ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) এরপর কুরআনের আয়াতসমূহের মর্যাদার বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি বলেছেন: ‘‘কুরআন কারীম রাসূলুল্লাহ (ﷺ)-এর উপর অবতীর্ণ এবং তা মুসহাফের মধ্যে লিপিবদ্ধ। আল্লাহর কালাম হিসেবে সকল আয়াত মর্যাদা ও মহত্ত্বের দিক থেকে সমান। তবে কোনো কোনো আয়াতের দ্বিবিধ মর্যাদা রয়েছে: যিক্র-এর মর্যাদা এবং যিক্র-কৃতের মর্যাদা। যেমন আয়াতুল কুরসী। এর মধ্যে মহান আল্লাহর মহত্ত্ব, মর্যাদা ও বিশেষণ আলোচিত হয়েছে, এজন্য এর মধ্যে দ্বিবিধ মর্যাদা একত্রিত হয়েছে: যিক্র বা স্মরণের মর্যাদা এবং স্মরণকৃতের মর্যাদা। আর কোনো কোনো আয়াতের কেবল যিক্র-এর ফযীলত রয়েছে, যেমন কাফিরদের কাহিনী, এতে যাদেরকে উল্লেখ করা হয়েছে, অর্থাৎ কাফিরদের কোনো মর্যাদা নেই। অনুরূপভাবে আল্লাহর নামসমূহ এবং বিশেষণসমূহ সবই সমমর্যাদার, এগুলির মধ্যে মর্যাদাগত কোনো তারতম্য নেই।’’
কুরআন মাজীদের বিভিন্ন আয়াতের কিছু ফযীলত বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। দ্বিতীয় হিজরী শতক থেকে অনেক তথাকথিত ‘‘ধার্মিক’’ মানুষ অনেক জাল ও মিথ্যা কথাও ফযীলতের নামে প্রচার করেছেন।[1] এ সকল বর্ণনা ফযীলত বিষয়ে এক প্রকারের বাড়াবাড়ির জন্ম দেয়। ফযীলতের আয়াত ও সূরাগুলোর বিষয়ে অধিক গুরুত্বারোপের কারণে নিয়মিত কুরআন তিলাওয়াত, অধ্যয়ন ও অনুধাবনের সুন্নাহ নির্দেশিত ইবাদতে অবহেলা ও ত্রম্নটি হয়।
ইমাম আবূ হানীফা (রাহ) এ বিষয়ক মূলনীতি উল্লেখ করেছেন। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, আল্লাহর কালাম হিসেবে সকল আয়াতের মর্যাদা সমান। কুরআনের মর্যাদা ও ফযীলতের মূল বিষয় এটিই। কাজেই মুমিনকে এ দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। পাশাপাশি কিছু আয়াতের অর্থগত বিশেষ মর্যাদা রয়েছে। সহীহ হাদীসে প্রমাণিত বিশেষ ফযীলতগুলি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এরূপ অর্থগত মর্যাদার কথা তাতে বলা হয়েছে। আর এরূপ অর্থগত ফযীলত লাভ করতে অর্থ হৃদয়ঙ্গম করা এবং পঠিত আয়াতে মহান আল্লাহর যে মর্যাদার কথা উল্লেখ করা হয়েছে তা অনুভব করা প্রয়োজন। কাজেই এ বিষয়ে সহীহ সুন্নাতের নির্দেশনার মধ্যে অবস্থান জরুরী।