কোনো ব্যক্তি অতীতের দুঃখজনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে বসে বসে চিন্তা-ভাবনা করে শুধু এক ধরনের পাগলামিই দেখাতে পারে- যে পাগলামি বর্তমান জীবন-যাপন করার বা উপস্থিত মুহুর্তে বেঁচে থাকার দৃঢ় সংকল্পকে ধ্বংস করে দেয়ার মতো এক ধরনের রোগ। যাদের দৃঢ় সংকল্প আছে তারা অতীতের ঘটনাবলিকে ধুয়ে মুছে ফেলে দিয়ে ভুলে গিয়েছে। এ ঘটনাগুলো আর কখনও সত্যের পথে বাধা হয়ে দাড়াবে না।
কেননা, সেগুলো বিস্মৃতির অতল গহ্বরে তলিয়ে গেছে। অতীতের উপাখ্যান শেষ হয়ে গেছে; দুঃখ ওগুলোর ক্ষতিপূরণ করতে পারে না, বিষন্নতা সেগুলোকে সংশোধন করতে পারে না, আর হতাশা কখনও অতীতকে পুনরুজ্জীবন দান করতে পারবে না। কেননা, অতীত চিরকাল অতীত— তা অস্তিত্বহীন। অতীতের দুঃস্বপ্ন দেখবেন না বা যা আপনি হারিয়েছেন তার মিছে আশা করবেন না। অতীতের ভূতের আবির্ভাব হতে নিজেকে রক্ষা করুন। আপনি কি মনে করেন যে, আপনি সূর্যকে তার উদয়স্থলে, শিশুকে তার মায়ের জঠরে, দুধকে পশুর ওলানে অথবা অশ্রুকে আঁখিতে ফিরিয়ে দিতে পারবেন? অতীত ও অতীতের ঘটনাবলি নিয়ে অনবরত চিন্তা-ভাবনা করে আপনি নিজেকে এক অতি ভয়ংকর ও শোচনীয় মানসিক অবস্থায় উপনীত করবেন।
অতীত নিয়ে অতিরিক্ত গবেষণা বর্তমানের অপচয় মাত্র। পূর্ববতী জাতিদের কার্যকলাপ উল্লেখপূর্বক মহান আল্লাহ তায়ালা বলেন-
تِلْكَ أُمَّةٌ قَدْ خَلَتْ
এটা ছিল এমনই এক জাতি যা অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে। (২-সূরা বাকারা: আয়াত-১৩৪)
অতীতের দিনগুলো চলে গেছে ও শেষ হয়ে গেছে, আর ইতিহাসের চাকা উল্টোদিকে বা পিছন দিকে ঘুরিয়ে তাদের ময়না তদন্ত করে আপনার কোনো লাভ হবে না।
যে লোক অতীতের চিন্তায় বিভোর থাকে, সে তো ঐ লোকের মতো যে লোক কাঠের গুড়াকে করাত দিয়ে চেরাই করতে চায়। যে ব্যক্তি অতীত নিয়ে কান্না-কাটি, হা-হুতাশ ও দুঃখ করত এমন ব্যক্তিকে প্রাচীনকালে বলা হতো- "মৃতদেরকে তাদের কবর থেকে তুলিও না।"
আমাদের দুঃখজনক ব্যাপার এই যে, আমরা বর্তমানের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করতে পারি না; আমাদের সুন্দর সুন্দর প্রাসাদকে অবহেলা করে আমরা ধ্বংস দালানকোঠার জন্য হাউ মাউ করে কান্না-কাটি করি। সকল জ্বীন ও ইনসান একত্রে অতীতকে ফিরিয়ে আনতে চাইলেও তারা অতি নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হবে। পৃথিবীর সবকিছুই সন্মুখপানে এগিয়ে চলছে, একটি নতুন ঋতুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে-আপনাকেও তাই করতে হবে। (অর্থাৎ আপনাকেও একটি নতুন জীবনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে ও সামনে এগিয়ে চলতে হবে। -অনুবাদক)