ফুরফুরার পীর আল্লামা আবূ জাফর সিদ্দিকী (১৩১২/১৯০৬-১৪২৩/২০০২) বিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালী আলিম ও পীর। তিনি তাঁর পিতা ফুরফুরার পীর আবূ বকর সিদ্দিকীর নির্দেশে ‘‘আল-মাউযূআত’ নামে জাল হাদীস সংকলনে উর্দুভাষায় একটি পুস্তক রচনা করেন। ১৯২৯ খৃস্টাব্দে তিনি গ্রন্থটি সংকলন সমাপ্ত করেন ১৯৩৩ খৃস্টাব্দের পরে তিনি গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। ১৯৪৩ খৃস্টাব্দে মাসিক নেদায়ে ইসলামের মাধ্যমে তিনি বইটির বঙ্গানুবাদ শুরু করেন। আবু জাফর সিদ্দিকীর পূর্বে কোনো ভারতীয় আলিম কোনো ভারতীয় ভাষায় এ বিষয়ে গ্রন্থ লিখেছেন বলে জানা যায় না। বিশেষত কোনো বাঙালী আলিম রচিত জাল হাদীস বিষয়ক সর্বপ্রথম গ্রন্থ এটি।
গ্রন্থটির ভূমিকায় তিনি সমাজে জাল হাদীসের প্রসার, এর ভয়াবহতা, এবং জাল হাদীস বিষয়ক কিছু মূলনীতি উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ইলমুর রিজাল ও জাল হাদীস বিষয়ক যে সকল গ্রন্থের উপর তিনি নির্ভর করেছেন সেগুলির তালিকা প্রদান করেছেন। মূল পুস্তকে তিনি আরবী বর্ণমালার ক্রমানুসারে (Alphabeticlly) সমাজে প্রচলিত প্রায় সাড়ে চার শত জাল হাদীস সংকলন করেছেন। প্রতিটি হাদীসের মূল আরবী এবং উর্দু অনুবাদ, তথ্য সূত্র উল্লেখ করেছেন। মাঝে মাঝে অনেক মূল্যবান তথ্য উল্লেখ করেছেন। পরিশিষ্টে বাংলার মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত ভিত্তিহীন অনেক গল্প, কাহিনী, কুসংস্কার ও ভুল মাসআলা আলোচনা করেছেন। সর্বোপরি জাল হাদীস নির্ভর বা ইসলামী আকীদা বিরোধী বইপুস্তকের একটি তালিকা বইটির শেষে উল্লেখ করেছেন।
গ্রন্থের একেবারে শেষে গ্রন্থকার আল্লামা আবু জাফর সিদ্দিকী ‘‘নিবেদন’’ নামে নিম্নের নিবেদনটি লিখেছেন: ‘‘পাঠকদের সমীপে এ গোনাহগারের নিবেদন এই যে, ভাল দুআর সাথে স্মরণ করবেন, যেন আল্লাহ এ ব্যক্তির গোনাহগুলি ক্ষমা করে দেন। আর মানবীয় দুর্বলতার কারণে যদি কোনো ভুল পাওয়া যায়, অথবা কোনো হাদীস মাউযূ (জাল) নয় বলে সন্দেহ হয়, তবে সনদ-সহ হাদীসটি অনুলিপি করে আমার নিকট পাঠিয়ে দিবেন; যেন রাবীগণের গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ক ‘আসমাউর রিজাল’ গ্রন্থাদির আলোকে সে বিষয়ে তাহকীক বা গবেষণা করা যায়। যদি প্রকৃতই সে হাদীসটি কোনো প্রকারের হাদীস বলে প্রমাণিত হয় তবে দ্বিতীয় মুদ্রণে সে হাদীসটি বাদ দেওয়া হবে। শুধু কিতাবের বরাত দেওয়া যথেষ্ট নয়। অর্থাৎ এ কথা বলা যথেষ্ট নয় যে, অমুক গ্রন্থে এ হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। তবে যদি কোনো গ্রন্থ ইলম হাদীসের ভাল গ্রন্থ হয়, সে গ্রন্থে জাল হাদীসের আধিক্য না থাকে এবং সে গ্রন্থের লেখকও ভাল হন তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে।’’ শেষ। ফুরফুরা শরীফ, রবীউস সানী মাস, ১৩৪৮ হি (সেপ্টেম্বর ১৯২৯খৃ)