ইবাদতের উদ্দেশ্যে যমীনে সর্বপ্রথম স্থাপিত হয় কা‘বাঘর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ إِنَّ أَوَّلَ بَيۡتٖ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكٗا وَهُدٗى لِّلۡعَٰلَمِينَ ٩٦ ﴾ [ال عمران: ٩٦]
‘নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। যা বরকতময় ও সৃষ্টিকুলের জন্য হিদায়াত।’[1]
আবূ যর গিফারী রা. একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, যমীনে সর্বপ্রথম কোন্ মসজিদ স্থাপিত হয়েছে ? তিনি বললেন, মসজিদে হারাম।[2]
প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ইবরাহীম ও ইসমাঈল আ. মক্কা নগরীতে পবিত্র কা‘বাঘর পুণনির্মানের নির্দেশ পান। তাঁরা উভয়ে তা নির্মাণ করেন। এই নির্মাণের বিষয়টি পবিত্র কুরআন ও হাদীসে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে।[3]
অনেক ঐতিহাসিকের মতে কা‘বাঘর ১২ (বারো) বার নির্মাণ পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। নিচে নির্মাতা, পুনঃনির্মাতা ও সংস্কারকের নাম উল্লেখ করা হল :
১. ফেরেশতা। ২. আদম। ৩. শীছ ইবন আদম। ৪. ইবরাহীম ও ইসমাঈল আ.। ৫. আমালেকা সম্প্রদায়। ৬. জুরহুম গোত্র। ৭. কুসাই ইবন কিলাব। ৮. কুরাইশ। ৯. আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের রা. (৬৫ হি.)। ১০. হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ (৭৪ হি.)। ১১. সুলতান মারদান আল-উসমানী (১০৪০ হি.) এবং বাদশাহ ফাহদ ইবন আবদুল আজীজ (১৪১৭ হি.)।[4]
সুলতান মারদান আল উসমানির সংস্কারের পর বাদশাহ ফাহদের সংস্কার কার্যক্রম হল সর্বাপেক্ষা ব্যাপক।
কা‘বাঘরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ও উচ্চতা
উচ্চতা |
মুলতাযামের দিকে দৈর্ঘ্য |
হাতীমের দিকে দৈর্ঘ্য |
রুকনে ইয়ামানী ও হাতীমের মাঝখানের দৈর্ঘ্য |
হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝখানের দৈর্ঘ্য |
১৪ মিটার |
১২.৮৪ মিটার |
১১.২৮ মিটার |
১২.১১ মিটার |
১১.৫২ মিটার |
কিয়ামতের অন্যতম বড় আলামত হচ্ছে, এক হাবশী কা‘বাঘর ধ্বংস করে ফেলবে। এরপর কা‘বাঘর আর নির্মিত হবে না। কা‘বাঘর ধ্বংসের ঘটনা সেই দিন ঘটবে যেদিন ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ বলার মত কোন লোক পৃথিবীতে থাকবে না। এরপর কিয়ামত সংঘটিত হবে।
হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর)
- কা‘বাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, যমীন থেকে ১.১০ মিটার উচ্চতায় হাজরে আসওয়াদ স্থাপিত। হাজরে আসওয়াদ দৈর্ঘ্যে ২৫ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ১৭ সেন্টিমিটার।
- পূর্বে হাজরে আসওয়াদ এক খণ্ড ছিল, কারামাতা সম্প্রদায় ৩১৯ (তিনশত উনিশ) হিজরীতে পাথরটি উঠিয়ে নিজদের অঞ্চলে নিয়ে যায়। সেসময় পাথরটি ভেঙে ৮ (আট) টুকরো হয়ে যায়। এ টুকরোগুলোর সবচে’ বড়টি খেজুরের মতো। টুকরোগুলো বর্তমানে অন্য আরেকটি পাথরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যার চারপাশে দেয়া হয়েছে রুপার বর্ডার। তাই রুপার বর্ডারবিশিষ্ট পাথরটি চুম্বন নয় বরং তাতে স্থাপিত হাজরে আসওয়াদের টুকরোগুলো চুম্বন বা স্পর্শ করতে পারলেই কেবল হাজরে আসওয়াদ চুম্বন বা স্পর্শ করা হয়েছে বলে ধরা হবে।
- ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«نَزَلَ الْحَجَرُ الأَسْوَدُ مِنَ الْجَنَّةِ وَهُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ وفي رواية هُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ الثَّلْجِ فَسَوَّدَتْهُ خَطَايَا بَنِى آدَمَ».
‘হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে নেমে এসেছে। আর এর রং দুধের চেয়ে সাদা। অন্য বর্ণনায়, বরফের চেয়েও সাদা ছিল। পরে আদম-সন্তানের পাপ তাকে কালো করে দেয়।’[5]
অপর এক হাদীসে এসেছে,
«إِنَّ الرُّكْنَ وَالْمَقَامَ يَاقُوتَتَانِ مِنْ يَاقُوتِ الْجَنَّةِ طَمَسَ اللَّهُ نُورَهُمَا وَلَوْ لَمْ يَطْمِسْ نُورَهُمَا لَأَضَاءَتَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ».
‘রুকন (হাজরে আসওয়াদ) ও মাকামে ইবরাহীম- পাথর দু’খানি জান্নাতের ইয়াকুত পাথরগুলোর মধ্য থেকে দু’টি পাথর, আল্লাহ যেগুলোকে আলোহীন করে দিয়েছেন। যদি তিনি এসবকে আলোহীন না করে দিতেন, তবে তা পূর্ব-পশ্চিমকে আলোকিত করে দিত।’[6]
ইবন উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ مَسْحَهُمَا يَحُطُّ الْخَطَايَا».
‘নিশ্চয় ঐ দু’টির (হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী) কে স্পর্শ করার দ্বারা গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’[7]
ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে বলেন,
«وَاللهِ لَيَبْعَثَنَّهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَهُ عَيْنَانِ يُبْصِرُ بِهِمَا وَلِسَانٌ يَنْطِقُ بِهِ يَشْهَدُ عَلَى مَنِ اسْتَلَمَهُ بِحَقٍّ».
‘আল্লাহর কসম, হাজরে আসওয়াদকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন পুনরুত্থান করবেন। তার থাকবে দু’টি চোখ যা দিয়ে সে দেখবে, আর থাকবে একটি জিহবা, যা দিয়ে সে কথা বলবে। যে তাকে চুম্বন বা স্পর্শ করবে, তার পক্ষে সে কিয়ামতের দিন সাক্ষী দেবে।’[8]
রুকনে ইয়ামানী
এটি কা‘বাঘরের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে অবস্থিত। এটি ইয়ামান দেশের দিকে হওয়াতে একে রুকনে ইয়ামানী বলা হয়েছে থাকে।[9] হাদীসে এসেছে, এই রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করলে মানুষের গুনাহ মাফ হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ مَسْحَهُمَا يَحُطُّ الْخَطَايَا».
‘নিশ্চয় ঐ দু’টি (হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী) কে স্পর্শ করার দ্বারা গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’[10]
অন্য হাদীসে এসেছে,
«يأتي الركن اليماني يوم القيامة أعظم من أبي قبيس له لسانان وشفتان».
‘রুকনে ইয়ামানী কিয়ামতের দিন আবূ কুবাইস পর্বতের চেয়েও বড় আকারে আবির্ভূত হবে। তার থাকবে দু’টি জিহবা এবং দু’টি ঠোঁট।’[11]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সুন্নত হচ্ছে : এটিকে চুমু না দিয়ে শুধু স্পর্শ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে এ রুকনটিতে স্পর্শ করতেন। ইবন উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لَمْ أَرَ رسول الله صلى الله عليه وسلم يَسْتَلِمُ مِنْ الْبَيْتِ إِلاَّ الرُّكْنَيْنِ الْيَمَانِيَيْنِ.
‘দু’টি রুকন ইয়ামানী ছাড়া আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অন্য কোন রুকন স্পর্শ করতে দেখিনি।’[12]
আল্লামা যারকানী বলেন, কা‘বাঘরের চারটি কোণ রয়েছে। প্রথম কোণের রয়েছে দু’টি ফযীলত। এতেই রক্ষিত আছে হাজরে আসওয়াদ আর এটি ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর দ্বিতীয় কোণ অর্থাৎ রুকনে ইয়ামানীর রয়েছে একটি ফযীলত। তা হল এটি ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। অপর দুই রুকনের কোন বিশেষত্ব নেই। কারণ, তা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়।[13] তাই শুধু হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীকেই স্পর্শ করা হয়।
মুলতাযাম
হাজরে আসওয়াদ থেকে কা‘বা শরীফের দরজা পর্যন্ত জায়গাটুকুকে মুলতাযাম বলে।[14] মুলতাযাম শব্দের আক্ষরিক অর্থ এঁটে থাকার জায়গা। আবদুর রহমান ইবন সাফওয়ান বলেন,
رَأَيْتُ رسول الله صلى الله عليه وسلم قَدْ خَرَجَ مِنْ الْكَعْبَةِ هُوَ وَأَصْحَابُهُ وَقَدْ اسْتَلَمُوا الْبَيْتَ مِنْ الْبَابِ إِلَى الْحَطِيمِ وَقَدْ وَضَعُوا خُدُودَهُمْ عَلَى الْبَيْتِ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَسْطَهُمْ.
‘আমি মক্কা বিজয়ের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীদের কা‘বাঘর থেকে বের হতে দেখলাম। অতঃপর তারা কা‘বাঘরের দরজা থেকে নিয়ে হাতীম পর্যন্ত স্পর্শ করলেন এবং তাঁরা তাঁদের গাল বাইতুল্লাহ্র সাথে লাগিয়ে রাখলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাদের মাঝে ছিলেন।’[15]
আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কা‘বা গৃহের দরজা ও রুকনের মাঝামাঝি স্থানটি মুলতাযাম।[16]
সাহাবায়ে কিরাম মক্কায় এসে মুলতাযামে যেতেন এবং সেখানে দু’হাতের তালু, দু’হাত, চেহারা ও বক্ষ রেখে দো‘আ করতেন। বিদায়ী তাওয়াফের পূর্বে বা পরে অথবা অন্য যেকোনো সময় মুলতাযামে গিয়ে দো‘আ করা যায়। ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন,
إِنْ أَحَبَّ أَنْ يَأْتِيَ الْمُلْتَزَمَ وَهُوَ مَا بَيْنَ الْحَجَرِ الأَسْوَدِ وَالْبَابِ فَيَضَعُ عَلَيْهِ صَدْرَهُ وَوَجْهَهُ وَذِرَاعَيْهِ وَكَفَّيْهِ وَيَدْعُوْ، وَيَسْأَلُ اللهَ تَعَالَى حَاجَتَهُ، فَعَلَ ذَلِكَ وَلَهُ أَنْ يَفْعَلَ قَبْلَ طَوَافِ الْْوَدَاعِ، فَإِنَّ هَذَا الاِلْتِزَامُ لاَ فَرْقُ بَيْنَ أَنْ يَكُوْنَ حَال الْوَدَاعِ وَغَيْرِهِ، وَالصَّحَابَةُ كَانُوْا يَفٍْعَلُوْنَ ذَلِكَ حِيْنَ يَدْخُلُوْنَ مَكَّةَ.
‘যদি সে ইচ্ছা করে হাজরে আসওয়াদ ও দরজার মধ্যবর্তী স্থান মুলতাযামে আসবে। অতপর সেখানে তার বক্ষ, চেহারা, দুই বাহু ও দুই হাত রাখবে এবং দো‘আ করবে, আল্লাহর কাছে তার প্রয়োজনগুলো চাইবে, তবে এরূপ করা যায়। বিদায়ী তাওয়াফের পূর্বেও এরূপ করতে পারবে। মুলতাযাম ধরার ক্ষেত্রে বিদায়ী অবস্থা ও অন্যান্য অবস্থার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আর সাহাবীগণ যখন মক্কায় প্রবেশ করতেন তখন এরূপ করতেন।[17]
তবে বর্তমান যুগে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে মুলতাযামে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই সুযোগ পেলে সেখানে যাবেন। অন্যথায় যাওয়ার দরকার নেই। কেননা মুলতাযামে যাওয়া তাওয়াফের অংশ নয়। তাওয়াফের সময় তা করা যাবে না।
হিজর বা হাতীম
হিজর বা হাতীম হচ্ছে, কা‘বার উত্তরদিকে অবস্থিত অর্ধেক বৃত্তাকার অংশ। হাতীম শব্দের অর্থ ভগ্নাংশ। আর হিজর অর্থ পাথর স্থাপন করা। এটা কা‘বা ঘরের অংশ। অর্থাভাবে কা‘বার পুননির্মাণের সময় কুরাইশরা এজায়গাটি ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তির ওপর নির্মাণ করতে পারেনি। তারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তির স্থানগুলোতে পাথর স্থাপন করল। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ قَوْمَكِ اسْتَقْصَرُوا مِنْ بُنْيَانِ الْبَيْتِ وَلَوْلاَ حَدَاثَةُ عَهْدِهِمْ بِالشِّرْكِ أَعَدْتُ مَا تَرَكُوا مِنْهُ فَإِنْ بَدَا لِقَوْمِكِ مِنْ بَعْدِي أَنْ يَبْنُوهُ فَهَلُمِّي لِأُرِيَكِ مَا تَرَكُوا مِنْهُ فَأَرَاهَا قَرِيبًا مِنْ سَبْعَةِ أَذْرُعٍ».
‘তোমার গোত্রের লোকেরা কা‘বাঘর পুনর্নিমাণের সময় একে ছোট করে ফেলেছে। তারা যদি সদ্য শিরক থেকে আগত না হত তবে যে অংশটুকু তারা বাইরে রেখেছে সেটুকু আমি কা‘বাঘরের ভেতরে ফিরিয়ে আনতাম। আমার মৃত্যুর পর তোমার সমাজের লোকেরা যদি পুনরায় একে নির্মাণ করতে চায়। (তখন তুমি তাদেরকে এটা দেখিয়ে দেবে।) তাই এসো হে আয়েশা! তোমাকে ওই স্থানটুকু দেখিয়ে দেই যেটুকু কুরাইশরা কা‘বাঘর পুননির্মাণের সময় বাইরে রেখেছে। এই বলে তিনি বাইরে থাকা সাত হাত পরিমাণ স্থান দেখিয়ে দিলেন।’[18]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পরিমাণ স্থান বাইরে ছিল বলে নির্ধারণ করেছেন সেটুকুই কা‘বার অংশ। বর্তমানে উত্তর দিকের দেয়ালের ভেতরে যতটুকু স্থান ঢোকানো হয়েছে, তা সঠিক পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি। যে এখানে সালাত আদায় করতে চায়, তার উচিত হাদীসে বর্ণিত সঠিক স্থানটুকু তালাশ করে বের করা।
হিজরে সালাত আদায় করা কা‘বার অভ্যন্তরে সালাত আদায়ের সমান। কারণ এটা কা‘বাঘরেরই অংশ। আয়েশা রা. বলেন,
كُنْتُ أُحِبُّ أَنْ أَدْخُلَ الْبَيْتَ فَأُصَلِّيَ فِيهِ فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدِي فَأَدْخَلَنِي فِي الْحِجْرِ فَقَالَ لِي صَلِّي فِي الْحِجْرِ إِذَا أَرَدْتِ دُخُولَ الْبَيْتِ فَإِنَّمَا هُوَ قِطْعَةٌ مِنْ الْبَيْتِ وَلَكِنَّ قَوْمَكِ اسْتَقْصَرُوا حِينَ بَنَوْا الْكَعْبَةَ فَأَخْرَجُوهُ مِنْ الْبَيْتِ.
‘আমি কা‘বা গৃহে প্রবেশ করে সালাত আদায় করতে আগ্রহ প্রকাশ করতাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে হিজ্রে প্রবেশ করিয়ে দিলেন এবং বললেন, তুমি কা‘বাঘরে প্রবেশ করতে চাইলে হিজরে সালাত আদায় কর। কারণ এটা কা‘বারই অংশ। কিন্তু তোমার সমাজের লোকেরা কা‘বার পুনর্নিমাণের সময় এটাকে ছোট করে ফেলেছে এবং হিজ্রকে কা‘বার বাইরে রেখে দিয়েছে।’[19]
ইতোপূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, কা‘বা ঘরের তাওয়াফকারী অবশ্যই হিজরের বাইরে দিয়ে তওয়াফ করবে। কারণ এটা কা‘বারই অংশ। ব্যাপকভাবে প্রচারিত ভুলেরই একটি হচ্ছে এটাকে ‘হিজ্র ইসমাঈল’ করে নামকরণ করা। এ নামকরণটি সঠিক নয়। কিছু মানুষ মনে করে, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম অথবা অন্য অনেক নবীকে এখানে দাফন করা হয়েছে। এটি আরও জঘন্য ধারণা।[20]
[2]. বুখারী : ৩৩৬৬।
[3]. বিস্তারিত দ্রষ্টব্য সূরা বাকারার ১২৭ আয়াতের তাফসীর। আরো দেখুন সহীহ বুখারী : ৩৩৬৪।
[4]. ড. মুহাম্মদ ইলিয়াস আব্দুল গনী : তারীখু মাক্কাতিল মুকাররামা, পৃ : ৩৪, মাতাবিউর রাশীদ, মদীনা মুনাওয়ারা।
[5]. তিরমিযী : ৮৭৭; ইবন খুযাইমা : ৪/২৮২।
[6]. তিরমিযী : ৮৭৮; মুসনাদ আহমদ : ২/২১৩; ইবন খুযাইমা : ২৭৩১।
[7]. নাসাঈ : ৫/২২১।
[8]. আহমদ : ১/২৬৬।
[9]. নাববী, শরহু মুসলিম : ২/৮৪৪।
[10]. নাসাঈ : ৫/২২১।
[11]. সহিহুত-তারগীব ওয়াত-তারহীব : ২/১৪; মুসনাদ আহমদ : ২/২১১। তবে মুসনাদ আহমদের বর্ণনায় শুধু রুকন শব্দ বলা হয়েছে।
[12]. মুসলিম : ১২৬৭।
[13]. মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ : ৯/১৪।
[14]. আল মুসান্নাফ লি আব্দির রাজ্জাক : ৫/৭৩।
[15]. আবূ দাঊদ : ১৮৯৮। এই হাদীসের সনদে দুর্বলতা আছে। কিন্তু তার অনুরূপ একটি হাদীস ‘আবদুল্লাহ ইবন আমর থেকে বর্ণিত। তিনি রুকন ও দরজার মাঝখানে দাঁড়ালেন। তিনি তার বক্ষ, দু’বাহু ও দু’হাতের তালু সম্প্রসারিত করে কা‘বাঘরের ওপর রাখলেন। অতঃপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাকে এমনটি করতে দেখেছি। আবূ দাঊদ : ১৮৯৯; ইবন মাজাহ্ : ১৯৬২। এ হাদীসের সনদ উত্তম।
[16]. আবদুর রাজ্জাক সানআনী, আল-মুসান্নাফ : ৭৬/৫।
[17]. ইবন তাইমিয়া, মাজমু‘ ফাতাওয়া : ২৬/১৪২।
[18]. মুসলিম : ৯৬৮।
[19]. মুসনাদ আহমাদ : ৯২/৬; সহীহ ইবন খুযাইমা : ৩০১৮।
[20]. ড. আবদুল্লাহ দুমাইজী, আল-বালাদুল হারাম : ফাযাইল ওয়া আহকাম : ৬৬।
মাকাম শব্দের আভিধানিক অর্থ, দন্ডায়মান হওয়ার জায়গা। আর মাকামে ইবরাহীম অর্থ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের দন্ডায়মান হওয়ার জায়গা। এটি একটি বড় পাথর, যার ওপর দাঁড়িয়ে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম কা‘বা নির্মাণ করেছিলেন। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন। কারণ,
- এটি কা‘বা শরীফ নির্মাণের সময় ইসমাঈল আলাইহিস সালাম নিয়ে এসেছিলেন, যাতে পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালাম এই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে কা‘বাঘর নির্মাণ করতে পারেন। ইসমাঈল আলাইহিস সালাম পাথর এনে দিতেন এবং ইবরাহীম আলাইহিস সালাম তাঁর পবিত্র হাতে তা কা‘বার দেয়ালে রাখতেন। এভাবে তিনি কা‘বাঘর নির্মাণ করেন।[1]
- এটি জান্নাত থেকে আগত ইয়াকূত পাথর। হাদীসে এসেছে, ‘রুকন (হাজরে আসওয়াদ) ও মাকামে ইবরাহীম- পাথর দু’খানি জান্নাতের ইয়াকুত পাথরগুলোর মধ্য থেকে দু’টি পাথর, আল্লাহ যেগুলোকে আলোহীন করে দিয়েছেন। যদি তিনি এসবকে আলোহীন না করে দিতেন, তবে তা পূর্ব-পশ্চিমকে আলোকিত করে দিত।’[2]
- হারাম শরীফের প্রকাশ্য নিদর্শনের মধ্যে রয়েছে মাকামে ইবরাহীম। কা‘বাঘরের নির্মাণ কাজ শেষে ওই পাথরের ওপর দাঁড়িয়ে তিনি সারা বিশ্বের মানুষকে হজের আহবান জানিয়েছিলেন।[3]
- কুরআনুল কারীমে মাকামে ইব্রাহীমকে হারাম শরীফের স্পষ্ট নিদর্শনের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ فِيهِ ءَايَٰتُۢ بَيِّنَٰتٞ مَّقَامُ إِبۡرَٰهِيمَۖ ﴾ [ال عمران: ٩٧]
‘তাতে রয়েছে স্পষ্ট নির্দশনসমূহ, মাকামে ইবরাহীম।’[4]
এ আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিরগণ বলেন, বাইতুল্লাহ্য় আল্লাহর কুদরতের স্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে এবং খলীলুল্লাহ ইবরাহীম আলাইহিস সালামের নিদর্শনাবলি রয়েছে, যার মধ্যে একটি হল ঐ পাথরে তাঁর খলীল ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পদচিহ্ন, যার ওপর তিনি দাঁড়িয়েছিলেন।[5]
ইবনুল জাওযী বলেন, ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পদচিহ্ন এখন পর্যন্ত মাকামে ইবরাহীমে বিদ্যমান। হারামবাসীদের কাছে এটি খুব পরিচিত।[6]
- ইবরাহীম আলাইহিস সালাম বাইতুল্লাহ্র নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করার পর মানুষকে এর ওপর দাঁড়িয়েই আহবান জানিয়েছিলেন, যেন তারা তালবিয়া পাঠ করতে করতে হজ পালনের উদ্দেশ্যে তাদের প্রভুর ঘরের দিকে ছুটে আসে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَأَذِّن فِي ٱلنَّاسِ بِٱلۡحَجِّ يَأۡتُوكَ رِجَالٗا وَعَلَىٰ كُلِّ ضَامِرٖ يَأۡتِينَ مِن كُلِّ فَجٍّ عَمِيقٖ ٢٧ ﴾ [الحج: ٢٧]
‘আর মানুষের নিকট হজের ঘোষণা দাও; তারা তোমার কাছে আসবে পায়ে হেঁটে এবং কৃশকায় উটে চড়ে দূর পথ পাড়ি দিয়ে।’[7]
সে নির্দেশ অনুযায়ী ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মাকামে দাঁড়ালেন এবং আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী মানুষের মধ্যে হজের ঘোষণা প্রদান করলেন। ইবন আব্বাস রা. বলেন, ‘ইবরাহীম আলাইহিস সালাম পাথরটির ওপর দাঁড়ালেন এবং বললেন, হে মানুষ, তোমাদের ওপর হজ ফরয করা হয়েছে। ঘোষণাটি তিনি সে অনাগত প্রজন্মকেও শুনিয়ে দিলেন, যারা ছিল তখনও পুরুষের মেরুদন্ডে এবং নারীদের গর্ভে। যারা ঈমান এনেছিলেন এবং কিয়ামত পর্যন্ত যারা হজ করবেন বলে আল্লাহ জানতেন তারা এ ঘোষণায় সাড়া দিয়ে বললেন, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক’।’[8]
- ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পদচিহ্নের একটি ১০ সেন্টিমিটার গভীর ও অন্যটি ৯ সেন্টিমিটার। লম্বায় প্রতিটি পা ২২ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ১১ সেন্টিমিটার। বর্তমানে এক মিলিয়ন রিয়াল ব্যয় করে মাকামের বাক্সটি নির্মাণ করা হয়েছে। পিতল ও ১০ মিলি মিটার পুরো গ্লাস দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে এটি। ভেতরের জালে সোনা চড়ানো। হাজরে আসওয়াদ থেকে মাকামে ইবরাহীমের দূরত্ব হল ১৪.৫ মিটার।[9]
- তাওয়াফ শেষে মাকামে ইবরাহীমের পেছনে দু’রাকাত সালাত আদায় করতে হয়। জায়গা না পেলে অন্য কোথাও আদায় করলে এ বিধান পালন হয়ে যায়।
[2]. তিরমিযী : ৮৭৮; মুসনাদ আহমদ : ২/২১৩; ইবন খুযাইমা : ২৭৩১।
[3]. আল-ফাসী, শিফাউল গারাম : ২০৩/১।
[4]. আলে-ইমরান : ৯৭।
[5]. তাফসীরে তাবারী : ৪/১১।
[6]. ইবনে হাজার আস্কালানী ফাত্হুল বারীতে এ বক্তব্যটি ইবনুল জাওযী থেকে উদ্ধৃত করেছেন। ১৬৯/৮; তাফসীর ইবন কাসীর : ৩৮৪/১।
[7]. হজ : ২৭।
[8]. ইবন হাজার তাঁর ফাতহুল বারী গ্রন্থে ৬৬৮ নং হাদীসের সনদ সহীহ বলে বর্ণনা করেছেন।
[9]. ড. মুহাম্মদ ইলয়াস আব্দুল গনী : প্রাগুক্ত, পৃ ৭৫-৭৬।
কা‘বা শরীফের চারপাশে উন্মুক্ত জায়গাকে মাতাফ বলে। মাতাফ শব্দের অর্থ, তাওয়াফ করার জায়গা। মাতাফ সর্বপ্রথম পাকা করেন আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের রা. ৬৫ হিজরীতে। এর আয়তন ছিল তখন কা‘বার চারপাশে প্রায় ৫ (পাঁচ) মিটারের মত। কালক্রমে মাতাফ সম্প্রসারিত হতে থাকে। বর্তমানে মাতাফ শীতল মার্বেল পাথর দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে, যা প্রচণ্ড রোদের তাপেও শীতলতা হারায় না, ফলে হাজীগণ আরামের সাথে তার ওপর দিয়ে হেঁটে তাওয়াফ সম্পন্ন করতে পারেন।
কা‘বা শরীফ থেকে দক্ষিণ-পূর্ব দিকে, ১৩০ মিটার দূরে, সাফা পাহাড় অবস্থিত। সাফা একটি ছোট পাহাড়, যার ওপর বর্তমানে গম্বুজ নির্মাণ করা হয়েছে। এ পাহাড়ের একাংশ এখনও উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। আর বাকি অংশ পাকা করে দেয়া হয়েছে। সমতল থেকে উঁচুতে এই পাকা অংশের ওপরে এলে সাফায় উঠেছেন বলে ধরে নেয়া হবে। সাফা পাহাড়ের নির্দিষ্ট জায়গা থেকে এখনও পবিত্র কা‘বা দেখা যায়।
শক্ত পাথরের ছোট্ট একটি পাহাড়। পবিত্র কা‘বা থেকে ৩০০ মিটার দূরে পূর্ব-উত্তর দিকে অবস্থিত। বর্তমানে মারওয়া থেকে কা‘বা শরীফ দেখা যায় না। মারওয়ার সামান্য অংশ খোলা রাখা হয়েছে। বাকি অংশ পাকা করে ঢেকে দেয়া হয়েছে।
সাফা ও মারওয়ার মধ্যবর্তী স্থানকে মাস‘আ বলা হয়। মাস‘আ দৈর্ঘ্যে ৩৯৪.৫ মিটার ও প্রস্থে ২০ মিটার। মাস‘আর গ্রাউণ্ড ফ্লোর ও প্রথম তলা সুন্দরভাবে সাজানো। গ্রাউণ্ড ফ্লোরে ভিড় হলে প্রথম বা দ্বিতীয় তলায় গিয়েও সা‘ঈ করতে পারেন। প্রয়োজন হলে ছাদে গিয়েও সা‘ঈ করা যাবে, তবে খেয়াল রাখতে হবে, আপনার সা‘ঈ যেন মাস‘আর মধ্যেই হয়। মাস‘আ থেকে বাইরে দূরে কোথাও সাঈ করলে সাঈ হয় না।
কা‘বা শরীফ ও তার চারপাশের মাতাফ, মাতাফের ওপারে বিল্ডিং, বিল্ডিংয়ের ওপারে মার্বেল পাথর বিছানো উন্মুক্ত চত্বর- এগুলো মিলে বর্তমান আল-মসজিদুল হারাম গঠিত। কারও কারও মতে পুরো হারাম অঞ্চল আল-মসজিদুল হারাম হিসেবে বিবেচিত। কুরআনুল কারীমের এক আয়াতে এসেছে-
﴿ لَّقَدۡ صَدَقَ ٱللَّهُ رَسُولَهُ ٱلرُّءۡيَا بِٱلۡحَقِّۖ لَتَدۡخُلُنَّ ٱلۡمَسۡجِدَ ٱلۡحَرَامَ إِن شَآءَ ٱللَّهُ ءَامِنِينَ مُحَلِّقِينَ رُءُوسَكُمۡ وَمُقَصِّرِينَ لَا تَخَافُونَۖ فَعَلِمَ مَا لَمۡ تَعۡلَمُواْ فَجَعَلَ مِن دُونِ ذَٰلِكَ فَتۡحٗا قَرِيبًا ٢٧ ﴾ [الفتح: ٢٧]
‘তোমরা আল-মাসজিদুল হারামে অবশ্যই প্রবেশ করবে।’[1] অর্থাৎ হারাম অঞ্চলে প্রবেশ করবে। সূরা ইসরায় আল-মসজিদুল হারামের কথা উল্লেখ হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ سُبۡحَٰنَ ٱلَّذِيٓ أَسۡرَىٰ بِعَبۡدِهِۦ لَيۡلٗا مِّنَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِ إِلَى ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡأَقۡصَا ٱلَّذِي بَٰرَكۡنَا حَوۡلَهُۥ لِنُرِيَهُۥ مِنۡ ءَايَٰتِنَآۚ إِنَّهُۥ هُوَ ٱلسَّمِيعُ ٱلۡبَصِيرُ ١ ﴾ [الاسراء: ١]
‘পবিত্র মহান সে সত্তা, যিনি তাঁর বান্দাকে রাতে নিয়ে গিয়েছেন আল মাসজিদুল হারাম থেকে আল মাসজিদুল আকসা[2] পর্যন্ত, যার আশপাশে আমি বরকত দিয়েছি, যেন আমি তাকে আমার কিছু নিদর্শন দেখাতে পারি। তিনিই সর্বশ্রোতা, সর্বদ্রষ্টা।’[3] ইতিহাসবিদদের বর্ণনামতে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উম্মে হানীর ঘর থেকে ইসরা ও মেরাজের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আর তৎকালে কা‘বা শরীফের চারপাশে সামান্য এলাকা জুড়ে ছিল আল-মসজিদুল হারাম, উম্মে হানীর ঘর আল-মসজিদুল হারাম থেকে ছিল দূরে। তা সত্ত্বেও উক্ত স্থানকে আয়াতে মসজিদুল হারাম বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
[2]. ফিলিস্তীনে অবস্থিত বাইতুল মাকদিস, যা মুসলমানদের প্রথম কিবলা ছিল।
[3]. বানী ইসরাঈল : ১।
আল্লাহ তা‘আলা জিবরীলের মাধ্যমে ইবরাহীম আ. কে হারামের সীমানা দেখিয়ে দেন। তিনি জিবরীলের নির্দেশনা মতে সীমানা স্তম্ভ স্থাপন করেন। মক্কা বিজয় পর্যন্ত এ অবস্থাতেই সেটি অপরিবর্তিত ছিল। সে বছর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তামীম ইবন আসাদ আল-খুযা‘য়ীকে প্রেরণ করে তা সংস্কার করেন। এরপর উমর রা. নিজ খেলাফতকালে চারজন কুরাইশীকে পাঠিয়ে আবারো তা সংস্কার করেন। আল্লাহ তা‘আলা আল-বাইতুল ‘আতীক অর্থাৎ কা‘বার সম্মানার্থে ‘হারাম’ সীমানা নির্ধারণ করেছেন এবং একে নিরাপদ এলাকা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছেন। এ নির্ধারিত স্থানে মানুষসহ সকল পশু-পাখি এমনকি গাছ-পালা তরু-লতা পর্যন্ত নিরাপদ। এখানে নেক আমলের ফযীলত অন্যান্য সকল স্থান অপেক্ষা অনেক বেশি। হারামের সীমানা মক্কার চারপাশব্যাপী বিস্তৃত। তবে সবদিকের দূরত্ব এক সমান নয়। বর্তমানে মক্কা প্রবেশের সদর রোডে হারামের সীমারেখার একটি নির্দেশনা লাগানো আছে। যা নিম্নরূপ-
- পশ্চিম দিকে জেদ্দার পথে ‘আশ-শুমাইসী’ নামক স্থান পর্যন্ত। যাকে আল হুদায়বিয়া বলা হয়। এটি মক্কা থেকে ২২ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত।
- দক্ষিণে ‘তিহামা’ হয়ে ইয়েমেন যাওয়ার পথে ‘ইযাআত লিব্ন’ নামক স্থান পর্যন্ত। যা মক্কা থেকে ১২ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত।
- পূর্বে ‘ওয়াদিয়ে উয়ায়নাহ’ নামক স্থানের পশ্চিম কিনারা পর্যন্ত। যা মক্কা থেকে ১৫ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত।
- উত্তর-পূর্ব দিকে ‘জি‘ইররানাহ’ এর পথে। শারায়ে মুজাহেদীনের গ্রাম পর্যন্ত, যা মক্কা থেকে ১৬ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত।
উত্তরে ‘তানঈম’ নামক স্থান পর্যন্ত। এটি মক্কা থেকে ৭ কি.মি. দূরত্বে অবস্থিত। বর্তমানে এখানে একটি মসজিদ রয়েছে, যা মসজিদে আয়েশা নামে বিখ্যাত।
হেরা পাহাড় মক্কা খেকে মিনার পথে বাম দিকে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৬৩৪ মিটার। বর্তমানে মক্কাবাসিরা একে জাবালে নূর বলে থাকেন। এ পাহাড়ের ওপরেই সেই গুহা রয়েছে যেখানে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবুওয়াতের পূর্বে ইবাদত করতেন। ইবাদতরত অবস্থায় এখানেই সর্বপ্রথম কুরআনের আয়াত নাযিল হয়েছিল। এ গুহার প্রবেশদ্বার উত্তর দিক দিয়ে। এতে পাঁচ জন লোক বসতে পারে। এর উচ্চতা মাঝারি আকারের। এ পাহাড়ে উঠলে মক্কার ঘর-বাড়ি দেখা যায়। দেখা যায় ছাওর পাহাড়। পাহাড়ের চূড়া উটের কুজের মত। মক্কাসহ সারা পৃথিবীতে হেরা পাহাড়ের মতো কোন পাহাড় নেই। এ এক অনন্য পাহাড়।
নবীজীর পবিত্র জন্মস্থানটি সুপরিচিত। শি‘আবে আলীর প্রবেশমুখে অবস্থিত। বনী হাশেম গোত্র যেখানে বাস করত সেটিই শি‘আবে আলী। যেখানে কুরাইশগণ বনূ হাশিম গোত্রকে অবরুদ্ধ করে রাখে। মানুষ বরকত স্বরূপ সে স্থানের মাটি গ্রহণ করা শুরু করেছিল। যা একটি গর্হিত ও শির্কী কাজ। তাই পরবর্তীতে সেখানে একটি লাইব্রেরি স্থাপন করা হয়। এটি শায়েখ আব্বাস কাত্তান ১৩৭১ হিজরীতে তার ব্যক্তিগত সম্পদ দিয়ে নির্মাণ করেন।