হাদীসের নামে জালিয়াতি বেলায়াত, আওলিয়া ও ইলম বিষয়ক ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

সাধারণ মানুষ যাতে ‘নির্বিচারে’ জাল হাদীসগুলো গ্রহণ করে, এজন্য জালিয়াতগণ ‘ভক্তিতেই মুক্তি’ মর্মে অনেক হাদীস বানিয়েছে। যেমন:

مَنْ بَلَغَهُ عَنِ اللهِ شَيْءٌ فِيْهِ فَضِيْلَةٌ فَأَخَذَ بِهِ إِيْمَاناً بِهِ وَرَجَاءَ ثَوَابِهِ أَعْطَاهُ اللهُ ثَوَابَ ذَلِكَ وَإِنْ لَمْ يَكُنْ كَذَلِكَ/ وَإِنْ كَانَ الَّذِيْ حَدَّثَهُ كَاذِباً

‘‘যদি কারো কাছে কোনো ‘ফযীলতের’ বা সাওয়াবের কথা পৌঁছে এবং সে তা বিশ্বাস করে এবং সাওয়াবের আশায় তা গ্রহণ করে, তবে আল্লাহ তাকে সে সাওয়াব দান করবেন; যদিও প্রকৃত পক্ষে তা সঠিক না হয়। অথবা তাকে যে কথাটি বলেছে সে যদি মিথ্যাবাদীও হয়।’’

অনুরূপ আরেকটি মিথ্যা ও বানোয়াট হাদীস:

مَنْ بَلَغَهُ عَنِ اللهِ عَزَّ وَجَلَّ فَضِيْلَةٌ فَلَمْ يُصَدِّقْ بِهَا لَمْ يَنَلْهَا

‘‘যদি কারো কাছে মহান আল্লাহর পক্ষ থেকে কোনো ফযীলত বা সাওয়াবের কথা পৌঁছে, কিন্তু সে তা সত্য বলে মেনে না নেয়, তবে সে ব্যক্তি সেই ফযীলতটি লাভ করবে না।’’

দাজ্জালদের বানানো আরেকটি বানোয়াট কথা:

لَوْ حَسَّنَ أَحَدُكُمْ ظَنَّهُ بِحَجَرٍ لَنَفَعَهُ اللهُ بِهِ

‘‘যদি তোমাদের কেউ কোনো পাথরের ব্যাপারেও ভাল ধারণা পোষণ করে, তবে সে পাথর দ্বারাও আল্লাহ তার উপকার করবেন।’’

এ কথাগুলো এবং এ অর্থে বর্ণিত সকল কথাই জঘন্য মিথ্যা, যা মিথ্যাবাদী দাজ্জাদলগণ বানিয়েছে এবং এগুলোর জন্য সনদও বানিয়েছে। তবে সাহাবীগণ হাদীস বর্ণনার জন্য সনদ বলার অপরিহার্যতার রীতি প্রচলনের ফলে মুসলিম উম্মাহ এদের জালিয়াতি থেকে আত্মরক্ষার পথ পেয়েছেন। মুহাদ্দিসগণ দেখেছেন যে, এ সকল হাদীসের প্রত্যেকটির সনদেই মিথ্যাবাদী ও জালিয়াত বিদ্যমান। এজন্য তাঁরা এ সকল হাদীস জাল বলে চিহ্নিত করেছেন। আর একাধিক সনদের কারণে কোনো কোনো মুহাদ্দিস এগুলোকে ‘অত্যন্ত দুর্বল’ বলে উল্লেখ করে এগুলোর সহীহ হাদীস সম্মত ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছেন।[1]

[1] দাইলামী, আল-ফিরদাউস ৩/৫৫৯-৫৬০; ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ‘আত ১/১৮৮; সাখাবী, আল-মাকাসিদ, পৃ. ৩৪৪, ৪০২-৪০৩; সুয়ূতী, আল-লাআলী ১/২১৪; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ১/২৬৫; তাহির পাটনী, তাযকিরাহ, পৃ. ২৮; মোল্লা কারী, আল-আসরার, পৃ. ১৮৯-১৯০, ২২৪-২২৫; আলবানী, যায়ীফাহ ১/৬৪৭-৬৫৪।