উম্মাতের মধ্যে মেহেদী হওয়ার দাবিদার শত শত হলেও নিজেকে ঈসা ইবন মরিয়ম বলে দাবি করার মত পাগল পূর্বে পাওয়া যায় নি। কারণ সকল হাদীসেই বলা হয়েছে যে, তিনি মরিয়মের বেটা ঈসা। কাজেই অন্য কোনো ব্যক্তি একেবারে বদ্ধ পাগল না হলে নিজেকে মরিয়মের বেটা বলে দাবি করতে পারে না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নিজেকে মরিয়মের বেটা ঈসা বলে দাবি করে।
ইবন মাজাহ অত্যন্ত দুর্বল সনদের একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:
لاَ الْمَهْدِىُّ إِلاَّ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ
‘‘ঈসা ইবন মরিয়ম ভিন্ন মাহদী নেই।’’[1]
হাদীসটির একমাত্র বর্ণনাকারী মুহাম্মাদ ইবনু খালিদ জানাদী অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তি এবং হাদীসটির সনদে বিভিন্ন অসঙ্গতি বিদ্যমান। মুহাদ্দিসগণ একমত যে হাদীসটি অত্যন্ত দুর্বল। অনেকে হাদীসটিকে জাল বলে নিশ্চিত করেছেন।[2] এ হাদীসটি সহীহ হলে এর দ্বারা মাহদীর অস্তিত্ব অস্বীকার করা যেত, কিন্তু কোনোভাবেই মরিয়মের পুত্র ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ অস্বীকার করা যেত না। কিন্তু কাদিয়ানী সম্প্রদায় ঠিক বিপরীত করেছে। গোলাম আহমদ প্রথমে নিজেকে ওলী, এরপর মুজাদ্দিদ, এরপর মাহদী, এরপর ঈসা এবং সর্বশেষ শ্রেষ্ঠ নবী বলে দাবি করে। এ জাল হাদীসে বলা হয়েছে ‘ঈসা (আঃ) ভিন্ন পৃথক কোনো মাহদী নেই।’ আর সে এ জাল হাদীসটির জাল অর্থ করে সে বলে ‘‘মাহদী ছাড়া পৃথক কোনো ঈসা নেই।’ এরপর সে ও তার অনুসারীরা এ জাল অর্থটিকেই ‘ঈমান’ এর মূল বানিয়েছে।
সর্বোপরি, কাদিয়ানীর সকল দাবি-দাওয়াই সন্দেহাতীতভাবে মিথ্যা বলে প্রমাণিত। সে রাজত্ব লাভ করে নি, ৪০ বৎসর রাজত্ব করে নি, ইনসাফ ও শান্তি প্রতিষ্ঠা করে নি... মাহদী বা ঈসা (আঃ) কারো কোনো আলামতই তার মধ্যে পাওয়া যায় নি। তবুও লক্ষ লক্ষ মানুষ তাকে মাহদী ও ঈসা নামে বিশ্বাস করছে!
খাতমুন নুবুওয়াত বা নুবুওয়াতের পরিসমাপ্তির ঘোষণা রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর অন্যতম মুজিযা। ইহূদী জাতির ইতিহাসে আমরা দেখি যে, রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর পূর্বে নুবুওয়াতের ধারা তাদের মধ্যে অব্যাহত ছিল। কিন্তু মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর পরে বিগত দেড় হাজার বৎসরে তাদের মধ্যে একজনও নবী আসেন নি। তারা রাসূলুল্লাহ (ﷺ) কে না মানলেও বাস্তবে মেনে নিয়েছে যে, নুবুওয়াতের ধারা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। অথচ মুসলিম নামধারীদের মধ্যে গোলাম আহমদকে নবী বলে বিশ্বাস করা মানুষ পাওয়া যায়!!
[2] আলবানী, যায়ীফাহ ১/১৭৫ (নং ৭৭)।