ইসলামী জীবন-ধারা মজলিসের আদব আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি

মানুষ যার সাথে উঠা-বসা করবে, সে অবশ্যই তার দ্বারা কিছু না কিছু প্রভাবান্বিত হবে। আর সে জন্যই কারো কাছে বসার আগে জেনে নেওয়া উচিত, সে ভালো লোক কি না?

আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকের দেখা উচিত যে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে।’’[1] আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন,

مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالْجَلِيسِ السَّوْءِ كَمَثَلِ صَاحِبِ الْمِسْكِ وَكِيرِ الْحَدَّادِ لَا يَعْدَمُكَ مِنْ صَاحِبِ الْمِسْكِ إِمَّا تَشْتَرِيهِ أَوْ تَجِدُ رِيحَهُ وَكِيرُ الْحَدَّادِ يُحْرِقُ بَدَنَكَ أَوْ ثَوْبَكَ أَوْ تَجِدُ مِنْهُ رِيحًا خَبِيثَةً

‘‘সুসঙ্গী ও কুসঙ্গীর উপমা তো আতর-বিক্রেতা ও কামারের মত। আতর-বিক্রেতা (এর পাশে বসলে) হয় সে তোমার দেহে (বিনামূল্যে) আতর লাগিয়ে দেবে, না হয় তুমি তার নিকট থেকে তা ক্রয় করবে। তা না হলেও (অন্ততপক্ষে) তার নিকট থেকে এমনিই সুবাস পেতে থাকবে।

পক্ষান্তরে কামার (এর পাশে বসলে) হয় সে (তার আগুনের ফিনকি দ্বারা) তোমার কাপড় পুড়িয়ে ফেলবে, না হয় তার নিকট থেকে বিকট দুর্গন্ধ পাবে।’’[2]

উল্লেখ্য যে, ভালো লোকের সাথে উঠা-বসা করুন, ভালো হবেন, ভালো পাবেন। আর খারাপ লোককে প্রভাবান্বিত না করতে পারলে বর্জন করুন। নচেৎ খারাপ হয়ে যাবেন, খারাপ পাবেন। বিদআতীর মজলিসে বসবেন না। কারণ আপনার মর্মমূলেও বিদআত অনুপ্রবেশ করে যেতে পারে।

এ ব্যাপারে সালাফদের কিছু বাণী উদ্ধৃত হলঃ

ফুযাইল বিন ইয়ায বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন বিদআতীর সাথে বসে, সে ব্যক্তি হতে সাবধান! যে ব্যক্তি কোন বিদআতীর সাথে বসে, তাকে কোন হিকমত (জ্ঞান) দান করা হয় না। আমি পছন্দ করি যে, আমার ও বিদআতীর মাঝে লোহার কেল্লা হোক। কোন বিদআতীর নিকট খাওয়া অপেক্ষা কোন ইয়াহুদী অথবা খৃষ্টানের নিকট খাওয়া আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়!’[3]

হাম্বল বিন ইসহাক বলেন, আমি আবূ আব্দুল্লাহকে বলতে শুনেছি যে, ‘কারো জন্য বিদআতীদের সাথে ওঠা-বসা করা, মিশা এবং সৌহার্দ্য রাখা উচিত নয়।’[4]

হাবীব বিন আবীয যাবার বলেন, ‘বিদআতী কথা বললে মুহাম্মাদ বিন সীরীন নিজ কানে আঙ্গুল রেখে নিতেন। অতঃপর বলতেন, ওর মজলিস থেকে না ওঠা পর্যন্ত আমার জন্য কথা বলা বৈধ নয়।’[5]

আইয়ুব সাখতিয়ানীকে জনৈক বিদআতী বলল, ‘হে আবূ বাক্র! আপনাকে একটি শব্দ জিজ্ঞাসা করব।’ আইয়ুব নিজ (অর্ধেক) আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করতে করতে বললেন, ‘আধা শব্দও নয়, আধা শব্দও নয়।’[6]

ইমাম আহমাদ (রঃ) মুসাদ্দাদকে লিখা চিঠিতে বলেন, ‘তোমার দ্বীনের ব্যাপারে কোন বিদআতীর কাছে পরামর্শ নিও না এবং তোমার সফরে তাকে সঙ্গী করো না।’[7]

ইবনুল জাওযী বলেন, ‘ওদের সংসর্গ থেকে সাবধান! শিশুদেরকেও ওদের সাথে মিশতে বাধা দেওয়া ওয়াজেব। যাতে তাদের মনে-মগজে বিদআত বদ্ধমূল না হয়ে যায়। আর তাদেরকে আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর হাদীস দিয়ে মশগুল করে রাখ, যাতে তা তাদের প্রকৃতিতে (দুধে-চিনির মত) মিশে যায়।’[8]

বার্বাহারী বলেন, ‘কোন ব্যক্তির কাছে কোন প্রকার বিদআত প্রকাশ পেলে তুমি তার থেকে সাবধান থেকো। কেননা, সে যা প্রকাশ করে তা অপেক্ষা যা গোপন করে তা অনেক বেশী।’[9]

তিনি আরো বলেন, ‘বিদআতীরা হল বিছার মত। বিছা নিজের মাথা ও সারা দেহকে মাটিতে লুকিয়ে রাখে এবং কেবল হুলটিকে বের করে রাখে। অতঃপর যখনই সুযোগ পায়, তখনই হুল মারে। তদনুরূপ বিদআতী লোকেদের মাঝে গুপ্ত থাকে। কিন্তু যখন সুযোগ পায়, তখন নিজেদের ইচ্ছা পূরণ করে ফেলে।’[10]

পক্ষান্তরে কোন ফাসেকের কাছেও বসবেন না। কারণ তার নিকট থেকে বাজে কথা, লোকের গীবত, অশ্লীল বাক্য ছাড়া আর কি শোনার আশা করেন? তার নিকট নোংরা কিছু দেখা ছাড়া আর কি দেখার আশা করেন? তার সাথে উঠা-বসা করে আপনি জামাআতে নামায পড়তে পারবেন না। ধীরে ধীরে রঙ-তামাশায় মত্ত হয়ে পরিশেষে আপনিও হয়তো ফিরে যাবেন। ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘লোক সকলকে তাদের সঙ্গী-সাথী দেখে (ভালো-মন্দ) গণ্য কর। কেননা, যে মুসলিম, সে মুসলিমের অনুসরণ করে এবং যে ফাসেক, সে ফাসেকের অনুসরণ করে।’[11] সুতরাং নাঊযু বিল্লাহি মিনায যবালালাতি বা’দাল হিদায়াহ।

[1]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ৭৯৬৮, আবূ দাঊদ ৪৮৩৩, তিরমিযী হা/২৩৭৮, সিলসিলাহ সহীহাহ, আলবানী ৯২৭

[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ২১০১, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৬২৮

[3]. লালকাঈ ৪/৬৩৮, ১১৪৯

[4]. আল-ইবানাহ ২/৪৭৫, ৪৯৫

[5]. ঐ ২/৪৭৩, ৪৮৪

[6]. ঐ ২/৪৪৭, ৪০২

[7]. আল-আদাবুশ শারই’য়্যাহ, ইবনে মুফলেহ ৩/৫৭৮

[8]. ঐ৩/৫৭৭-৫৭৮

[9]. শারহুস্ সুন্নাহ, ইবনে মুফলেহ ১২৩পৃঃ, ১৪৮

[10]. ত্বাবাক্বাতুল হানাবেলাহ ২/৪৪

[11]. আল-ইবানাহ ২/৪৭৭, ৫০২, এই উক্তির প্রথমাংশ বাগবী শারহুস সুন্নাহ ১৩/৭০ তে উল্লেখ করেছেন