পবিত্র মক্কার ন্যায় মদীনাও পবিত্র ও সম্মানিত শহর, ওহী নাযিল হওয়ার স্থান। কুরআনুল কারীমের অর্ধেক নাযিল হয়েছে মদীনায়। মদীনা ইসলামের প্রাণকেন্দ্র, ঈমানের আশ্রয়স্থল, মুহাজির ও আনসারদের মিলনভূমি। মুসলমানদের প্রথম রাজধানী। এখান থেকেই আল্লাহর পথে জিহাদের পতাকা উত্তোলিত হয়েছিল, আর এখান থেকেই হিদায়াতের আলোর বিচ্ছুরণ ঘটেছে, ফলে আলোকিত হয়েছে সারা বিশ্ব। এখান থেকে সত্যের পতাকাবাহী মু’মিনগণ সারা দুনিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছিল। তাঁরা মানুষকে অন্ধকার থেকে আলোর দিকে ডেকেছেন। নবীজীর শেষ দশ বছরের জীবন যাপন, তাঁর মৃত্যু ও কাফন-দাফন এ ভূমিতেই হয়েছে। এ ভূমিতেই তিনি শায়িত আছেন। এখান থেকেই তিনি পুনরুত্থিত হবেন। নবীদের মধ্যে একমাত্র তাঁর কবরই সুনির্ধারিত রয়েছে। তাই মদীনার যিয়ারত আমাদেরকে ইসলামের সোনালী ইতিহাসের দিকে ফিরে যেতে সাহায্য করে। সুদৃঢ় করে আমাদের ঈমান-আকীদার ভিত্তি।
হজের সাথে মদীনা যিয়ারতের যদিও কোন সংশ্লিষ্টতা নেই। কিন্তু হজের সফরে যেহেতু মদীনায় যাওয়ার সুযোগ তৈরি হয়, সেহেতু যারা বহির্বিশ্ব থেকে হজ করতে আসে তাদের জন্য বিশেষভাবে এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করাটাই শ্রেয়।
মদীনা যিয়ারতের সুন্নত তরীকা হল, মসজিদে নববী যিয়ারতের নিয়ত করে আপনি মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। কেননা আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ، الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ صلى الله عليه وسلم وَالمَسْجِدِ الأَقْصَى».
‘তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোনো স্থানের দিকে (ইবাদতের উদ্দেশ্যে) সফর করা যাবে না : মসজিদে হারাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদ (মসজিদে নববী) ও মসজিদে আকসা।’[1] এ হাদীসের আলোকে ইমাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন,
وَأَمَّا إذَا كَانَ قَصْدُهُ بِالسَّفَرِ زِيَارَةَ قَبْرِ النَّبِيِّ دُونَ الصَّلاَةِ فِي مَسْجِدِهِ، فَهَذِهِ الْمَسْأَلَةُ فِيهَا خِلاَفٌ، فَاَلَّذِي عَلَيْهِ الأَئِمَّةُ وَأَكْثَرُ الْعُلَمَاءِ أَنَّ هَذَا غَيْرُ مَشْرُوعٍ.
‘সফরকারির সফরের উদ্দেশ্য যদি শুধু নবীর কবর যিয়ারত হয়, তাঁর মসজিদে সালাত আদায় করা না হয়, তাহলে এই মাসআলায় মতবিরোধ রয়েছে। যে কথার ওপর ইমামগণ এবং অধিকাংশ শরীয়ত বিশেষজ্ঞ একমত পোষণ করেছেন তা হলো, এটা শরীয়তসম্মত নয়।’[2]
ইবন তাইমিয়া রহ. আরো বলেন, ‘জেনে রাখো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর যিয়ারত বহু ইবাদত থেকে মর্যাদাপূর্ণ, অনেক নফল কর্ম থেকে উত্তম। কিন্তু সফরকারীর জন্য শ্রেয় হচ্ছে, সে মসজিদে নববী যিয়ারতের নিয়ত করবে। অতপর সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর যিয়ারত করবে এবং তাঁর ওপর সালাত ও সালাম পেশ করবে।’[3]
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
كَانَ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ يَقْصُدُوْنَ مَوَاضِعَ مُعَظَّمَةً بِزَعْمِهِمْ يَزُوْرُوْنَهَا، وَيَتَبْرَكُوْنَ بِهَا، وَفِيْهِ مِنَ التَّحْرِيْفِ وَالْفَسَادِ مَا لاَ يَخْفَى، فَسَدَّ رسول اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْفَسَادَ لِئَلاَّ يَلْتَحِقُ غَيْرُ الشَّعَائِرِ بِالشَّعَائِرِ، وَلِئَلاَّ يَصَيْرَ ذَرِيْعَةً لِعِبَادَةِ غَيْرِ اللهِ، وَالْحَقُّ عِنْدِيْ أَنَّ الْقَبْرَ وَمَحَلُّ عِبَادَةِ وَلِيٍّ مِنْ أَوْلِيَاءِ اللهِ وَالطُّوْرَ كُلُّ ذَلِكَ سَوَاءٌ فِي النَّهْي وَاللهُ أَعْلَمُ .
‘জাহেলী যুগের মানুষেরা তাদের ধারণামত মর্যাদাপূর্ণ স্থানসমূহকে উদ্দেশ্য করে তা যিয়ারত করত এবং তার মাধ্যমে (তাদের ধারণামত) বরকত লাভ করত। এতে রয়েছে সত্যচ্যুতি, বিকৃতি ও ফাসাদ যা কারো অজানা নয়। অতপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ফাসাদ চিরতরে বন্ধ করে দেন, যাতে শা‘আয়ের[4] নয় এমন বিষয়গুলো শা‘আয়ের-এর অন্তর্ভুক্ত না হয় এবং যাতে এটা গায়রুল্লাহর ইবাদতের মাধ্যম না হয়। আমার মতে সঠিক কথা হচ্ছে, কবর ও আল্লাহর যে কোন ওলীর ইবাদতের স্থান, তূর পাহাড় ইত্যাদি সবকিছু উপরোক্ত হাদীসের নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।[5]
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
نَعَمْ يُسْتَحَبُّ لَهُ بِنِيَّةِِ زِيَارَةِ الْمَسْجِدِ النَّبَوِيّ، وَهِيَ مِنْ أَعْظَمِ القُرُبَاتِ، ثُمَّ إِذَا بَلَغَ الْمَدِيْنَةَ يُسْتَحَبُّ لَهُ زِيَارَةُ قَبْرِهِ صلى الله عليه وسلم أَيْضًا، لأَنَّهُ يَصِيْرُ حِيْنَئِذٍ مِنْ حَوَالَيِ الْبَلْدَةِ، وَزِيَارَةُ قُبُوْرِهَا مُسْتَحَبَّةٌ عِنْدَهُ.
‘হ্যাঁ, সফকারির জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে, মসজিদে নববী যিয়ারতের নিয়তে সফর করা। আর এটা নৈকট্য লাভের অন্যতম বড় উপায়। অতপর সে যখন মদীনা পৌঁছবে, তার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কবর যিয়ারত করাও মুস্তাহাব। কেননা তখন সে মদীনা নগরীতে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর তখন নগরীতে অবস্থিত কবরগুলো যিয়ারত করা অবস্থানকারীর ক্ষেত্রে মুস্তাহাব।’[6]
সুতরাং মসজিদে নববী যিয়ারতের নিয়তে মদীনা যিয়ারত করতে হবে। কবর যিয়ারতের নিয়তে মদীনা যিয়ারত হলে, তা সহীহ হবে না। মনে রাখবেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর কেন্দ্রিক সকল উৎসব জোরালোভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন,
«وَلاَ تَجْعَلُوا قَبْرِي عِيدًا»
‘আর আমার কবরকে তোমরা উৎসবের উপলক্ষ্য বানিও না।’[7] অর্থাৎ আমার কবর-কেন্দ্রিক নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করো না।’ এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাও শামিল।’[8]
[2]. ইবন তাইমিয়া, আল-ফাতাওয়াল কুবরা : ৫/১৪৯।
[3]. আল-ফুরকান বাইনা আউলিয়াইর রহমান ওয়া আউলিয়ায়িশ শয়তান : ১/৩০৭
[4]. শা‘আয়ের বলতে বুঝায়, আল্লাহর নিদর্শন এবং তাঁর ইবাদতের স্থানসমূহ। (কুরতুবী : ২/৩৭)।
[5]. হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ : ১/৪০৮।
[6]. ফায়যুল বারী : ৪/৪৩।
[7]. আবূ দাউদ : ১৭৪৬।
[8]. আল-ফুরকান বাইনা আউলিয়াইর রহমান ওয়া আউলিয়ায়িশ শয়তান : ১/৩০৭।
পবিত্র মক্কার ন্যায় এ বরকতময় মদীনা নগরীকেও হারাম অর্থাৎ সম্মানিত এলাকা ঘোষণা করা হয়েছে। শ্রেষ্ঠত্ব ও মর্যাদার ক্ষেত্রে মক্কা নগরীর পরে মদীনার স্থান। আবূ সাঈদ খুদরী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
‘ইবরাহীম মক্কাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন এবং তিনি তাকে সম্মানিত করেছেন। আর আমি এই দুই পাহাড়ের মাঝখানে অবস্থিত মদীনাকে হারাম ঘোষণা করলাম।’[1]
হারামের সীমারেখা হচ্ছে, উত্তরে লম্বায় উহুদ পাহাড়ের পেছনে সাওর পাহাড় থেকে দক্ষিণে আইর পাহাড় পর্যন্ত। পূর্বে হার্রা ওয়াকিম অর্থাৎ কালো পাথর বিশিষ্ট এলাকা থেকে পশ্চিমে হার্রা আল-ওয়াবরা অর্থাৎ কালো পাথর বিশিষ্ট এলাকা পর্যন্ত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اَلْمَدِيْنَةُ حَرَمٌ ما بَيْنَ عَيْرٍ إلى ثَوْرٍ»
‘মদীনার ‘আইর’ থেকে ‘সাওর’-এর মধ্যবর্তী স্থানটুকু হারাম।’[2]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«إِنِّى أُحَرِّمُ مَا بَيْنَ لاَبَتَىِ الْمَدِينَةِ أَنْ يُقْطَعَ عِضَاهُهَا أَوْ يُقْتَلَ صَيْدُهَا».
‘আমি মদীনার দুই হাররা বা কালো পাথর বিশিষ্ট যমীনের মাঝখানের অংশটুকু হারাম তথা সম্মানিত বলে ঘোষণা দিচ্ছি। এর কোন গাছ কাটা যাবে না বা কোন শিকারী জন্তু হত্যা করা যাবে না।’[3]
সুতরাং মদীনাও নিরাপদ শহর। এখানে রক্তপাত বৈধ নয়। বৈধ নয় শিকার করা বা গাছ কাটা। এ শহর সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক হাদীসে বলেছেন,
«لاَ يُهَرَاقَ فِيهَا دَمٌ وَلاَ يُحْمَلَ فِيهَا سِلاَحٌ لِقِتَالٍ وَلاَ يُخْبَطَ فِيهَا شَجَرَةٌ إِلاَّ لِعَلْفٍ».
‘এখানে রক্তপাত করা যাবে না। এখানে লড়াইয়ের উদ্দেশ্যে অস্ত্র বহন করা যাবে না। ঘাস সংগ্রহের জন্য ছাড়া কোন গাছও কাটা যাবে না।’[4]
[2]. বুখারী : ৬২৫৮; মুসলিম : ২৪৩৩।
[3] .মুসলিম : ২৪২৫।
[4]. মুসলিম : ২/১০০১।
মদীনাতুর রাসূলের ফযীলত সম্পর্কে অনেক হাদীস বর্ণিত আছে। নিম্নে তার কয়েকটি উল্লেখ করা হল :
১. মক্কার ন্যায় মদীনাও পবিত্র নগরী। মদীনাও নিরাপদ শহর। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ إِبْرَاهِيْمَ حَرَّم مَكَّةَ، وإنّيْ حَرَّمْتُ الْمَدِيْنَةَ»
‘নিশ্চয়ই ইবরাহীম মক্কাকে হারাম বলে ঘোষণা দিয়েছেন আর আমি মদীনাকে হারাম ঘোষণা করলাম।’[1]
২. আবদুল্লাহ ইবন যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ وَدَعَا لأَهْلِهَا وَإِنِّى حَرَّمْتُ الْمَدِينَةَ كَمَا حَرَّمَ إِبْرَاهِيمُ مَكَّةَ وَإِنِّى دَعَوْتُ فِى صَاعِهَا وَمُدِّهَا بِمِثْلَىْ مَا دَعَا بِهِ إِبْرَاهِيمُ لأَهْلِ مَكَّةَ».
‘ইবরাহীম মক্কাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন এবং তার বাসিন্দাদের জন্য দো‘আ করেছেন। যেমনিভাবে ইবরাহীম মক্কাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন, আমিও তেমন মদীনাকে হারাম ঘোষণা করেছি। আমি মদীনার সা’ ও মুদ-এ বরকতের দো‘আ করেছি যেমন মক্কার বাসিন্দাদের জন্য ইবরাহীম দো‘আ করেছেন।’[2]
৩. মদীনা যাবতীয় অকল্যাণকর বস্তুকে দূর করে দেয়। জাবের ইবন আবদুল্লাহ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«الْمَدِينَةُ كَالْكِيرِ تَنْفِي خَبَثَهَا وَيَنْصَعُ طِيبُهَا».
মদীনা হল হাপরের মতো, এটি তার যাবতীয় অকল্যাণ দূর করে দেয় এবং তার কল্যাণকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে।’[3]
৪. শেষ যামানায় ঈমান মদীনায় এসে একত্রিত হবে এবং এখানেই তা ফিরে আসবে। আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إنَّ الإِيْمَانَ لَيَأْرِزُ إلى المَدِيْنَةِ كما تَأْرِزُ الحيَّةُ إلى جُحْرِها»
‘নিশ্চয়ই ঈমান মদীনার দিকে ফিরে আসবে যেমনিভাবে সাপ তার গর্তে ফিরে আসে।’[4]
৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনার জন্য বরকতের দো‘আ করেছেন। আনাস ইবন মালেক রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اَللَّهُمَّ اجْعَلْ بِالْمَدِينَةِ ضِعْفَيْ مَا جَعَلْتَ بِمَكَّةَ مِنَ الْبَرَكَةِ».
‘হে আল্লাহ, আপনি মক্কায় যে বরকত দিয়েছেন মদীনায় তার দ্বিগুণ বরকত দান করুন।’[5]
- আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اَللَّهمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْ ثَمَرِنا، وَبَارِكْ لَنَا فِيْ مَدِيْنَتِنَا، وَبَارِكْ لَنَا فِيْ صَاعِنَا، وَبَارِكْ لَنَا فِي مُدِّنَا».
‘হে আল্লাহ, তুমি আমাদের ফল-ফলাদিতে বরকত দাও। আমাদের এ মদীনায় বরকত দাও। আমাদের সা’তে বরকত দাও এবং আমাদের মুদ-এ বরকত দাও।’[6]
- আবদুল্লাহ ইবন যায়েদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِنَّ إِبْرَاهِيمَ حَرَّمَ مَكَّةَ وَدَعَا لأَهْلِهَا وَإِنِّى حَرَّمْتُ الْمَدِينَةَ كَمَا حَرَّمَ إِبْرَاهِيمُ مَكَّةَ وَإِنِّى دَعَوْتُ فِى صَاعِهَا وَمُدِّهَا بِمِثْلَىْ مَا دَعَا بِهِ إِبْرَاهِيمُ لأَهْلِ مَكَّةَ».
‘ইবরাহীম মক্কাকে হারাম ঘোষণা দিয়েছেন এবং তার বাসিন্দাদের জন্য দো‘আ করেছেন। মক্কাকে ইবরাহীম যেমন হারাম ঘোষণা দিয়েছেন আমিও তেমন মদীনাকে হারাম ঘোষণা করেছি। আমি মদীনার সা’ তে এবং মুদ-এ বরকতের দো‘আ করছি যেমন মক্কার বাসিন্দাদের জন্য ইবরাহীম দো‘আ করেছেন।’[7]
৬. মদীনায় মহামারী ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
«عَلَى أَنْقَابِ الْمَدِيْنَةِ مَلاَئِكَةٌ، لاَ يَدْخُلُهَا الطَّاعُونُ وَلاَ الدَّجَّالُ».
‘মদীনার প্রবেশ দ্বারসমূহে ফেরেশতারা প্রহরায় নিযুক্ত আছেন, এতে মহামারী ও দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না।’[8]
৭. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনায় মৃত্যু বরণ করার ব্যাপারে উৎসাহ দিয়েছেন। তিনি বলেন,
«مَنْ اسْتَطَاعَ أَنْ يَمُوْتَ بِالْمَدِيْنَةِ فَلْيَمُتْ بِهَا فَإِنِّيْ أَشْفَعُ لِمَنْ يَمُوْتُ بِهَا».
‘যার পক্ষে মদীনায় মৃত্যুবরণ করা সম্ভব সে যেন সেখানে মৃত্যুবরণ করে। কেননা মদীনায় যে মারা যাবে আমি তার পক্ষে সুপারিশ করব।’[9]
৮. নবী সাল্লাল্লাহু সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মদীনাকে হারাম ঘোষণার প্রাক্কালে এর মধ্যে কোন বিদ‘আত বা অন্যায় ঘটনা ঘটানোর ভয়াবহতা সম্পর্কে সাবধান করেছেন। আলী ইবন আবী তালিব রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«المَدِينَةُ حَرَمٌ مَا بَيْنَ عَيْرٍ إلى ثَوْرٍ، مَنْ أَحْدَثَ ِفيْهَا حَدَثاً أَو آوَى مُحدِثاً فَعَلَيهِ لَعْنَةُ اللهِ وَالمَلاَئِكَةِ وَالنَاسِ أَجمَعِينَ، لاَ يَقبَلُ اللهٌ مِنهُ صَرْفاً وَلَا عَدْلاً».
‘মদীনা ‘আইর’ থেকে ‘সাওর’ পর্যন্ত হারাম। যে ব্যক্তি মদীনায় কোন অন্যায় কাজ করবে অথবা কোন অন্যায়কারিকে আশ্রয় প্রদান করবে তার ওপর আল্লাহ, ফেরেশতা এবং সমস্ত মানুষের লা‘নত পড়বে। তার কাছ থেকে আল্লাহ কোন ফরয ও নফল কিছুই কবুল করবেন না।’[10]
মদীনায় অনেক স্মৃতি বিজড়িত ও ঐতিহাসিক স্থানের যিয়ারত করতে হাদীসে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। সেগুলো হলো : মসজিদে নববী, মসজিদে কুবা, বাকী‘র কবরস্থান, উহুদের শহীদদের কবরস্থান ইত্যাদি। নিচে সংক্ষিপ্তভাবে এসব স্থানের ফযীলত ও যিয়ারতের আদব উল্লেখ করা হল।
[2]. বুখারী : ২১২৯; মুসলিম : ১৩৬০। সা‘ ও মুদ দু’টি পরিমাপের পাত্র। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্পর্কে দু‘আ করেছেন যেন তাতে বরকত হয় এবং তা দিয়ে যেসব বস্ত্ত ওযন করা হয়- সেসব বস্ত্ততেও বরকত হয়।
[3]. বুখারী : ১৮৮৩; মুসলিম : ১৩৮৩।
[4]. বুখারী : ১৮৬৭; মুসলিম : ১৪৭। হাদীসের অর্থ হলো : ঈমান মদীনা অভিমুখী হবে এবং মদীনাতে অবশিষ্ট থাকবে। আর মুসলমানগণ মদীনার উদ্দেশ্যে বের হবে এবং মদীনামুখী হবে। তাদেরকে তাদের ঈমান ও এ বরকতময় যমীনের প্রতি ভালোবাসা এ কাজে উদ্বুদ্ধ করবে।
[5]. বুখারী : ১৮৮৫; মুসলিম ১৩৬০।
[6]. মুসলিম : ১৩৭৩।
[7]. বুখারী : ২১২৯; মুসলিম : ১৩৬০।
[8]. বুখারী : ১৮৮০; মুসলিম : ১৩৭৯।
[9]. মুসলিম : ১৩৭৪।
[10]. বুখারী : ১৮৭০; মুসলিম : ১৩৭০।
মসজিদে নববীর রয়েছে ব্যাপক মর্যাদা ও অসাধারণ শ্রেষ্ঠত্ব। কুরআন ও হাদীসে এ সম্পর্কে একাধিক ঘোষণা এসেছে।
কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿لَّمَسۡجِدٌ أُسِّسَ عَلَى ٱلتَّقۡوَىٰ مِنۡ أَوَّلِ يَوۡمٍ أَحَقُّ أَن تَقُومَ فِيهِۚ فِيهِ رِجَالٞ يُحِبُّونَ أَن يَتَطَهَّرُواْۚ وَٱللَّهُ يُحِبُّ ٱلۡمُطَّهِّرِينَ ١٠٨ ﴾ [التوبة: ١٠٨]
অবশ্যই যে মসজিদ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে তাকওয়ার উপর প্রথম দিন থেকে তা বেশী হকদার যে, তুমি সেখানে সালাত কায়েম করতে দাঁড়াবে। সেখানে এমন লোক আছে, যারা উত্তমরূপে পবিত্রতা অর্জন করতে ভালবাসে। আর আল্লাহ পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন।’[1]
আল্লামা সামহুদী বলেন, ‘কুবা ও মদীনা- উভয় স্থানের মসজিদ প্রথম দিন থেকেই তাকওয়ার ওপর প্রতিষ্ঠিত। উক্ত আয়াতে তাই উভয় মসজিদের কথা বলা হয়েছে।’[2]
মসজিদে নববীর আরেকটি ফযীলত হলো, এতে এক নামায পড়লে এক হাজার নামায পড়ার সওয়াব পাওয়া যায়। সুতরাং এখানে এক ওয়াক্ত নামায পড়া অন্য মসজিদে ছয় মাস নামায পড়ার সমতুল্য। ইবন উমর রা. বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«صَلاةٌ فِي مَسْجِدِي هَذَا أَفْضَلُ مِنْ أَلْفِ صَلاةٍ فِيمَا سِوَاهُ، إِلا الْمَسْجِدَ الْحَرَامَ»
‘আমার এ মসজিদে এক সালাত আদায় করা মসজিদে হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে এক হাজার সালাত আদায় করার চেয়েও উত্তম।’[3]
আবূ দারদা রা. থেকে বর্ণিত অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اَلصَّلاَةُ فِيْ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ بِمِائَةِ أَلْفِ صَلاَةٍ وَالصَّلاَةُ فِيْ مَسْجِدِيْ بِأَلْفِ صَلاَةٍ وَالصَّلاَةُ فِيْ بَيْتِ الْمُقَدَّسِ بِخَمْسِمِائَةٍ صَلاَةٍ».
‘মসজিদে হারামে এক নামায এক লাখ সালাতের সমান, আমার মসজিদে (মসজিদে নববী) এক নামায এক হাজার সালাতের সমান এবং বাইতুল মাকদাসে এক নামায পাঁচশ সালাতের সমান।’[4]
মসজিদে নববীর ফযীলত সম্পর্কে অন্য এক হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لا تُشَدُّ الرِّحَالُ إلاَّ إلى ثَلاثَةِ مَسَاجِدَ: اَلْمَسْجِدِ الْحَرَام، وَمَسْجِدِيْ هَذَا، وَالْمَسْجِدِ الأَقْصَى».
‘তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোথায়ও (সওয়াব আশায়) সফর করা জায়েয নেই: মসজিদুল হারাম, আমার এ মসজিদ ও মসজিদুল আক্সা।’[5]
আবূ হুরাইয়া রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ جَاءَ مَسْجِدِي هَذَا ، لَمْ يَأْتِهِ إِلاَّ لِخَيْرٍ يَتَعَلَّمُهُ أَوْ يُعَلِّمُهُ ، فَهُوَ بِمَنْزِلَةِ الْمُجَاهِدِ فِي سَبِيلِ اللهِ ، وَمَنْ جَاءَ لِغَيْرِ ذَلِكَ ، فَهُوَ بِمَنْزِلَةِ الرَّجُلِ يَنْظُرُ إِلَى مَتَاعِ غَيْرِهِ».
‘যে আমার এই মসজিদে কেবল কোনো কল্যাণ শেখার জন্য কিংবা শেখানোর জন্য আসবে, তার মর্যাদা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর সমতুল্য। পক্ষান্তরে যে অন্য কোন উদ্দেশ্যে তা দেখতে আসবে, সে ঐ ব্যক্তির ন্যায়, যে অন্যের মাল-সামগ্রীর প্রতি তাকায়।’[6]
আবূ উমামা আল-বাহেলী রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ غَدَا إِلَى الْمَسْجِدِ لا يُرِيدُ إِلا أَنْ يَتَعَلَّمَ خَيْرًا أَوْ ُيعلِّمَهُ، كَانَ لَهُ كَأَجْرِ حَاجٍّ تَامًّا حِجَّتُهُ».
‘যে ব্যক্তি একমাত্র কোন কল্যাণ শেখা বা শেখানোর উদ্দেশ্যে মসজিদে (নববীতে) আসবে, তার জন্য পূর্ণ একটি হজের সওয়াব লেখা হবে।’[7]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর ঘর (সাইয়েদা আয়েশা রা.-এর ঘর) ও তাঁর মিম্বরের মাঝখানের জায়গাটুকুকে জান্নাতের অন্যতম উদ্যান বলা হয়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا بَينَ بَيْتِيْ ومِنْبَرِيْ رَوْضَةٌ مِن رِيَاضِ الْجَنَّةٍ»
‘আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মাঝখানের অংশটুকু রওযাতুন মিন রিয়াদিল জান্নাত (জান্নাতের উদ্যানসমুহের একটি উদ্যান)।’[8]
রওযা শরীফ ও এর আশেপাশে অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন রয়েছে। এসবের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো, পূর্ব দিকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর হুজরা শরীফ। তার পশ্চিম দিকের দেয়ালের মধ্যখানে তাঁর মিহরাব এবং পশ্চিমে মিম্বর। এখানে বেশ কিছু পাথরের খুঁটি রয়েছে। যেসবের সাথে জড়িয়ে আছে হাদীস ও ইতিহাসের কিতাবে বর্ণিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন ও স্মৃতি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর যুগে এসব খুঁটি ছিল খেজুর গাছের। এগুলো ছিল-
১. উসতুওয়ানা আয়েশা বা আয়েশা রা.-এর খুঁটি।
২. উসতুওয়ানাতুল-উফূদ বা প্রতিনিধি দলের খুঁটি।
৩. উসতুওয়ানাতুত্তাওবা বা তওবার খুঁটি।
৪. উসতুওয়ানা মুখাল্লাকাহ বা সুগন্ধি জালানোর খুঁটি।
৫. উসতুওয়ানাতুস-সারীর বা খাটের সাথে লাগোয়া খুঁটি এবং উসতুওয়ানাতুল-হারছ বা মিহরাছ তথা পাহাদারদের খুঁটি।
মুসলিম শাসকগণের কাছে এই রওযা ছিল বরাবর খুব গুরুত্ব ও যত্নের বিষয়। উসমানী সুলতান সলীম রওযা শরীফের খুঁটিগুলোর অর্ধেক পর্যন্ত লাল-সাদা মারবেল পাথর দিয়ে মুড়িয়ে দেন। অতপর আরেক উসমানী সুলতান আবদুল মাজীদ এর খুঁটিগুলোর সংস্কার ও পুনঃনির্মাণ করেন। ১৯৯৪ সালে সৌদি সরকার পূর্ববর্তী সকল বাদশাহর তুলনায় উৎকৃষ্ট পাথর দিয়ে এই রওযার খুঁটিগুলো ঢেকে দেন এবং রওযার মেঝেতে দামী কার্পেট বিছিয়ে দেন।
[2]. শায়খ সফিউর রহমান মুবারকপুরী, তারীখুল মাদীনাতিল মুনাওয়ারা : পৃ. ৭৫।
[3]. বুখারী : ১১৯০; মুসলিম : ১৩৯৪। (ইবারত মুসলিমের)
[4]. মাজমাউয যাওয়াইদ : ৪/১১।
[5]. বুখারী : ১১৮৯, মুসলিম : ১৩৯৭।
[6]. ইবন মাজাহ্ : ২৭৭। া
[7]. মাজমাউয যাওয়াইদ : ১/১২৩।
[8]. বুখারী : ১১২০; মুসলিম : ২৪৬৩।
আবাসস্থল থেকে উযূ-গোসল সেরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হয়ে ধীরে-সুস্থে মসজিদে নববীর উদ্দেশ্যে গমন করবেন। আল্লাহর প্রতি বিনয় প্রকাশ করবেন এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর প্রতি বেশি বেশি দরূদ পাঠ করবেন। নিচের দো‘আ পড়তে পড়তে ডান পা দিয়ে মসজিদে নববীতে প্রবেশ করবেন :
«بِسْمِ اللهِ وَالصَّلاَةُ وَالسَّلاَمُ عَلى رَسُوْلِ اللهِ، اللَّهُمَّ اغْفِرْ لِيْ ذُنُوْبِيْ، وَافْتَحْ لِيْ أَبْوَابَ رَحْمَتِكَ».
(বিসমিল্লাহি ওয়াস-সালাতু ওয়াস-সালামু আলা রাসূলিল্লাহ, আল্লাহুম্মাগফিরলী যুনূবী ওয়াফ-তাহলী আবওয়াবা রহমাতিকা)।
‘আল্লাহর নামে আরম্ভ করছি। সালাত ও সালাম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর ওপর। হে আল্লাহ! আপনি আমার গুনাহসমূহ ক্ষমা করে দিন এবং আমার জন্য আপনার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দিন।’[1] এ দো‘আও পড়তে পারেন,
«أَعُوذُ بِاللَّهِ الْعَظِيمِ وَبِوَجْهِهِ الْكَرِيمِ وَسُلْطَانِهِ الْقَدِيمِ مِنْ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ»
(আউযুবিল্লাহিল আযীম ওয়া ওয়াজহিহিল কারীম ওয়া সুলতানিহিল কাদীমি মিনাশ শায়তানির রাজীম।)
‘আমি মহান আল্লাহর, তাঁর সম্মানিত চেহারার এবং তাঁর চিরন্তন কর্তৃত্বের মাধ্যমে বিতাড়িত শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’[2]
অতপর যদি কোন ফরয নামাজের জামাত দাঁড়িয়ে যায় তবে সরাসরি জামাতে অংশ নিন। নয়তো বসার আগেই দু’রাক‘আত তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়বেন। আবূ কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا دَخَلَ أَحَدُكُمُ الْمَسْجِدَ فَلاَ يَجْلِسْ حَتَّى يَرْكَعَ رَكْعَتَيْنِ».
‘তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করে, সে যেন দু’রাক‘আত নামাজ পড়ে তবেই বসে।’[3]
আর সম্ভব হলে ফযীলত অর্জনের উদ্দেশ্যে রাওযার সীমানার মধ্যে এই নামায পড়বেন। কারণ আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَا بَينَ بَيْتِيْ ومِنْبَرِيْ رَوضَةٌ مِن رِيَاضِ الجَنَّةٍ»
‘আমার ঘর ও আমার মিম্বরের মাঝখানের অংশটুকু রওযাতুন মিন রিয়াদিল জান্নাত (জান্নাতের উদ্যানসমুহের একটি উদ্যান)।’[4] আর সম্ভব না হলে মসজিদে নববীর যেখানে সম্ভব সেভাবেই পড়বেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কর্তৃক মসজিদের এ অংশকে অন্যান্য অংশ থেকে পৃথক গুণে গুণান্বিত করা দ্বারা এ অংশের আলাদা ফযীলত ও বিশেষ শ্রেষ্ঠত্বের প্রমাণ বহন করছে। আর সে শ্রেষ্ঠত্ব ও ফযীলত অর্জিত হবে কাউকে কষ্ট না দিয়ে সেখানে নফল নামায আদায় করা, আল্লাহর যিক্র করা, কুরআন পাঠ করা দ্বারা। ফরয নামায প্রথম কাতারগুলোতে পড়া উত্তম; কেননা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«خَيْرُ صُفُوْفِ الرِّجَالِ أَوَّلُهَا وَشَرُّهَا آخِرُهَا».
‘পুরুষদের সবচে’ উত্তম কাতার হলো প্রথমটি, আর সবচে’ খারাপ কাতার হলো শেষটি।’[5] রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো বলেন,
«لَوْ يَعْلَمُ النّاسُ مَا فِي النِّدَاءِ وَالصَّفِّ الأَولِ، ثُمَّ لَمْ يَجِدُوْا إلا أَن يَّسْْتَهِمُوا عَلَيْهِ لَاسْتَهَمُوْا عَلَيْهِ».
‘মানুষ যদি আযান ও প্রথম কাতারের ফযীলত জানত, তারপর লটারি করা ছাড়া তা পাওয়ার সম্ভাবনা না থাকত, তাহলে অবশ্যই তারা তার জন্য লটারি করত।’[6]
সুতরাং এর দ্বারা স্পষ্ট হলো যে, মসজিদে নববীতে নফল সালাতের উত্তম জায়গা হলো রাওযাতুম মিন রিয়াযুল জান্নাত। আর ফরয নামাজের জন্য উত্তম জায়গা হলো প্রথম কাতার তারপর তার নিকটস্থ কাতার।
[2]. আবূ দাউদ : ৪৬৬।
[3]. বুখারী : ৪৪৪; মুসলিম : ১৬৫৪।
[4]. বুখারী : ১১২০; মুসলিম : ২৪৬৩।
[5]. মুসলিম : ১০১৩।
[6]. বুখারী : ৬১৫; মুসলিম : ৯৮১।
তাহিয়্যাতুল মসজিদ বা ফরয নামাজ পড়ার পর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদ্বয়ের কবরে সালাম নিবেদন করতে যাবেন।
১. কবরের কাছে গিয়ে কবরের দিকে মুখ দিয়ে কিবলাকে পেছনে রেখে দাঁড়িয়ে বলবেন,
اَلسَّلامُ عَلَيْكَ يَا رَسُوْلُ اللهِ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، صَلَّى اللهُ وَسَلَّمَ وَبَارَكَ عَلَيْكَ، وَجَزَاكَ أَفْضَلَ مَا جَزَى اللهُ نَبِيًّا عَنْ أُمَّتِهِ.
(আস্সালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু, সাল্লা্ল্লাহু ও সাল্লামা ওয়া বারাকা আলাইকা, ওয়া জাযাকা আফদালা মা জাযাল্লাহু নাবিয়্যান আন উম্মাতিহি।)
‘হে আল্লাহর রাসূল, আপনার ওপর সালাম, আল্লাহর রহমত ও তাঁর বরকতসমূহ। আল্লাহ আপনার ওপর সালাত, সালাম ও বরকত প্রদান করুন। আর আল্লাহ কোন নবীর প্রতি তার উম্মতের পক্ষ থেকে যত প্রতিদান তথা সওয়াব পৌঁছান, আপনার প্রতি তার থেকেও উত্তম প্রতিদান ও সওয়াব প্রদান করুন।’ আর যদি এ ধরনের অন্য কোন উপযুক্ত দো‘আ পড়ে তবে তাতেও কোন সমস্যা নেই।
২. অতপর ডান দিকে এক হাত এগিয়ে আবূ বকর রা.-এর কবরের সামনে যাবেন। সেখানে পড়বেন,
اَلسَّلامُ عَلَيْكَ يَا أَبَا بَكَرْ, اَلسَّلامُ عَلَيْكَ يَا خَلِيْفَةَ رَسُوْلِ اللهِ فِي أُمَّتِهِ, رَضِيَ اللهُ عَنْكَ وَجَزَاكَ عَنْ أُمة محمد خيراً.
(আস্সালামু আলাইকা ইয়া আবা বাকর, আসসালামু আলাইকা ইয়া খালীফাতা রাসূলিল্লাহি ফী উম্মাতিহী, রাদিয়াল্লাহু ‘আনকা ওয়া জাযাকা ‘আন উম্মাতি মুহাম্মাদিন খাইরা।)
৩. এরপর আরেকটু ডানে গিয়ে উমর রা.-এর কবরের সামনে দাঁড়াবেন। সেখানে বলবেন,
اَلسَّلامُ عَلَيْكَ يَا عُمَرُ, اَلسَّلامُ عَلَيْكَ يَا أَمِيْرَ المُؤْمِنِيْنَ, رَضِيَ اللهُ عَنْكَ وَجَزَاكَ عَنْ أُمَّةِ محَُمد خيراً.
(আস্সালামু আলাইকা ইয়া উমার, আসসালামু আলাইকা ইয়া আমীরাল মু’মিনীন, রাদিয়াল্লাহু আনকা ওয়া জাযাকা আন উম্মাতি মুহাম্মাদিন খাইরা।)
তারপর এখান থেকে চলে আসবেন। দো‘আর জন্য কবরের সামনে, পেছনে, পূর্বে বা পশ্চিম- কোন দিকেই দাঁড়াবেন না। ইমাম মালেক রহ. বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কবরের সামনে শুধু সালাম জানানোর জন্য দাঁড়াবে, তারপর সেখান থেকে সরে আসবে। যেমনটি ইবন উমর রা. করতেন। ইব্নুল জাওযী রহ. বলেন, শুধু নিজের দো‘আ চাওয়ার জন্য কবরের সামনে যাওয়া মাকরূহ। ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, দো‘আ চাওয়ার জন্য কবরের কাছে যাওয়া এবং সেখানে অবস্থান করা মাকরূহ।[1]
কবর যিয়ারতের সময় নিচের আদবগুলোর প্রতিও লক্ষ্য রাখবেন :
- রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর উঁচু মর্যাদা ও সম্মানের প্রতি খেয়াল রাখবেন। উচ্চস্বরে কিছু বলবেন না।
- ভিড়ের মধ্যে ধাক্কাধাক্কি করে অন্যকে কষ্ট দেবেন না।
কবরের সামনে বেশিক্ষণ দাঁড়াবেন না।
কবরকে তাওয়াফ করা, কবর স্পর্শ করা বা চুমু দেওয়া :
যিয়ারতে কবর তাওয়াফ, স্পর্শ ও চুম্বন করবেন না। ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন, ‘অনুসরণীয় ইমাম ও পূর্বসুরী আলিমগণ এ ব্যাপারে একমত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কবরে সালাম পাঠকালে তাঁর কবরের পাথর চুম্বন বা স্পর্শ করা মুস্তাহাব নয়। যেন সৃষ্টজীবের ঘর (রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কবর) আর স্রষ্টার ঘর (কা‘বা) সমপর্যায়ের না হয়ে যায়। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«اللهم لا تجعل قبري وثنا يعبد».
‘হে আল্লাহ, আমার কবরকে এমন মূর্তির মতো বানিয়ো না, যার পূজা করা হয়।’ মানব জাতির শ্রেষ্ঠ ব্যক্তিত্বের কবরের ক্ষেত্রে যখন এই বিধান, তাহলে অন্যদের কবর চুম্বন ও স্পর্শ না করাটা যে নিষিদ্ধ তা বলাই বাহুল্য।’[1]
তিনি আরো বলেন, ‘শরীয়তে শুধু কা‘বা শরীফের তাওয়াফ করা, রুকনে ইয়ামানীদ্বয় স্পর্শ করা এবং হাজরে আসওয়াদে চুম্বন করার বিধান রয়েছে। পক্ষান্তরে মসজিদে নববী, মসজিদে আকসা এবং অন্য কোন মসজিদে এমন কিছু নেই, যাকে তাওয়াফ, স্পর্শ বা চুম্বন করা যাবে। অতএব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর হুজরা শরীফ, বাইতুল মুকাদ্দাসের কোন পাথর বা অন্য বস্তুর তাওয়াফ করা বৈধ নয়। যেমন : আরাফা ও তদ্রুপ স্থানের গম্বুজ। বরং ভূপৃষ্ঠে এমন কোন স্থান নেই কা‘বা শরীফের মতো যার তাওয়াফ করা হবে। আর যে এই আকীদা পোষণ করে যে, কা‘বা শরীফ ছাড়া অন্য বস্তুর তাওয়াফ করা বৈধ, সে ঐ ব্যক্তির চেয়ে মন্দ যে কা‘বা শরীফ ছাড়াও অন্য বস্তুর দিকে নামাজ পড়াকে বৈধ মনে করে।’ তিনি এও বলেন, ‘যে হুজরায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কবর বিদ্যমান ইবাদতের ক্ষেত্রে সেই হুজরার কোন ধর্মীয় বিশেষত্ব নেই।’[2]
ইবন তাইমিয়া রহ. আরো বলেন, ‘আর স্পর্শ করার ক্ষেত্রে বিধান হল, যেকোন কবর স্পর্শ করা বা চুমো দেওয়া এবং তাতে গাল ঘষা সকল মুসলমানের ঐকমত্যে নিষিদ্ধ। যদিও তা নবীগণের কবর হয়। এই উম্মতের ইমামগণ এবং পূর্বসুরী আলেমদের কেউ এসব করেননি। বরং এটা করা শিরক।’[3] তাঁর মতে, ‘তাঁর কবর এমনভাবে স্থাপন করা হয়েছে যাতে মানুষ সেখানে পৌঁছতে না পারে। সেখানে যিয়ারতকারীদের কবরে পৌঁছার জন্য কোন রাস্তা রাখা হয়নি। আর করবটি এমন বিশাল জায়গায় অবস্থিত নয় যে সকল যিয়ারতকারীর স্থান সংকুলান হতে পারে। আর জায়গাটিতে এমন কোন জানালাও নেই যা দিয়ে কবর দেখা যায়। বরং মানুষকে কবরে পৌঁছা ও প্রত্যক্ষভাবে তা দেখা থেকে বিরত রাখা হয়েছে। উপরোক্ত প্রত্যেকটি কাজের উদ্দেশ্য হচ্ছে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কবরগৃহকে ঈদ ও মূর্তি হিসেবে গ্রহণ করা থেকে রক্ষা করা।’
তেমনিভাবে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কবরের দেয়াল স্পর্শ ও চুম্বন করাও বৈধ নয়। ইমাম আহমদ রহ. বলেন, ‘আমি এটাকে (কবর স্পর্শ বা চুম্বন) বৈধ বলে জানি না।’ আছরাম রহ. বলেন, আমি মদীনার আলিমদের দেখেছি, তাঁরা কবরের এক পাশে দাঁড়িয়ে সালাম পেশ করেন। আবূ আবদুল্লাহ বলেন, ইবন উমর রা. এমনই করতেন। কবর স্পর্শ ও চুম্বন এ কারণে অবৈধ যে, যদি তা আল্লাহর ইবাদত বা রাসূলুল্লাহর সম্মানার্থে করা হয়, তাহলে তা হবে শিরক। মু‘আবিয়া রা. কা‘বা শরীফের রুকনে শামী ও পশ্চিমের রুকন স্পর্শ করলে ইবন আব্বাস রা. তাঁর ওপর অসন্তুষ্ট হন। যদিও এ ধরনের কাজ দুই রুকনে ইয়ামানীর ক্ষেত্রে করার বিধান রয়েছে। বস্তুত রাসূলুল্লাহর মৃত্যুর কয়েকশ’ বছর পর নির্মিত কোন ঘরের দেয়ালে এভাবে চুম্বন বা স্পর্শ করার মাধ্যমে নবীজীর ভালোবাসা বা সম্মান প্রকাশ পায় না। বরং তাঁর প্রতি ভালোবাসা ও সম্মান প্রকাশ পায় বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণভাবে তাঁর অনুসরণ এবং তাঁর আনীত দীনে নতুন কিছু সংযোজন তথা বিদ‘আত সৃষ্টি না করার মাধ্যমে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ قُلۡ إِن كُنتُمۡ تُحِبُّونَ ٱللَّهَ فَٱتَّبِعُونِي يُحۡبِبۡكُمُ ٱللَّهُ وَيَغۡفِرۡ لَكُمۡ ذُنُوبَكُمۡۚ وَٱللَّهُ غَفُورٞ رَّحِيمٞ ٣١ ﴾ [ال عمران: ٣١]
‘বল, ‘যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস, তাহলে আমার অনুসরণ কর, আল্লাহ তোমাদেরকে ভালবাসবেন।’[4]
আর যদি রাসূলুল্লাহর রওযার দেয়াল স্পর্শ বা চুম্বন ইবাদতের জন্য না হয়ে কেবল আবেগের বশে হয় কিংবা এমনি এমনি করা হয়, তাহলে তা হবে এমন ভ্রান্তি যাতে কোন কল্যাণ নেই। তাছাড়া তা হবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর সাহাবীদের আদর্শ ও শিক্ষা পরিপন্থী। তদ্রুপ এটি অজ্ঞ লোকদের জন্য হবে ক্ষতিকর ও প্রবঞ্চক যারা দেখলে এসবকে ইবাদত মনে করবে।
কল্যাণ লাভ ও অকল্যাণ দূর করার জন্য নবীজীর কাছে প্রার্থনা করা :
যিয়ারতকারী কোন কল্যাণ লাভ বা অকল্যাণ দূর করার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কাছে দো‘আ করবেন না। এটি শিরকের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তা‘আলা বলেন,
﴿ وَقَالَ رَبُّكُمُ ٱدۡعُونِيٓ أَسۡتَجِبۡ لَكُمۡۚ إِنَّ ٱلَّذِينَ يَسۡتَكۡبِرُونَ عَنۡ عِبَادَتِي سَيَدۡخُلُونَ جَهَنَّمَ دَاخِرِينَ ٦٠ ﴾ [غافر: ٦٠]
‘আর তোমাদের রব বলেছেন, ‘তোমরা আমাকে ডাক, আমি তোমাদের জন্য সাড়া দেব। নিশ্চয় যারা অহঙ্কার বশত আমার ইবাদত থেকে বিমুখ থাকে, তারা অচিরেই লাঞ্ছিত অবস্থায় জাহান্নামে প্রবেশ করবে।’[5]
আল্লাহ তা‘আলা আরও বলেন,
﴿ وَأَنَّ ٱلۡمَسَٰجِدَ لِلَّهِ فَلَا تَدۡعُواْ مَعَ ٱللَّهِ أَحَدٗا ١٨ ﴾ [الجن: ١٨]
‘আর নিশ্চয় মসজিদগুলো আল্লাহরই জন্য। কাজেই তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে ডেকো না।’[6]
আল্লাহ তা‘আলা তাঁর নবীকে এ ঘোষণা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন যে, নবী নিজেও নিজের কল্যাণ ও অকল্যাণের মালিক নন। আল্লাহ বলেন,
﴿ قُل لَّآ أَمۡلِكُ لِنَفۡسِي نَفۡعٗا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَآءَ ٱللَّهُۚ ﴾ [الاعراف: ١٨٨]
‘বল, ‘আমি আমার নিজের কোন উপকার ও ক্ষতির ক্ষমতা রাখি না, তবে আল্লাহ যা চান।’[7]
নবী যেহেতু নিজেই নিজের লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা রাখেন না তাই অন্যের লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা রাখার তো প্রশ্নই ওঠে না। আল্লাহ তা‘আলা তাঁকে উম্মতের মধ্যে এ ঘোষণাও দিতে বলেছেন। কুরআনুল কারীমে আল্লাহ বলেন,
﴿ قُلۡ إِنِّي لَآ أَمۡلِكُ لَكُمۡ ضَرّٗا وَلَا رَشَدٗا ٢١ ﴾ [الجن: ٢١]
‘বল, ‘নিশ্চয় আমি তোমাদের জন্য না কোন অকল্যাণ করার ক্ষমতা রাখি এবং না কোন কল্যাণ করার।’[8]
আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, যখন
﴿ وَأَنذِرۡ عَشِيرَتَكَ ٱلۡأَقۡرَبِينَ ٢١٤ ﴾ [الشعراء: ٢١٤]
(‘আর তুমি তোমার নিকটাত্মীয়দেরকে সতর্ক কর।’[9]) আয়াতটি অবতীর্ণ হল, তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে গেলেন। তারপর তিনি বললেন, ‘হে মুহাম্মদের মেয়ে ফাতিমা, হে আবদুল মু্ত্তালিবের মেয়ে সাফিয়্যা (নবীজীর ফুফু) এবং হে আবদুল মুত্তালিবের বংশধর, আমি আল্লাহর হুকুম থেকে তোমাদেরকে রক্ষা করার কোন ক্ষমতা রাখি না। তোমরা আমার কাছে আমার সম্পদ থেকে যা চাওয়ার চাইতে পার।’ (আমি তা দিতে পারব; কিন্তু আল্লাহর হুকুমের ব্যাপারে আমি তোমাদের যামিন হতে পারব না)।[10]
নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে দো‘আ-ইস্তিগফার করার জন্য আবেদন করা :
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কাছে কেউ আল্লাহর দরবারে নিজের জন্য দো‘আ বা ইস্তিগফার করার আবেদন করবেন না। কারণ তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এ সুযোগের সমাপ্তি ঘটেছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«إِذَا مَاتَ أَحَدُكُمْ انْقَطَعَ عَمَلُهُ».
‘তোমাদের কেউ যখন মারা যায়, তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়।’[11]
আর আল্লাহ তা‘আলার বাণী,
﴿وَلَوۡ أَنَّهُمۡ إِذ ظَّلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ جَآءُوكَ فَٱسۡتَغۡفَرُواْ ٱللَّهَ وَٱسۡتَغۡفَرَ لَهُمُ ٱلرَّسُولُ لَوَجَدُواْ ٱللَّهَ تَوَّابٗا رَّحِيمٗا ٦٤ ﴾ [النساء: ٦٤]
‘আর যদি তারা- যখন নিজদের প্রতি যুলম করেছিল তখন তোমার কাছে আসত অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইত এবং রাসূলও তাদের জন্য ক্ষমা চাইত তাহলে অবশ্যই তারা আল্লাহকে তাওবা কবুলকারী, দয়ালু পেত।’[12]
এটি রাসূলের জীবদ্দশার সাথে সম্পৃক্ত। তাই এ আয়াতের মাধ্যমে তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর কাছে ইস্তিগফারের আবেদন করার বৈধতা প্রমাণিত হয় না। কারণ আল্লাহ তা‘আলা আয়াতে অতীতবাচক ক্রিয়া ব্যবহার করেছেন; ভবিষ্যতবাচক ক্রিয়া ব্যবহার করেননি। আয়াতখানি সে সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর জীবৎকালে ছিল। সুতরাং তা তাঁর পরবর্তী লোকদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না।
নবীজী ও তাঁর সাহাবীদ্বয়ের কবর যিয়ারতের এই বিধান শুধু পুরুষদের জন্য। আর মহিলাদের ক্ষেত্রে বিধান হলো, তাদের জন্য নবীজী বা অন্য যেকারো কবরই যিয়ারত না করা উত্তম। কারণ আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«لَعَنَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم زَائِرَاتِ الْقُبُورِ».
‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর যিয়ারতকারী মহিলাদেরকে অভিশাপ দিয়েছেন।’[13]
[2]. ইবন তাইমিয়া, মজমূ‘ ফাতাওয়া : ২৭/১০; ইবন তাইমিয়া, আল-জাওয়াবুল বাহির ফী যুওয়ারিল মাকাবির : ৮২।
[3]. ইবন তাইমিয়া, মজমূ‘ ফাতাওয়া : ২৭/৯১; ইবন কুদামা, মুগনী : ৩/৫৫৯।
[4]. আলে-ইমরান : ৩১।
[5]. মু’মিন : ৬০।
[6]. জিন : ১৮।
[7]. আ‘রাফ : ১৮৮।
[8]. জিন : ২১।
[9]. শু‘আরা : ২১৪।
[10]. মুসলিম : ৫০৩।
[11]. মুসলিম : ৪৮৪৩।
[12]. নিসা : ৬৪।
[13]. তিরমিযী : ৩২০।
১. বাকী‘র কবরস্থান
২. মসজিদে কুবা’
৩. শুহাদায়ে উহুদের কবরস্থান
বাকী‘র কবরস্থান
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর যুগ থেকে বাকী‘ মদীনাবাসীর প্রধান কবরস্থান। এটি মসজিদে নববীর দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। মদীনায় মৃত্যু বরণকারী হাজার হাজার ব্যক্তির কবর রয়েছে এখানে। এদের মধ্যে রয়েছে স্থানীয় অধিবাসী এবং বাইরে থেকে আগত যিয়ারতকারীগণ। এখানে প্রায় দশ হাজার সাহাবীর কবর রয়েছে। যাদের মধ্যে রয়েছেন (খাদীজা ও মায়মূনা রা. ছাড়া) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর সকল স্ত্রী, কন্যা ফাতেমা, পুত্র ইবরাহীম, চাচা আব্বাস, ফুফু সুফিয়্যা, নাতী হাসান ইবন আলী এবং জামাতা উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহুম ছাড়াও অনেক মহান ব্যক্তি।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই বাকী‘র কবরস্থান যিয়ারত করতেন। সেখানে তিনি বলতেন,
«السَّلاَمُ عَلَيْكُمْ دَارَ قَوْمٍ مُؤْمِنِينَ وَأَتَاكُمْ مَا تُوعَدُونَ غَدًا مُؤَجَّلُونَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لاَحِقُونَ اللَّهُمَّ اغْفِرْ لأَهْلِ بَقِيعِ الْغَرْقَد»
(আস্সালামু আলাইকুম দারা কাওমিম মু’মিনীন ওয়া আতাকুম মা তুআ‘দুনা গাদান মুআজ্জালুনা ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লাহিকূন, আল্লাহুম্মাগ ফির লিআহলি বাকী‘ইর গারকাদ।)
‘তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক হে মু’মিনদের ঘর, তোমাদেরকে যার ওয়াদা করা হয়েছিল তা তোমাদের কাছে এসেছে। আর আগামীকাল (কিয়ামত) পর্যন্ত তোমাদের সময় বর্ধিত করা হল। ইনশাআল্লাহ তোমাদের সাথে আমরা মিলিত হব। হে আল্লাহ, বাকী‘ গারকাদের অধিবাসীদের ক্ষমা করুন।’[1]
তাছাড়া কোন কোন হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তা‘আলা বাকী‘উল গারকাদে যাদের দাফন করা হয়েছে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনার নির্দেশ দিয়েছেন। এক হাদীসে এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘আমার কাছে জিবরীল এসেছিলেন ...তিনি বললেন,
«إِنَّ رَبَّكَ يَأْمُرُكَ أَنْ تَأْتِىَ أَهْلَ الْبَقِيعِ فَتَسْتَغْفِرَ لَهُمْ»
‘আপনার রব আপনাকে বাকী‘র কবরস্থানে যেতে এবং তাদের জন্য দো‘আ করতে বলেছেন।’ আয়েশা রা. বললেন, হে আল্লাহর রাসূল, আমি কীভাবে তাদের জন্য দো‘আ করবো? তিনি বললেন, তুমি বলবে,
«السَّلاَمُ عَلَى أَهْلِ الدِّيَارِ مِنَ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمُسْلِمِينَ وَيَرْحَمُ اللَّهُ الْمُسْتَقْدِمِينَ مِنَّاوَالْمُسْتَأْخِرِينَ وَإِنَّا إِنْ شَاءَ اللَّهُ بِكُمْ لَلاَحِقُونَ».
(আসসালামু আ‘লা আহলিদ দিয়ারি মিনাল মু’মিনীন ওয়াল মুসলিমীন ওয়া ইয়ারহামুল্লাহুল মুসতাকদিমীন মিন্না ওয়াল মুসতা’খিরীন ওয়া ইন্না ইনশাআল্লাহু বিকুম লালাহিকূন।)
‘মুমিন-মুসলিম বাসিন্দাদের ওপর সালাম। আল্লাহ আমাদের পূর্ব ও পরবর্তী সবার ওপর রহম করুন। ইনশাআল্লাহ আমরা তোমাদের সাথে মিলিত হব।’[2]
মসজিদে কুবা’
মদীনায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিষ্ঠিত প্রথম মসজিদ এটি। মক্কা থেকে মদীনায় হিজরতের পথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রথমে কুবা[3] পল্লীতে আমর ইবন আউফ গোত্রের কুলছুম ইবন হিদমের গৃহে অবতরণ করেন। এখানে তাঁর উট বাঁধেন। তারপর এখানেই তিনি একটি মসজিদ নির্মাণ করেন। এর নির্মাণকাজে তিনি সশরীরে অংশগ্রহণ করেন। এ মসজিদে তিনি নামাজ পড়তেন। এটিই প্রথম মসজিদ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যেখানে তাঁর সাহাবীদের নিয়ে প্রকাশ্যে একসঙ্গে নামাজ আদায় করেন। এ মসজিদের কিবলা প্রথমে বাইতুল মাকদিসের দিকে ছিল। পরে কিবলা পরিবর্তন হলে কা‘বার দিকে এর কিবলা নির্ধারিত হয়।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত এ মসজিদে নামাজ আদায় করতে চাইতেন। সপ্তাহে অন্তত একদিন তিনি এ মসজিদের যিয়ারতে গমন করতেন। ইবন উমর রা. তাঁর অনুকরণে প্রতি শনিবার মসজিদে কুবার যিয়ারত করতেন। ইবন উমর রা. বলেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি শনিবারে হেঁটে ও বাহনে চড়ে মসজিদে কুবায় যেতেন।’[4]
মসজিদে কুবার ফযীলত সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«مَنْ خَرَجَ حَتَّى يَأْتِىَ هَذَا الْمَسْجِدَ مَسْجِدَ قُبَاءٍ فَصَلَّى فِيهِ كَانَ لَهُ عِدْلَ عُمْرَةٍ»
‘যে ব্যক্তি (ঘর থেকে) বের হয়ে এই মসজিদ অর্থাৎ মসজিদে কুবায় আসবে। তারপর এখানে নামাজ পড়বে। তা তার জন্য একটি উমরার সমতুল্য।’[5]
শুহাদায়ে উহুদের কবরস্থান
২য় হিজরীতে সংঘটিত উহুদ যুদ্ধের শহীদদের কবরস্থান যিয়ারত করা। তাঁদের জন্য দো‘আ করা এবং তাঁদের জন্য রহমত প্রার্থনা করা। সপ্তাহের যেকোন দিন যে কোন সময় যিয়ারতে যাওয়া যায়। অনেকে জুমাবার বা বৃহস্পতিবার যাওয়া উত্তম মনে করেন, তা ঠিক নয়।
উপরোল্লিখিত স্থানগুলোতে যাওয়ার কথা হাদীসে এসেছে বিধায় সেখানে যাওয়া সুন্নত। এছাড়াও মদীনাতে আরো অনেক ঐতিহাসিক ও স্মৃতিবিজড়িত স্থান রয়েছে। ইবাদত মনে না করে সেসব পরিদর্শন করাতে কোন সমস্যা নেই। যেমন : মসজিদে কিবলাতাইন, মসজিদে ইজাবা, মসজিদে জুমা‘, মসজিদে বনী হারেছা, মসজিদে ফাত্হ, মসজিদে মীকাত, মসজিদে মুসাল্লা ও উহুদ পাহাড় ইত্যাদি। কিন্তু কোন ক্রমেই সেগুলোকে ইবাদতের জন্য নির্দিষ্ট করা যাবে না।
মসজিদে কিবলাতাইন
এটি একটি ঐতিহাসিক মসজিদ। মদীনা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরে খাযরাজ গোত্রের বানূ সালামা গোত্রে অবস্থিত। বনূ সালামা গোত্রের মহল্লায় অবস্থিত হওয়ার কারণে মসজিদে কিবলাতাইনকে মসজিদে বনী সালামাও বলা হয়। একই নামাজ এই মসজিদে দুই কিবলা তথা বাইতুল মাকদিস ও কা‘বাঘরের দিকে পড়া হয়েছিল বলে একে মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ বলা হয়।
বারা’ ইবন আযেব রা. থেকে বর্ণিত, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাইতুল মাকদিসের দিকে ফিরে ষোল বা সতের মাস নামাজ পড়েছেন। তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মনে মনে কা‘বামুখী হয়ে নামাজ পড়তে চাইতেন। এরই প্রেক্ষিতে আল্লাহ তা‘আলা নাযিল করেন,
﴿ قَدۡ نَرَىٰ تَقَلُّبَ وَجۡهِكَ فِي ٱلسَّمَآءِۖ فَلَنُوَلِّيَنَّكَ قِبۡلَةٗ تَرۡضَىٰهَاۚ فَوَلِّ وَجۡهَكَ شَطۡرَ ٱلۡمَسۡجِدِ ٱلۡحَرَامِۚ وَحَيۡثُ مَا كُنتُمۡ فَوَلُّواْ وُجُوهَكُمۡ شَطۡرَهُۥۗ ﴾ [البقرة: ١٤٤]
‘আকাশের দিকে বার বার তোমার মুখ ফিরানো আমি অবশ্যই দেখছি। অতএব আমি অবশ্যই তোমাকে এমন কিবলার দিকে ফিরাব, যা তুমি পছন্দ কর। সুতরাং তোমার চেহারা মাসজিদুল হারামের দিকে ফিরাও এবং তোমরা যেখানেই থাক, তার দিকেই তোমাদের চেহারা ফিরাও।’[6] এ আয়াত নাযিল হবার সাথে সাথে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কা‘বার দিকে ফিরে যান।’[7]
ইবন সা‘দ উল্লেখ করেন, ‘নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বানূ সালামার উম্মে বিশর ইবন বারা’ ইবন মা‘রূর রা.এর সাক্ষাতে যান। তাঁর জন্য খাদ্য প্রস্তুত করা হয়। ইতোমধ্যেই যোহর নামাজের সময় ঘনিয়ে আসে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাহাবীদের নিয়ে দুই রাক‘আত নামাজ পড়েন। এরই মধ্যে কা‘বামুখী হওয়ার নির্দেশ আসে। সাথে সাথে (সালাতের অবশিষ্ট রাক‘আতের জন্য) তিনি কা‘বামুখী হয়ে যান। এ থেকেই মসজিদটির নাম হয়ে যায় মসজিদে কিবলাতাইন বা দুই কিবলার মসজিদ।’[8]
[2]. মুসলিম : ৯৭৪; নাসাঈ : ২০৩৯।
[3]. মদীনার অদূরে একটি গ্রামের নাম। বর্তমানে এটি মদীনার অংশ।
[4]. বুখারী : ১১৯৩; মুসলিম : ১৩৯৯।
[5]. হাকেম, মুস্তাদরাক : ৩/১২।
[6]. বাকারা : ১৪৪।
[7]. বুখারী : ৩৯৯।
[8]. ড. ইলিয়াস আবদুল গনী, আল-মাসাজিদ আল-আছারিয়্যা : পৃ. ১৮৬।
১. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবরের উদ্দেশ্যেই শুধু সফর করা।
২. হজে গমনকারিদের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে কোন কিছু চেয়ে পাঠানো।
৩. মদীনায় প্রবেশের পূর্বে গোসল করা।
৪. মদীনায় প্রবেশের সময় কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়নি এমন দো‘আ বানিয়ে বলা।
৫. মসজিদে নববীতে প্রবেশ করে কোন সালাত আদায়ের পূর্বেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবর যিয়ারতের জন্যে যাওয়া।
৬. কবরের সামনে সালাতে দাঁড়ানোর মত ডান হাত বাম হাতের ওপর রেখে হাত বেঁধে দাঁড়ানো।
৭. দু’আ করার সময় কবরের দিকে ফিরে দো‘আ করা।
৮. কবরের দিকে ফিরে দু’আ করলে কবুল হবে মনে করা।
৯. রাসূলের সত্ত্বা তাঁর সম্মানের অসীলা দিয়ে দু’আ করা।
১০. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে সুপারিশ চাওয়া।
১১. এটা মনে করা যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবস্থা জানেন। এরূপ মনে করা সুস্পষ্ট শিরক।
১২. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কবরের ছোট ছিদ্র পথে বরকত লাভের আশায় হাত ঢুকানো। এটাও শিরক।
১৩. বরকত লাভের আশায় কবর চুম্বন অথবা স্পর্শ করা এবং কবরের সাথে লাগোয়া কোন কাঠ ছোয়া বা স্পর্শ করা।
১৪. কবর যিয়ারতের সময় ﴿وَلَوۡ أَنَّهُمۡ إِذ ظَّلَمُوٓاْ أَنفُسَهُمۡ ....﴾ [النساء: ٦٤] -(নিসা ৬৪ নং) আয়াত পড়া।
১৫. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবরের দিকে ফিরে সালাত আদায় করা।
১৬. কবরের কাছে বসে কুরআন পাঠ বা যিকর করা।
১৭. প্রতি সালাতের পরই কবর যিয়ারতের জন্য কবরের কাছে যাওয়া।
১৮. মসজিদে প্রবেশ করেই কবর যিয়ারত করার মানসিকতা।
১৯. মসজিদে নববীতে প্রবেশ করার সময় এবং বের হওয়ার সময় কবরের দিকে মুখ করে থাকা।
২০. দূর থেকে কবরকে উদ্দেশ্য করে বিনীতভাবে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করা।
২১. সালাতের পর পর আসসালামু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ বলা।
২২. মসজিদের প্রথম অংশ বাদ দিয়ে রওযাতে সালাত পড়া উত্তম মনে করা।
২৩. মদীনার মসজিদুর রাসূল এবং কুবা’ মসজিদ ছাড়া অন্য মসজিদে সওয়াবের উদ্দেশ্যে গমন করা।
২৪. প্রতিদিন বাকী‘ কবরস্থান যিয়ারত করা।
২৫. উহুদের শহীদদের কবরের কাছে গিয়ে তাদের কাছে কিছু চাওয়া। তাদের দিকে ফিরে দু’আ করা।
২৬. মসজিদ থেকে বের হওয়ার সময় পেছন দিকে উল্টো হেঁটে বের হওয়া।
২৭. মদীনার মাটি বয়ে নিয়ে বেড়ানো।