মোল্লা আলী কারী উল্লেখ করেছেন যে, কুরআনে প্রতিপালনের তাওহীদের উল্লেখ করা হয়েছে মূলত ইবাদাতের তাওহীদ প্রমাণ ও প্রতিষ্ঠা করার জন্য। যেহেতু আল্লাহই একমাত্র সর্বশক্তিমান প্রতিপালক, কাজেই ইবাদত একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য।
সূরা ফাতিহাতে আমরা এর প্রকৃষ্ট নমুনা দেখতে পাই। আল্লাহ ‘সকল প্রশংসা জগৎসমূহের প্রতিপালক আল্লাহর’ বলে প্রতিপালনের একত্বের কথা উল্লেখ করেছেন এবং এরপর ‘তোমারই ইবাদত করি এবং তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি’ বলে ইবাদতের একত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। মোল্লা কারী এ প্রসঙ্গে বলেন: ‘‘মহান আল্লাহ সূরা ফাতিহার শুরুতে বলেছেন: ‘সকল প্রশংসা আল্লাহর নিমিত্ত যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক’। একথা দিয়ে তিনি তাওহীদুর রুবূবিয়্যাতের প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। আল্লাহকে রবব হিসেবে এক বলে বিশ্বাস করার দাবি একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা। সার কথা এই যে, ইবাদতের তাওহীদ স্বীকার করলে স্বতঃসিদ্ধভাবে প্রতিপালনের তাওহীদ স্বীকার করা হয়ে যায়। (তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ স্বীকার করার অর্থই তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ স্বীকার করা।) কিন্তু তাওহীদুর রুবূবিয়্যাহ স্বীকার করলে তাওহীদুল উলূহিয়্যাহ স্বীকার করা হয় না। কাফিরগণ রুবুবিয়্যাতের একত্বে বিশ্বাস করত কিন্তু ইবাদতের ক্ষেত্রে শিরক করত। তাদের রুবূবিয়্যাতের একত্বে স্বীকৃতির বিষয়ে আল্লাহ বলেন: ‘‘যদি তাদেরকে জিজ্ঞাসা কর, আকাশমন্ডলী ও পৃথিবী কে সৃষ্টি করেছেন? তারা অবশ্যই বলবে, ‘আল্লাহ।’[1]’’ আবার তাদের ইবাদতের শিরক ও শিরকের পক্ষে তাদের দলীল বা যুক্তি প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন:
وَالَّذِينَ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ مَا نَعْبُدُهُمْ إِلا لِيُقَرِّبُونَا إِلَى اللَّهِ زُلْفَى
‘‘আর যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য আউলিয়া (অভিভাবক) গ্রহণ করেছে (তারা বলে): আমরা তো এদের শুধু এজন্যই ইবাদাত করি যে এরা আমাদেরকে আল্লাহর সান্নিধ্যে দ্রুত পেঁŠছে দেবে।[2]
কুরআনের অধিকাংশ সূরা ও আয়াতই এ দু প্রকারের তাওহীদের বর্ণনা সম্বলিত। বরং সত্যিকার বিষয় যে, কুরআনের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব কথাই এ দু প্রকারের তাওহীদের বিবরণ। কারণ কুরআনে কোথাও আল্লাহর সত্তা, নামসমূহ, গুণাবলি ও কার্যাদির বর্ণনা করা হয়েছে, আর এগুলি জ্ঞান ও সংবাদের তাওহীদ। আর কোথাও শির্ক-মুক্ত ভাবে একমাত্র আল্লাহর ইবাদত করতে এবং আল্লাহ ছাড়া যা কিছুর ইবাদত করা হয় সব কিছু বর্জন করতে আহবান করা হয়েছে। এ হলো ‘আত-তাওহীদুল ইরাদী আত-তালাবী’ বা ‘ইচ্ছাধীন নির্দেশিত একত্ব’ (ইবাদতের তাওহীদ)।’’[3]
[2] সূরা (৩৯) যুমার: ২-৩ আয়াত।
[3] মোল্লা আলী কারী, শারহুল ফিকহিল আকবার, পৃ. ২২-২৩।