হাদীসের নামে জালিয়াতি বেলায়াত, আওলিয়া ও ইলম বিষয়ক ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রহ.) ১ টি

দ্বিতীয় পর্যায়ের হাদীসগুলোর মধ্যে রয়েছে:

مَا جَاءَكُمْ عَنِّيْ مِنْ خَيْرٍ قُلْتُهُ أَوْ لَمْ أَقُلْهُ فَأَنَا أَقُوْلُهُ وَمَا أَتَاكُمْ مِنْ شَرٍّ فَإِنِّيْ لاَ أَقُوْلُ الشَّرَّ

‘‘আমার পক্ষ থেকে কোনো ‘কল্যাণ’ বা ‘ভালো’ তোমাদের কাছে পৌঁছালে আমি বলি অথবা না-ই বলি, আমি তা বলি (তোমরা তা গ্রহণ করবে)। আর তোমাদের কাছে কোনো ‘খারাপ’ বা ‘অকল্যাণ’ পৌঁছালে (তা গ্রহণ করবে না); কারণ আমি ‘খারাপ’ বলি না।’’

এ অর্থের অন্য একটি জাল হাদীস নিম্নরূপ:

إِذَا حُدِّثْتُمْ عَنِّيْ بِحَدِيْثٍ يُوَافِقُ الْحَقَّ فَصَدِّقُوْهُ وَخُذُوْا بِهِ حَدَّثْتُ بِهِ أَوْ لَمْ أُحَدِّثْ

‘‘যখন আমার পক্ষ থেকে কোনো হাদীস তোমাদেরকে বলা হবে যা ‘হক্ক’ বা সত্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ, তখন তোমরা তা গ্রহণ করবে- আমি তা বলি অথবা নাই বলি।’’

এরূপ ‘ভালমন্দ’ অর্থ বিচার করে হাদীস গ্রহণের বিষয়ে আরো কয়েকটি ‘হাদীস’ বর্ণিত হয়েছে। এ অর্থে বর্ণিত কিছু হাদীস সন্দেহাতীতভাবে জাল ও মিথ্যা বলে প্রমাণিত। এগুলোর সনদে সুপরিচিত মিথ্যাবাদী রাবী বিদ্যমান। আর কিছু হাদীস অত্যন্ত দুর্বল সনদে বর্ণিত, যেগুলোকে কেউ ‘যয়ীফ’ বলেছেন এবং কেউ ‘মাউযূ’ বলেছেন।

আমরা দেখেছি যে, সাহাবীগণের যুগ থেকেই হাদীস যাচাইয়ের ক্ষেত্রে ‘অর্থ’ বিচার করা হয়। তবে যে কোনো হাদীসের ক্ষেত্রে সর্ব-প্রথম বিচার্য হলো, কথাটি রাসূলুল্লাহ () বলেছেন বলে প্রমাণিত কিনা। তিনি বলুন অথবা না বলুন, হক্ক, সত্য বা ভালর সাথে মিল হলেই তা ‘নির্বিচারে’ ‘হাদীস’ বলে গ্রহণ করার অর্থই হলো তিনি যা বলেন নি তা তাঁর নামে বলার পথ প্রশস্ত করা। আর অগণিত হাদীসে তা নিষেধ করা হয়েছে। এজন্য মুহাদ্দিসগণ এ বিষয়ক ‘দুর্বল’ হাদীসগুলোকেও অর্থগতভাবে বাতিল বলে গণ্য করেছেন। অনেক দুর্বল রাবী ভুল বশত এক হাদীসের সনদ অন্য হাদীসে জুড়ে দেন, মতন পাল্টে ফেলেন। এজন্য কখনো কখনো দুর্বল বা অজ্ঞাত পরিচয় রাবীর হাদীসও অর্থ বিচারে মাউযূ বা বাতিল বলে গণ্য করা হয়।[1]

[1] আহমাদ, আল-মুসনাদ ২/৩৬৭, ৪৮৩; ইবনু মাজাহ, আস-সুনান ১/৯; ইবনুল জাওযী, আল-মাউদূ‘আত ১/১৮৭-১৮৮; হাইসামী, মাজমাউয যাওয়াইদ ১/১৫৪; ইবনু হাজার, আল-কাউলুল মুসাদ্দাদ, পৃ. ৮৭-৮৯; সুয়ূতী, আল-লাআলী ১/২১৩-২১৪; ইবনু আর্রাক, তানযীহ ১/২৬৪; তাহির পাটনী, তাযকিরা, পৃ. ২৭-২৮; শাওকানী, আল-ফাওয়াইদ ২/৩৫৯-৩৬৩; আলবানী, যায়ীফাহ ৩/২০৩-২১১।