যে মজলিসে বসবেন, সে মজলিসে আল্লাহর জিকির করতে ও তাঁর নবী (ﷺ) এর উপর দরূদ পড়তে ভুল করবেন না।
যেহেতু রাসুল (ﷺ) বলেন,
مَا جَلَسَ قَوْمٌ مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُوا اللَّهَ فِيهِ، وَلَمْ يُصَلُّوا عَلَى نَبِيِّهِمْ، إِلاَّ كَانَ عَلَيْهِمْ تِرَةً، فَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُمْ وَإِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُمْ
‘‘যে সম্প্রদায়ই এমন কোন মজলিসে বসে যেখানে তারা আল্লাহর জিকির করে না এবং নবীর (ﷺ) উপর দরূদ পাঠ করে না, সেই সম্প্রদায়েরই ক্ষতিকর পরিণাম হবে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে আযাব দেবেন, নচেৎ ইচ্ছা করলে মাফ করে দেবেন।’’[1]
আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন,
مَا مِنْ قَوْمٍ يَقُومُونَ مِنْ مَجْلِسٍ لَا يَذْكُرُونَ اللَّهَ فِيهِ، إِلَّا قَامُوا عَنْ مِثْلِ جِيفَةِ حِمَارٍ وَكَانَ لَهُمْ حَسْرَةً
‘‘যে কোনও সম্প্রদায় কোন মজলিস থেকে আল্লাহ জিকির না করেই উঠে গেল, তারা যেন মৃত গাধার মত কোন কিছু হতে উঠে গেল। আর তাদের জন্য রয়েছে ক্ষতি (ও পরিতাপ)।’’[2]
অবশ্য উচ্চস্বরে, সমস্বরে বা জামাআতী দরূদ-যিক্রের কথা বলা হয়নি। আসলে জামাআতী দরূদ-জিকির হল বিদ্আত।
আল্লাহ জিকির ছাড়া অন্য কথা বেশী বলা হৃদয় কঠোর হয়ে যাওয়ার একটি কারণ। আর এমন হৃদয় আল্লাহর নিকট থেকে অনেক দূরে।[3] অতএব যে মজলিস আল্লাহর কথা আলোচনার জন্য নয়, সে মজলিসে অংশগ্রহণ করে অযথা সময় নষ্ট করলে মানুষের হৃদয় কঠিন হয়ে যাবে। কোন নসীহতে সে হৃদয় নরম হবে না, কারো ব্যথায় সে হৃদয় আহা করবে না। আর কিয়ামতে হবে বড় পরিতাপ ও আফশোসের বিষয়।
তাছাড়া যে মজলিসে আল্লাহর জিকির করা হয়, কুরআন ও হাদীসের কথা আলোচিত হয়, দ্বীন ও ইল্মের কথা বলা হয়, সে মজলিস আল্লাহর নিকট বড় পছন্দনীয়। আর এই শ্রেণীর মজলিসে যারা বসে, তারা জিকির না করলেও, আলোচনা না শুনলেও, কেবল সেখানে বসার জন্য তাদের গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।
আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহর কিছু ফিরিশ্তা আছেন, যাঁরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে-ফিরে আহলে জিকির খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন সম্প্রদায়কে আল্লাহর জিকিররত অবস্থায় পেয়ে যান, তখন তাঁরা একে অপরকে আহবান করে বলতে থাকেন, ‘এস তোমাদের প্রয়োজনের দিকে।’ সুতরাং তাঁরা (সেখানে উপস্থিত হয়ে) তাদেরকে নিজেদের ডানা দ্বারা নিচের আসমান পর্যন্ত বেষ্টিত করে ফেলেন। অতঃপর তাঁদেরকে তাঁদের প্রতিপালক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার বান্দারা কি বলছে?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘তারা আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছে, আপনার মহত্ত্ব বর্ণনা করছে, আপনার প্রশংসা ও গৌরব বয়ান করছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি আমাকে দেখেছে?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! তারা আপনাকে দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘কি হত, যদি তারা আমাকে দেখত?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘যদি তারা আপনাকে দেখত, তাহলে আরো বেশী বেশী ইবাদত, গৌরব বর্ণনা ও তসবীহ করত।’ আল্লাহ বলেন, ‘কি চায় তারা?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জান্নাত দেখেছে?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে তার জন্য আরো বেশী আগ্রহান্বিত হত। আরো বেশী বেশী তা প্রার্থনা করত। তাদের চাহিদা আরো বড় হত।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি থেকে পানাহ চায়?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘তারা দোযখ থেকে পানাহ চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি দোযখ দেখেছে?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে বেশী বেশী করে তা হতে পলায়ন করত। বেশী বেশী ভয় করত।’ তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে মাফ করে দিলাম।’
يَقُولُ مَلَكٌ مِنْ الْمَلَائِكَةِ فِيهِمْ فُلَانٌ لَيْسَ مِنْهُمْ إِنَّمَا جَاءَ لِحَاجَةٍ قَالَ هُمْ الْجُلَسَاءُ لَا يَشْقَى بِهِمْ جَلِيسُهُمْ
ফিরিশ্তাদের মধ্য থেকে একজন বলেন, ‘কিন্তু ওদের মধ্যে অমুক ওদের দলভুক্ত নয়। সে আসলে নিজের কোন প্রয়োজনে সেখানে এসেছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘(আমি তাকেও মাফ করে দিলাম! কারণ,) তারা হল এমন সম্প্রদায়, যাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত (হতভাগা) থাকে না।’[4]
[2]. আবূ দাউদ ৪৮৫৫, নাসাঈ, হাকেম প্রমুখ, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৭৭
[3]. তিরমিযী হা/৩৩৮০
[4]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ৭৩৭৬, বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৬৪০৮, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৬৮৯, তিরমিযী হা/৩৬০০
মানুষ যার সাথে উঠা-বসা করবে, সে অবশ্যই তার দ্বারা কিছু না কিছু প্রভাবান্বিত হবে। আর সে জন্যই কারো কাছে বসার আগে জেনে নেওয়া উচিত, সে ভালো লোক কি না?
আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘মানুষ তার বন্ধুর দ্বীনের অনুসারী হয়। সুতরাং তোমাদের প্রত্যেকের দেখা উচিত যে, সে কার সাথে বন্ধুত্ব করছে।’’[1] আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন,
مَثَلُ الْجَلِيسِ الصَّالِحِ وَالْجَلِيسِ السَّوْءِ كَمَثَلِ صَاحِبِ الْمِسْكِ وَكِيرِ الْحَدَّادِ لَا يَعْدَمُكَ مِنْ صَاحِبِ الْمِسْكِ إِمَّا تَشْتَرِيهِ أَوْ تَجِدُ رِيحَهُ وَكِيرُ الْحَدَّادِ يُحْرِقُ بَدَنَكَ أَوْ ثَوْبَكَ أَوْ تَجِدُ مِنْهُ رِيحًا خَبِيثَةً
‘‘সুসঙ্গী ও কুসঙ্গীর উপমা তো আতর-বিক্রেতা ও কামারের মত। আতর-বিক্রেতা (এর পাশে বসলে) হয় সে তোমার দেহে (বিনামূল্যে) আতর লাগিয়ে দেবে, না হয় তুমি তার নিকট থেকে তা ক্রয় করবে। তা না হলেও (অন্ততপক্ষে) তার নিকট থেকে এমনিই সুবাস পেতে থাকবে।
পক্ষান্তরে কামার (এর পাশে বসলে) হয় সে (তার আগুনের ফিনকি দ্বারা) তোমার কাপড় পুড়িয়ে ফেলবে, না হয় তার নিকট থেকে বিকট দুর্গন্ধ পাবে।’’[2]
উল্লেখ্য যে, ভালো লোকের সাথে উঠা-বসা করুন, ভালো হবেন, ভালো পাবেন। আর খারাপ লোককে প্রভাবান্বিত না করতে পারলে বর্জন করুন। নচেৎ খারাপ হয়ে যাবেন, খারাপ পাবেন। বিদআতীর মজলিসে বসবেন না। কারণ আপনার মর্মমূলেও বিদআত অনুপ্রবেশ করে যেতে পারে।
এ ব্যাপারে সালাফদের কিছু বাণী উদ্ধৃত হলঃ
ফুযাইল বিন ইয়ায বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোন বিদআতীর সাথে বসে, সে ব্যক্তি হতে সাবধান! যে ব্যক্তি কোন বিদআতীর সাথে বসে, তাকে কোন হিকমত (জ্ঞান) দান করা হয় না। আমি পছন্দ করি যে, আমার ও বিদআতীর মাঝে লোহার কেল্লা হোক। কোন বিদআতীর নিকট খাওয়া অপেক্ষা কোন ইয়াহুদী অথবা খৃষ্টানের নিকট খাওয়া আমার নিকট অধিক পছন্দনীয়!’[3]
হাম্বল বিন ইসহাক বলেন, আমি আবূ আব্দুল্লাহকে বলতে শুনেছি যে, ‘কারো জন্য বিদআতীদের সাথে ওঠা-বসা করা, মিশা এবং সৌহার্দ্য রাখা উচিত নয়।’[4]
হাবীব বিন আবীয যাবার বলেন, ‘বিদআতী কথা বললে মুহাম্মাদ বিন সীরীন নিজ কানে আঙ্গুল রেখে নিতেন। অতঃপর বলতেন, ওর মজলিস থেকে না ওঠা পর্যন্ত আমার জন্য কথা বলা বৈধ নয়।’[5]
আইয়ুব সাখতিয়ানীকে জনৈক বিদআতী বলল, ‘হে আবূ বাক্র! আপনাকে একটি শব্দ জিজ্ঞাসা করব।’ আইয়ুব নিজ (অর্ধেক) আঙ্গুল দ্বারা ইঙ্গিত করতে করতে বললেন, ‘আধা শব্দও নয়, আধা শব্দও নয়।’[6]
ইমাম আহমাদ (রঃ) মুসাদ্দাদকে লিখা চিঠিতে বলেন, ‘তোমার দ্বীনের ব্যাপারে কোন বিদআতীর কাছে পরামর্শ নিও না এবং তোমার সফরে তাকে সঙ্গী করো না।’[7]
ইবনুল জাওযী বলেন, ‘ওদের সংসর্গ থেকে সাবধান! শিশুদেরকেও ওদের সাথে মিশতে বাধা দেওয়া ওয়াজেব। যাতে তাদের মনে-মগজে বিদআত বদ্ধমূল না হয়ে যায়। আর তাদেরকে আল্লাহর রসূল (ﷺ) এর হাদীস দিয়ে মশগুল করে রাখ, যাতে তা তাদের প্রকৃতিতে (দুধে-চিনির মত) মিশে যায়।’[8]
বার্বাহারী বলেন, ‘কোন ব্যক্তির কাছে কোন প্রকার বিদআত প্রকাশ পেলে তুমি তার থেকে সাবধান থেকো। কেননা, সে যা প্রকাশ করে তা অপেক্ষা যা গোপন করে তা অনেক বেশী।’[9]
তিনি আরো বলেন, ‘বিদআতীরা হল বিছার মত। বিছা নিজের মাথা ও সারা দেহকে মাটিতে লুকিয়ে রাখে এবং কেবল হুলটিকে বের করে রাখে। অতঃপর যখনই সুযোগ পায়, তখনই হুল মারে। তদনুরূপ বিদআতী লোকেদের মাঝে গুপ্ত থাকে। কিন্তু যখন সুযোগ পায়, তখন নিজেদের ইচ্ছা পূরণ করে ফেলে।’[10]
পক্ষান্তরে কোন ফাসেকের কাছেও বসবেন না। কারণ তার নিকট থেকে বাজে কথা, লোকের গীবত, অশ্লীল বাক্য ছাড়া আর কি শোনার আশা করেন? তার নিকট নোংরা কিছু দেখা ছাড়া আর কি দেখার আশা করেন? তার সাথে উঠা-বসা করে আপনি জামাআতে নামায পড়তে পারবেন না। ধীরে ধীরে রঙ-তামাশায় মত্ত হয়ে পরিশেষে আপনিও হয়তো ফিরে যাবেন। ইবনে মাসঊদ (রাঃ) বলেন, ‘লোক সকলকে তাদের সঙ্গী-সাথী দেখে (ভালো-মন্দ) গণ্য কর। কেননা, যে মুসলিম, সে মুসলিমের অনুসরণ করে এবং যে ফাসেক, সে ফাসেকের অনুসরণ করে।’[11] সুতরাং নাঊযু বিল্লাহি মিনায যবালালাতি বা’দাল হিদায়াহ।
[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ২১০১, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৬২৮
[3]. লালকাঈ ৪/৬৩৮, ১১৪৯
[4]. আল-ইবানাহ ২/৪৭৫, ৪৯৫
[5]. ঐ ২/৪৭৩, ৪৮৪
[6]. ঐ ২/৪৪৭, ৪০২
[7]. আল-আদাবুশ শারই’য়্যাহ, ইবনে মুফলেহ ৩/৫৭৮
[8]. ঐ৩/৫৭৭-৫৭৮
[9]. শারহুস্ সুন্নাহ, ইবনে মুফলেহ ১২৩পৃঃ, ১৪৮
[10]. ত্বাবাক্বাতুল হানাবেলাহ ২/৪৪
[11]. আল-ইবানাহ ২/৪৭৭, ৫০২, এই উক্তির প্রথমাংশ বাগবী শারহুস সুন্নাহ ১৩/৭০ তে উল্লেখ করেছেন
তদনুরূপ এমন লোকদের সাথেও বসবেন না, যারা মুনাফিক ও ইসলামের গোপন শত্রু। যারা নামে মুসলমান হলেও কামে শয়তান। যারা আল্লাহর দ্বীন ও আয়াত নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করে, কুফরী করে। তাদের মজলিসে বসতে নিষেধ করে মহান আল্লাহ আমাদেরকে বলেন,
وَإِذَا رَأَيْتَ الَّذِينَ يَخُوضُونَ فِي آيَاتِنَا فَأَعْرِضْ عَنْهُمْ حَتَّى يَخُوضُوا فِي حَدِيثٍ غَيْرِهِ وَإِمَّا يُنْسِيَنَّكَ الشَّيْطَانُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرَى مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
অর্থাৎ, যখন তুমি দেখবে যে, তারা আমার নিদর্শন (আয়াত) সম্বন্ধে (সমালোচনামূলক) নিরর্থক আলোচনায় মগ্ন হয় তখন তুমি দূরে সরে পড়বে; যে পর্যন্ত না তারা অন্য প্রসঙ্গে প্রবৃত্ত হয়। আর শয়তান যদি তোমাকে (এ কথা) ভুলিয়ে ফেলে তবে স্মরণ হওয়ার পরে অত্যাচারী সম্প্রদায়ের সাথে বসবে না।[1] তিনি অন্যত্র বলেন,
وَقَدْ نَزَّلَ عَلَيْكُمْ فِي الْكِتَابِ أَنْ إِذَا سَمِعْتُمْ آيَاتِ اللهِ يُكْفَرُ بِهَا وَيُسْتَهْزَأُ بِهَا فَلاَ تَقْعُدُوْا مَعَهُمْ حَتّى يَخُوْضُوْا فِي حَدِيْثٍ غَيْرِهِ إِنَّكُمْ إِذًا مِّثْلُهُمْ إِنَّ اللهَ جَامِعُ الْمُنَافِقِيْنَ وَالْكَافِرِيْنَ فِيْ جَهَنَّمَ جَمِيْعًا
অর্থাৎ, আর তিনি কিতাবে তোমাদের প্রতি (এই বিধান) অবতীর্ণ করেছেন যে, যখন তোমরা শুনবে, আল্লাহর আয়াত প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে এবং তা নিয়ে বিদ্রুপ করা হচ্ছে তখন যে পর্যন্ত তারা অন্য প্রসঙ্গে লিপ্ত না হয় সে পর্যন্ত তোমরা তাদের সাথে বসবে না; নতুবা তোমরাও তাদের মত হয়ে যাবে। অবশ্যই আল্লাহ মুনাফিক (কপট) ও কাফের (অবিশ্বাসী) দের সকলকেই জাহান্নামে একত্রিত করবেন।[2]
[2]. সূরা নিসা-৪:১৪০
রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘খবরদার! তোমরা রাস্তার ধারে বসো না। আর একান্তই যদি বসতেই হয়, তাহলে তার হক আদায় করো।’’ লোকেরা জিজ্ঞাসা করল, ‘রাস্তার হক কি? হে আল্লাহর রসূল!’ তিনি বললেন, ‘‘দৃষ্টি সংযত রাখা, কাউকে কষ্ট দেওয়া হতে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া, সৎকাজের আদেশ ও মন্দ কাজে বাধা দান করা (এবং পথভ্রষ্টকে পথ বলে দেওয়া)।’’[1]
অনুরূপ বাড়ির ছাদে বা এমন উঁচু জায়গায় বসতেও নিষেধ করেছেন আমাদের আদর্শ নবী মুহাম্মাদ (ﷺ)।[2]
[2]. সিলসিলাহ সহীহাহ ৬/১৪-১৫
শারীদ বিন সুয়াইদ (রাঃ) বলেন, একদা রাসুল (ﷺ) আমার নিকট এলেন। তখন আমি এমন ঢঙে বসেছিলাম যে, বাম হাতকে পশ্চাতে রেখেছিলাম এবং (ডান) হাতের চেটোর উপর ভরনা দিয়েছিলাম। এ দেখে আল্লাহর রাসুল (ﷺ) আমাকে বললেন, ‘‘(আল্লাহর) ক্রোধভাজন (ইয়াহুদী) দের বসার মত বসো না।’’[1]
যেমন রাসুল (ﷺ) রোদ ও ছায়ার মাঝামাঝি স্থানে বসতে নিষেধ করেছেন। এ ব্যাপারে তিনি বলেছেন, ‘‘(রোদ ও ছায়ার মাঝে বসা হল) শয়তানের বৈঠক।’’[2]
পরিধানে লুঙ্গি বা লুঙ্গিজাতীয় এক কাপড় পরে উভয় পায়ের রলাকে খাড়া করে রানের সাথে লাগিয়ে উভয় পা-কে দুই হাত দ্বারা জড়িয়ে ধরে অথবা কাপড় দ্বারা বেঁধে বসা বৈধ নয়।[3] কারণ, এতে লজ্জাস্থান প্রকাশ পাওয়ার, চট্ করে ঘুম চলে আসার এবং তাতে পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে তাই। অবশ্য লুঙ্গির ভিতরে অন্য কাপড় (আ-ার প্যান্ট্) থাকলে, লজ্জাস্থান প্রকাশের ভয় এবং পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকলে ঐ শ্রেণীর বসা দোষাবহ হবে না।
[2]. আহমদ ৩/৪১৩, হাকেম ৪/২৭১, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৮৩৮
[3]. মুসলিম, আবূ দাঊদ হা/১১১০, তিরমিযী হা/৫১৪
কোন মজলিসে এলে সালাম দিন। অতঃপর যেখানে ফাঁক পান সেখানে বসে যান।
কেউ কোন প্রয়োজনে উঠে গেলে এবং পুনরায় সে ফিরে আসবে বলে মনে হলে তার জায়গাতেও বসবেন না। কারণ সেটা তার জায়গা, সেই তার বেশী হকদার।
আল্লাহর রসূল (ﷺ) বলেন, ‘‘যখন কোন ব্যক্তি তার বসার জায়গা থেকে উঠে যায়, অতঃপর সে ফিরে আসে, তখন সেই তার বেশী হকদার হয়।’’[1]
আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ) বলেন, রাসুল (ﷺ) কোন লোককে তার বসার জায়গা থেকে উঠাতে এবং তার জায়গায় অন্যকে বসতে নিষেধ করেছেন। বরং তোমরা সরে সরে বসে (মজলিস) প্রশস্ত কর।
ইবনে উমার (রাঃ) কোন লোককে উঠিয়ে তার জায়গায় বসতে অপছন্দ করতেন।[2]
যাতে মুসলিম ভায়ের প্রতি কুধারণা ও ঘৃণা না জন্মে, তাই সর্বাঙ্গসুন্দর ইসলামের এই সুন্দর ব্যবস্থা।
কিন্তু কেউ যদি আপনাকে দয়া অথবা সম্মান প্রদর্শন করে নিজ জায়গা ছেড়ে দেয়, তাহলে সেই জায়গায় বসা হারাম নয়। তবে যদি বুঝতে পারেন যে, সে হয়তো মনে মনে কষ্ট পাবে অথবা তার অবস্থা দেখে আন্দাজ করতে পারেন যে, তার মন হয়তো চায় না ঐ জায়গা ছাড়তে, তাহলে সেখানে না বসে অন্য জায়গায় বসে যান। সেটাই হবে সবার জন্য উত্তম।
উল্লেখ্য যে, বিশেষ করে জুমআর দিন মসজিদে প্রথম কাতারে মুসাল্লা বা রুমাল ইত্যাদি বিছিয়ে জায়গা দখল করা বৈধ নয়। প্রথম প্রথম যে আসবে সেই সে জায়গার অধিক হকদার।
[2]. বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৬২৭০, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২১৭৭
কোন মজলিসে বসে থাকা অবস্থায় সমস্ত জায়গা ভর্তি হয়ে গেলে, নড়ে-সড়ে বসলে অল্প-বিস্তর জায়গা হয়েই যায়। সেই সময় উপস্থিত ব্যক্তিদের জন্য মজলিস প্রশস্ত করে বসতে জায়গা দেওয়া মুমিনের কর্তব্য। এই আদব বর্ণনা করে মহান আল্লাহ বলেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا قِيلَ لَكُمْ تَفَسَّحُوا فِي الْمَجَالِسِ فَافْسَحُوا يَفْسَحِ اللَّهُ لَكُمْ وَإِذَا قِيلَ انْشُزُوا فَانْشُزُوا يَرْفَعِ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنْكُمْ وَالَّذِينَ أُوتُوا الْعِلْمَ دَرَجَاتٍ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
অর্থাৎ, হে ঈমানদারগণ! তোমাদেরকে যখন বলা হয় যে, মজলিসে স্থান প্রশস্ত করে দাও, তখন তোমরা স্থান করে দিয়ো, আল্লাহ তোমাদের জন্য (জান্নাতের স্থান) প্রশস্ত করে দেবেন। আর যখন তোমাদেরকে বলা হয়, উঠে যাও, তখন উঠে যেয়ো। (সূরা মুজাদালাহ ১১)
মজলিসে দুটি লোক (আত্মীয় বা বন্ধু) একত্রে বসে থাকলে, আপনি গিয়ে তাদের মাঝে বসে উভয়ের মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করবেন না। যেহেতু তাতে তাদের মনে কষ্ট হবে। অবশ্য অনুমতি দিলে অথবা তারা নিজ থেকে আপনাকে তাদের মাঝে বসালে আপনি বসতে পারেন।
প্রিয় রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘বিনা অনুমতিতে দুই ব্যক্তির মাঝে বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি করা কোন মানুষের জন্য বৈধ নয়।’’[1]
মজলিসে উপস্থিত হয়ে যেখানে মজলিস শেষ হয়েছে আপনি সেখানে বসে যান। সাহাবী জাবের বিন সামুরাহ (রাঃ) বলেন, ‘আমরা রাসুল (ﷺ)-এর মজলিসে এলে প্রত্যেকে সেখানে বসে যেত, যেখানে মজলিস শেষ হয়েছে।’[1] সুতরাং পিছনে এসে সামনে বসার চেষ্টা করতে গিয়ে অপরকে কষ্ট দেবেন না। সামনে এক-আধটুক ফাঁকা জায়গা থাকলেও লোকেদের গর্দান চিড়ে সামনে অগ্রসর হবেন না। যেহেতু এ সময় আপনার লোকেদের গর্দানে হাত দেওয়া এবং অনেকের গায়ে আপনার পা লেগে যাওয়াটা বেআদবের পরিচয়। আর সামনের ফাঁক বন্ধ করার দায়িত্ব হল সামনের লোকেদের। তাদের উচিত হল, নড়ে-সড়ে সামনে ঘেঁসে বসা।