وَمَا يُخَالِفْ ثِقَةٌ فِيْهِ الْمَلا | فَالشَّاذُ وَالْمَقْلُوْبُ قِسْمَانِ تَلا
إبْدَالُ رَاوٍ مَا بِرَاوٍ قِسْمُ | وَقَلْبُ إسْنَادٍ لِمَتْنٍ قِسْمُ
“আর যেখানে সেকাহ রাবি বৃহৎ সংখ্যক রাবির বিরোধিতা করে তাই শায। আর শাযের অনুগামী মাকলুব দু’প্রকার: সনদের কোনো রাবিকে অপর রাবি দ্বারা পরিবর্তন করা একপ্রকার। আর মতনের জন্য সনদ পরিবর্তন করা আরেক প্রকার”। অত্র কবিতায় বর্ণিত ক্রমানুসারে হাদিসের একবিংশ ও দ্বাবিংশ প্রকার শায ও মাকলুব। এ প্রকারের সম্পর্ক সনদ ও মতন উভয়ের সাথে।
শায হাদিস
شاذ শব্দটি شذوذ থেকে গৃহীত, যার অর্থ একাকী, বিচ্ছিন্ন, দলছুট ও নীতি মুক্ত। হাদিসে এসেছে:
«لا يَجْمَعُ اللَّهُ هَذِهِ الأُمَّةَ عَلَى الضَّلالَةِ أَبَدًا، وَيَدُ اللَّهِ عَلَى الْجَمَاعَةِ فَمَنْ شَذَّ شَذَّ فِي النَّارِ».
“আল্লাহ এ উম্মতকে কখনো গোমরাহির উপর একত্র করবেন না, আর জামাতের উপর আল্লাহর হাত রয়েছে, অতএব যে দলছুট বা বিচ্ছিন্ন হল, সে জাহান্নামে ছিটকে পড়ল”।[1]
‘শায’ এর পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “একাধিক সেকাহ রাবির বিপরীত একজন সেকাহ রাবির বর্ণনাকে শায বলা হয়”। লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ সেকার বিপরীত ملأ শব্দ ব্যবহার করেছেন, যার অর্থ কওমের নেতৃবৃন্দ ও প্রধান ব্যক্তিবর্গ, যেমন আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
﴿ قَالَ ٱلۡمَلَأُ ٱلَّذِينَ ٱسۡتَكۡبَرُواْ مِن قَوۡمِهِۦ لَنُخۡرِجَنَّكَ يَٰشُعَيۡبُ وَٱلَّذِينَ ءَامَنُواْ مَعَكَ مِن قَرۡيَتِنَآ أَوۡ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَاۚ قَالَ أَوَلَوۡ كُنَّا كَٰرِهِينَ ٨٨ ﴾ [الاعراف: ٨٧]
“তার কওম থেকে যে নেতৃবৃন্দ অহংকার করেছিল তারা বলল, ‘হে শু‘আইব, আমরা তোমাকে ও তোমার সাথে যারা ঈমান এনেছে তাদেরকে অবশ্যই আমাদের জনপদ থেকে বের করে দেব অথবা তোমরা আমাদের ধর্মে ফিরে আসবে’। সে বলল, ‘যদিও আমরা তা অপছন্দ করি তবুও?”[2]
হাদিস শাস্ত্রে ملأ বা প্রধান ব্যক্তিবর্গ হলেন অধিক সেকাহ রাবিগণ, যাদের আদালত ও দ্বাবত সবার নিকট স্বীকৃত। তাদের একজনকেও ملأ বলা হয়, কারণ তার আদালত, স্মৃতি শক্তি ও যথাযথ হাদিস সংরক্ষণ করা, তার নিম্নপর্যায়ের একাধিক রাবির আদালত, স্মৃতি শক্তি ও যথাযথ হাদিস সংরক্ষণ করা অপেক্ষা শ্রেষ্ঠতর ও অধিক নির্ভুল। এ জন্য একলা ইবরাহিম ‘আলাইহিস সালামকে উম্মত বলা হয়েছে, অথচ উম্মত অর্থ একটি জাতি। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ إِنَّ إِبۡرَٰهِيمَ كَانَ أُمَّةٗ قَانِتٗا لِّلَّهِ حَنِيفٗا وَلَمۡ يَكُ مِنَ ٱلۡمُشۡرِكِينَ ١٢٠ ﴾ [النحل: ١٢٠]
“নিশ্চয় ইবরাহীম ছিলেন এক উম্মত, আল্লাহর একান্ত অনুগত ও একনিষ্ঠ। তিনি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন না”।[3] অতএব সেকাহ রাবি অপেক্ষাকৃত কম সেকাহ রাবির বিবেচনায় ملأ বা জামাত। লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ এখানে একশব্দ দ্বারা শাযের দু’প্রকারকে নির্দেশ করে যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছেন। সেকাহ রাবি যদি অধিক সেকাহ বা একাধিক সেকাহ রাবির বিরোধিতা করে, তাহলে তার বর্ণিত হাদিস শায।
হাফেয ইব্ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ শাযের সংজ্ঞায় বলেন:
"مخالفة المقبول لمن هو أولى منه" (النزهة:صـ98)
“মাকবুল রাবির তার চেয়ে উত্তম রাবির বিরোধিতা করা শায”।[4] এখানে মাকবুল দ্বারা উদ্দেশ্য সহি ও হাসান হাদিসের রাবি, আর উত্তম দ্বারা উদ্দেশ্য এক বা একাধিক সেকাহ রাবি। অর্থাৎ মাকবুল রাবি একাধিক মাকবুল কিংবা অধিক সেকাহ রাবির বিরোধিতা করলে তার হাদিস শায।
বিরোধিতা দ্বারা উদ্দেশ্য:
মানযুমার ব্যাখ্যাকার সুলাইমানি রহ. বলেন: “বিরোধিতার অর্থ শব্দের বৃদ্ধি, যাতে অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে। মকবুল রাবির হাদিসে যদি সেকাহ রাবির তুলনায় অতিরিক্ত শব্দ থাকে তাই শায। উভয়ের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব হোক বা না-হোক। এটা বিজ্ঞ মুহাদ্দিসদের অভিমত।
কেউ বলেন: সেকাহ রাবির হাদিস যদি মকবুল রাবির হাদিসের সাথে পুরোপুরি সাংঘষির্ক হয়, তাহলে মকবুল রাবির হাদিস শায, নচেৎ নয়। এ কথা ঠিক নয়। এ সংজ্ঞা মোতাবেক শাযের উদাহরণ পাওয়া দুষ্কর। ফকিহ ও মুহাদ্দিসদের নিকট এমন শায নেই যার সাথে মাহফুযের সমন্বয় করা সম্ভব নয়। ‘ইলালের উপর লিখিত গ্রন্থসমূহ দেখলে অনুমিত হয় যে, তারা এমন অনেক বৃদ্ধির উপর শাযের বিধান আরোপ করেছেন, যেখানে মূল বর্ণনার সাথে তার কোনো বিরোধ নেই, বরং কতক শায মূল হাদিসের সম্পূরক, তবুও তারা শায বলেছেন, যেমন কুকুরে চাটা পাত্রকে পবিত্র করার হাদিসে فَلْيُرِقْهُ শব্দের বৃদ্ধিকে মুহাদ্দিসগণ শায বলেছেন”।[5] ইমাম মুসলিম রাহিমাহুল্লাহ্ বর্ণনা করেন:
وحَدَّثَنِي عَلِيُّ بْنُ حُجْرٍ السَّعْدِيُّ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ مُسْهِرٍ، أَخْبَرَنَا الأَعْمَشُ، عَنْ أَبِي رَزِينٍ وَأَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا وَلَغَ الْكَلْبُ فِي إِنَاءِ أَحَدِكُمْ، فَلْيُرِقْهُ، ثُمَّ لِيَغْسِلْهُ سَبْعَ مِرَارٍ » وحَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيل بْنُ زَكَرِيَّاءَ، عَنِ الأَعْمَشِ، بِهَذَا الإِسْنَادِ مِثْلَهُ، وَلَمْ يَقُلْ: فَلْيُرِقْهُ
এ হাদিসে ইমাম মুসলিমের উস্তাদ আলি ইব্ন হুজর আসসা‘য়েদি; তার উস্তাদ আলি ইব্ন মুসহির; তার উস্তাদ আ‘মাশ; তার উস্তাদ আবু রাযিন ও আবু সালেহ; তার উস্তাদ সাহাবি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু। তিনি বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
«إِذَا وَلَغَ الْكَلْبُ فِي إِنَاءِ أَحَدِكُمْ، فَلْيُرِقْهُ، ثُمَّ لِيَغْسِلْهُ سَبْعَ مِرَارٍ»
“যখন তোমাদের কারো পাত্র কুকুর চাটে, সে যেন তাতে যা আছে তা ঢেলে ফেলে দেয়, অতঃপর সাতবার তা ধুয়ে নেয়”। এ হাদিসের অপর সনদে মুসলিমের উস্তাদ: মুহাম্মদ ইব্ন সাব্বাহ; তার উস্তাদ ইসমাইল ইব্ন যাকারিয়্যা; তার উস্তাদ আ‘মাশ; অতঃপর সনদ পূর্ববৎ, কিন্তু আ‘মাশ থেকে ইসমাইল ইব্ন যাকারিয়্যা فَلْيُرِقْهُ শব্দ বলেননি।[6]
‘আ‘মাশে’র দু’জন ছাত্র: আলি ইব্ন মুসহির ও ইসমাইল ইব্ন যাকারিয়্যা। তাদের থেকে সনদ দু’ভাগ হয়েছে। মুসলিম বলেন: দু’জনের সনদ ও হাদিস হুবহু এক, তবে ইসমাইল فَلْيُرِقْهُ শব্দ বৃদ্ধি করেননি, যা আলি ইব্ন মুসহির বৃদ্ধি করেছেন। উভয়ের হাদিসে পার্থক্য শুধু এখানেই।
আলি ও ইসমাইল উভয়ে সমপর্যায়ের রাবি, তবে ইসমাইলের অনেক মুতাবে‘ ও অনুসারী হাদিস রয়েছে, যা আলি ইব্ন মুসহিরের পক্ষে নেই, স্বয়ং মুসলিম ইসমাইলের স্বপক্ষে তিনটি মুতাবে‘ উল্লেখ করেছেন, যেগুলোয় فَلْيُرِقْهُ শব্দের বৃদ্ধি নেই, যথা:
حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ يَحْيَى، قَالَ: قَرَأْتُ عَلَى مَالِكٍ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا شَرِبَ الْكَلْبُ فِي إِنَاءِ أَحَدِكُمْ، فَلْيَغْسِلْهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ»
“তোমাদের কারো পাত্রে যখন কুকুর পান করে, সে যেন তা সাতবার ধৌত করে”।[7]
দ্বিতীয় মুতাবি‘:
وحَدَّثَنَا زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيل بْنُ إِبْرَاهِيمَ، عَنْ هِشَامِ بْنِ حَسَّانَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ سِيرِينَ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَهُورُ إِنَاءِ أَحَدِكُمْ، إِذَا وَلَغَ فِيهِ الْكَلْبُ، أَنْ يَغْسِلَهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ، أُولَاهُنَّ بِالتُّرَابِ»
“তোমাদের কারো পাত্রে যখন কুকুর চাটে, তার পবিত্রতা হচ্ছে পাত্রটিকে সাতবার ধোয়া, প্রথমবার মাটি দ্বারা”।[8]
তৃতীয় মুতাবি‘:
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ رَافِعٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، حَدَّثَنَا مَعْمَرٌ، عَنْ هَمَّامِ بْنِ مُنَبِّهٍ، قَالَ: هَذَا مَا حَدَّثَنَا أَبُو هُرَيْرَةَ، عَنْ مُحَمَّدٍ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَذَكَرَ أَحَادِيثَ مِنْهَا، وَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «طَهُورُ إِنَاءِ أَحَدِكُمْ، إِذَا وَلَغَ الْكَلْبُ فِيهِ، أَنْ يَغْسِلَهُ سَبْعَ مَرَّاتٍ»
“তোমাদের কারো পাত্রের পবিত্রতা, যখন কুকুর তাতে চাটে, পাত্রটিকে সাতবার ধোয়া”।[9]
চতুর্থ মুতাবি‘: ইমাম বুখারি রাহিমাহুল্লাহ্ বর্ণনা করেন:
حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ يُوسُفَ، عَنْ مَالِكٍ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الْأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا شَرِبَ الْكَلْبُ فِي إِنَاءِ أَحَدِكُمْ فَلْيَغْسِلْهُ سَبْعًا»
“যখন কুকুর তোমাদের কারো পাত্রে পান করে, সে যেন তা সাতবার ধৌত করে”।[10]
এখানে ইসমাইল ইব্ন যাকারিয়্যার অনুসারী চারটি মুতাবে‘ বা অনুসারী হাদিস দেখলাম, কেউ আলি ইব্ন মুসহিরের ন্যায় فَلْيُرِقْهُ শব্দের বৃদ্ধি করেননি।
হাফেয ইব্ন হাজার বলেন: “ইমাম নাসায়ি বলেন: আমাদের জানা মতে এ হাদিসে فَلْيُرِقْهُ শব্দ বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আলি ইব্ন মুসহিরের কোনো মুতাবে‘ বা অনুসারী হাদিস নেই। হামযাহ আল-কিনানি বলেন: ‘আলি ইব্ন মুসহিরের হাদিস মাহফুয নয় [অর্থাৎ শায], ইব্ন আব্দুল বার রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: ‘আ‘মাশে’র হাফেয ছাত্র শু‘বা ও আবু মু‘আবিয়া এ শব্দ বৃদ্ধি করেননি। ইব্ন মানদাহ বলেন: আলি ইব্ন মুসহির ব্যতীত কোনো সূত্রে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এ শব্দের বৃদ্ধি জানা যায়নি”।[11]
আমরা ইব্ন হাজার রাহিমাহুল্লাহু থেকে জানলাম যে, মুহাদ্দিসগণ আলি ইব্ন মুসহিরের বৃদ্ধিকে শায বলেছেন, অথচ উভয় বর্ণনায় কোনো বৈপরীত্য নেই। দ্বিতীয়ত কুকুরে চাটা পাত্র পবিত্র করার পূর্বে পানি ফেলে দেওয়া জরুরি, যা فَلْيُرِقْهُ শব্দের অর্থ, কারণ কুকুরে চাটা বস্তু পাত্রে রেখে পবিত্র করা সম্ভব নয়, তবুও فَلْيُرِقْهُ শব্দের বৃদ্ধিকে আলেমগণ শায বলেছেন। অতএব আমাদের নিকট প্রমাণিত হল যে, মাকবুল রাবি যদি একাধিক সেকাহ কিংবা তার চেয়ে উত্তম রাবির বিপরীত কোনো শব্দ বৃদ্ধি করেন, যার অতিরিক্ত অর্থ রয়েছে তাই শায, যেমন এখানে আলি ইব্ন মুসহির বর্ণিত فَلْيُرِقْهُ শব্দ শায।
এ উম্মতের প্রথম যুগের আলেমগণ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ নিঃসৃত বাণীকে হুবহু সংরক্ষণ করার জন্য কি পরিমাণ চেষ্টা ও শ্রম ব্যয় করেছেন, দেখলে অবাক লাগে। দীনের দুশমন এবং ইসলাম ও মুসলিম উম্মাহর শত্রু ব্যতীত কেউ উম্মতের প্রথম যুগের মনীষীদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে না।
আজান পরবর্তী দো‘আয়إِنَّكَ لا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ বৃদ্ধি শায:
قال الإمام البخاري -رحمه الله- في صحيحه- حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، قَالَ: حَدَّثَنَا شُعَيْبُ بْنُ أَبِي حَمْزَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ، اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
আমরা এ সনদে দেখছি: ইমাম বুখারির উস্তাদ আলি ইব্ন ‘আইয়াশ; তার উস্তাদ শু‘আইব ইব্ন আবু হামযাহ; তার উস্তাদ মুহাম্মদ ইব্ন মুনকাদির; তার উস্তাদ সাহাবি জাবের ইব্ন আব্দুল্লাহ রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে কেউ আযান শ্রবণ করার পর বলল:
«اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ»
কিয়ামতের দিন আমার সুপারিশ তার জন্য অবধারিত হয়ে গেল”।[12]
قال الإمام الترمذي –رحمه الله- حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ سَهْلِ بْنِ عَسْكَرٍ الْبَغْدَادِيُّ، وَإِبْرَاهِيمُ بْنُ يَعْقُوبَ، قَالَا: حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ الْحِمْصِيُّ، حَدَّثَنَا شُعَيْبُ بْنُ أَبِي حَمْزَةَ، حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ إِلَّا حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ».
এ সনদে দেখছি ইমাম তিরমিযির উস্তাদ দু’জন: মুহাম্মদ ইব্ন সাহাল ইব্ন আসকার বাগদাদি ও ইবরাহিম ইব্ন ইয়া‘কুব;[13] অতঃপর সাহাবি পর্যন্ত ইমাম বুখারি ও তার সনদ পূর্ববৎ। ইমাম তিরমিযি (মৃ.২৫৬হি.) ও ইমাম বুখারি (মৃ.২৫৬হি.) উভয়ে সমবয়সী ও এক যুগের, তবে তিরমিযি ছিলেন ছাত্র ও বুখারি ছিলেন উস্তাদ। এ হাদিস ইমাম তিরমিযি ইমাম বুখারি ব্যতীত অপর দু’উস্তাদ মুহাম্মদ ইব্ন সাহাল ও ইবরাহিম ইব্ন ইয়াকুব থেকে নিয়েছেন।
قال الإمام أبو داود –رحمه الله- حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ حَنْبَلٍ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، حَدَّثَنَا شُعَيْبُ بْنُ أَبِي حَمْزَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّه، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، إِلَّا حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
এ সনদে দেখছি ইমাম আবু দাউদ (মৃ২৭৫হি.) এর উস্তাদ ইমাম আহমদ ইব্ন মুহাম্মদ ইব্ন হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ্ (মৃ২৪১হি.);[14] তারপর থেকে বুখারি, তিরমিযি ও আবু দাউদের সনদ পূর্ববৎ।
قال الإمام النسائي –رحمه الله- أَخْبَرَنَا عَمْرُو بْنُ مَنْصُورٍ، قال: حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، قال: حَدَّثَنَا شُعَيْبٌ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرٍ، قال: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَابْعَثْهُ الْمَقَامَ الْمَحْمُودَ الَّذِي وَعَدْتَهُ، إِلَّا حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
এ সনদে দেখছি ইমাম নাসায়ির উস্তাদ আমর ইব্ন মানসুর;[15] তারপর থেকে বুখারি, তিরমিযি, আবু দাউদ ও নাসায়ির সনদ পূর্ববৎ।
قال الإمام ابن ماجة –رحمه الله- حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى، وَالْعَبَّاسُ بْنُ الْوَلِيدِ الدِّمَشْقِيُّ، وَمُحَمَّدُ بْنُ أَبِي الْحُسَيْنِ، قَالُوا: حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ الْأَلْهَانِيُّ، حَدَّثَنَا شُعَيْبُ بْنُ أَبِي حَمْزَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ، قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، إِلَّا حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
এ সনদে দেখছি ইব্ন মাজাহ রাহিমাহুল্লাহর উস্তাদ তিনজন: মুহাম্মদ ইব্ন ইয়াহইয়া, আব্বাস ইব্ন ওয়ালিদ দিমাশকি ও মুহাম্মদ ইব্ন আবুল হুসাইন;[16] তারপর থেকে বুখারি, তিরমিযি, আবু দাউদ, নাসায়ি ও ইব্ন মাজার সনদ পূর্ববৎ। সবার সনদে আলি ইব্ন আইয়াশ আছেন। তারা ব্যতীত ইব্ন খুযাইমাহ, ইব্ন হিব্বান ও অনেক মুহাদ্দিস অভিন্নভাবে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।[17]
ইমাম বায়হাকি রাহিমাহুল্লাহ্ (মৃ.৪৫৮হি.) সুনানে সাগির গ্রন্থে তাদের সবার বিরোধিতা করে বর্ণনা করেন:
قال الإمام البيهقي –رحمه الله- في السنن الصغير- أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللَّهِ الْحَافِظُ، وَأَبُو نَصْرٍ أَحْمَدُ بْنُ عَلِيِّ بْنِ أَحْمَدَ الْفَامِيُّ، قَالا: ثنا أَبُو الْعَبَّاسِ مُحَمَّدُ بْنُ يَعْقُوبَ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ عَوْفٍ، ثنا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، ثنا شُعَيْبُ بْنُ أَبِي حَمْزَةَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءُ: اللَّهُمَّ إِنِّي أَسْأَلُكَ بِحَقِّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلاةِ الْقَائِمَةِ آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، وَابْعَثْهُ الْمَقَامَ الْمَحْمُودَ الَّذِي وَعَدْتَهُ إِنَّكَ لا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ حَلَّتْ لَهُ شَفَاعَتِي».
এ হাদিসে দো‘আর শেষে إِنَّكَ لا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ অতিরিক্ত রয়েছে।[18] অথচ তার সনদেও আলি ইব্ন আইয়াশ আছেন, যার পর থেকে সবার সনদ পূর্ববৎ।
আলি ইব্ন আইয়াশের ছাত্রগণ:
১. ইমাম বুখারি;
২. মুহাম্মদ ইব্ন সাহাল ইব্ন আসকার বাগদাদি ও ইবরাহিম ইব্ন ইয়াকুব, তাদের ছাত্র ইমাম তিরমিযি;
৩. আহমদ ইব্ন মুহাম্মদ ইব্ন হাম্বল, তার ছাত্র ইমাম আবু দাউদ;
৪. আমর ইব্ন মানসুর, তার ছাত্র ইমাম নাসায়ি;
৫. মুহাম্মদ ইব্ন ইয়াহইয়া, আব্বাস ইব্ন ওয়ালিদ দিমাশকি ও মুহাম্মদ ইব্ন আবুল হুসাইন, তাদের ছাত্র ইমাম ইব্ন মাজাহ;
৬. মুসা ইব্ন সাহাল রামলি, তার ছাত্র ইব্ন খুযাইমাহ;
৭. মুহাম্মদ ইব্ন ইয়াহইয়া, তার ছাত্র ইব্ন খুযাইমাহ, তার ছাত্র ইব্ন হিব্বান। তারা কেউ আযান পরবর্তী দো‘আয় إِنَّكَ لا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ বৃদ্ধি বর্ণনা করেননি।
তাদের সবার বিরোধিতা করে ‘আলি ইব্ন ‘আইয়াশের অপর ছাত্র মুহাম্মদ ইব্ন ‘আউফ إِنَّكَ لا تُخْلِفُ الْمِيعَادَ বৃদ্ধি করেছেন, যদিও তিনি সেকাহ ও নির্ভরযোগ্য। তার থেকে আবুল আব্বাস মুহাম্মদ ইব্ন ইয়া‘কুব, তার থেকে হাকেম আবু আব্দুল্লাহ ও আবু নাসর আহমদ ইব্ন আলি ইব্ন আহমদ আল-ফামি এবং তাদের থেকে ইমাম বায়হাকি বর্ণনা করেছেন। অতএব বায়হাকির বর্ণনা শায ও গায়রে মাহফুয। এখানে বৃদ্ধি ঘটেছে ‘আলি ইব্ন ‘আইয়াশের ছাত্র মুহাম্মদ ইব্ন ‘আউফ থেকে, কারণ তার দু’জন ছাত্র: আবুল আব্বাস ও হাকেম থেকে বায়হাকি অভিন্নভাবে বর্ণনা করেছেন। আল্লাহ ভালো জানেন।
আযান পরবর্তী দো‘আয় وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيعَةَ বৃদ্ধি শায:
ইমাম নাসায়ির ছাত্র ইব্নু সুন্নি[19] (মৃ.৩৬৪হি.) তাদের সবার বিরোধিতা করে বর্ণনা করেন:
قال الإمام ابن السني –رحمه الله- حَدَّثَنَا أَبُو عَبْدِ الرَّحْمَنِ، أَخْبَرَنَا عَمْرُو بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ عَيَّاشٍ، حَدَّثَنَا شُعَيْبٌ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْمُنْكَدِرِ، عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللَّهِ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: " مَنْ قَالَ حِينَ يَسْمَعُ النِّدَاءَ: «اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ، وَالصَّلاةِ الْقَائِمَةِ، آتِ مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيعَةَ، وَابْعَثْهُ مَقَامًا مَحْمُودًا الَّذِي وَعَدْتَهُ، حَلَّتْ لَهُ الشَّفَاعَةُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ»
এ সনদে আযান পরবর্তী দো‘আয় وَالْفَضِيلَةَ শব্দের পর وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيعَةَ বাক্যের বৃদ্ধি ঘটেছে। অথচ এ সনদেও ‘আলি ইব্ন ‘আইয়াশ আছেন, তার থেকে ‘আমর ইব্ন মানসুর, তার থেকে আবু আব্দুর রহমান, তথা ইমাম নাসায়ি। আমরা পূর্বে দেখেছি ইমাম নাসায়ি তার সুনান গ্রন্থে স্বীয় উস্তাদ ‘আমর ইব্ন মানসুর থেকে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন, কিন্তু সেখানে وَالدَّرَجَةَ الرَّفِيعَةَ শব্দের বৃদ্ধি নেই। তাই আমরা নিশ্চিত ‘আলি ইব্ন ‘আইয়াশের ছাত্র ‘আমর ইব্ন মানসুর কিংবা তার ছাত্র ইমাম নাসায়ি থেকে বৃদ্ধি ঘটেনি, খুব সম্ভব ইব্ন সুন্নি থেকে এ বৃদ্ধি ঘটেছে। আল্লাহ ভালো জানেন।মুদ্দাকথা: ইব্ন সুন্নির বর্ণনা বায়হাকিসহ সকল মুহাদ্দিসের বিপরীত, অনুরূপ বায়হাকির বর্ণনা ইব্ন সুন্নিসহ সকল মুহাদ্দিসের বিপরীত, তাই তাদের বর্ণনা শায, যা একপ্রকার দুর্বল হাদিস; পক্ষান্তরে ইমাম বুখারি প্রমুখদের বর্ণনা মাহফুয ও সহি। অতএব আযানের দো‘আয় এ দু’টি শব্দ বৃদ্ধি করা দুরস্ত নয়।
>[2] [সূরা আরাফ: (৮৮)]
[3] [সূরা নাহাল: (১২৭)]
[4] আন-নুযহাহ: (পৃ.৯৮)
[5] আল-জাওয়াহিরুস সুলাইমানিয়াহ: (৩০২-৩০৩)
[6] মুসলিম: (২৭৯)
[7] মুসলিম: (২৮০)
[8] মুসলিম: (২৮১)
[9] মুসলিম: (২৮২)
[10] বুখারি: (১৭২)
[11] ফাতহুল বারি: (৩০১), জাওয়াহিরি থেকে নেয়া।
[12] বুখারি: (৬১৪), দো‘আর অর্থ: ‘হে আল্লাহ, এ পরিপূর্ণ আহ্বান ও প্রতিষ্ঠিত সালাতের প্রভু, আপনি মুহাম্মদকে উসিলা ও ফযিলত দান করুন এবং তাকে প্রশংসিত স্থানে অধিষ্ঠিত করুন, যার ওয়াদা আপনি করেছেন’।
[13] তিরমিযি: (২১১)
[14] আবু দাউদ: (৫২৯)
[15] সুনানুস সুগরা লিন নাসায়ি: (৬৮০), সুনানুল কুবরা লিন নাসায়ি (১৬৩০) ও (৯৪৮২)
[16] ইব্ন মাজাহ: (৭২২)
[17] ইব্ন খুযাইমাহ রহ. এর উস্তাদ মুসা ইব্ন সাহাল রামলি, তার উস্তাদ আলি ইব্ন আইয়াশ। ইব্ন হিব্বান রহ. এর উস্তাদ ইব্ন খুযাইমাহ‘ ; তার উস্তাদ মুহাম্মদ ইব্ন ইয়াহইয়া, তার উস্তাদ আলি ইব্ন ‘আইইয়াশ। সহি ইব্ন খুযাইমাহ‘ : (৪২১), সহি ইব্ন হিব্বান: (১৭২৩)
[18] সুনানুস সাগির লিল বায়হাকি: (১/৪০৯), হাদিস নং: (১৭৫৯), সুনানুল কুবরা লিল বায়হাকি: (১৪৮)
[19] ‘আমালুল ইওয়াম ওয়াল লাইলাহ’: লি ইব্নুস সুন্নি: (৯৬)
قال الإمام مسلم –رحمه الله- حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا هُشَيْمٌ، أَخْبَرَنَا حُصَيْنُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، قَالَ: " كُنْتُ عِنْدَ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، فَقَالَ: ... ... وَلَكِنْ حَدَّثَنَا ابْنُ عَبَّاسٍ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: « ... ... هُمُ الَّذِينَ لَا يَرْقُونَ، وَلَا يَسْتَرْقُونَ، وَلَا يَتَطَيَّرُونَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ»
... ... তবে আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে আমাদেরকে বলেন, তিনি বলেছেন: “তারাই, যারা ঝাড়-ফুঁক করে না, ঝাড়-ফুঁক তলব করে না, কুলক্ষণ গ্রহণ করে না এবং তাদের রবের উপর তারা তাওয়াক্কুল করে”।[1]
قال الإمام البخاري –رحمه الله- حَدَّثَنِي إِسْحَاقُ، حَدَّثَنَا رَوْحُ بْنُ عُبَادَةَ، حَدَّثَنَا شُعْبَةُ، قَالَ: سَمِعْتُ حُصَيْنَ بْنَ عَبْدِ الرَّحْمَنِ قَالَ: كُنْتُ قَاعِدًا عِنْدَ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، فَقَالَ: عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ: أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «يَدْخُلُ الْجَنَّةَ مِنْ أُمَّتِي سَبْعُونَ أَلْفًا بِغَيْرِ حِسَابٍ، هُمُ الَّذِينَ لَا يَسْتَرْقُونَ، وَلَا يَتَطَيَّرُونَ، وَعَلَى رَبِّهِمْ يَتَوَكَّلُونَ»
... ... আব্দুল্লাহ ইব্ন আব্বাস থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: “আমার উম্মত থেকে শত্তুর হাজার বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করবে; যারা ঝাড়-ফুঁক তলব করে না, কুলক্ষণ গ্রহণ করে না এবং তাদের রবের উপর তারা তাওয়াক্কুল করে”।[2]
আমাদের সামনে ইমাম মুসলিম ও বুখারির দু’টি সনদে একটি হাদিস বিদ্যমান। মুসলিমের সনদে لَا يَرْقُونَ রয়েছে, যা ইমাম বুখারির সনদে নেই। উভয় ইব্ন আব্বাস সূত্রে বর্ণনা করেছেন, তাই হাদিস এক। ইব্ন আব্বাস (মৃ.৬৮হি.); এর ছাত্র সা‘ঈদ ইব্ন জুবায়ের (মৃ.৯৫হি.); তার ছাত্র হুসাইন ইব্নে আব্দুর রহমান (মৃ.১৩৬হি.); তার ছাত্র দু’জন: শু‘বা (মৃ.১৬০হি.) ও হুশাইম (মৃ.১৮৩হি.) থেকে বুখারি ও মুসলিমের সনদ ভাগ হয়েছে। শু‘বার ছাত্র রাওহু ইব্নু উবাদাহ (মৃ২০৫হি.), তার ছাত্র ইসহাক (মৃ২৫১হি.), তার ছাত্র ইমাম বুখারি (মৃ.২৫৬হি.)। আর হুশাইমের ছাত্র সা‘ঈদ ইব্ন মানসুর (মৃ.২২৭হি.); তার ছাত্র ইমাম মুসলিম (মৃ.২৬১হি.)।
হাদিসটি ইমাম বুখারি নিয়েছেন হুসাইনের ছাত্র শু‘বা থেকে, ইমাম মুসলিম নিয়েছেন হুসাইনের ছাত্র হুশাইম থেকে। হুশাইমের হাদিসে لَا يَرْقُونَ রয়েছে, শু‘বার হাদিসে যা নেই। যদিও উভয়ই সেকাহ[3], তবে হুশাইম অপেক্ষা শু‘বা অধিক সেকাহ, তাই শু‘বার হাদিস মাহফুয ও হুশাইমের বৃদ্ধি শায। দ্বিতীয়ত শু‘বার স্বপক্ষে শাহেদ ও মুতাবি‘ রয়েছে, যা হুশাইমের পক্ষে নেই।[4] অতএব হুশাইমের لَا يَرْقُونَ বৃদ্ধি গ্রহণযোগ্য নয়।
শায়খুল ইসলাম ইব্নে তাইমিয়াহ রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: لَا يَرْقُونَ বৃদ্ধি শায, কারণ নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও জিবরীল ‘আলাইহিস সালাম ঝাড়ফুঁক করেছেন, অতএব মতনের এ বাক্য হাদিস হতে পারে না। ইব্ন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু সূত্রে ইমাম বুখারি[5] বর্ণনা করেন:
حَدَّثَنَا عُثْمَانُ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا جَرِيرٌ، عَنْ مَنْصُورٍ، عَنْ الْمِنْهَالِ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُمَا، قَالَ: «كَانَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يُعَوِّذُ الْحَسَنَ وَالْحُسَيْنَ، وَيَقُولُ: إِنَّ أَبَاكُمَا كَانَ يُعَوِّذُ بِهَا إِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ»
“নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাসান ও হুসাইনকে ঝাড়-ফুঁক করতেন এবং বলতেন: নিশ্চয় তোমাদের পিতা ইবরাহিম নিম্নের বাক্যগুলো দ্বারা ইসমাইল ও ইসহাককে ঝাঁড়ফুক করতেন:
«أَعُوذُ بِكَلِمَاتِ اللَّهِ التَّامَّةِ مِنْ كُلِّ شَيْطَانٍ وَهَامَّةٍ وَمِنْ كُلِّ عَيْنٍ لَامَّةٍ»
জ্ঞাতব্য: অপরকে ঝাড়-ফুঁক করা ও অপরের নিকট তলব করা এক নয়। কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক ঝাঁড়-ফুককারী অপরকে উপকার করে, যা তাওয়াক্কুলের পরিপন্থী নয়, কিন্তু ঝাড়-ফুঁক তলবকারী অপরের নিকট নিজের প্রয়োজন পেশ করে, যা বৈধ হলেও উঁচু পর্যায়ের তাওয়াক্কুল পরিপন্থী।এ হাদিসে দু’টি দোষ: একটি সেকাহ রাবির বিরোধিতা অপরটি ইল্লত। হুশাইম لَا يَرْقُونَ শব্দ বৃদ্ধি করে তার চেয়ে অধিক সেকাহ রাবির বিরোধিতা করেছেন তাই তার হাদিস শায; দ্বিতীয়ত এ শব্দ প্রমাণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও জিবরীলের কর্ম উঁচু পর্যায়ের তাওয়াক্কুল পরিপন্থী ছিল তাই হাদিসটি মু‘আল্।
>[2] বুখারি: (৬৪৭২), এ হাদিসের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আবু সুলাইমান খাত্তাবি রহ. প্রমুখগণ বলেন: “যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর তাওয়াক্কুল করে এবং তার সিদ্ধান্ত ও পরীক্ষায় সন্তুষ্ট হয়ে এসব চিকিৎসা প্রত্যাখ্যান করে সে এ হাদিসের উদ্দেশ্য। এটা পরিপক্ক ঈমানের অধিকারীদের মর্যাদা”। কাদি ইয়াদ রহ. বলেন: “হাদিসের স্পষ্ট অর্থ ও দাবি সেঁকা ও ঝাঁড়-ফুঁকের মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করা ও অন্যান্য চিকিৎসা পদ্ধতির হুকুম এক”। নবী সা. বৈধতা প্রমাণের জন্য চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন ও তার অনুমতি প্রদান করেছেন। ফাতহুল বারি লি ইব্ন হাজার রহ.।
[3] ‘শু‘বা’ সম্পর্কে হাফেজ ইব্ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “সেকাহ, হাফেযে হাদিস ও ইবাদত গুজার, ইরাকে সর্বপ্রথম তিনি রাবিদের ভালো-মন্দ যাচাই আরম্ভ করেন এবং সুন্নত থেকে মিথ্যা দূরীভূত করেন”। ‘হুশাইম’ সম্পর্কে তিনি বলেন: “সেকাহ, হাদিসের সুদৃঢ় ইমাম, অধিক তাদলিস ও সূক্ষ্ম ইরসালে অভ্যস্ত। তিনি হাদিসের ইমাম, তার আদালত সম্পর্কে সবাই একমত, তবে তার তাদলিস প্রসিদ্ধ ছিল। সকল ইমাম তাকে দলিল হিসেবে গ্রহণ করেছেন”। দেখুন: তাহযিবুত তাহযীব, লি ইব্ন হাজার রহ.।
[4] অধিকন্তু ইমাম বুখারি রহ. হুসাইন ইব্ন আব্দুর রহমানের দু’জন ছাত্র: হুশাইম এবং মুহাম্মদ ইব্ন ফুদাইল সূত্রে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন, তাতে لَا يَرْقُونَ শব্দের বৃদ্ধি নেই। বুখারি: (৬৫৪১); অনুরূপ ইমাম মুসলিম সাহাবি ‘ইমরান ইব্ন হুসাইন থেকে এ হাদিস বর্ণনা করেছেন তাতে لَا يَرْقُونَ শব্দের বৃদ্ধি নেই। অতএব শাহেদ ও মুতাবি‘ থাকার ফলে শু‘বার হাদিস আরো শক্তিশালী। দেখুন: মুসলিম: (২২০) ও (২২১)
[5] বুখারি: (৩৩৭১)
শাযের জন্য এক হাদিস হওয়া জরুরি নয়, কখনো ভিন্ন দু’টি হাদিস একটির কারণে অপরটি শায হয়, যেমন:
قال الإمام أبو داود -رحمه الله- حَدَّثَنَا قُتَيْبَةُ بْنُ سَعِيدٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ، قَالَ: قَدِمَ عَبَّادُ بْنُ كَثِيرٍ الْمَدِينَةَ، فَمَالَ إِلَى مَجْلِسِ الْعَلَاءِ فَأَخَذَ بِيَدِهِ فَأَقَامَهُ، ثُمَّ قَالَ: اللَّهُمَّ إِنَّ هَذَا يُحَدِّثُ عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «إِذَا انْتَصَفَ شَعْبَانُ، فَلَا تَصُومُوا»
“... ... আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যখন শাবানের অর্ধেক হয়, তোমরা সিয়াম রেখ না”।[1] আবু দাউদসহ অন্যান্য সুনান গ্রন্থকারগণ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন। অনেকের নিকট হাদিসটি সহি, তাই তারা শাবানের শেষার্ধে সিয়াম রাখা মাকরুহ বলেন, তবে যার সিয়াম রাখার অভ্যাস আছে তার পক্ষে মাকরুহ নয়।
ইমাম আহমদ রাহিমাহুল্লাহ্ বলেছেন: “হাদিসটি শায, কারণ অন্যান্য সহি হাদিস তার পরিপন্থী, তাই সিয়াম রাখা মাকরুহ নয়”। তিনি বর্ণনা করেন:
حَدَّثَنَا وَكِيعٌ، حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ الْمُبَارَكِ، عَنْ يَحْيَى بْنِ أَبِي كَثِيرٍ، عَنِ أَبِي سَلَمَةَ، عَنِ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «لَا تَقَدَّمُوا شَهْرَ رَمَضَانَ بِصِيَامِ يَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ، إِلَّا رَجُلًا كَانَ يَصُومُ صَوْمًا فَلْيَصُمْهُ»
“তোমরা এক দিন অথবা দু’দিনের সিয়াম দ্বারা রমযানকে এগিয়ে এনো না, তবে যে পূর্ব থেকে সিয়াম রাখত, সে যেন তাতে সিয়াম রাখে”।[2]
এ হাদিস অধিক সহি তাই মাহফুয, যা প্রমাণ করে রমযানের দু’দিন পূর্বে, তথা শাবানের শেষার্ধে সিয়াম রাখা বৈধ। হাদিস দু’টি আলাদা, তবু আহলে ইলম অধিকতর সহি হাদিসের কারণে অপেক্ষাকৃত কম সহি হাদিসকে শায বলেছেন। এ থেকে প্রমাণিত হয় যে, শাযের জন্য এক হাদিস হওয়া জরুরি নয়।
এ ছাড়া অন্যান্য সহি হাদিসও প্রমাণ করে শাবানের শেষার্ধে সিয়াম রাখা বৈধ, যেমন ইমাম বুখারি ও মুসলিম বর্ণনা করেন:
«لَا يَتَقَدَّمَنَّ أَحَدُكُمْ رَمَضَانَ بِصَوْمِ يَوْمٍ أَوْ يَوْمَيْنِ، إِلَّا أَنْ يَكُونَ رَجُلٌ كَانَ يَصُومُ صَوْمَهُ فَلْيَصُمْ ذَلِكَ الْيَوْمَ»
“তোমাদের কেউ রমযানকে একদিন বা দু’দিনের সিয়াম দ্বারা এগিয়ে আনবে না, তবে যে নিজের সিয়াম পালন করত, সে যেন ঐ দিন সিয়াম রাখে”।[3]
এ হাদিস প্রমাণ করে সিয়ামে অভ্যস্ত ব্যক্তির জন্য শাবানের শেষার্ধে সিয়াম পালন করা বৈধ, যেমন কোনো ব্যক্তির অভ্যাস সোম ও বৃহস্পতিবার সিয়াম পালন করা, অথবা একদিন সিয়াম রাখা ও একদিন ইফতার করা, তার জন্য রমযানের এক-দু’ দিন পূর্বে সিয়াম রাখা দোষণীয় নয়, যা يوم الشك বা সন্দেহের দিন নামে পরিচিত। এ দিন ব্যতীত শাবানের শেষার্ধে কারো জন্য সিয়াম রাখা দোষণীয় নয়।
এখানে আমরা শায ও শাযের বিপরীত মাহফুয জানলাম। এ ছাড়া আরো প্রকার রয়েছে, লেখক যা উল্লেখ করেননি, যেমন সেকাহ রাবির বিরোধিতাকারী যদি দুর্বল হয়, তখন তার হাদিসকে মুনকার বলা হয়। মুনকার শাযের চেয়েও খারাপ, কারণ সে দুর্বল হয়েও সবলের বিরোধিতা করেছে। মুনকারের বিপরীত মারূফ। অতএব চার প্রকার হল: শায ও মাহফুয, মুনকার ও মারূফ।
একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর:
প্রশ্ন হতে পারে: ‘শায’ একটি সুপ্ত দোষ বা ইল্লত, যা একাধিক সনদ জমা করা ব্যতীত জানা সম্ভব নয়। অনুরূপ ইদতিরাব, কালব ও ইদরাজ সুপ্ত ইল্লত, যা একাধিক সনদ জমা করা ছাড়া জানা যায় না, তবু কেন মুহাদ্দিসগণ ‘সহি’র জন্য শায না হওয়া র্শত করেছেন, কিন্তু ইদতিরাব, কালব ও ইদরাজ না হওয়া শর্ত করেননি?
উত্তর: মুহাদ্দিসগণ জমহুর ফুকাহার বিপরীত নিজেদের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন, কারণ তারা ‘শায’কে ইল্লত মানেন না, অথচ ইদতিরাব, ইদরাজ ও কালবকে ইল্লত মানেন। তারা সেকাহ রাবির অতিরিক্ত শব্দকে গ্রহণ করেন, যদিও একাধিক সেকাহ রাবির বর্ণিত হাদিস বিরোধী হয়, তবে উভয় বর্ণনা জমা করা অসম্ভব হলে তারাও অতিরিক্ত শব্দ ত্যাগ করেন। মুহাদ্দিসগণ মুত্তাসিল ও মুরসাল বিরোধ হলে অধিক সেকাহ রাবির বর্ণনাকে প্রাধান্য দেন, কিন্তু ফকিহগণ সমন্বয় করার চেষ্টা করেন।‘শায’ এর হুকুম: শায শাহেদ ও মুতাবে‘ হওয়ার উপযুক্ত নয়।
[2] আহমদ: (৯৮২৮),
[3] বুখারি: (১৯১৪), মুসলিম: (১০৮২)
مقْلوبُ এর আভিধানিক অর্থ উল্টো। কোনো বস্তুর উপরের অংশ নীচে ও নীচের অংশ উপরে হলে ‘মাকলুব’ বলা হয়, যেমন বলা হয়: الثوب المقلوب উল্টো কাপড়। قلب ‘কালব’ ক্রিয়া বিশেষ্য, অর্থ পরিবর্তন। ‘মাকলুব’ কর্মবাচক বিশেষ্য, অর্থ উল্টো।
কালব দু’প্রকার: ১. কালবে সনদ, ২. কালবে মতন।
১. কালবে সনদ প্রসঙ্গে লেখক বলেন: “সনদের কোনো রাবিকে অপর রাবি দ্বারা পরিবর্তন করা”।
কালবে সনদ দু’প্রকার:
ক. আংশিক কালব ও খ. সম্পূর্ণ কালব।
ক. আংশিক কালব বিভিন্ন প্রকার হয়:
এক. কোনো সনদে এক রাবির জায়গায় অপর রাবিকে উল্লেখ করা আংশিক কালব, যেমন:
قال الإمام البيهقي –رحمه الله- أَخْبَرَنَا أَبُو طَاهِرٍ الْفَقِيهُ، أنبأ أَبُو بَكْرٍ مُحَمَّدُ بْنُ الْحُسَيْنِ الْقَطَّانُ، ثنا أَحْمَدُ بْنُ يُوسُفَ السُّلَمِيُّ، ثنا مُحَمَّدُ بْنُ يُوسُفَ، قَالَ: ذَكَرَ سُفْيَانُ، عَنْ سُهَيْلِ بْنِ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا لَقِيتُمُ الْمُشْرِكِينَ فِي الطَّرِيقِ، فَلا تَبْدَءُوهُمْ بِالسَّلامِ، وَاضْطَرُّوهُمْ إِلَى أَضْيَقِهِ»
এ সনদে সর্বশেষ রাবি সাহাবি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু; তার ছাত্র আবু সালেহ; তার ছাত্র সুহাইল ইব্ন আবু সালেহ; তার ছাত্র সুফিয়ান[1]; মুহাদ্দিসদের নিকট সনদটি এভাবেই প্রসিদ্ধ, তাদের বিপরীত ইমাম তাবরানি বর্ণনা করেন:
حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَمْرٍو الْحَرَّانِيُّ، ثَنَا أَبِي، نا حَمَّادُ بْنُ عَمْرٍو النَّصِيبِيُّ، عَنِ الأَعْمَشِ، عَنْ أَبِي صَالِحٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا لَقِيتُمُ الْمُشْرِكِينَ فِي الطَّرِيقِ فَلا تَبْدَءُوهُمْ بِالسَّلامِ، وَاضْطَرُّوهُمْ إِلَى أَضْيَقِهَا».
এখানে দেখছি আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুর ছাত্র আবু সালেহ, তার ছাত্র আ‘মাশ রাহিমাহুল্লাহ্, তার থেকে হাম্মাদ ইব্নু আমর আন-নাসিবি। হাম্মাদ ইব্ন আমর নাসিবি এ সনদে সুহাইলের জায়গায় আ‘মাশকে উল্লেখ করেছে। ইমাম তাবরানি বলেন: “হাম্মাদ ব্যতীত কেউ আ‘মাশ থেকে এ হাদিস বর্ণনা করেনি”।[2] হাম্মাদ ইব্ন ‘আমর ইচ্ছাকৃতভাবে সুহাইলের জায়গায় আ‘মাশকে উল্লেখ করেছে, হাম্মাদ পরিত্যক্ত রাবি। অতএব তা গ্রহণযোগ্য নয়।
দুই. রাবি ও রাবির পিতার নাম উলট-পালট করা আংশিক কালব, যেমন: ‘মুররাহ ইব্ন কাব’-কে ‘কাব ইব্ন মুররাহ’ বলা আংশিক কালব বা পরিবর্তন।
তিন. এক তবকার রাবির স্থানে অপর তবকার রাবি উল্লেখ করা আংশিক কালব, যেমন রাবিদের নাম অগ্র-পশ্চাৎ করে উস্তাদকে ছাত্র ও ছাত্রকে উস্তাদ বানানো কিংবা উস্তাদের উস্তাদকে ছাত্রের ছাত্র ও ছাত্রের ছাত্রকে উস্তাদের উস্তাদ বনানো। ইব্নু আবি হাতেম ‘ইলাল’[3] গ্রন্থে বলেন:
وَسألت أبي عَنْ حديث حَدَّثَنَا بِهِ أَحْمَد بْن عصام الأَنْصَارِيّ، عَنْ أَبِي بَكْر الحنفي، عَنْ سُفْيَانَ ، عَنحكيمبْنسَعْدٍ ، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ ظبيان، عَنْ سَلْمَانَ، أَنَّهُ قَالَ: " من وَجَدَ فِي بطنه رزًا من بولٍ أو غائطٍ فلينصرف غير متكلم ولا داعي ".
আমার পিতা আবু হাতেমকে আমি একটি হাদিস সম্পকে জিজ্ঞাসা করেছি, যা আমাদেরকে বলেছে আহমদ ইব্ন ইসাম আল-আনসারি, আবু বকর আল-হানাফি থেকে, তিনি সুফিয়ান থেকে, তিনি হাকিম ইব্ন সাদ থেকে, তিনি ইমরান ইব্ন যাবইয়ান থেকে, তিনি সালমান থেকে, তিনি বলেছেন: “যে ব্যক্তি তার পেটে পেশাব অথবা পায়খানার প্রয়োজন অনুভব করে, সে যেন কথা ও ডাকাডাকি ব্যতীত প্রস্থান করে”। আমার পিতা বললেন, এ সনদে কালব হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সনদটি এরূপ:
سُفْيَان، عَنْ عِمْرَانَ بْنِ ظبيان، عَن حكيم بْن سَعْدٍ، عَنْ سَلْمَانَ
খ. সম্পূর্ণ কালব:
এক মতনের পূর্ণ সনদ অপর মতনের সাথে জুড়ে দেওয়া, কিংবা তার বিপরীত করা পূর্ণ কালব। লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ দ্বিতীয় পঙক্তিতে এ প্রকারের বর্ণনা দিয়েছেন। এ প্রকার কালবকে কালবে মতনও মানা যায়। কারণ, এক সনদের জায়গায় অপর সনদ জুড়ে দিলে যেরূপ কালবে সনদ হয়, অনুরূপ কালবে মতনও হয়, অর্থাৎ এক মতনের জায়গায় অপর মতন স্থাপি হয়। এ হিসেবে লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ কলবে সনদ ও কলবে মতন উভয় উল্লেখ করেছেন। বাগদাদে ইমাম বুখারিকে পরীক্ষা করার ঘটনা সম্পূর্ণ কালবের উদাহরণ। ঘটনাটি নিম্নরূপ:
বাগদাদবাসীরা যখন জানল যে, ইমাম বুখারি তাদের নিকট আসছেন, তারা ইমাম বুখারিকে পরীক্ষা করার ইচ্ছা করল। তারা সিদ্ধান্ত নিলো দশজন প্রখর ধী শক্তিমান ব্যক্তি দশটি হাদিস করে মোট একশো হাদিস সনদ পাল্টে বুখারির নিকট পেশ করব। যখন বুখারি আসলেন, মানুষেরা তার নিকট জমা হল। তারা দশটি করে মোট একশো হাদিস পেশ করল। তারা যখন সনদসহ এক একটি হাদিস পেশ করত, বুখারি তাদের উত্তরে বলতেন: আমি জানি না। এভাবে তারা একশো হাদিস পূর্ণ করল। সাধারণ লোকেরা বলতে লাগল, সে কিছু জানে না, একশো হাদিস পেশ করা হল, প্রত্যেকটির ব্যাপারে সে বলল: আমি জানি না! অতঃপর তিনি দাঁড়ালেন এবং প্রত্যেক হাদিস সঠিক সনদসহ বলা আরম্ভ করলেন। এভাবে তিনি একশো হাদিস শেষ করলেন। এ থেকে তারা জানল যে, সে আসলে আল্লাহর মহান এক কুদরত। তারা সবাই তার বড়ত্বের স্বীকৃতি দিল ও তার সামনে নত হল।
এ জাতীয় কালব সাধারণত পরীক্ষার জন্য করা হয়। কখনো ধোঁকা দেওয়ার উদ্দেশ্যে করা হয়, যেমন কেউ দুর্বল সনদের কোনো হাদিস সহি সনদে প্রচার করল। এটাও এক জাতীয় তাদলিস, তবে কালব থাকার কারণে মাকলুবও।
খ. কালবে মতন: কালবে মতন বিভিন্নভাবে হয়, যেমন:
قال أبوحاتم ابن حبان –رحمه الله- أَخْبَرَنَا الْحَسَنُ بْنُ سُفِيانَ، قَالَ: حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْحَجَّاجِ السَّامِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا وُهَيْبٌ، عَنْ يَحْيَى بْنِ سَعِيدٍ الأَنْصَارِيِّ، وَإِسْمَاعِيلُ بْنُ أُمَيَّةَ، وَعُبَيْدُ اللَّهِ بْنُ عُمَرَ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ حِبَّانَ، عَنْ عَمِّهِ وَاسِعِ بْنِ حَبَّانَ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: «رَقِيتُ فَوْقَ بَيْتِ حَفْصَةَ، فَإِذَا أَنَا بِالنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ جَالِسًا عَلَى مَقْعَدَتِهِ مُسْتَقْبِلَ الْقِبْلَةِ، مُسْتَدْبِرَ الشَّامِ».
ইব্ন হিব্বানের[4] এ হাদিসে কালব ও পরিবর্তণ হয়েছে। রাবি এখানে الْقِبْلَةِ এর জায়গায় الشَّامِ এবং الشَّامِ এর জায়গায় الْقِبْلَةِ স্থাপন করেছেন। হাদিসের প্রকৃতরূপ ইমাম বুখারি[5] প্রমুখ বর্ণনা করেছেন, যেমন:
قال الإمام البخاري –رحمه الله- حَدَّثَنَا إِبْرَاهِيمُ بْنُ الْمُنْذِرِ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَنَسُ بْنُ عِيَاضٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ يَحْيَى بْنِ حَبَّانَ، عَنْ وَاسِعِ بْنِ حَبَّانَ، عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ عُمَرَ، قَالَ: «ارْتَقَيْتُ فَوْقَ ظَهْرِ بَيْتِ حَفْصَةَ لِبَعْضِ حَاجَتِي، فَرَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْضِي حَاجَتَهُ مُسْتَدْبِرَ الْقِبْلَةِ مُسْتَقْبِلَ الشَّأْمِ».
কালবে মতনের দ্বিতীয় উদাহরণ:
قال الإمام مسلم –رحمه الله- حَدَّثَنِي زُهَيْرُ بْنُ حَرْبٍ، وَمُحَمَّدُ بْنُ الْمُثَنَّى جميعا، عَنْ يَحْيَى الْقَطَّانِ، قَالَ زُهَيْرٌ: حَدَّثَنَا يَحْيَى بْنُ سَعِيدٍ، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، أَخْبَرَنِي خُبَيْبُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ: وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ يَمِينُهُ مَا تُنْفِقُ شِمَالُهُ ... ».
“সাতজনকে আল্লাহ তা‘আলা তার ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না, ... ... আর সে ব্যক্তি যে কোনো সদকা করল এবং সদকাকে সে গোপন করল যে, তার ডান হাত জানেনি তার বাঁ হাত কি খরচ করেছে”।[6]
এখানে ডান হাতের জায়গায় বাঁ হাত ও বাঁ হাতের জায়গায় ডান হাত উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকৃতরূপ বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারি:
قال الإمام البخاري –رحمه الله- حَدَّثَنَا مُسَدَّدٌ، حَدَّثَنَا يَحْيَى، عَنْ عُبَيْدِ اللَّهِ، قَالَ: حَدَّثَنِي خُبَيْبُ بْنُ عَبْدِ الرَّحْمَنِ، عَنْ حَفْصِ بْنِ عَاصِمٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: «سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمُ اللَّهُ تَعَالَى فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ، ... ... وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا تُنْفِقُ يَمِينُهُ... ».
“সাতজনকে আল্লাহ তা‘আলা তার ছায়াতলে আশ্রয় দিবেন, যে দিন তার ছায়া ব্যতীত কোনো ছায়া থাকবে না, ... ... আর সে ব্যক্তি যে কোনো সদকা করল এবং সদকাকে সে গোপন করল যে, তার বাঁ হাত জানেনি তার ডান হাত কি খরচ করেছে”।[7]
এ হাদিসে ডান হাতে খরচ করা ও বাঁ হাতের অজ্ঞতার কথা বলা হয়েছে। এটাই হাদিসের প্রকৃতরূপ।
কালবে মতনের তৃতীয় উদাহরণ:
قال الإمام أبوداود –رحمه الله- حَدَّثَنَا سَعِيدُ بْنُ مَنْصُورٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ مُحَمَّدٍ، حَدَّثَنِي مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ حَسَنٍ، عَنْ أَبِي الزِّنَادِ، عَنِ الْأَعْرَجِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «إِذَا سَجَدَ أَحَدُكُمْ فَلَا يَبْرُكْ كَمَا يَبْرُكُ الْبَعِيرُ وَلْيَضَعْ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ ».
“যখন তোমাদের কেউ সেজদা করে, সে যেন অবনমিত না হয়, যেরূপ অবনমিত হয় উট, আর সে যেন তার দু’হাত তার দু’হাঁটুর পূর্বে রাখে”।[8]
ইব্ন উসাইমিন রাহিমাহুল্লাহ্ ‘মানযুমাহ বাইকুনিয়াহ’র ব্যাখ্যায় বলেন: ‘এখানে কালব হয়েছে। তার প্রমাণ হাদিসের প্রথমাংশ। হাদিসের প্রথমাংশে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম উটের ন্যায় সেজদা করতে নিষেধ করেছেন। আমরা দেখি উট হাঁটুর পূর্বে প্রথমে হাত রাখে, অর্থাৎ প্রথমে সামনের অংশ নিচু করে, অতঃপর পিছনের অংশ নিচু করে। আপনি যদি আগে হাত ও পরে হাঁটু রাখেন, তাহলে আপনিও উটের ন্যায় সেজদা করলেন, যার থেকে নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিষেধ করেছেন। অতএব যখন আপনি বললেন:"وليضع يديه قبل ركبتيه" হাদিসের প্রথম অংশের খিলাফ করলেন, হাদিসের প্রথম অংশের দাবি:"وليضع ركبتيه قبل يديه" এটাই হাদিসের সঠিকরূপ, যেমন ইমাম তিরমিযি ও ইমাম আবু দাউদ বর্ণনা করেছেন। ইমাম তিরমিযি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন:
حَدَّثَنَا سَلَمَةُ بْنُ شَبِيبٍ، وَعَبْدُ اللَّهِ بْنُ مُنِيرٍ، وَأَحْمَدُ بْنُ إِبْرَاهِيمَ الدَّوْرَقِيُّ، وَالْحَسَنُ بْنُ عَلِيٍّ الْحُلْوَانِيُّ، وَغَيْرُ وَاحِدٍ، قَالُوا: حَدَّثَنَا يَزِيدُ بْنُ هَارُونَ، أَخْبَرَنَا شَرِيكٌ، عَنْ عَاصِمِ بْنِ كُلَيْبٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ وَائِلِ بْنِ حُجْرٍ، قَالَ: «رَأَيْتُ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَجَدَ يَضَعُ رُكْبَتَيْهِ قَبْلَ يَدَيْهِ، وَإِذَا نَهَضَ رَفَعَ يَدَيْهِ قَبْلَ رُكْبَتَيْهِ ».
... ... ওয়ায়েল ইব্ন হুজুর রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু বলেন: “আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখেছি, যখন তিনি সেজদা করতেন দু’হাতের পূর্বে দুই হাঁটু রাখতেন। আর যখন তিনি উঠতেন দুই হাঁটুর পূর্বে দুই হাত উঠাতেন”।[9] হাসান ইব্ন ‘আলি হুলওয়ানি সূত্রে ইমাম আবু দাউদ এভাবেই হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।[10]
অতএব আমরা নিশ্চিত যে,«فلا يبرك كما يبرك البعير» এর দাবি: প্রথমে হাঁটু ও পরে হাত রাখা, কারণ সেজদার স্বাভাবিক ক্রম প্রথমে হাঁটু রাখা। অতঃপর হাত, অতঃপর কপাল ও নাক রাখা।
জ্ঞাতব্য: কলব-এ মতনকে ইব্ন জাযারি রাহিমাহুল্লাহ্ منقلب বলেছেন। বালকিনি রাহিমাহুল্লাহ্ معكوس বলেছেন। হাফেয ইব্ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ مُبْدَل বলেছেন।
মাকলুবের হুকুম:মাকলুব একপ্রকার দ্বা‘ঈফ হাদিস। ইব্ন হাজার রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: “যদি কোনো উদ্দেশ্য ছাড়া স্বেচ্ছায় কালব বা পরিবর্তন করা হয়, তাহলে সেটা মাওদু‘ বা বানোয়াট হাদিসের একপ্রকার। আর যদি অনিচ্ছায় ও ভুলে হয়, তাহলে মাকলুব বা মু‘আল্লাল”।[11] সাখাবি রাহিমাহুল্লাহ্ বলেন: ‘বরং এ জাতীয় হাদিস মাওদুর মতই’।[12] শাহেদ ও মুতাবে‘ হওয়ার উপযুক্ত নয়।
[2] মুজামুল আওসাত লিত তাবরানি: (৬৩৫৮)
[3] হাদিস নং: (১৮৫)
[4] সহি ইব্ন হিব্বান: (১৪১৮)
[5] বুখারি: (১৪৮), মুসলিম: (২৬৭)
[6] মুসলিম: (১০৩৩)
[7] বুখারি: (১৪২৩)
[8] আবু দাউদ: (৮৪০)
[9] তিরমিযি: (২৬৮)
[10] আবু দাউদ: (৮৩৮)
[11] আন-নুযহা: (পৃ.১২৭)
[12] দেখুন: শারহুন নুযহাহ, লিল কারি: (পৃ.৪৮৮)