ইসলামী জীবন-ধারা মজলিসের আদব আবদুল হামীদ ফাইযী ১ টি
আল্লাহর জিকির ও নবী (সাঃ) এর উপর দরূদ পড়া

যে মজলিসে বসবেন, সে মজলিসে আল্লাহর জিকির করতে ও তাঁর নবী (ﷺ) এর উপর দরূদ পড়তে ভুল করবেন না।

যেহেতু রাসুল (ﷺ) বলেন,

مَا جَلَسَ قَوْمٌ مَجْلِسًا لَمْ يَذْكُرُوا اللَّهَ فِيهِ، وَلَمْ يُصَلُّوا عَلَى نَبِيِّهِمْ، إِلاَّ كَانَ عَلَيْهِمْ تِرَةً، فَإِنْ شَاءَ عَذَّبَهُمْ وَإِنْ شَاءَ غَفَرَ لَهُمْ

‘‘যে সম্প্রদায়ই এমন কোন মজলিসে বসে যেখানে তারা আল্লাহর জিকির করে না এবং নবীর (ﷺ) উপর দরূদ পাঠ করে না, সেই সম্প্রদায়েরই ক্ষতিকর পরিণাম হবে। আল্লাহ ইচ্ছা করলে তাদেরকে আযাব দেবেন, নচেৎ ইচ্ছা করলে মাফ করে দেবেন।’’[1]

আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন,

مَا مِنْ قَوْمٍ يَقُومُونَ مِنْ مَجْلِسٍ لَا يَذْكُرُونَ اللَّهَ فِيهِ، إِلَّا قَامُوا عَنْ مِثْلِ جِيفَةِ حِمَارٍ وَكَانَ لَهُمْ حَسْرَةً

‘‘যে কোনও সম্প্রদায় কোন মজলিস থেকে আল্লাহ জিকির না করেই উঠে গেল, তারা যেন মৃত গাধার মত কোন কিছু হতে উঠে গেল। আর তাদের জন্য রয়েছে ক্ষতি (ও পরিতাপ)।’’[2]

অবশ্য উচ্চস্বরে, সমস্বরে বা জামাআতী দরূদ-যিক্রের কথা বলা হয়নি। আসলে জামাআতী দরূদ-জিকির হল বিদ্আত।

আল্লাহ জিকির ছাড়া অন্য কথা বেশী বলা হৃদয় কঠোর হয়ে যাওয়ার একটি কারণ। আর এমন হৃদয় আল্লাহর নিকট থেকে অনেক দূরে।[3] অতএব যে মজলিস আল্লাহর কথা আলোচনার জন্য নয়, সে মজলিসে অংশগ্রহণ করে অযথা সময় নষ্ট করলে মানুষের হৃদয় কঠিন হয়ে যাবে। কোন নসীহতে সে হৃদয় নরম হবে না, কারো ব্যথায় সে হৃদয় আহা করবে না। আর কিয়ামতে হবে বড় পরিতাপ ও আফশোসের বিষয়।

তাছাড়া যে মজলিসে আল্লাহর জিকির করা হয়, কুরআন ও হাদীসের কথা আলোচিত হয়, দ্বীন ও ইল্মের কথা বলা হয়, সে মজলিস আল্লাহর নিকট বড় পছন্দনীয়। আর এই শ্রেণীর মজলিসে যারা বসে, তারা জিকির না করলেও, আলোচনা না শুনলেও, কেবল সেখানে বসার জন্য তাদের গোনাহ মাফ করে দেওয়া হয়।

আল্লাহর রাসুল (ﷺ) বলেন, ‘‘নিশ্চয় আল্লাহর কিছু ফিরিশ্তা আছেন, যাঁরা রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে-ফিরে আহলে জিকির খুঁজতে থাকেন। অতঃপর যখন কোন সম্প্রদায়কে আল্লাহর জিকিররত অবস্থায় পেয়ে যান, তখন তাঁরা একে অপরকে আহবান করে বলতে থাকেন, ‘এস তোমাদের প্রয়োজনের দিকে।’ সুতরাং তাঁরা (সেখানে উপস্থিত হয়ে) তাদেরকে নিজেদের ডানা দ্বারা নিচের আসমান পর্যন্ত বেষ্টিত করে ফেলেন। অতঃপর তাঁদেরকে তাঁদের প্রতিপালক জানা সত্ত্বেও তাঁদেরকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আমার বান্দারা কি বলছে?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘তারা আপনার পবিত্রতা ঘোষণা করছে, আপনার মহত্ত্ব বর্ণনা করছে, আপনার প্রশংসা ও গৌরব বয়ান করছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি আমাকে দেখেছে?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! তারা আপনাকে দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘কি হত, যদি তারা আমাকে দেখত?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘যদি তারা আপনাকে দেখত, তাহলে আরো বেশী বেশী ইবাদত, গৌরব বর্ণনা ও তসবীহ করত।’ আল্লাহ বলেন, ‘কি চায় তারা?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘তারা আপনার কাছে জান্নাত চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি জান্নাত দেখেছে?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে তার জন্য আরো বেশী আগ্রহান্বিত হত। আরো বেশী বেশী তা প্রার্থনা করত। তাদের চাহিদা আরো বড় হত।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি থেকে পানাহ চায়?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘তারা দোযখ থেকে পানাহ চায়।’ আল্লাহ বলেন, ‘তারা কি দোযখ দেখেছে?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘জী না, আল্লাহর কসম! হে প্রতিপালক! তারা তা দেখেনি।’ আল্লাহ বলেন, ‘কি হত, যদি তারা তা দেখত?’ ফিরিশ্তারা বলেন, ‘তারা তা দেখলে বেশী বেশী করে তা হতে পলায়ন করত। বেশী বেশী ভয় করত।’ তখন আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে সাক্ষী রেখে বলছি যে, আমি তাদেরকে মাফ করে দিলাম।’

يَقُولُ مَلَكٌ مِنْ الْمَلَائِكَةِ فِيهِمْ فُلَانٌ لَيْسَ مِنْهُمْ إِنَّمَا جَاءَ لِحَاجَةٍ قَالَ هُمْ الْجُلَسَاءُ لَا يَشْقَى بِهِمْ جَلِيسُهُمْ

ফিরিশ্তাদের মধ্য থেকে একজন বলেন, ‘কিন্তু ওদের মধ্যে অমুক ওদের দলভুক্ত নয়। সে আসলে নিজের কোন প্রয়োজনে সেখানে এসেছে।’ আল্লাহ বলেন, ‘(আমি তাকেও মাফ করে দিলাম! কারণ,) তারা হল এমন সম্প্রদায়, যাদের সাথে যে বসে সেও বঞ্চিত (হতভাগা) থাকে না।’[4]

[1]. আবূ দাউদ, সহীহ তিরমিযী হা/২৬৯১, আহমদ, ইবনে হিববান, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৭৪, আর হাদীসের শব্দাবলী তিরমিযীর।

[2]. আবূ দাউদ ৪৮৫৫, নাসাঈ, হাকেম প্রমুখ, সিলসিলাহ সহীহাহ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/৭৭

[3]. তিরমিযী হা/৩৩৮০

[4]. মুসনাদে আহমাদ আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা. হা/ ৭৩৭৬, বুখারী তাওহীদ পাবঃ হা/ ৬৪০৮, মুসলিম আল-মাকতাবাতুশ-শামেলা হা/২৬৮৯, তিরমিযী হা/৩৬০০