ইমেইলে পাঠাতে নিচের ফর্মটি পূরণ করুন
security code
হজ উমরা ও যিয়ারত নবম অধ্যায় : মক্কার পবিত্র ও ঐতিহাসিক স্থানসমূহ ইসলামহাউজ.কম
হজ-উমরার পবিত্র স্থানসমূহের পরিচিতি : কা‘বাঘর

ইবাদতের উদ্দেশ্যে যমীনে সর্বপ্রথম স্থাপিত হয় কা‘বাঘর। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,

﴿ إِنَّ أَوَّلَ بَيۡتٖ وُضِعَ لِلنَّاسِ لَلَّذِي بِبَكَّةَ مُبَارَكٗا وَهُدٗى لِّلۡعَٰلَمِينَ ٩٦ ﴾ [ال عمران: ٩٦]

‘নিশ্চয় প্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য স্থাপন করা হয়েছে, তা মক্কায়। যা বরকতময় ও সৃষ্টিকুলের জন্য হিদায়াত।’[1]

আবূ যর গিফারী রা. একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ, যমীনে সর্বপ্রথম কোন্ মসজিদ স্থাপিত হয়েছে ? তিনি বললেন, মসজিদে হারাম।[2]

প্রায় পাঁচ হাজার বছর পূর্বে ইবরাহীম ও ইসমাঈল আ. মক্কা নগরীতে পবিত্র কা‘বাঘর পুণনির্মানের নির্দেশ পান। তাঁরা উভয়ে তা নির্মাণ করেন। এই নির্মাণের বিষয়টি পবিত্র কুরআন ও হাদীসে বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে।[3]

অনেক ঐতিহাসিকের মতে কা‘বাঘর ১২ (বারো) বার নির্মাণ পুনঃনির্মাণ ও সংস্কার করা হয়েছে। নিচে নির্মাতা, পুনঃনির্মাতা ও সংস্কারকের নাম উল্লেখ করা হল :

১. ফেরেশতা। ২. আদম। ৩. শীছ ইবন আদম। ৪. ইবরাহীম ও ইসমাঈল আ.। ৫. আমালেকা সম্প্রদায়। ৬. জুরহুম গোত্র। ৭. কুসাই ইবন কিলাব। ৮. কুরাইশ। ৯. আবদুল্লাহ ইবন যুবায়ের রা. (৬৫ হি.)। ১০. হাজ্জাজ ইবন ইউসুফ (৭৪ হি.)। ১১. সুলতান মারদান আল-উসমানী (১০৪০ হি.) এবং বাদশাহ ফাহদ ইবন আবদুল আজীজ (১৪১৭ হি.)।[4]

সুলতান মারদান আল উসমানির সংস্কারের পর বাদশাহ ফাহদের সংস্কার কার্যক্রম হল সর্বাপেক্ষা ব্যাপক।

কা‘বাঘরের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ও উচ্চতা

উচ্চতা

মুলতাযামের দিকে দৈর্ঘ্য

হাতীমের দিকে দৈর্ঘ্য

রুকনে ইয়ামানী ও হাতীমের মাঝখানের দৈর্ঘ্য

হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীর মাঝখানের দৈর্ঘ্য

১৪ মিটার

১২.৮৪ মিটার

১১.২৮ মিটার

১২.১১ মিটার

১১.৫২ মিটার

কিয়ামতের অন্যতম বড় আলামত হচ্ছে, এক হাবশী কা‘বাঘর ধ্বংস করে ফেলবে। এরপর কা‘বাঘর আর নির্মিত হবে না। কা‘বাঘর ধ্বংসের ঘটনা সেই দিন ঘটবে যেদিন ‘আল্লাহ’ ‘আল্লাহ’ বলার মত কোন লোক পৃথিবীতে থাকবে না। এরপর কিয়ামত সংঘটিত হবে।

হাজরে আসওয়াদ (কালো পাথর)

  • কা‘বাঘরের দক্ষিণ-পূর্ব কোণে, যমীন থেকে ১.১০ মিটার উচ্চতায় হাজরে আসওয়াদ স্থাপিত। হাজরে আসওয়াদ দৈর্ঘ্যে ২৫ সেন্টিমিটার ও প্রস্থে ১৭ সেন্টিমিটার।
  • পূর্বে হাজরে আসওয়াদ এক খণ্ড ছিল, কারামাতা সম্প্রদায় ৩১৯ (তিনশত উনিশ) হিজরীতে পাথরটি উঠিয়ে নিজদের অঞ্চলে নিয়ে যায়। সেসময় পাথরটি ভেঙে ৮ (আট) টুকরো হয়ে যায়। এ টুকরোগুলোর সবচে’ বড়টি খেজুরের মতো। টুকরোগুলো বর্তমানে অন্য আরেকটি পাথরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে, যার চারপাশে দেয়া হয়েছে রুপার বর্ডার। তাই রুপার বর্ডারবিশিষ্ট পাথরটি চুম্বন নয় বরং তাতে স্থাপিত হাজরে আসওয়াদের টুকরোগুলো চুম্বন বা স্পর্শ করতে পারলেই কেবল হাজরে আসওয়াদ চুম্বন বা স্পর্শ করা হয়েছে বলে ধরা হবে।
  • ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«نَزَلَ الْحَجَرُ الأَسْوَدُ مِنَ الْجَنَّةِ وَهُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ اللَّبَنِ وفي رواية هُوَ أَشَدُّ بَيَاضًا مِنَ الثَّلْجِ فَسَوَّدَتْهُ خَطَايَا بَنِى آدَمَ».

‘হাজরে আসওয়াদ জান্নাত থেকে নেমে এসেছে। আর এর রং দুধের চেয়ে সাদা। অন্য বর্ণনায়, বরফের চেয়েও সাদা ছিল। পরে আদম-সন্তানের পাপ তাকে কালো করে দেয়।’[5]

অপর এক হাদীসে এসেছে,

«إِنَّ الرُّكْنَ وَالْمَقَامَ يَاقُوتَتَانِ مِنْ يَاقُوتِ الْجَنَّةِ طَمَسَ اللَّهُ نُورَهُمَا وَلَوْ لَمْ يَطْمِسْ نُورَهُمَا لَأَضَاءَتَا مَا بَيْنَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ».

‘রুকন (হাজরে আসওয়াদ) ও মাকামে ইবরাহীম- পাথর দু’খানি জান্নাতের ইয়াকুত পাথরগুলোর মধ্য থেকে দু’টি পাথর, আল্লাহ যেগুলোকে আলোহীন করে দিয়েছেন। যদি তিনি এসবকে আলোহীন না করে দিতেন, তবে তা পূর্ব-পশ্চিমকে আলোকিত করে দিত।’[6]

 

ইবন উমর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ مَسْحَهُمَا يَحُطُّ الْخَطَايَا».

‘নিশ্চয় ঐ দু’টির (হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী) কে স্পর্শ করার দ্বারা গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’[7]

ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাজরে আসওয়াদ সম্পর্কে বলেন,

«وَاللهِ لَيَبْعَثَنَّهُ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ لَهُ عَيْنَانِ يُبْصِرُ بِهِمَا وَلِسَانٌ يَنْطِقُ بِهِ يَشْهَدُ عَلَى مَنِ اسْتَلَمَهُ بِحَقٍّ».

‘আল্লাহর কসম, হাজরে আসওয়াদকে আল্লাহ কিয়ামতের দিন পুনরুত্থান করবেন। তার থাকবে দু’টি চোখ যা দিয়ে সে দেখবে, আর থাকবে একটি জিহবা, যা দিয়ে সে কথা বলবে। যে তাকে চুম্বন বা স্পর্শ করবে, তার পক্ষে সে কিয়ামতের দিন সাক্ষী দেবে।’[8]

রুকনে ইয়ামানী

এটি কা‘বাঘরের দক্ষিণ পশ্চিম কোণে অবস্থিত। এটি ইয়ামান দেশের দিকে হওয়াতে একে রুকনে ইয়ামানী বলা হয়েছে থাকে।[9] হাদীসে এসেছে, এই রুকনে ইয়ামানী স্পর্শ করলে মানুষের গুনাহ মাফ হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ مَسْحَهُمَا يَحُطُّ الْخَطَايَا».

‘নিশ্চয় ঐ দু’টি (হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানী) কে স্পর্শ করার দ্বারা গুনাহ মাফ করে দেয়া হয়।’[10]

অন্য হাদীসে এসেছে,

«يأتي الركن اليماني يوم القيامة أعظم من أبي قبيس له لسانان وشفتان».

‘রুকনে ইয়ামানী কিয়ামতের দিন আবূ কুবাইস পর্বতের চেয়েও বড় আকারে আবির্ভূত হবে। তার থাকবে দু’টি জিহবা এবং দু’টি ঠোঁট।’[11]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সুন্নত হচ্ছে : এটিকে চুমু না দিয়ে শুধু স্পর্শ করা। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজ হাতে এ রুকনটিতে স্পর্শ করতেন। ইবন উমর রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,

«لَمْ أَرَ رسول الله صلى الله عليه وسلم يَسْتَلِمُ مِنْ الْبَيْتِ إِلاَّ الرُّكْنَيْنِ الْيَمَانِيَيْنِ.

‘দু’টি রুকন ইয়ামানী ছাড়া আমি নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অন্য কোন রুকন স্পর্শ করতে দেখিনি।’[12]

আল্লামা যারকানী বলেন, কা‘বাঘরের চারটি কোণ রয়েছে। প্রথম কোণের রয়েছে দু’টি ফযীলত। এতেই রক্ষিত আছে হাজরে আসওয়াদ আর এটি ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। আর দ্বিতীয় কোণ অর্থাৎ রুকনে ইয়ামানীর রয়েছে একটি ফযীলত। তা হল এটি ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। অপর দুই রুকনের কোন বিশেষত্ব নেই। কারণ, তা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়।[13] তাই শুধু হাজরে আসওয়াদ ও রুকনে ইয়ামানীকেই স্পর্শ করা হয়।

মুলতাযাম

হাজরে আসওয়াদ থেকে কা‘বা শরীফের দরজা পর্যন্ত জায়গাটুকুকে মুলতাযাম বলে।[14] মুলতাযাম শব্দের আক্ষরিক অর্থ এঁটে থাকার জায়গা। আবদুর রহমান ইবন সাফওয়ান বলেন,

رَأَيْتُ رسول الله صلى الله عليه وسلم قَدْ خَرَجَ مِنْ الْكَعْبَةِ هُوَ وَأَصْحَابُهُ وَقَدْ اسْتَلَمُوا الْبَيْتَ مِنْ الْبَابِ إِلَى الْحَطِيمِ وَقَدْ وَضَعُوا خُدُودَهُمْ عَلَى الْبَيْتِ وَرَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم وَسْطَهُمْ.

‘আমি মক্কা বিজয়ের দিন নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাথীদের কা‘বাঘর থেকে বের হতে দেখলাম। অতঃপর তারা কা‘বাঘরের দরজা থেকে নিয়ে হাতীম পর্যন্ত স্পর্শ করলেন এবং তাঁরা তাঁদের গাল বাইতুল্লাহ্‌র সাথে লাগিয়ে রাখলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন তাদের মাঝে ছিলেন।’[15]

আবদুল্লাহ ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, কা‘বা গৃহের দরজা ও রুকনের মাঝামাঝি স্থানটি মুলতাযাম।[16]

সাহাবায়ে কিরাম মক্কায় এসে মুলতাযামে যেতেন এবং সেখানে দু’হাতের তালু, দু’হাত, চেহারা ও বক্ষ রেখে দো‘আ করতেন। বিদায়ী তাওয়াফের পূর্বে বা পরে অথবা অন্য যেকোনো সময় মুলতাযামে গিয়ে দো‘আ করা যায়। ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন,

إِنْ أَحَبَّ أَنْ يَأْتِيَ الْمُلْتَزَمَ وَهُوَ مَا بَيْنَ الْحَجَرِ الأَسْوَدِ وَالْبَابِ فَيَضَعُ عَلَيْهِ صَدْرَهُ وَوَجْهَهُ وَذِرَاعَيْهِ وَكَفَّيْهِ وَيَدْعُوْ، وَيَسْأَلُ اللهَ تَعَالَى حَاجَتَهُ، فَعَلَ ذَلِكَ وَلَهُ أَنْ يَفْعَلَ قَبْلَ طَوَافِ الْْوَدَاعِ، فَإِنَّ هَذَا الاِلْتِزَامُ لاَ فَرْقُ بَيْنَ أَنْ يَكُوْنَ حَال الْوَدَاعِ وَغَيْرِهِ، وَالصَّحَابَةُ كَانُوْا يَفٍْعَلُوْنَ ذَلِكَ حِيْنَ يَدْخُلُوْنَ مَكَّةَ.

‘যদি সে ইচ্ছা করে হাজরে আসওয়াদ ও দরজার মধ্যবর্তী স্থান মুলতাযামে আসবে। অতপর সেখানে তার বক্ষ, চেহারা, দুই বাহু ও দুই হাত রাখবে এবং দো‘আ করবে, আল্লাহর কাছে তার প্রয়োজনগুলো চাইবে, তবে এরূপ করা যায়। বিদায়ী তাওয়াফের পূর্বেও এরূপ করতে পারবে। মুলতাযাম ধরার ক্ষেত্রে বিদায়ী অবস্থা ও অন্যান্য অবস্থার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আর সাহাবীগণ যখন মক্কায় প্রবেশ করতেন তখন এরূপ করতেন।[17]

তবে বর্তমান যুগে লক্ষ লক্ষ মানুষের ভিড়ে মুলতাযামে যাওয়া খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই সুযোগ পেলে সেখানে যাবেন। অন্যথায় যাওয়ার দরকার নেই। কেননা মুলতাযামে যাওয়া তাওয়াফের অংশ নয়। তাওয়াফের সময় তা করা যাবে না।

হিজর বা হাতীম

হিজর বা হাতীম হচ্ছে, কা‘বার উত্তরদিকে অবস্থিত অর্ধেক বৃত্তাকার অংশ। হাতীম শব্দের অর্থ ভগ্নাংশ। আর হিজর অর্থ পাথর স্থাপন করা। এটা কা‘বা ঘরের অংশ। অর্থাভাবে কা‘বার পুননির্মাণের সময় কুরাইশরা এজায়গাটি ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তির ওপর নির্মাণ করতে পারেনি। তারা ইবরাহীম আলাইহিস সালামের ভিত্তির স্থানগুলোতে পাথর স্থাপন করল। আয়েশা রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,

«إِنَّ قَوْمَكِ اسْتَقْصَرُوا مِنْ بُنْيَانِ الْبَيْتِ وَلَوْلاَ حَدَاثَةُ عَهْدِهِمْ بِالشِّرْكِ أَعَدْتُ مَا تَرَكُوا مِنْهُ فَإِنْ بَدَا لِقَوْمِكِ مِنْ بَعْدِي أَنْ يَبْنُوهُ فَهَلُمِّي لِأُرِيَكِ مَا تَرَكُوا مِنْهُ فَأَرَاهَا قَرِيبًا مِنْ سَبْعَةِ أَذْرُعٍ».

‘তোমার গোত্রের লোকেরা কা‘বাঘর পুনর্নিমাণের সময় একে ছোট করে ফেলেছে। তারা যদি সদ্য শিরক থেকে আগত না হত তবে যে অংশটুকু তারা বাইরে রেখেছে সেটুকু আমি কা‘বাঘরের ভেতরে ফিরিয়ে আনতাম। আমার মৃত্যুর পর তোমার সমাজের লোকেরা যদি পুনরায় একে নির্মাণ করতে চায়। (তখন তুমি তাদেরকে এটা দেখিয়ে দেবে।) তাই এসো হে আয়েশা! তোমাকে ওই স্থানটুকু দেখিয়ে দেই যেটুকু কুরাইশরা কা‘বাঘর পুননির্মাণের সময় বাইরে রেখেছে। এই বলে তিনি বাইরে থাকা সাত হাত পরিমাণ স্থান দেখিয়ে দিলেন।’[18]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে পরিমাণ স্থান বাইরে ছিল বলে নির্ধারণ করেছেন সেটুকুই কা‘বার অংশ। বর্তমানে উত্তর দিকের দেয়ালের ভেতরে যতটুকু স্থান ঢোকানো হয়েছে, তা সঠিক পরিমাণের চেয়ে অনেক বেশি। যে এখানে সালাত আদায় করতে চায়, তার উচিত হাদীসে বর্ণিত সঠিক স্থানটুকু তালাশ করে বের করা।

হিজরে সালাত আদায় করা কা‘বার অভ্যন্তরে সালাত আদায়ের সমান। কারণ এটা কা‘বাঘরেরই অংশ। আয়েশা রা. বলেন,

كُنْتُ أُحِبُّ أَنْ أَدْخُلَ الْبَيْتَ فَأُصَلِّيَ فِيهِ فَأَخَذَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَدِي فَأَدْخَلَنِي فِي الْحِجْرِ فَقَالَ لِي صَلِّي فِي الْحِجْرِ إِذَا أَرَدْتِ دُخُولَ الْبَيْتِ فَإِنَّمَا هُوَ قِطْعَةٌ مِنْ الْبَيْتِ وَلَكِنَّ قَوْمَكِ اسْتَقْصَرُوا حِينَ بَنَوْا الْكَعْبَةَ فَأَخْرَجُوهُ مِنْ الْبَيْتِ.

‘আমি কা‘বা গৃহে প্রবেশ করে সালাত আদায় করতে আগ্রহ প্রকাশ করতাম। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার হাত ধরে হিজ্রে প্রবেশ করিয়ে দিলেন এবং বললেন, তুমি কা‘বাঘরে প্রবেশ করতে চাইলে হিজরে সালাত আদায় কর। কারণ এটা কা‘বারই অংশ। কিন্তু তোমার সমাজের লোকেরা কা‘বার পুনর্নিমাণের সময় এটাকে ছোট করে ফেলেছে এবং হিজ্রকে কা‘বার বাইরে রেখে দিয়েছে।’[19]

ইতোপূর্বে আলোচিত হয়েছে যে, কা‘বা ঘরের তাওয়াফকারী অবশ্যই হিজরের বাইরে দিয়ে তওয়াফ করবে। কারণ এটা কা‘বারই অংশ। ব্যাপকভাবে প্রচারিত ভুলেরই একটি হচ্ছে এটাকে ‘হিজ্র ইসমাঈল’ করে নামকরণ করা। এ নামকরণটি সঠিক নয়। কিছু মানুষ মনে করে, ইসমাঈল আলাইহিস সালাম অথবা অন্য অনেক নবীকে এখানে দাফন করা হয়েছে। এটি আরও জঘন্য ধারণা।[20]

[1]. আলে-ইমরান : ৯৬।

[2]. বুখারী : ৩৩৬৬।

[3]. বিস্তারিত দ্রষ্টব্য সূরা বাকারার ১২৭ আয়াতের তাফসীর। আরো দেখুন সহীহ বুখারী : ৩৩৬৪।

[4]. ড. মুহাম্মদ ইলিয়াস আব্দুল গনী : তারীখু মাক্কাতিল মুকাররামা, পৃ : ৩৪, মাতাবিউর রাশীদ, মদীনা মুনাওয়ারা।

[5]. তিরমিযী : ৮৭৭; ইবন খুযাইমা : ৪/২৮২।

[6]. তিরমিযী : ৮৭৮; মুসনাদ আহমদ : ২/২১৩; ইবন খুযাইমা : ২৭৩১।

[7]. নাসাঈ : ৫/২২১।

[8]. আহমদ : ১/২৬৬।

[9]. নাববী, শরহু মুসলিম : ২/৮৪৪।

[10]. নাসাঈ : ৫/২২১।

[11]. সহিহুত-তারগীব ওয়াত-তারহীব : ২/১৪; মুসনাদ আহমদ : ২/২১১। তবে মুসনাদ আহমদের বর্ণনায় শুধু রুকন শব্দ বলা হয়েছে।

[12]. মুসলিম : ১২৬৭।

[13]. মুবারকপুরী, মির‘আতুল মাফাতীহ : ৯/১৪।

[14]. আল মুসান্নাফ লি আব্দির রাজ্জাক : ৫/৭৩।

[15]. আবূ দাঊদ : ১৮৯৮। এই হাদীসের সনদে দুর্বলতা আছে। কিন্তু তার অনুরূপ একটি হাদীস ‘আবদুল্লাহ ইবন আমর থেকে বর্ণিত। তিনি রুকন ও দরজার মাঝখানে দাঁড়ালেন। তিনি তার বক্ষ, দু’বাহু ও দু’হাতের তালু সম্প্রসারিত করে কা‘বাঘরের ওপর রাখলেন। অতঃপর বললেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাকে এমনটি করতে দেখেছি। আবূ দাঊদ : ১৮৯৯; ইবন মাজাহ্‌ : ১৯৬২। এ হাদীসের সনদ উত্তম।

[16]. আবদুর রাজ্জাক সানআনী, আল-মুসান্নাফ : ৭৬/৫।

[17]. ইবন তাইমিয়া, মাজমু‘ ফাতাওয়া : ২৬/১৪২।

[18]. মুসলিম : ৯৬৮।

[19]. মুসনাদ আহমাদ : ৯২/৬; সহীহ ইবন খুযাইমা : ৩০১৮।

[20]. ড. আবদুল্লাহ দুমাইজী, আল-বালাদুল হারাম : ফাযাইল ওয়া আহকাম : ৬৬।