কাজের লোক রাখুন দুটি গুণ দেখে; সে যেন কর্মঠ হয় এবং আমানতদার হয়। মহান আল্লাহ নবী শুআইব জ-এর এক কন্যার কথা উল্লেখ করে বলেন,
إِنَّ خَيْرَ مَنِ اسْتَأْجَرْتَ الْقَوِيُّ الأَمِينُ
অর্থাৎ, তোমার মজুর হিসাবে উত্তম হবে সেই ব্যক্তি, যে শক্তিশালী ও বিশ্বস্ত। (সূরা ক্বসাস ২৬ আয়াত)
খাদেম, কর্মচারী, ভৃত্য বা দাসীকে মাসের মাস যথাসময়ে বেতন মিটিয়ে দিন। নচেৎ যথাসময়ে বেতন না পেয়ে সে বা তার পরিবার যদি অর্থনৈতিক কষ্টে ভোগে এবং আপনার কাজের ক্ষতি হয়, তাহলে তার জন্য দায়ী আপনিই। মজুর হলে তার মেহনতের ঘাম শুকাবার আগে আগেই তার মজুরী আদায় করে দিন।
আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ)-এর খাজাঞ্চী তাঁর নিকট এলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘‘গোলামদেরকে তাদের আহার দিয়েছে কি?’ খাজাঞ্চী বলল, ‘না।’ তিনি বললেন, ‘যাও, তাদেরকে তা দিয়ে দাও। আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেছেন, ‘‘মানুষের পাপী হওয়ার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, সে যার আহারের দায়িত্বশীল তাকে তা (না দিয়ে) আটকে রাখে।’’[1]
তিনি আরো বলেন, ‘‘মজুরকে তার ঘাম শুকাবার পূর্বে তোমরা তার মজুরী দিয়ে দাও।’’[2]
[2]. সহীহুল জা’মে হা/১০৫৫
খবরদার কাজ করিয়ে কারো বেতন, পরিশ্রম করিয়ে কারো পারিশ্রমিক, ভাড়া খাটিয়ে কারো ভাড়া আত্মসাৎ করবেন না।
রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘আল্লাহর নিকট সব চাইতে বড় পাপিষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে কোন মহিলাকে বিবাহ করে, অতঃপর তার নিকট থেকে মজা লুটে নিয়ে তাকে তালাক দেয় এবং তার মোহরও আত্মসাৎ করে। (দ্বিতীয় হল) সেই ব্যক্তি, যে কোন লোককে মজুর খাটায়, অতঃপর তার মজুরী আত্মসাৎ করে এবং (তৃতীয় হল) সেই ব্যক্তি, যে খামাকা পশু হত্যা করে।’’[1]
রাহমাতুল লিল-আলামীন (ﷺ) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘‘কিয়ামতের দিন আমি তিন ব্যক্তির প্রতিবাদী হব; তন্মধ্যে প্রথম হল সেই ব্যক্তি, যে আমার নামে কিছু দেওয়ার প্রতিশ্রুতি করল অতঃপর তা ভঙ্গ করল। দ্বিতীয় হল সেই ব্যক্তি, যে কোন স্বাধীন ব্যক্তিকে বিক্রয় করে তার মূল্য ভক্ষণ করল। আর তৃতীয় হল সেই ব্যক্তি, যে কোন মজুর খাটিয়ে তার নিকট থেকে পুরোপুরি কাজ নিল অথচ সে তার মজুরী (পূর্ণরূপে) আদায় করল না।’’[2]
[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/২২২৭,২২৭০
দাস-দাসীকে বিনা দলীলে কোন অপবাদ দেবেন না।আদেশ ও কথায় কষ্ট দেবেন না।
তওবার নবী আবুল কাসেম (ﷺ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি তার অধিকারভুক্ত দাসকে কিছুর অপবাদ দেয় -অথচ সে যা বলছে তা হতে দাস পবিত্র- সে ব্যক্তিকে কিয়ামতের দিন কোড়া মারা হবে। তবে সে যা বলেছে তা সত্য হলে (এ শাস্তি তার হবে না)।’’[1]
খাদেম বা ভৃত্যের ভরণ-পোষণের দায়িত্ব যদি আপনি নিয়ে থাকেন, তাহলে আপনি যে শ্রেণীর খান ও পরেন তাকেও সেই শ্রেণীর খেতে ও পরতে দিন।
আপনার গোলাম বা বাঁদীকে এমন কাজের ভার দিবেন না, যা তাদের সাধ্যের বাইরে। যদি দিতেই হয়, তাহলে আপনি গোলামের সহযোগিতা করুন এবং আপনার বাড়ির কোন মহিলা বাঁদীর সহযোগিতা করুক।
মা’রূর বিন সুয়াইদ বলেন, একদা আবূ যার্র (রাঃ) কে (মদীনার নিকটবর্তী একটি জায়গা) রাবাযায় দেখলাম, তাঁর গায়ে ছিল মোটা চাদর। আর তাঁর গোলামের গায়েও ছিল অনুরূপ চাদর। তা দেখে সকলে বলল, ‘হে আবূ যার্র! আপনি যদি গোলামের গায়ের ঐ চাদরটাও নিতেন এবং দু’টিকে একত্রে করতেন তাহলে একটি জোড়া হয়ে যেত। আর গোলামকে অন্য একটি কাপড় দিয়ে দিতেন।’
আবূ যার্র (রাঃ) বললেন, ‘আমি একজন (গোলাম) কে গালি দিয়েছিলাম। তার মা ছিল অনারবীয়। ঐ মা ধরে তাকে বিদ্রুপ করেছিলাম। সে আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর নিকট আমার বিরুদ্ধে নালিশ করল। এর ফলে তিনি আমাকে বললেন, ‘‘হে আবূ যার্র! নিশ্চয় তুমি এমন লোক; যার মধ্যে জাহেলিয়াত আছে!’’ অতঃপর তিনি বললেন, ‘‘ওরা (দাসগণ) তো তোমাদের ভাই। (তোমাদের মতই মানুষ।) আল্লাহ ওদের উপর তোমাদেরকে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন। অতএব যে দাস তোমাদের মনমত হবে না তাকে বিক্রয় করে দাও। আর আল্লাহর সৃষ্টিকে কষ্ট দিও না।’’[1]
অন্য এক বর্ণনায় আছে, আল্লাহর রাসুল (ﷺ) ঐ সময় আবূ যার্র (রাঃ)-কে বলেছিলেন, ‘‘নিশ্চয় তুমি এমন লোক; যার মধ্যে জাহেলিয়াত আছে।’’ আবূ যার্র বললেন, ‘আমার বৃদ্ধ বয়সের এই সময়েও?’ তিনি বললেন, ‘‘হ্যাঁ। ওরা তোমাদের ভাই স্বরূপ। আল্লাহ তাদেরকে তোমাদের মালিকানাধীন করে দিয়েছেন। সুতরাং যে ব্যক্তির ভাইকে আল্লাহ তার মালিকানাধীন করেছেন, সে ব্যক্তি যেন তাকে (দাসকে) তাই খাওয়ায়; যা সে নিজে খায়, তাই পরায় যা সে নিজে পরে এবং এমন কাজের যেন ভার না দেয়, যা করতে সে সক্ষম নয়। পরন্তু যদি সে এমন দুঃসাধ্য কাজের ভার দিয়েই ফেলে, তবে তাতে যেন তাকে সহযোগিতা করে।’’[2]
[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/৬০৫০, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/১৬৬১
আপনি যেমন ভুল করেন, ঠিক তেমনই দাস-দাসীরও কার্যক্ষেত্রে ভুল হতেই পারে। সুতরাং আপনি যেমন চান, আপনার ভুল ক্ষমার্হ হোক, ঠিক তেমনই দাস-দাসীর ভুলকেও ক্ষমা করে দিন। এক ব্যক্তি এসে জিজ্ঞাসা করল, হে আল্লাহর রসূল! আমি আমার চাকরকে কতবার ক্ষমা করব? উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘প্রত্যহ ৭০ বার।’’[1]
আপনার খানা যদি খাদেম প্রস্ত্তত করে, তাহলে সেই খাবারে খাদেমকেও শরীক করুন। যেহেতু সে ঐ খাবারের পিছনে মেহনত করেছে, তার সুগন্ধ তার পেটে গেছে এবং হয়তো বা তার মন ঐ খাবারের প্রতি লোভাতুর হয়েছে। এই জন্যই দয়ার নবীর নির্দেশ হল, তাকে বসিয়ে এক সাথে খান। আর তাকে বসানো যদি সম্ভব না হয় বা সে বসতে না চায়, তাহলে সেই খাবার হতে কিছু অংশ তুলে তাকে দিয়ে খান।[1]
জেনে রাখুন যে, তার সাথে বাড়ির পুরুষের অবাধ মিলামিশা, নির্জনতা অবলম্বন এবং বেপর্দায় খিদমত গ্রহণ বৈধ নয়। তদনুরূপ বাড়ির ভৃত্য ও ড্রাইভারের ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। যাতে আপনার বাড়ির কোন মহিলার সাথে তার কোন প্রকার গোপন সম্পর্ক গড়ে না ওঠে।[1]
তাতে তারা আপনার কাজে আন্তরিকতা প্রদর্শন করবে। আপনার খাদেম বা লেবারকে কাজের তুলনায় বেশী বেতন দেওয়া হচ্ছে মনে হলে তাতে সওয়াবের আশা রাখুন। ঈদ ও বিভিন্ন উপলক্ষে তাদেরকে উপহার দিন, বোনাস দিন। বেতন কম দিলেও দেখবেন তাতে আপনার উপকার ও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে।