মদীনা যিয়ারতের সুন্নত তরীকা হল, মসজিদে নববী যিয়ারতের নিয়ত করে আপনি মদীনার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন। কেননা আবূ হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
«لاَ تُشَدُّ الرِّحَالُ إِلاَّ إِلَى ثَلاَثَةِ مَسَاجِدَ، الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ وَمَسْجِدِ الرَّسُولِ صلى الله عليه وسلم وَالمَسْجِدِ الأَقْصَى».
‘তিনটি মসজিদ ছাড়া অন্য কোনো স্থানের দিকে (ইবাদতের উদ্দেশ্যে) সফর করা যাবে না : মসজিদে হারাম, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মসজিদ (মসজিদে নববী) ও মসজিদে আকসা।’[1] এ হাদীসের আলোকে ইমাম ইবন তাইমিয়া রহ. বলেন,
وَأَمَّا إذَا كَانَ قَصْدُهُ بِالسَّفَرِ زِيَارَةَ قَبْرِ النَّبِيِّ دُونَ الصَّلاَةِ فِي مَسْجِدِهِ، فَهَذِهِ الْمَسْأَلَةُ فِيهَا خِلاَفٌ، فَاَلَّذِي عَلَيْهِ الأَئِمَّةُ وَأَكْثَرُ الْعُلَمَاءِ أَنَّ هَذَا غَيْرُ مَشْرُوعٍ.
‘সফরকারির সফরের উদ্দেশ্য যদি শুধু নবীর কবর যিয়ারত হয়, তাঁর মসজিদে সালাত আদায় করা না হয়, তাহলে এই মাসআলায় মতবিরোধ রয়েছে। যে কথার ওপর ইমামগণ এবং অধিকাংশ শরীয়ত বিশেষজ্ঞ একমত পোষণ করেছেন তা হলো, এটা শরীয়তসম্মত নয়।’[2]
ইবন তাইমিয়া রহ. আরো বলেন, ‘জেনে রাখো, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর যিয়ারত বহু ইবাদত থেকে মর্যাদাপূর্ণ, অনেক নফল কর্ম থেকে উত্তম। কিন্তু সফরকারীর জন্য শ্রেয় হচ্ছে, সে মসজিদে নববী যিয়ারতের নিয়ত করবে। অতপর সে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কবর যিয়ারত করবে এবং তাঁর ওপর সালাত ও সালাম পেশ করবে।’[3]
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী রহ. এ হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
كَانَ أَهْلُ الْجَاهِلِيَّةِ يَقْصُدُوْنَ مَوَاضِعَ مُعَظَّمَةً بِزَعْمِهِمْ يَزُوْرُوْنَهَا، وَيَتَبْرَكُوْنَ بِهَا، وَفِيْهِ مِنَ التَّحْرِيْفِ وَالْفَسَادِ مَا لاَ يَخْفَى، فَسَدَّ رسول اللَّهِ صلى الله عليه وسلم الْفَسَادَ لِئَلاَّ يَلْتَحِقُ غَيْرُ الشَّعَائِرِ بِالشَّعَائِرِ، وَلِئَلاَّ يَصَيْرَ ذَرِيْعَةً لِعِبَادَةِ غَيْرِ اللهِ، وَالْحَقُّ عِنْدِيْ أَنَّ الْقَبْرَ وَمَحَلُّ عِبَادَةِ وَلِيٍّ مِنْ أَوْلِيَاءِ اللهِ وَالطُّوْرَ كُلُّ ذَلِكَ سَوَاءٌ فِي النَّهْي وَاللهُ أَعْلَمُ .
‘জাহেলী যুগের মানুষেরা তাদের ধারণামত মর্যাদাপূর্ণ স্থানসমূহকে উদ্দেশ্য করে তা যিয়ারত করত এবং তার মাধ্যমে (তাদের ধারণামত) বরকত লাভ করত। এতে রয়েছে সত্যচ্যুতি, বিকৃতি ও ফাসাদ যা কারো অজানা নয়। অতপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ফাসাদ চিরতরে বন্ধ করে দেন, যাতে শা‘আয়ের[4] নয় এমন বিষয়গুলো শা‘আয়ের-এর অন্তর্ভুক্ত না হয় এবং যাতে এটা গায়রুল্লাহর ইবাদতের মাধ্যম না হয়। আমার মতে সঠিক কথা হচ্ছে, কবর ও আল্লাহর যে কোন ওলীর ইবাদতের স্থান, তূর পাহাড় ইত্যাদি সবকিছু উপরোক্ত হাদীসের নিষেধাজ্ঞার অন্তর্ভুক্ত।[5]
প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরী রহ. উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় বলেন,
نَعَمْ يُسْتَحَبُّ لَهُ بِنِيَّةِِ زِيَارَةِ الْمَسْجِدِ النَّبَوِيّ، وَهِيَ مِنْ أَعْظَمِ القُرُبَاتِ، ثُمَّ إِذَا بَلَغَ الْمَدِيْنَةَ يُسْتَحَبُّ لَهُ زِيَارَةُ قَبْرِهِ صلى الله عليه وسلم أَيْضًا، لأَنَّهُ يَصِيْرُ حِيْنَئِذٍ مِنْ حَوَالَيِ الْبَلْدَةِ، وَزِيَارَةُ قُبُوْرِهَا مُسْتَحَبَّةٌ عِنْدَهُ.
‘হ্যাঁ, সফকারির জন্য মুস্তাহাব হচ্ছে, মসজিদে নববী যিয়ারতের নিয়তে সফর করা। আর এটা নৈকট্য লাভের অন্যতম বড় উপায়। অতপর সে যখন মদীনা পৌঁছবে, তার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামএর কবর যিয়ারত করাও মুস্তাহাব। কেননা তখন সে মদীনা নগরীতে অবস্থানকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে। আর তখন নগরীতে অবস্থিত কবরগুলো যিয়ারত করা অবস্থানকারীর ক্ষেত্রে মুস্তাহাব।’[6]
সুতরাং মসজিদে নববী যিয়ারতের নিয়তে মদীনা যিয়ারত করতে হবে। কবর যিয়ারতের নিয়তে মদীনা যিয়ারত হলে, তা সহীহ হবে না। মনে রাখবেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কবর কেন্দ্রিক সকল উৎসব জোরালোভাবে নিষেধ করেছেন। তিনি বলেছেন,
«وَلاَ تَجْعَلُوا قَبْرِي عِيدًا»
‘আর আমার কবরকে তোমরা উৎসবের উপলক্ষ্য বানিও না।’[7] অর্থাৎ আমার কবর-কেন্দ্রিক নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করো না।’ এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে সফর করাও শামিল।’[8]
[2]. ইবন তাইমিয়া, আল-ফাতাওয়াল কুবরা : ৫/১৪৯।
[3]. আল-ফুরকান বাইনা আউলিয়াইর রহমান ওয়া আউলিয়ায়িশ শয়তান : ১/৩০৭
[4]. শা‘আয়ের বলতে বুঝায়, আল্লাহর নিদর্শন এবং তাঁর ইবাদতের স্থানসমূহ। (কুরতুবী : ২/৩৭)।
[5]. হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগাহ : ১/৪০৮।
[6]. ফায়যুল বারী : ৪/৪৩।
[7]. আবূ দাউদ : ১৭৪৬।
[8]. আল-ফুরকান বাইনা আউলিয়াইর রহমান ওয়া আউলিয়ায়িশ শয়তান : ১/৩০৭।