যমীনে চলাফেরা করার সময় অহংকার প্রদর্শন করা, নিজেকে হিরো ও অপরকে জিরো এবং গুরুকে গরু মনে করে অবজ্ঞার সাথে বিচরণ করা অভদ্র, অসভ্য ও গোঁয়ার লোকের নিদর্শন। আসলে একজন মুসলিম হয় ভদ্র ও বিনয়ী। মহান আল্লাহ তার চলার গুণ বর্ণনা করে বলেন,
وَعِبَادُ الرَّحْمَنِ الَّذِينَ يَمْشُونَ عَلَى الْأَرْضِ هَوْنًا وَإِذَا خَاطَبَهُمُ الْجَاهِلُونَ قَالُوا سَلَامًا
অর্থাৎ, আর তারা রহমানের বান্দা, যারা যমীনের বুকে নম্রভাবে চলা-ফিরা করে এবং অজ্ঞ ব্যক্তিরা তাদেরকে সম্বোধন করলে (উপেক্ষা করে) বলে, সালাম।[1]
পক্ষান্তরে অহংকারীরা ঔদ্ধত্যের সাথে রাস্তা চলে, হাসিমুখে কথা বলে না, গোমটা মুখ প্রদর্শন করে, পথে কাউকে সালাম দিতে চায় না এবং সালামের উত্তর দিতেও আগ্রহ দেখায় না। মহান আল্লাহ লুকমান হাকীমের উপদেশ উল্লেখ করে বলেন,
وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ إِنَّ أَنْكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ
অর্থাৎ, তুমি (সংযতভাবে) মধ্যরূপ পদক্ষেপ কর এবং তোমার কণ্ঠস্বর নীচু কর; স্বরের মধ্যে গর্দভের স্বরই সর্বাপেক্ষা অপ্রীতিকর।[2]
وَلَا تُصَعِّرْ خَدَّكَ لِلنَّاسِ وَلَا تَمْشِ فِي الْأَرْضِ مَرَحًا إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ كُلَّ مُخْتَالٍ فَخُورٍ - وَاقْصِدْ فِي مَشْيِكَ وَاغْضُضْ مِنْ صَوْتِكَ إِنَّ أَنْكَرَ الْأَصْوَاتِ لَصَوْتُ الْحَمِيرِ
অর্থাৎ, তুমি (অহংকারবশে) মানুষকে মুখ বাঁকায়ো না (অবজ্ঞা করো না) এবং পৃথিবীতে উদ্ধতভাবে বিচরণ করো না। নিশ্চয় আল্লাহ কোন দাম্ভিক অহংকারীকে ভালোবাসেন না।[3] আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন,
بَيْنَمَا رَجُلٌ يَمْشِي فِي حُلَّةٍ تُعْجِبُهُ نَفْسُهُ مُرَجِّلٌ جُمَّتَهُ إِذْ خَسَفَ اللَّهُ بِهِ فَهُوَ يَتَجَلْجَلُ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
‘‘একদা (পূর্ববর্তী উম্মতের) এক ব্যক্তি একজোড়া পোশাক পরে, গর্বভরে, মাথা আঁচড়ে অহংকারের সাথে চলা-ফেরা করছিল। ইত্যবসরে আল্লাহ তার (পায়ের নীচের মাটিকে) ধসিয়ে দিলেন। সুতরাং সে কিয়ামত দিবস পর্যন্ত মাটির গভীরে নেমে যেতেই থাকবে।’’[4]
তিনি আরো বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি মনে মনে গর্বিত হবে অথবা চলনে অহমিকা প্রকাশ করবে, সে ব্যক্তি যখন আল্লাহ তাআলার সাথে সাক্ষাৎ করবে তখন তিনি তার উপর ক্রোধান্বিত থাকবেন।’’[5]
বহু মানুষ আছে যারা অহংকারের সাথে নিজ লুঙ্গি, পায়জামা বা প্যান্ট্ গোড়ালীর নিচে ঝুলিয়ে পরে রাস্তায় ছেঁচড়ে নিয়ে বেড়ায়, তাদের ব্যাপারে রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি অহংকারের সাথে তার কাপড় (মাটিতে) ছেঁচড়ায় তার দিকে আল্লাহ তাকিয়ে দেখবেন না।’’[6]
আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেছেন, ‘‘আল্লাহ আয্যা অজাল্লা বলেন, ‘‘গৌরব ও গর্ব খাস আমার গুণ। সুতরাং যে তাতে আমার অংশী হতে চাইবে আমি তাকে শাস্তি দেব।’’[7] সুতরাং চলনে অহংকার প্রদর্শন করার পরিণাম অবশ্যই ভালো নয়।
[2]. সূরা লুকমান-৩১:১৯
[3]. সূরা লুক্বমান-৩১:১৮
[4]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/৫৭৮৯, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৮৮
[5]. আহমদ, বুখারীর আল-আদাবুল মুফরাদ, হাকেম ১/১৬০, সহীহুল জা’মে হা/৬১৫৭
[6]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/৫৭৮৯, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২০৮৮
[7]. মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৬২০
আমাদের প্রিয়তম রসূল (ﷺ) যখন পথ চলতেন, তখন শীঘ্র পদক্ষেপে চলতেন এবং তাঁর দেহের উপরিভাগ সামনের দিকে ঝুঁকে যেত। দেখে মনে হত, তিনি যেন কোন উঁচু জায়গা থেকে ঢালু পথে নামছেন।[1]
উল্লেখ্য যে, তাঁর চলন ছিল সুপুরুষ সুউচ্চ মনোবলবিশিষ্ট একজন বীরের মত। তাঁর চলনে দুর্বলতা ছিল না, ছিল না কোন প্রকার দাম্ভিকতা।
সুতরাং একজন মুসলিমের সেই ধরনের সভ্য চলন হওয়া প্রয়োজন, যে চলনে তরুণীর মত চাপল্য থাকবে না, হরিণের মত চাঞ্চল্য থাকবে না এবং থাকবে না দীন-হীন-ক্ষীণের মত দৌর্বল্য।
ফুযালা বিন উবাইদ বলেন, রসূল (ﷺ) আমাদেরকে মাঝে মাঝে খালি পায়ে চলতে আদেশ করতেন।[1]
মাঝে-মধ্যে বিশেষ করে সবুজ ঘাসের উপর খালি পায়ে চলার উপকারিতার কথা আজ বিজ্ঞানও শিকার করে। তাছাড়া সর্বদা জুতা পড়ে থেকে মানুষের মাঝে যে একটা বিলাসিতার অভ্যাস গড়ে ওঠে, তা মাঝে-মধ্যে খালি পায়ে চলে দূর করা যায় এবং তাতে মনের মাঝে বিনয়ভাব সৃষ্টি করে।
পথের মধ্যে অপর গাড়ির সুবিধার কথা খেয়াল রাখুন। আপনার গাড়ি দ্বারা যেন অন্য কোন মুসলিম কষ্ট না পায়। পথের মধ্যে কোন লোককে যদি আপনি তুলে নিয়ে তার গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেন, তাহলে আপনার সদকাহ করার সমান সওয়াব লাভ হবে।