কুরআন ও হাদীসে বিভিন্ন সামাজিক শিষ্টাচারের শিক্ষা দেওয়া হয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো, বয়স্কদের সম্মান করা। বিভিন্ন হাদীসে যার বয়স বেশি তাকে আগে কথা বলার সুযোগ দেয়া, কোনো দ্রব্য তার হাতে আগে দেয়া বা অনুরূপ সামাজিক কর্মে ও সম্মানে অগ্রাধিকার দেয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সাধারণভাবে বয়স্ক ও বৃদ্ধদেরকে সম্মান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে সহীহ হাদীসের মধ্যে রয়েছে:
لَيْسَ مِنَّا مَنْ لَمْ يَرْحَمْ صَغِيرَنَا وَيَعْرِفْ حَقَّ كَبِيرِنَا (وَلَمْ يُجِلَّ كَبِيْرَنَا)
‘‘যে ব্যক্তি আমাদের মধ্যকার ছোটদের মমতা না করবে এবং বড়দের অধিকার না জানবে (বড়দের সম্মান না করবে) সে আমাদের দলভুক্ত নয়।’’[1]
অন্য হাদীসে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেন:
إِنَّ مِنْ إِجْلاَلِ اللَّهِ عَزَّ وَجَلَّ إِكْرَامَ ذِى الشَّيْبَةِ الْمُسْلِمِ ....
‘‘আল্লাহকে মর্যাদা প্রদর্শনের অংশ হলো শুভ্রতাময় (সাদা চুল-দাড়ি ওয়ালা) বৃদ্ধ মুসলিমকে সম্মান করা...।’’[2]
১. বৃদ্ধের সম্মান আল্লাহর সম্মান
কিন্তু অন্যান্য বিষয়ের মত এ বিষয়েও জালিয়াতগণ জাল হাদীস তৈরি করেছে। এ বিষয়ক জাল বা অত্যন্ত দুর্বল হাদীসগুলোর মধ্যে রয়েছে:
بَجِّلُوْا الْمَشَايِخَ فَإِنَّ تَبْجِيْلَ الْمَشَايِخِ مِنْ تَبْجِيْلِ اللهِ
‘‘তোমরা শাইখ বা বৃদ্ধ মানুষদেরকে সম্মান করবে; কারণ বৃদ্ধদের সম্মান করা আল্লাহর সম্মানের অংশ।’’
এ হাদীসটির অর্থ উপরের নির্ভরযোগ্য হাদীসগুলোর কাছাকাছি। তবে এ শব্দে কোনো হাদীস বর্ণিত হয় নি। মুহাদ্দিসগণ একমত যে হাদীসটি জাল।[3]
[2] আবূ দাউদ, আস-সুনান ৪/২৬১; আলবানী, সহীহুল জামি ১/৪৩৮ (২১৯৯)
[3] ইবনু আর্রাক, তানযীহুশ শারীয়াহ ২০৭।
এ বিষয়ে অন্য একটি জাল হাদীস:
اَلشَّيْخُ فِيْ قَوْمِهِ كَالنَّبِيِّ فِيْ أُمَّتِهِ
‘‘কোনো কওম বা গোত্রের মধ্যে শাইখ বা বয়স্ক মুরববী ব্যক্তি উম্মাতের মধ্যে নবীর মত।’’[1]
শাইখ বলতে রাসূলুল্লাহ (ﷺ) এর যুগে বা পরবর্তী কয়েক শতাব্দী পর্যন্ত দুটি অর্থ বুঝানো হতো। প্রথম অর্থ হলো ‘বৃদ্ধ ব্যক্তি’। এ হলো এই শব্দে মূল শাব্দিক ও ব্যবহারিক অর্থ। দ্বিতীয় অর্থ হলো: ‘‘গোত্রপতি’। পরবর্তী যুগে সুফী বুযুর্গগণকেও ‘শাইখ’ বলা হতো। ফার্সী ‘পীর’ শব্দটিও এ অর্থের।
‘‘শাইখ’’ শব্দটি এ তৃতীয় অর্থে ব্যবহার করা শুরু হওয়ার পরে এ হাদীসটির জালিয়াতি সম্পর্কে অসচেতন কেউ কেউ এ জাল হাদীটিকে তরীকতের শাইখ বা পীর মাশাইখদের মর্যাদার প্রমাণ হিসাবেও উল্লেখ করেছেন। আমরা জানি যে, পীর-মাশাইখদের মর্যাদা রয়েছে নেককার বান্দা হিসাবে এবং আল্লাহর পথের উস্তাদ বা মুরশিদ হিসাবে। তবে এ জাল হাদীসটির সাথে তাদের মর্যাদার কোনো সম্পর্ক নেই।
এ জাতীয় অন্য একটি বানোয়াট কথা: আল্লাহ বলেন,
إِنِّيْ لأَسْتَحْيِيْ مِنْ عَبْدِيْ وَأَمَتِيْ يَشِيْبُ رَأْسُهُمَا... فِيْ الإِسْلاَمِ ثُمَّ أُعَذِّبُهُمَا فِيْ النَّارِ بَعْدَ ذَلِكَ
‘‘আমি লজ্জা পাই যে, ইসলামের মধ্যে আমার বান্দা বা বান্দির চুল-দাড়ি পেকে যাওয়ার পরেও আমি তাদেরকে জাহান্নামে শাস্তি দেব।’’[1]
এ ধরনের অন্য একটি বানোয়াট কথা: ‘‘ইসলামের মধ্যে যার বয়স ৬০ বছর হলো, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামকে হারাম করে দিলেন।’’[2]
[2] প্রাগুক্ত, পৃ. ২২৭।
আরেকটি বানোয়াট কথা:
مَنْ أَتَى عَلَيْهِ أَرْبَعُوْنَ سَنَةً فَلَمْ يَغْلِبْ خَيْرُهُ عَلَى شَرِّهِ فَلْيَتَجَهَّزْ إِلَى النَّارِ
‘‘যার বয়স চল্লিশ হলো, অথচ তার মধ্যে খারাপের চেয়ে ভাল বেশি হলো না; সে জাহান্নামের জন্য প্রস্ত্তত হোক।’’[1]