিয়েছ, আমি তোমাকে নিয়ে কাঁদব না। তোমাকে স্মরণ করলে বা তোমার কথা মনে করলে তুমিতো আমাকে আর দেখতে আসবে না, এমননি এক মুহুর্তের জন্যও না, কেননা, তুমিতো আমাকে ছেড়ে চিরদিনের মতো বিদায় হয়ে চলে গিয়েছ।

হে ভবিষ্যৎ তুমিতো অজ্ঞাত, অজানা ও অদৃশ্য জগতে আছ, সুতরাং আমি তোমার কল্পনায় বিভোর হব না। আমি ভবিষ্যৎ নিয়ে আগেভাগেই মাথা ঘামাব না। কেননা, ভবিষ্যৎ কিছুই না এবং এমনকি তা এখনও সৃষ্টিই হয়নি।

যারা পরিপূর্ণ জাকজমক ও চমৎকারভাবে জীবনযাপন করতে চায় তাদের জন্য সুখের অভিধানে সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ কথা হল “আজই আমার শেষ দিন।"