বাইতুল্লাহ্র তাওয়াফ কা‘বাঘর নির্মাণের পর থেকেই শুরু হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَإِذۡ بَوَّأۡنَا لِإِبۡرَٰهِيمَ مَكَانَ ٱلۡبَيۡتِ أَن لَّا تُشۡرِكۡ بِي شَيۡٔٗا وَطَهِّرۡ بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡقَآئِمِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ٢٦ ﴾ [الحج: ٢٦]
‘আর স্মরণ কর, যখন আমি ইবরাহীমকে সে ঘরের (বাইতুল্লাহ্র) স্থান নির্ধারণ করে দিয়েছিলাম এবং বলেছিলাম, ‘আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না এবং আমার ঘরকে পাক সাফ রাখবে তাওয়াফকারী, রুকূ-সিজদা ও দাঁড়িয়ে সালাত আদায়কারির জন্য’।[1] আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন,
﴿ وَعَهِدۡنَآ إِلَىٰٓ إِبۡرَٰهِۧمَ وَإِسۡمَٰعِيلَ أَن طَهِّرَا بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡعَٰكِفِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ١٢٥ ﴾ [البقرة: ١٢٥]
‘আর আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, ‘তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ই‘তিকাফকারী ও রুকূ-সিজদাকারিদের জন্য পবিত্র কর’।’[2] উভয় আয়াত থেকে বুঝা যায়, কা‘বা নির্মাণের পর থেকেই তাওয়াফ শুরু হয়েছে।
[2]. বাকারা : ১২৫।
রমলের অর্থ হচ্ছে, ঘনঘন পা ফেলে শরীর দুলিয়ে বীরদর্পে দ্রুত চলা। ইযতিবার অর্থ হচ্ছে, চাদর ডান বগলের নিচে রেখে ডান কাঁধ উন্মুক্ত রাখা। রমল ও ইযতিবা শুরু হয় সপ্তম হিজরীতে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ষষ্ঠ হিজরীতে মক্কার মুশরিকদের সাথে সন্ধি করে হুদায়বিয়া থেকে উমরা না করেই মদীনায় ফিরে যান। হুদায়বিয়ার সন্ধি অনুযায়ী পরবর্তী বছর যিলকদ মাসে তিনি উমরা করার উদ্দেশ্যে আবার মক্কায় আসেন। এ বছর সাহাবীদের কেউ কেউ জ্বরাক্রান্ত হয়েছিলেন। ইবন আব্বাস রা. এর বর্ণনা থেকে বুঝা যায় যে, মক্কার মুশরিকরা মুসলমানদেরকে নিয়ে ব্যঙ্গ করে এভাবে বলাবলি করতে লাগল,
إِنَّهُ يَقْدَمُ عَلَيْكُمْ وَقَدْ وَهَنَهُمْ حُمَّى يَثْرِبَ فَأَمَرَهُمُ رسول اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ يَرْمُلُوا الأَشْوَاطَ الثَّلاَثَةَ ، وَأَنْ يَمْشُوا مَا بَيْنَ الرُّكْنَيْنِ وَلَمْ يَمْنَعْهُ أَنْ يَأْمُرَهُمْ أَنْ يَرْمُلُوا الأَشْوَاطَ كُلَّهَا إِلاَّ الإِبْقَاءُ عَلَيْهِمْ.
‘এমন এক সম্প্রদায় তোমাদের কাছে আসছে, ইয়াছরিবের [1] জ্বর যাদেরকে দুর্বল করে দিয়েছে।[2] একথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে রমল অর্থাৎ ঘনঘন পা ফেলে শরীর দুলিয়ে বীরদর্পে দ্রুত চলার নির্দেশ দিলেন, যাতে মুশরিকরা বুঝে নেয় যে, মুমিন কখনো দুর্বল হয় না। একই উদ্দেশ্যে তিনি রমলের সাথে সাথে ইযতিবা অর্থাৎ চাদর ডান বগলের নিচে রেখে ডান কাঁধ উন্মুক্ত রাখারও নির্দেশ দিলেন। সেই থেকে রমল ও ইযতিবার বিধান চালু হয়েছে।
[2]. বুখারী : ১৬০২; মুসলিম : ১২৬২।
ইবন আব্বাস রা.বলেন, ‘ইবরাহীম আ. হাজেরা[1] ও তাঁর দুগ্ধপোষ্য শিশু ইসমাঈলকে নিয়ে এলেন এবং বাইতুল্লাহর কাছে যমযমের ওপর একটি গাছের কাছে রাখলেন। মক্কায় সে সময় জনমানবের কোন চিহ্ন ছিল না। তখন সেখানে কোনো পানি ছিল না। এক পাত্রে খেজুর ও একটি মশকে পানি রেখে ইবরাহীম আলাইহিস সালাম ফিরে যাওয়ার জন্য রওয়ানা হলেন। ইসমাঈল আ.-এর মা তাঁর পিছু নিলেন। বললেন, এই জনমানবশূন্য তৃণ-লতাহীন মরুভূমিতে আমাদেরকে রেখে আপনি কোথায় যাচ্ছেন? তিনি একাধিকবার ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে এ প্রশ্ন করলেন। ইবরাহীম তার প্রতি ভ্রূক্ষেপও না করে সামনের দিকে এগিয়ে চললেন। অতঃপর হাজেরা বললেন, ‘আল্লাহ কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? ইবরাহীম আ. উত্তর করলেন : হ্যাঁ। তখন হাজেরা বললেন, ‘তাহলে আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস করবেন না’। হাজেরা ফিরে এলেন। আর ইবরাহীম আলাইহিস সালাম চলতে চলতে সানিয়্যার নিকট গিয়ে থামলেন। তারা তাঁকে দেখতে পাচ্ছিল না। তিনি কিবলামুখি হয়ে উভয় হাত তুলে নিম্নোক্ত দো‘আ করলেন,
﴿ رَّبَّنَآ إِنِّيٓ أَسۡكَنتُ مِن ذُرِّيَّتِي بِوَادٍ غَيۡرِ ذِي زَرۡعٍ عِندَ بَيۡتِكَ ٱلۡمُحَرَّمِ رَبَّنَا لِيُقِيمُواْ ٱلصَّلَوٰةَ فَٱجۡعَلۡ أَفِۡٔدَةٗ مِّنَ ٱلنَّاسِ تَهۡوِيٓ إِلَيۡهِمۡ وَٱرۡزُقۡهُم مِّنَ ٱلثَّمَرَٰتِ لَعَلَّهُمۡ يَشۡكُرُونَ ٣٧ ﴾ [ابراهيم: ٣٧]
‘হে আমাদের রব, নিশ্চয় আমি আমার কিছু বংশধরদেরকে ফসলহীন উপত্যকায় তোমার পবিত্র ঘরের নিকট বসতি স্থাপন করালাম। হে আমাদের রব, যাতে তারা সালাত কায়েম করে। সুতরাং কিছু মানুষের হৃদয় আপনি তাদের দিকে ঝুঁকিয়ে দিন এবং তাদেরকে রিয্ক প্রদান করুন ফল-ফলাদি থেকে, আশা করা যায় তারা শুকরিয়া আদায় করবে।’[2]
হাজেরা ইসমাঈল আ. কে দুধ পান করাতে লাগলেন এবং নিজে ওই পানি পান করতে লাগলেন। পাত্রের পানি শেষ হয়ে গেলে তিনি পিপাসার্ত হলেন। পিপাসার্ত হল সন্তানও। সন্তানকে তিনি তেষ্টায় ছটফট করতে দেখে দূরে সরে গেলেন, যাতে এ অবস্থায় সন্তানকে দেখে কষ্ট পেতে না হয়। কাছে পেলেন সাফা পাহাড়। তিনি সাফায় আরোহণ করে উপত্যকার দিকে মুখ করে দাঁড়ালেন কোন যাত্রীদল দেখা যায় কি-না, যাদের কাছে খাদ্য ও পানীয় থাকবে। কাউকে দেখতে না পেয়ে সাফা থেকে তিনি নেমে এলেন। উপত্যকায় পৌঁছলে তিনি তাঁর কামিজ টেনে ধরে পরিশ্রান্ত ব্যক্তির মতো দ্রুত চললেন। উপত্যকা অতিক্রম করলেন। অতঃপর মারওয়ায় আরোহণ করলেন। মারওয়ায় দাঁড়িয়েও তিনি তাকিয়ে দেখলেন কাউকে দেখা যায় কি-না। কাউকে দেখতে না পেয়ে নেমে এলেন মারওয়া থেকে। ছুটে গেলেন আবার সাফা পাহাড়ে। এভাবেই দু’পাহাড়ের মাঝে সাতবার দৌড়াদৌড়ি করলেন। ইবন আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«فَذَلِكَ سَعْيُ النَّاسِ بَيْنَهُمَا».
এটাই হল সাফা-মারওয়ার মাঝে মানুষের সাঈ (করার কারণ)। তিনি মারওয়ার ওপর থাকাকালে একটি আওয়াজ শুনতে পেয়ে নিজকে লক্ষ্য করে বললেন, ‘থামো!’ তিনি আবারও আওয়াজটি শুনতে পেয়ে বললেন, শুনতে পেয়েছি; তবে তোমার কাছে কোনো ত্রাণ আছে কি-না তাই বলো। এরপর তিনি দেখলেন, যমযমের জায়গায় একজন ফেরেশতা তাঁর পায়ের গোঁড়ালি বা পাখা দিয়ে মাটি খুঁড়ছে। এক পর্যায়ে সেখান থেকে পানি বের হল। তিনি হাউজের মতো করে বালির বাঁধ দিয়ে পানি আটকাতে লাগলেন। ইবন আব্বাস রা. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«يَرْحَمُ اللَّهُ أُمَّ إِسْمَاعِيلَ لَوْ تَرَكَتْ زَمْزَمَ ، أَوْ قَالَ لَوْ لَمْ تَغْرِفْ مِنَ الْمَاءِ - لَكَانَتْ عَيْنًا مَعِينًا».
‘আল্লাহ ইসমাঈলের মায়ের ওপর রহম করুন। তিনি যমযমকে ছেড়ে দিলে, বর্ণনান্তরে-যমযমের পানি না উঠালে, যমযম একটি চলমান ঝরণায় পরিণত হত।’
ফেরেশতা হাজেরাকে বললেন,
«لَا تَخَافِي مِنَ الضَّيْعَةِ فَإِنَّ هَهُنَا بَيْتَ اللهِ يَبْنِيهِ هَذَا الْغُلَامُ وَأَبُوهُ وَإِنَّ اللهَ لَا يُضَيِّعُ أَهْلَهُ»
‘তোমরা ধ্বংস হওয়ার ভয় করো না, কেননা এখানে হবে বাইতুল্লাহ, যা নির্মাণ করবে এই ছেলে ও এর পিতা। আর আল্লাহ তাঁর পরিবারকে ধ্বংস করবেন না।’[3]
এ যমযমের পানি দিয়ে ইসরা ও মি‘রাজের রাতে রাসূল যমযমের পানি দিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর বুক ধোয়া হয়েছে। আবূ যর রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«فُرِجَ سَقْفِي وَأَنَا بِمَكَّةَ فَنَزَلَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلاَم فَفَرَجَ صَدْرِي ثُمَّ غَسَلَهُ بِمَاءِ زَمْزَمَ ثُمَّ جَاءَ بِطَسْتٍ مِنْ ذَهَبٍ مُمْتَلِئٍ حِكْمَةً وَإِيمَانًا فَأَفْرَغَهَا فِي صَدْرِي ثُمَّ أَطْبَقَهُ ثُمَّ أَخَذَ بِيَدِي فَعَرَجَ إِلَى السَّمَاءِ الدُّنْيَا».
‘মক্কায় অবস্থানকালে একদিন আমার ঘরের ছাদ ফাঁক করা হল। এরপর জিবরীল আলাইহিস সালাম নেমে আসলেন। তিনি আমার বুক বিদীর্ণ করে যমযমের পানি দিয়ে তা ধৌত করলেন। এরপর তিনি হিকমত ও ঈমানে পরিপূর্ণ স্বর্ণের একটি প্লেট নিয়ে এসে আমার বক্ষে ঢেলে দিলেন। অতঃপর বক্ষ জোড়া লাগিয়ে আমার হাত ধরে নিকটবর্তী আসমানে আরোহণ করলেন। [4]
[2]. ইবরাহীম : ৩৭।
[3]. ঘটনাটি বিস্তারিত দেখুন সহীহ বুখারী : ১/৪৭৪-৪৭৫।
[4]. বুখারী :১৬৩৬।
- ইবরাহীম আ. আরাফাতে অবস্থান করেছেন
ইবন মিরবা আনসারী আমাদের কাছে এসে বললেন, আমি আপনাদের কাছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর প্রতিনিধি। তিনি বলেছেন,
«كونوا على مشاعركم هذه فإنكم على إرث إبراهيم عليه السلام».
‘তোমরা হজের মাশায়েরে (হজের বিধি-বিধান পালনের বিশেষ বিশেষ স্থান) অবস্থান কর। কেননা তোমরা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের ঐতিহ্যের ওপর রয়েছ।’[1] এর অর্থ ইবরাহীম আলাইহিস সালাম আরাফায় অবস্থান করেছিলেন, সে হিসেবে আমরাও করি।
- হজ সম্পাদনকারী নবীগণ আ. আরাফায় অবস্থান করেছেন
রাসূলূল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন, উত্তম দো‘আ হচ্ছে আরাফার দিনের দো‘আ আর সেই বাক্য যা আমি ও আমার পূর্ববতী নবীগণ বলেছি,
«لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَحْدَهُ لاَ شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَىْءٍ قَدِير»
‘আল্লাহ্ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, তিনি এক, তাঁর কোন শরীক নেই, রাজত্ব ও সমস্ত প্রশংসা তাঁর জন্য। তিনি সর্ব শক্তিমান।’[2] এ হাদীস থেকে বুঝা যায় আম্বিয়ায়ে কিরাম আ. আরাফায় অবস্থান করে দো‘আ করেছেন।
[2]. তিরমিযী : ৩৫৭৫।
ইবরাহীম আলাইহিস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা হজের যে পদ্ধতি শিখিয়েছিলেন তাতে মুযদালিফায় অবস্থানও শিক্ষা দিয়েছিলেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইবরাহীম আলাইহিস সালামের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছিলেন। তিনি বলেছেন,
«قِفُوا عَلَى مَشَاعِرِكُمْ فَإِنَّكُمْ عَلَى إِرْثٍ مِنْ إِرْثِ أَبِيكُمْ إِبْرَاهِيمَ».
‘তোমরা তোমাদের মাশায়ের (তথা আরাফা, মুযদালিফা ও মিনা)-এ অবস্থান করো। কারণ তোমরা তোমাদের পিতা ইবরাহীমের রেখে যাওয়া বিধানের উত্তরাধিকার।’[1] এ থেকে বুঝা যায়, আরাফা, মুযদালিফা ও মিনা- প্রতিটি স্থানেই ইবরাহীম আলাইহিস সালাম অবস্থান করেছিলেন।
ইবরাহীম আলাইহিস সালাম মিনায় অবস্থান করেছিলেন। তাছাড়া বিভিন্ন বর্ণনায় দেখা যায়, সত্তরজন নবী-রাসূল আলাইহিমুস সালাম মিনায় অবস্থিত মসজিদে খাইফে সালাত আদায় করেছেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لَقَدْ سَلَكَ فَجَّ الرَّوْحَاءِ سَبْعُونَ نَبِيًّا حُجَّاجًا عَلَيْهِمْ ثِيَابُ الصُّوفِ وَلَقَدْ صَلَّى فِى مَسْجِدِ الْخَيْفِ سَبْعُونَ نَبِيًّا».
‘ফাজ্জ-রাওহা দিয়ে সত্তরজন নবী পশমী কাপড় পরে হজ করতে গিয়েছিলেন এবং মসজিদে খাইফে সত্তরজন নবী সালাত আদায় করেছিলেন।’[1]
অন্য হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«صلى في مسجد الخيف سبعون نبيا منهم موسى كأني أنظر اليه وعليه عباءتان قطوانيتان وهو محرم على بعير من ابل شنؤة مخطوم بخطام ليف له ضفران».
‘মসজিদে খাইফে সত্তরজন নবী সালাত আদায় করেছেন, মুসা আলাইহিস সালাম তাদের অন্যতম। আমি যেন তার দিকে তাকিয়ে আছি। তার গায়ে দু’টি কুতওয়ানী চাদর জড়ানো। তিনি দুই গুচ্ছ সংম্বলিত লাগাম বিশিষ্ট উটের ওপর ইহরাম বেঁধে বসে আছেন।’[2]
[2]. মু‘জামুল কাবীর : ১১/৪৫২।
ইবন আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,
«لَمَّا أَتَى إِبْرَاهِيمُ خَلِيلُ اللَّهِ عَلَيْهِ السَّلاَمُ الْمَنَاسِكَ عَرَضَ لَهُ الشَّيْطَانُ عِنْدَ جَمْرَةِ الْعَقَبَةِ فَرَمَاهُ بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ حَتَّى سَاخَ فِى الأَرْضِ ثُمَّ عَرَضَ لَهُ عِنْدَ الْجَمْرَةِ الثَّانِيَةِ فَرَمَاهُ بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ حَتَّى سَاخَ فِى الأَرْضِ ثُمَّ عَرْضَ لَهُ فِى الْجَمْرَةِ الثَّالِثَةِ فَرَمَاهُ بِسَبْعِ حَصَيَاتٍ حَتَّى سَاخَ فِى الأَرْضِ. قَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ رَضِىَ اللَّهُ عَنْهُ : الشَّيْطَانَ تَرْجُمُونَ وَملةَ أَبِيكُمْ تَتَّبِعُونَ».
‘ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আলাইহিস সালাম যখন হজের বিধি-বিধান আদায় করছিলেন। তখন জামরাতুল আকাবার কাছে তাঁর সামনে শয়তান উপস্থিত হল। তিনি শয়তানকে সাতটি পাথর মারলেন। ফলে সে মাটিতে ঢুকে গেল। এরপর সে আবার দ্বিতীয় জামরায় উপস্থিত হল। তিনি আবার সাতটি পাথর মারলেন। ফলে সে মাটিতে ঢুকে গেল। এরপর সে আবার তৃতীয় জামরায় উপস্থিত হল। তিনি আবার সাতটি পাথর মারলেন। ফলে সে মাটিতে ঢুকে গেল। ইবন আব্বাস রা. বলেন, তোমরা শয়তানকে পাথর মারো আর তোমাদের পিতা ইবরাহীমের দীনের অনুসরণ কর।’[1]
তবে এটা মনে করা কখনো সমীচীন হবে না যে, বর্তমানে যারা পাথর নিক্ষেপ করছে তারা শয়তানকে আঘাত করছে; বরং আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করেই আল্লাহর যিকরকে সমুন্নত রাখার জন্য কঙ্কর নিক্ষেপ করে থাকি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
« إِنَّمَا جُعِلَ الطَّوَافُ بِالْبَيْتِ وَبَيْنَ الصَّفَا وَالْمَرْوَةِ وَرَمْىُ الْجِمَارِ لإِقَامَةِ ذِكْرِ اللَّه»
‘বাইতুল্লাহ্র তাওয়াফ, সাফা-মারওয়ার মধ্যে সাঈ এবং জামরায় পাথর নিক্ষেপের বিধান আল্লাহর যিক্র কায়েমের উদ্দেশ্যে করা হয়েছে।’[2]
[2]. তিরমিযী : ৯০২; জামেউল উলূম : ১৫০৫।