وَكُلُّ واحدٍ أَتَى وَحَدَّهْ
وَذِي مِنَ اقْسامِ الحدِيثِ عِدَّهْ
“এ হলো হাদিসের কয়েকটি প্রকার, [এ কবিতায়] প্রত্যেক প্রকার তার সংজ্ঞাসহ এসেছে”।
"ذي" ইঙ্গিত বাহক বিশেষ্য বা ইসমে ইশারাহ। এর মাধ্যমে তিনি মানযুমায় বর্ণিত হাদিসের প্রকারগুলোর দিকে ইশারা করেছেন। হাদিসের প্রকার দ্বারা মৌলিক ও আনুষঙ্গিক উভয় উদ্দেশ্য। হাদিসের মৌলিক প্রকার তিনটি: সহি, হাসান ও দ্বা‘ঈফ।[1] লেখক প্রথম ছয়টি পঙক্তিতে মৌলিক প্রকার ও অবশিষ্ট পঙক্তিতে আনুষঙ্গিক প্রকারসমূহ উল্লেখ করেছেন।
حديث এর আভিধানিক অর্থ নতুন। আল্লাহর কালাম ‘কাদিম’ বা অনাদির বিপরীত নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণীকে হাদিস বলা হয়, কারণ তার বাণী অপেক্ষাকৃত নতুন। সংবাদকে হাদিস বলা হয়, কারণ সংবাদ অপেক্ষাকৃত নতুন। মুখের কথাও হাদিস, কারণ এগুলো নতুন নতুন অস্তিত্ব লাভ করে। এ হিসেবে কুরআনুল কারিমকে হাদিস বলা হয়। ইরশাদ হচ্ছে:
﴿ فَبِأَيِّ حَدِيثِۢ بَعۡدَ ٱللَّهِ وَءَايَٰتِهِۦ يُؤۡمِنُونَ ٦ ﴾ [الجاثية : ٦]
“অতএব তারা আল্লাহ ও তার আয়াতের পর আর কোন কথায় বিশ্বাস করবে”?[2]
হাদিসের পারিভাষিক অর্থ: নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কর্ম, সম্মতি, চারিত্রিক গুণগান ও সৃষ্টিগত বৈশিষ্ট্যকে হাদিস বলা হয়।
[2] সূরা আল-জাসিয়াহ: (৬)
‘উসুলে হাদিসের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ’-এ আমরা জেনেছি হাদিস শাস্ত্রের দু’টি অংশ: ‘ইলমুর রিওয়াইয়াহ’ ও ‘ইলমুদ দিরাইয়াহ’। সাধারণত ‘ইলমুদ দিরাইয়াহ’-কে উসুলে হাদিস বলা হয়। এখানে হাদিসের প্রকার দ্বারা ‘ইলমুদ দিরাইয়াহ’-র প্রকারসমূহ উদ্দেশ্য।
عدَّة দ্বারা উদ্দেশ্য ‘ইলমুদ দিরায়াহ’র কতক প্রকার, কারণ তিনি সকল প্রকার বর্ণনা করেননি, মাত্র ৩২-টি প্রকার সংজ্ঞাসহ বর্ণনা করেছেন, যা মৌলিক ও অপেক্ষাকৃত গুরুত্বপূর্ণ।
حدّ বলা হয় কোনো বস্তুর এমন সংজ্ঞাকে, যার থেকে তার কোনো প্রকার বাদ পড়ে না, আবার অপর বস্তুর কোনো প্রকার তাতে প্রবেশ করে না।
إسْنادُه ولمْ يَشُذَّ أو يُعَلْ
أَوَّلُها الصَّحِيحُ وَهْوَ ما اتَّصَلْ
مُعْتَمَدٌ في ضَبْطِهِ ونَقْلِهِ
يَرْوِيهِ عَدْلٌ ضابِطٌ عَنْ مِثْلِهِ
“তার প্রথম প্রকার ‘সহি’, আর তা হচ্ছে যার সনদ মুত্তাসিল এবং যা ‘শায’ বা ‘মুয়াল’ নয়। যে হাদিস আদিল ও দাবেত রাবি তার ন্যায় রাবি থেকে বর্ণনা করে, যিনি স্বীয় দ্বাবত ও বর্ণনায় গ্রহণযোগ্য”। লেখকের বর্ণনাক্রম অনুসারে হাদিসের প্রথম প্রকার সহি। এ প্রকারের সম্পর্ক সনদ ও মতন উভয়ের সাথে।
লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ সর্বপ্রথম ‘সহি’ উল্লেখ করেছেন। কারণ ‘সহি’ সর্বোত্তম প্রকার। দ্বিতীয়ত হাদিস শাস্ত্র পঠন ও পাঠন দ্বারা উদ্দেশ্য সহি হাদিস জানা ও তার উপর আমল করা। সহি দু’প্রকার: ১. সহি লি-যাতিহি, অর্থাৎ নিজ সত্তাগুণে সহি, ২. সহি লি-গায়রিহি, অর্থাৎ অপর হাদিস থেকে শক্তি অর্জন করে সহি। দ্বিতীয় প্রকার সহি মূলত হাসান, তবে অপর হাদিসের কারণে সহির মানে উন্নীত হয়েছে। লেখক ‘সহি লি-যাতিহি’র সংজ্ঞা পেশ করেছেন।
أوَّلُها শব্দের সর্বনাম দ্বারা উদ্দেশ্য উসুলে হাদিসের প্রথম প্রকার।
صحيح এর আভিধানিক অর্থ সুস্থ। সাধারণত মানুষের শারীরিক সুস্থতার জন্য ‘সহি’ ব্যবহৃত হয়, যেমন হাদিসে এসেছে: " وَأَنْتَ صَحِيحٌ " ‘তুমি সুস্থাবস্থায়’[1] এ থেকে সনদ ও মতন দোষমুক্ত হলে হাদিসকে সহি বলা হয়।
‘সহি’-র পারিভাষিক সংজ্ঞা প্রসঙ্গে লেখক বলেন: “যে হাদিসের সনদ মুত্তাসিল, যা শায ও মু‘আল্ নয় এবং যার রাবি আদিল ও দাবেত, তার ন্যায় আদিল ও দাবেত রাবি থেকে বর্ণনা করে, যার দ্বাবত ও আদালত গ্রহণযোগ্য”।[2]
লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ ‘সহি’-র পাঁচটি শর্ত উল্লেখ করেছেন:
১. সনদ মুত্তাসিল হওয়া।
২. শায না হওয়া।
৩. মু‘আল্ না হওয়া।
৪. রাবির আদিল হওয়া।
৫. রাবির দ্বাবিত হওয়া।
প্রথম, চতুর্থ ও পঞ্চম তিনটি শর্ত সনদের সাথে সম্পৃক্ত, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শর্ত দু’টি সনদ ও মতন উভয়ের সাথে সম্পৃক্ত।লেখক রাহিমাহুল্লাহ্ সহি হাদিসের শর্ত বর্ণনার ক্ষেত্রে পরম্পরা রক্ষা করেননি। আমরা পরম্পরা রক্ষা করে সনদের সাথে সম্পৃক্ত তিনটি শর্ত প্রথম বর্ণনা করব, অতঃপর শায ও মু‘আল্ না হওয়া দু’টি শর্ত স্ব-স্ব স্থানে বর্ণনা করব।[3] ইনশাআল্লাহ।
[2] সনদ, মুত্তাসিল, সায, মুয়াল, রাবি, আদেল বা আদালত ও দাবত বা দাবেত ইত্যাগি শব্দগুলো আরবি পরিভাষার বাংলা উচ্চারণ। শায ও মু‘আল্ ব্যতীত সবক’টি পরিভাষার ব্যাখ্যা ‘সহি’র অধীনে সামনে আসছে। শায-এর জন্য ২১-নং পঙক্তি এবং মু‘আলের জন্য ২৪-নং পঙক্তির ব্যাখ্যা দেখুন।
[3] শায দেখুন ২১-পঙক্তিতে। মু‘আল্ দেখুন ২৬-পঙক্তিতে।