আল-ফিকহুল আকবর মহান আল্লাহর বিশেষণ, তাকদীর ইত্যাদি ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

দ্বিতীয় প্রকারের ওহী ‘‘আল-হিকমাহ’’ বা প্রজ্ঞা। কুরআনের ব্যাখ্যা ও প্রায়োগিক বিষয়ে ওহীর মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর রাসূল (ﷺ)-কে যে শিক্ষা, তথ্য ও জ্ঞান প্রদান করেন তিনি তা নিজের ভাষায় সাহাবীগণকে শিক্ষা দেন। তাঁর এ শিক্ষা ‘‘হাদীস’’ নামে সংকলিত হয়েছে। হাদীসই ইসলামী আকীদার দ্বিতীয় ভিত্তি ও উৎস।

সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (ﷺ) থেকে যে কথা বা হাদীস শুনতেন তা অন্যদেরকে শোনাতেন। কেউ তা লিখে রাখতেন এবং কেউ মনে রাখতেন এবং প্রয়োজনে বলতেন। দ্বিতীয় প্রজন্মের মুসলিমগণ সাহাবীগণ থেকে হাদীস শিখতেন এবং লিপিবদ্ধ করতেন। দ্বিতীয় হিজরী শতকের শুরু থেকে হাদীস গ্রন্থাকারে লিপিবদ্ধ করা হয়।

হাদীসের বিষয়ে সাহাবীগণ ও পরবর্তী ইমামগণের মুলনীতি হাদীস নামে প্রচারিত বক্তব্য গ্রহণের আগে যাচাই করা। কেবলমাত্র ‘‘সহীহ’’ হাদীস গ্রহণ করা। অনির্ভরযোগ্য হাদীস বর্জন করা এবং হাদীসের নামে জালিয়াতির সর্বাত্মক বিরোধিতা করা। দুর্বল বা জাল হাদীস নিজেদের মতের পক্ষে হলেও তা বর্জন করে তার জালিয়াতি বা দুর্বলতা বর্ণনা করা এবং সহীহ হাদীস নিজেদের মতের বিরুদ্ধে হলেও তার বিশুদ্ধতা স্বীকার করে তার আলোকে নিজেদের মত সংশোধন ও সমন্বয় করা। সাহাবীগণ, তাবিয়ীগণ এবং চার ইমাম এ বিষয়ে অনেক নির্দেশনা দিয়েছেন। ইমাম আযমের কিছু বক্তব্য আমরা ইতোপূর্বে দেখেছি। পাশাপাশি তাদের মূলনীতি হলো, সহীহ হাদীস বাহ্যিক ও সরল অর্থে গ্রহণ করা, ব্যাখ্যার নামে বিকৃত না করা এবং সকল সহীহ হাদীস যথাসম্ভব সমন্বিতভাবে গ্রহণ করা।

খারিজী, শীয়া, মুতাযিলা ও অন্যান্য গোষ্ঠী হাদীস বিষয়ে অনেক বিভ্রান্তি ও বৈপরীত্যের মধ্যে নিপতিত হয়েছে। সেগুলির অন্যতম:

(১) হাদীস গ্রহণ না করা। শীয়াগণের মতে সাহাবীগণ বিশ্বস্ত ছিলেন না (নাউযূ বিল্লাহ); কাজেই তাঁদের বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য নয়। মুতাযিলীগণ হাদীসের বর্ণনায় ভুল থাকতে পারে অজুহাতে, কুরআন দিয়ে অথবা বুদ্ধি-বিবেক দিয়ে হাদীস যাচাইয়ের নামে হাদীস প্রত্যাখ্যান করে।

(২) সনদ যাচাই নয়, বরং পছন্দ অনুসারে হাদীস গ্রহণ করা। তারা বিশুদ্ধতা যাচাই করে হাদীস গ্রহণ করেন না। বরং যে হাদীস তাদের মতের পক্ষে তা তারা গ্রহণ করেন ও প্রমাণ হিসেবে পেশ করেন। আর যে হাদীস তাদের মতের বিপক্ষে তা নানা অজুহাতে অগ্রহণযোগ্য বলে দাবি করেন।

(৩) হাদীসের নামে মিথ্যা বলা বা জাল হাদীস প্রচার ও গ্রহণ করা। এ বিষয়ে শীয়াগণ অগ্রগামী ছিলেন। এছাড়া ‘‘আহলুস সুন্নাত’’ নামে পরিচয় দানকারী ‘‘কার্রামিয়া’’ ও অন্যান্য সম্প্রদায়ও নিজেদের মতের পক্ষে হাদীস জাল করা ও জাল হাদীস প্রচার করায় অগ্রণী ছিলেন। উপরন্তু আহলুস সুন্নাতের ইমামগণ যখন সনদ-বিচার করে সেগুলোর জালিয়াতি উদ্ঘাটন করতেন তখন তারা সনদ-প্রমাণের দিকে না যেয়ে তাঁদেরকে ‘নবীর (ﷺ) দুশমন’, ‘‘আলী-বংশের শত্রু’’, ‘‘এযিদের দালাল’’ ইত্যাদি বলে আখ্যায়িত করতেন। এভাবে তারা সরলপ্রাণ সাধারণ মুসলিমদের মধ্যে তাদের জালিয়াতির গ্রহণযোগ্যতা ও মুহাদ্দিসগণের যাচাইয়ের প্রতি বিরূপ মানসিকতা তৈরি করতেন। অন্যান্য ফিরকা নিজেরা জালিয়াতির ক্ষেত্রে অতটা অগ্রসর না হলেও নিজেদের পক্ষের জাল হাদীস গ্রহণ ও প্রচার করতেন।

(৪) ব্যাখ্যার নামে সরল অর্থ বিকৃত করা। হাদীসের ক্ষেত্রেও ব্যাখ্যার নামে হাদীসের সরল অর্থ বিকৃত করা এ সকল বিভ্রান্ত গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য।