কিয়ামতের বড় আলামতগুলোর অন্যতম ঈসা (আঃ)-এর অবতরণ। এ বিষয়ে কুরআনের নির্দেশনা আমরা দেখেছি। কুরআনের পাশাপাশি বহুসংখ্যক সাহাবীর সূত্রে মুতাওয়াতির হাদীসে তাঁর অবতরণের বিষয়টি প্রমাণিত। উপরে আমরা এ অর্থে চারটি হাদীস দেখেছি। অন্য হাদীসে আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:


وَالَّذِى نَفْسِى بِيَدِهِ لَيُوشِكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمُ ابْنُ مَرْيَمَ حَكَمًا مُقْسِطًا فَيَكْسِرَ الصَّلِيبَ ، وَيَقْتُلَ الْخِنْزِيرَ ، وَيَضَعَ الْجِزْيَةَ ، وَيَفِيضَ الْمَالُ حَتَّى لاَ يَقْبَلَهُ أَحَدٌ، حَتَّى تَكُونَ السَّجْدَةُ الْوَاحِدَةُ خَيْرًا مِنَ الدُّنْيَا وَمَا فِيهَا


‘‘যার হাতে আমার প্রাণ তাঁর শপথ, অচিরেই তোমাদের মাঝে মরিয়মের পুত্র ন্যায়পরায়ণ শাসক হিসেবে অবতরণ করবেন। তিনি ক্রুশ ভাঙবেন, শূকর বধ করবেন, জিযিয়া তুলে দিবেন এবং সম্পদের প্রাচুর্য দেখা দেবে। এমনকি কেউ সম্পদ গ্রহণ করবে না, এমনকি একটি সাজদার মূল্য দুনিয়া ও তার সব সম্পদের চেয়ে বেশি বলে গণ্য হবে।’’[1]

অন্য হাদীসে আবূ হুরাইরা (রা) বলেন, রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:


الأَنْبِيَاءُ إِخْوَةٌ لِعَلاَّتٍ أُمَّهَاتُهُمْ شَتَّى وَدِينُهُمْ وَاحِدٌ وَأَنَا أَوْلَى النَّاسِ بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ لأَنَّهُ لَمْ يَكُنْ بَيْنِى وَبَيْنَهُ نَبِىٌّ وَإِنَّهُ نَازِلٌ فَإِذَا رَأَيْتُمُوهُ فَاعْرِفُوهُ رَجُلاً مَرْبُوعاً إِلَى الْحُمْرَةِ وَالْبَيَاضِ عَلَيْهِ ثَوْبَانِ مُمَصَّرَانِ كَأَنَّ رَأْسَهُ يَقْطِرُ وَإِنْ لَمْ يُصِبْهُ بَلَلٌ فَيَدُقُّ الصَّلِيبَ وَيَقْتُلُ الْخِنْزِيرَ وَيَضَعُ الْجِزْيَةَ وَيَدْعُو النَّاسَ إِلَى الإِسْلاَمِ فَيُهْلِكُ اللَّهُ فِى زَمَانِهِ الْمِلَلَ كُلَّهَا إِلاَّ الإِسْلاَمَ وَيُهْلِكُ اللَّهُ فِى زَمَانِهِ الْمَسِيحَ الدَّجَّالَ وَتَقَعُ الأَمَنَةُ عَلَى الأَرْضِ حَتَّى تَرْتَعَ الأُسُودُ مَعَ الإِبِلِ وَالنِّمَارُ مَعَ الْبَقَرِ وَالذِّئَابُ مَعَ الْغَنَمِ وَيَلْعَبَ الصِّبْيَانُ بِالْحَيَّاتِ لاَ تَضُرُّهُمْ فَيَمْكُثُ أَرْبَعِينَ سَنَةً ثُمَّ يُتَوَفَّى وَيُصَلِّى عَلَيْهِ الْمُسْلِمُونَ


‘‘নবীগণ বৈমাত্রেয় ভাইদের মত; তাঁদের মাতৃগণ পৃথক হলেও তাঁদের দীন একই। মরিয়মের পুত্র ঈসার বিষয়ে আমারই অধিকার বেশি; কারণ তাঁর ও আমার মাঝে কোনো নবী নেই। তিনি অবতরণ করবেন। যখন তোমরা তাঁকে দেখবে তাঁকে চিনবে: তিনি মধ্যমাকৃতির লালচে-শুভ্র মানুষ। তাঁর পরিধানে হালকা হলুদ রঙের দুটি কাপড় থাকবে। (পরিচ্ছন্নতার কারণে) তাঁর মাথায় পানি স্পর্শ না করলেও মনে হয় যে তা থেকে পানি পড়ছে। তিনি ক্রুশ ভাঙবেন, শূকর বধ করবেন, জিযিয়া অপসারণ করবেন, সকল মানুষকে ইসলামের দিকে ডাকবেন। তাঁর সময়ে ইসলাম ছাড়া অন্য সকল ধর্ম বিলুপ্ত হবে। তাঁর সময়েই মাসীহ দাজ্জালকে আল্লাহ ধ্বংস করবেন। এরপর পৃথিবীতে শান্তি-নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে। এমনকি উটের সাথে সিংহ, গরুর সাথে বাঘ ও মেষের সাথে চিতা চরবে। শিশুরা সাপ নিয়ে খেলবে কিন্তু সাপ তাদের ক্ষতি করবে না। তিনি চল্লিশ বৎসর অবস্থান করবেন। এরপর তিনি মৃত্যুবরণ করবেন এবং মুসলিমগণ তাঁর জানাযা আদায় করবে।[2]

আরো অনেক হাদীস এ বিষয় বর্ণিত। মুমিনের দায়িত্ব এ বিষয়ক কুরআন ও হাদীসের নির্দেশনা সরল অর্থে বিশ্বাস করা। কিয়ামতের আলামতগুলো বর্ণনামূলক। এগুলো ঘটবে বলে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) জানিয়েছেন। ঘটার পরে বিশ্বাস করা ছাড়া মুমিনের অন্য কোনো দায়িত্ব নেই। ঈসা (আঃ) বিষয়ক সকল ভবিষ্যদ্বাণী যখন প্রকাশিত হবে, তখন সে যুগের মুমিনগণ বলবেন, আল-হামদু লিল্লাহ, মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর ভবিষ্যদ্বাণী সত্য প্রমাণিত হয়েছে। আমরা দেখেছি যে, কোনো আলামত পরিপূর্ণ প্রকাশিত হওয়ার আগে তা নিয়ে গবেষণা-বিতর্ক বা বিশ্বাস বিভ্রান্তির দরজা উন্মুক্ত করে।

[1] বুখারী, আস-সহীহ ২/৭৭৪, ৩/১২৭২; মুসলিম, আস-সহীহ ১/১৩৫ (ঈমান, নুযূল ঈﷺ..)

[2] আহমদ, আল-মুসনাদ ২/৪০৬; হাকিম, আল-মুসতাদরাক ২/৬৪৮; আলবানী, সাহীহাহ ৫/১৮১। হাদীসটির সনদ বুখারী ও মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ।