অন্যান্য সকল মুসলিম সমাজের ন্যায় বাঙালী মুসলিম সমাজেও জাল হাদীস ছড়িয়ে পড়েছে। পাশাপাশি রাসূলুল্লাহ ﷺ-এর পবিত্র আঙিনাকে মিথ্যার অপবিত্রতা থেকে মুক্ত রাখতে বাঙালী আলিমগণ বিভিন্নভাবে সচেষ্ট থেকেছেন। জাল হাদীসের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি ও জাল হাদীসের ভয়াবহতা ও এ বিষয়ক মূলনীতি সংকলন করা ছাড়াও কোনো কোনো প্রসিদ্ধ বাঙালী আলিম জাল হাদীস সংকলনের মাধ্যমে জাল হাদীস প্রতিরোধে অবিস্মরণীয় অবদান রেখেছেন। এখানে কয়েকজনের অবদান সংক্ষেপে পর্যালোচনা করছি।
৯. ১. মাওলানা রুহুল আমিন বশিরহাটী
বিশ শতকের প্রথমার্ধের অন্যতম প্রসিদ্ধ বাঙালী আলিম আল্লামা রুহুল আমিন (১৩০২/১৮৮২-১৩৬৪হি/১৯৪৫খৃ)। ফুরফরার পীর আবু বকর সিদ্দিকী (১২৬৩/১৮৪৬-১৩৫৮হি/১৯৩৯খৃ)-এর নির্দেশনায় ও তত্ত্বাবধানে তিনি অনেক গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে তিনি জাল হাদীস বিষয়ক অনেক মূল্যবান তথ্য আলোচনা করেছেন। নিম্নে কয়েকটি নমুনা উল্লেখ করছি।
শাইখ রুহুল আমিন লিখেন: ‘‘বর্ত্তমানে বেদাতি দলের যেরূপ বাড়াবাড়ি হইয়াছে, তাহাতে হজরতের ভবিষ্যদ্বাণী স্পষ্টভাবে পরিলক্ষিত হইতেছে। হজরত নবি (ﷺ) শেষ যুগে একদল প্রবঞ্চক মিথ্যাবাদী লোকের আবির্ভাব হওয়ার কথা বলিয়াছেন, অবিকল তাহাই ঘটিয়াছে। এক্ষণে ‘তরিকতে রসুল রাহে হক’ নামক একখানি পুস্তক দেখিয়া অবাক হইলাম, বাগমারী নিবাসী আলিমদ্দিন শাহ নামক একজন অপরিচিত লোক কোরাণ ও হাদিছ ধবংস করার বাসনায় উক্ত বাতীল পুস্তক রচনা করিয়াছে।... লেখকের বিদ্যার দৌড় এত যে, কতকগুলি জাল বা অমূলক হাদিস লিখিয়া পুস্তকের কলেবর বৃদ্ধি করিয়াছে। ... লেখক এই পুস্তকের প্রথম পৃষ্ঠায় (لولاك لما خلقت الأفلاك) (তুমি না হলে নভোমন্ডলী সৃষ্টি করতাম না)- এই কথাটি হাদিস বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন। কিন্তু মোল্লা আলি কারী ‘‘মওজুয়াতে কবির’’ গ্রন্থের ৫৯ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন: সাগানী বলিয়াছেন যে, উক্ত হাদিসটি জাল। ফাতাওয়ায় আজিজি ১/১২২পৃ. ‘‘..উক্ত হাদিস: ‘লাওলাকা লামা খালাকতোল আফলাক’ কোন কেতাবে দেখি নাই। ফাতাওয়ায় এমদাদিয়া, ৪/১৯ পৃ. ‘‘এই উল্লিখিত হাদিসটি কোন কেতাবে দেখি নাই, ইহা স্পষ্ট জাল বলিয়া অনুমিত হয়।’’[1]
অন্যত্র মাওলানা রুহুল আমিন বলেন: ‘‘মিলাদ শরিফে মওজু (জাল) হাদিছ বা রেওয়াএত উল্লেখ করা নাজায়েজ, ইহা আমি কল্য সভায় প্রকাশ করিয়াছি। ‘লাওলাকা লামা খালাকতোল আফলাক’ কথাটী হাদিস নয়। মাওলানা শাহ আব্দুল আজিজ দেহলবী ও মাওলানা আশরাফ আলি ছাহেব নিজ নিজ ফতোয়ার কেতাবে লিখিয়াছেন যে, এই কথাটি কোন হাদিছের কেতাবে দৃষ্টিগোচর হয় নাই। ‘আকাশার (উকাশার প্রতিশোধ নেওয়ার) কথা জাল’ (একথা) সত্য, ইহা ওছুলে জোরজানিয়া টিকায় আছে।.. উর্দ্দু মিলাদ শরিফের কেতাবে কতকগুলি জাল কথা আছে, উহা পাঠ করা জায়েজ নহে, কিন্তু তাই বলিয়া মূল মিলাদ শরিফকে নাজায়েজ বলা যাইতে পারে না।.. ওয়াজ বর্ণনাকারি মৌলবি আলেমগণ ‘দোরাতোনাছেহিন কেতাবের’ রেওয়াএতগুলি উল্লেখ করিয়া ওয়াজ করিয়া থাকেন উক্ত কেতাবের অনেক রেওয়াএত জাল বা অমূলক।...’’[2]
[2] মোহাম্মাদ রুহুল আমিন, সিরাজগঞ্জের বাহাস, পৃষ্ঠা ৩৭-৩৮।
রুহুল আমিন লিখেছেন: ‘‘তিনি (তরিকতে রসুল (ﷺ)-বইয়ের লেখক) ৫ পৃষ্ঠায় এই কথাটি হাদিস বলিয়া লিখিয়াছেন: (من عرف نفسه فقد عرف ربه): (যে নিজেকে চিনল সে তার রববকে চিনল)। কিন্তু এমাম ছাখাবি মাকাছেদে হাসানার ১৯৮ পৃষ্ঠায় ও মোল্লা আলি কারী মওজুয়াতে কবির গ্রন্থের ৫৯ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন: ‘‘.... ‘‘এবনে তায়মিয়া বলিয়াছেন, উহা জাল হাদিস। ছাময়ানি বলিয়াছেন, উহা হজরত নবি (ﷺ)-এর কথিত হাদিস বলিয়া প্রমাণিত হয় নাই। নাবাবি বলেন, উহা হজরত নবি (ﷺ) হইতে প্রমাণিত হয় নাই।’’[1]
রুহুল আমিন লিখেন: ‘‘তিনি (তরিকতে রসুল-এর লেখক) উক্ত পুস্তকের ৬ পৃষ্ঠায় নিম্নোক্ত কথাটি হাদিস বলিয়া প্রকাশ করিয়াছেন: (من لا شيخ له فشيخه الشيطان)- ‘‘যাহার পীর নাই তাহার পীর শয়তান’’। কিন্তু লেখক ইহা কোন বিশ্বাসযোগ্য হাদিসে দেখিয়াছেন? ইহার সনদ কি? যতক্ষণ তিনি এই হাদিসের সনদ পেশ করিতে না পারেন ততক্ষণ উহা জাল হাদিস বলিয়া গণ্য হইবে।’’[1]
তিনি আরো বলেন: ‘‘কোরাণ, হাদিস, এলমে তাছাওয়ফে সম্পূর্ণ অনভিজ্ঞ লেখক (وَابْتَغُوا إِلَيْهِ الْوَسِيلَةَ) (তাঁর দিকে অসীলা সন্ধান কর) আয়তটির অর্থে লিখিয়াছেন যে, পীর ধরা ফরজে আয়েন, যে ব্যক্তি পীরের নিকট মুরিদ না হইয়া মরিয়া যায় সে নিশ্চয় কাফের হইয়া মরে। পাঠক, পীর-শ্রেঠ মাওলানা শাহ অলিউল্লাহ দেহলবী (রহ) কওলোল জমিলের ১৪ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন (فاعلم أن البيعة سنة ...), অর্থ্যাৎ মুরিদ হওয়া সুন্নত । আরও লিখিয়াছেন (كان كالإجماع على أنها ليست بواجبة), অর্থ্যাৎ ‘‘মুরিদ হওয়া ওয়াজেব নহে, সুন্নত বলিয়া সমস্ত পীরও এমামগণের এজমা হইয়াছে।’’ আরও আছে যে (ولم ينكر أحد من الأئمة على تركها...), অর্থৎ দীন এসলামের এমামগণ মুরিদ না হওয়া ব্যক্তির উপর এনকার (আপত্তি) করেন নাই।... যে আয়াতে অছিলা চেষ্টা করার হুকুম করা হইয়াছে উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় তফসিরে বয়জবি ২/১৪৮ পৃষ্ঠায়, কবিরের ৩/৩৩৯ পৃষ্ঠায়, এবনে জরির ৬/১৩১/১৩২ পৃষ্ঠায়, মায়ালেম ও খাজেনের ২৩৯ পৃষ্ঠায় ও তফসিরে মাদারেকের ১/২১ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে যে, ‘অছিলা’ শব্দের অর্থ ‘এবাদত, কোরবত ও নেকির কার্য্যকলাপ’। আয়তের মর্ম্ম এই যে, তোমরা এবাদতের কার্য্যগুলি কর। ইহাতে ‘পীর অনুসন্ধান’ কিরূপে সাব্যস্ত হইবে? ... দ্বিতীয়, যাহার পীর নাই, তাহার পীর শয়তান হইবে, লেখক ইহাকে হাদিস বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন, কিন্তু ইহা হাদিস নহে। তবে লেখকের পীর গ্রহণ ফরজ হওয়ার দাবী ইহাতে কিরুপে সাব্যস্ত হইবে? ...’’[2]
[2] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, বাগমারির ফকিরের ধোকাভঞ্জন, পৃ. ৫১-৫৩।
রুহুল আমিন লিখেন: ‘‘লেখকের (তরিকতে রসুল (ﷺ)-বইয়ের লেখক) বিদ্যার পরিমাণ এত যে, তিনি আরবি ভাষা ঠিক করিয়া লিখিতে পারেন না, তিনি উক্ত পুস্তকের ২ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন: (الأولياء لا يموت): ‘অলিগণ মরেন না’। যে ব্যক্তি আরবী নহোমির পাঠ করিয়াছে, সেও বলিতে পারে যে, উক্ত এবারতের শব্দ ভ্রমাত্নক, প্রকৃত পক্ষে এইরূপ এবারত ঠিক হইবে (الأولياء لا يموتون)। ইহা শব্দের হিসাবে বলা হইল, কিন্তু এই শব্দগুলি কোরাণও নহে এবং হাদিস নহে। কোরাণ শরিফে আছে. ‘‘নিশ্চয় তুমি (হে মোহাম্মদ) মৃত এবং নিশ্চয় তাঁহারাও (প্রাচীন নবিগণও) মৃত। (সূরা যুমার: ৩০ আয়াত)’’ লেখকের দাবিকৃত কথাটি এই আয়াতের খেলাফ হইল কিনা?[1]
মাওলানা রুহুল আমিন (রাহ) জাল হাদীস বিষয়ক অনেক মূলনীতি তাঁর বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। জাল হাদীসের পরিচয়, হাদীস, তফসীর, ফিকহ, তাসাউফ বিভিন্ন বিষয়ের প্রসিদ্ধ গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান জাল হাদীস, হাদীস যাচাইয়ের মূলনীতি, ইত্যাদি বিষয়ে তিনি অনেক মৌলিক বিষয় সংক্ষেপে উল্লেখ করেছেন। কোনো হাদীস যাচাই ছাড়া গ্রহণ যেমন তিনি আপত্তি করেছেন, তেমনি কোনো গ্রন্থে জাল হাদীস বিদ্যমান থাকার কারণে গ্রন্থটির বিরুদ্ধে বক্তব্য প্রদান বা বইটি পাঠ নিষিদ্ধ করার মত হঠকারিতার প্রতিবাদ করেছেন।
সহীহ বুখারী, তিরমিযী, ইবন মাজাহ ও অন্যান্য প্রসিদ্ধ হাদীস গ্রন্থের মধ্যে বিদ্যমান জাল হাদীস প্রসঙ্গে তিনি বলেন: ‘‘জাল হাদিছ কাহাকে বলে? যে হাদিছটা মিথ্যাবাদী লোক কর্ত্তৃক কথিত হইয়াছে। উহাকে জাল হাদিছ বলা হয়। এমাম এবনো-হাজার আস্কালানি ফতহোল বারির মোকদ্দমার লিখিয়াছেন যে, ছহিহ বোখারির কতকগুলি এরূপ রাবি আছে যাহাদিগকে বিদ্ধানগণ মিথ্যাবাদী স্থির করিয়াছেন। এমাম বোখারি, নাইম বেনে হাম্মাদ (نُعَيْم بن حَمَّاد) হইতে ছহিহ বোখারিতে এই হাদিছটা উ&&ল্লখ করিয়াছেন: আমর বেনে ময়মুন বলিয়াছেন, আমি জাহেলিয়তের সময় একটি বানরকে দেখিয়াছিলাম যে, সেই বানরটা ব্যভিচার (জেনা) করিয়াছিল এবং সমস্ত বানর সমবেতভাবে উক্ত বানরকে প্রস্তরাঘাত করিয়াছিল। ইহাতে আমিও তাহাদের সহিত উহাকে প্রস্তরাঘাত করিয়াছিলাম। আহমদী প্রেসে মুদ্রিত ছহিহ বোখারি, ১-৫৪৩ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। এমাম বোখারি এই হাদিছটি উল্লেখ করতঃ বন্য পশুর জেনা ও উহাদের উপর হদ জারি করার মত সমর্থন করিয়াছেন। কিন্তু ইহা নইম বেনে হাম্মাদের জাল কথা। মিজানোল-এতেদাল, ৩-২৪১ পৃষ্ঠা: (এমাম) আজদি বলিয়াছেন যে, নইম বেনে হাম্মাদ হাদিছ প্রস্ত্তত করিত এবং (এমাম আবু হানিফা) নোমানের অপবাদের উদ্দেশ্যে মিথ্যা গল্প প্রস্ত্তত করিত। এই নইম বর্ণনা করিয়াছে যে, খোদাতায়ালা একটি যুবকের ন্যায় আকৃতি-ধারী, তাঁহার পদদ্বয় সবুজ রঙ্গের ফলকে আছে এবং উহাতে সুবর্ণের দুখানা পাদু্কা (জুতা) আছে। ... (আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী রচিত) আজবোয়া ফাজেলা ৪৫-৪৬ পৃষ্ঠা: এবনো মাজার মধ্যে কতকগুলি জাল হাদিছ আছে। এইরূপ ছেহাহ-ছেত্ত্বার অন্যান্য কেতাবগুলির অবস্থা অনুমান করুন। ছোনানে দারুকুৎনি ও ছোনানে বয়হকি ইত্যাদিতে অনেক জাল হাদিছ আছে।’’
হাদীসের সনদ যাচাইয়ের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণের মতামত গ্রহণের মূলনীতি, সুনান তিরমিযীর মধ্যে বিদ্যমান দুর্বল ও জাল হাদীস এবং এ বিষয়ে মুহাদ্দিসগণের মতামত ব্যাখ্যা করে তিনি লিখেন: ‘‘বর্ত্তমানে কদমবুছির ফতোয়া নামে একখানা পুস্তক বঙ্গ-ভাষায় মুদ্রিত হইয়াছে, ... উক্ত ফৎওয়াতে কতকগুলি জাল হাদিছ হজরতের ছহিহ হাদিছ বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে ... লেখক সাহেব উক্ত পুস্তকের ৪ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন .... ‘যথা তেরমেজি শরিফের (হাদিছে) আসিয়াছে: ..... অতঃপর তাহারা (য়িহুদিরা) রছুলুল্লাহ (ﷺ) এর পদদ্বয় চুম্বন করিয়াছিল।’ আমাদের উত্তর:- হাঁ, তেরমেজি শরীফের ২য় খন্ডে (৯৮ পৃষ্ঠায়) উক্ত হাদিছটি উল্লিখিত হইয়াছে।[1] এমাম তেরমেজি উক্ত হাদিছ সহিহ বলিলেও তদপেক্ষা যোগ্যতম মোহাদ্দেছ এমাম নাছায়ি এবং এমাম মোঞ্জারি কি বলিয়াছেন, তাহা মুফতি সাহেব দেখিয়াছেন কি? হেদায়ার টীকা, আয়নি, ৪র্থ খন্ড, ২৫৪ পৃষ্ঠা: ‘‘(এমাম) নাছায়ী বলিয়াছেন, উক্ত হাদিছটী মোনকার (জইফ)। (এমাম) মোঞ্জরি বলিয়াছেন, (উক্ত হাদিসের রাবি) আবদুল্লাহ বেনে ছালেমার জন্য হাদিসটী মোনকার (জইফ) হইয়াছে, কেননা, সে ব্যক্তি দোষান্বিত। নাছবোর রাইয়াহ ১/৩২/৩৩ পৃষ্ঠা। (এমাম) তেরমেজি কছির বেনে আবদুল্লাহ হইতে ঈদের বার তকবীর সংক্রান্ত একটী হাদিস রেওয়াএত করিয়া উহা ‘‘আছ’হ’ (সমধিক সহিহ) বা হাছান বলিয়া উল্লেখ করিয়াছেন; কিন্তু এমাম আহমদ, এবনোমইন, নাছায়ী, দারকুৎনি, আবু জোরয়া শাফেয়ি উক্ত কছির বেনে আবদুল্লাহকে পরিত্যক্ত, জাল হাদিছ প্রস্ত্ততকারী ইত্যাদি বলিয়া হাদিসটি রদ করিয়াছেন। আরও উক্ত পৃষ্ঠা- সারমর্ম: ‘‘(এমাম) এবনো দাহইয়া বলিয়াছেন, তেরমেজির নিজ কেতাবে অনেক হাদিস হাছান (মধ্যম শ্রেণীর বা উৎকৃষ্ট) বলিয়া কথিত হইয়াছে, অথচ তৎসমস্ত জাল হাদিছ এবং তৎসমস্তের ছনদ বাতীল।’’[2]
ইমাম হাকিম নিসাপূরী সংকলিত ‘আল-মুসতাদরাক’ গ্রন্থে বিদ্যমান জাল হাদীস বিষয়ে তিনি বলেন: ‘‘উক্ত পুস্তক (কদমবুছির ফতোয়া) ৭/৮ পৃষ্ঠা: আল্লামা শামি কদমবুছি জায়েজ হওয়া সমর্থন করিতে গিয়া নিমোক্ত হাদিসটি হাকেমের ছনদে বর্ণনা করিয়াছেন। একদা এক ব্যক্তি নবি করিম (ﷺ)-এর নিকট আসিয়া বলিয়াছিল, হে রছুলুল্লাহ, আমাকে এমন কিছু দেখান যাহাতে আমার দুঢ় বিশ্বাস হয় ... (হজরত তাহাই করিলেন)। অবশেষে সে ব্যক্তি নবি করিম (ﷺ)-এর অনুমতি লইয়া তাঁহার মস্তকে এবং পায়ে চুম্বন করিল। আমাদের উত্তর: হেদায়ার টীকা আয়নি ৪/২৫৫ পৃষ্ঠা: এমাম জাহাবী বলিয়াছেন, এই হাদিসের একজন রাবি আছেম বেনে হাববান পরিত্যক্ত (জাল হাদিস প্রস্ত্ততকারী)। ইহাতে বুঝা গেল যে, হাকেমের হাদিসটি বাতীল। মুফতি সাহেবের এইরূপ বাতীল হাদিস দ্বারা প্রমাণ পেশ করা ঠিক হয় নাই এবং উহা কদমবুছি জায়েজ হওয়ার প্রমাণ হইতে পারে না।’’[3]
[2] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, এজহারোল-হক বা কদমবুছির ফতোয়ার সমালোচনা, পৃ ৪-৫। এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে গ্রন্থকার রচিত ‘সালাতুল ঈদের অতিরিক্ত তাকবীর’ বইটি পড়ুন।
[3] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, এজহারোল-হক, পৃ ১০-১১।
তাফসীর গ্রন্থসমূহের জাল হাদীস প্রসঙ্গে তিনি বলেন: ‘‘এক্ষণে আসুন তফছিরগুলির মধ্যে জাল হাদিছ আছে কি তাহার সমালোচনা করা হউক। তফছিরে এবনো জরির ও তফছিরে এবনো কছির অতি উৎকৃষ্ঠ তফছির, এই দুই তফছিরের হাদিগুলি গ্রহণের উপযুক্ত। তদ্ব্যতীতে অন্যান্য তফছিরে অনেক জাল হাদিছ আছে, (ইমাম ফখরুদ্দীন রাযীর রচিত) তফছিরে কবিরের ১/৩৪ পৃষ্ঠায় (أنا أفصح من نطق بالضاد)- (দোয়াদ উচ্চারণকারীদের মধ্যে আমিই সবচেয়ে বেশি বাক-সৌন্দর্যের অধিকারী)-এই কথাটি হাদিছ বলিয়া লিখিত আছে, কিন্তু ইহার কোন ছনদ বা মূল হাদিছের কেতাবে নাই। তমইজোল কালাম মেনাল খবিছ ৪০ পৃষ্ঠা দ্রষ্টব্য। তফছিরে আহমদির ২৭ পৃষ্ঠায় ছুরা জেনের তফছিরে এই মর্ম্মের একটি হাদিছ আছে: ‘মছজিদে দুনইয়ার কথা বলিলে চল্লিশ বৎসরের আমল (এবাদত) নষ্ট হইয়া যায়।’’ ইহাকে হাদিছ বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে, কিন্তু মওজুয়াতে কবিরের ৬৯ পৃষ্ঠায় উহাকে জাল হাদিস বলা হইয়াছে। এইরূপ তফছির বয়জবি ও কাশ্যাফে প্রত্যেক ছুরার শেষাংশে যে ছুরার ফজিলত লেখা আছে, তাহার অধিকাংশ জাল হাদিছ। এক্ষেত্রে জাল হাদিছগুলি জাল বুঝিতে বা জাল বলিয়া প্রকাশ করিতে হইবে, তাই বলিয়া কি তফছির পাঠ নাজায়েজ বলিয়া প্রকাশ করিতে হইবে?’’[1]
ফিকহী গ্রন্থসমূহে বিদ্যমান হাদীসগুলি যাচাই ছাড়া গ্রহণ করা সমাজে জাল হাদীস প্রসারের অন্যতম কারণ। আল্লামা রুহুল আমিন এ প্রসঙ্গে বলেন: ‘‘এইরূপ ফেকহের কেতাবে দুই চারটি জাল হাদিছ আছে, হেদায়া কেতাবে দুই একটি জাল হাদিছ আছে। এক্ষেত্রে শিক্ষকেরা হেদায়া শিক্ষা দেওয়া কালে জাল হাদিছ গুলির অবস্থা শিষ্যদিগকে জ্ঞাত করাইয়া দিবেন, ইহাই তাহাদের কর্ত্তব্য। ফেকহের কেতাবে দুই চারিটি জাল হাদিছ আছে বলিয়া কি ফেকহ শিক্ষা করা নিষেধ হইয়া যাইবে?’’[1]
অন্যত্র তিনি বলেন: উক্ত পুস্তক (কদমবুছির ফতোয়া) ৬ পৃষ্ঠা: ‘‘হজরত রছুলে করিম (ﷺ) আরও ফরমাইয়াছেন ‘‘যে ব্যক্তি আপন মায়ের পায়ে চুমা দিল, সে যেন বেহেস্তের চৌকাঠে চুমা দিল।’’ দোর্রোল মোখতার, পঞ্চম খন্ড, ২৪২ পৃষ্ঠা। আমাদের উত্তর: মিছরি ছাপা দোর্রোল মোখতারের পঞ্চম খন্ড নাই। অবশ্য মিছরি ছাপা শামি কেতাবের পাঁচ খন্ড আছে। উক্ত শামি কেতাবের হাসিয়াতে দোর্রোল মোখতার মুদ্রিত হইয়াছে। এস্তাম্বুলের মুদ্রিত শামি কেতাবের হাশিয়ায় দোর্রোল মোখতারের ৫ম খন্ডে ৩৬১ পৃষ্ঠার এবং মিসরি ছাপার ৫/২৫৯ পৃষ্ঠায় উক্ত হাদিসটি বিনা ছনদে উল্লিখিত হইয়াছে। দোর্রোল মোখতার ইত্যাদি ফেকহের কেতাবে কোন কথা হাদিস বলিয়া লিখিত থাকিলেও উহা যে প্রকৃতপক্ষে হজরতের হাদিস হইবে ইহা বলা যায় না। দোর্রোল মোখতারেরর ১/৩৫ পৃষ্ঠায় এই কথাটি: ‘বেহেস্তবাসিদিগের ভাষা আরবি এবং দরি ফার্সি হইবে’- হাদিছ বলিয়া লিখিত হইয়াছে। কিন্তু মোহাদ্দেছ প্রবর আল্লামা মোল্লা আলিকারী মওজুয়াত কবির কেতাবের ৫৫ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন যে, উহা হাদিস নহে, বরং জাল কথা। এজন্য কেবল ফেকহের কেতাবে কোন কথা হাদিস বলিয়া লেখা থাকিলে, দেখিতে হইবে যে, উহা কোন বিশ্বাসযোগ্য হাদিসের কেতাবে আছে কিনা? উহার সহিহ ছনদ আছে কি না? যতক্ষণ ইহা না জানা যায়, ততক্ষণ উহা হাদিস বলিয়া দাবি করা যায় না। এক্ষণে মুফতি সাহেবকে জিজ্ঞাসা করি যে, উল্লিখিত হাদিসটি কোন হাদিসের কেতাবে আছে? উহার ছনদ কি? তিনি যতক্ষণ উহা প্রকাশ করিতে না পারেন ততক্ষণ উহা হাদিস বলিয়া গণ্য হইবে না।’’[2]
তিনি আরো বলেন: ‘‘উক্ত পুস্তক (কদমবুছির ফতোয়া) ৮ পৃষ্ঠা: ... আল্লামা জয়লয়ি তাবইনো হাকায়েক কেতাবের ৬ষ্ঠ খন্ডের ২৫ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন, কাফি কেতাবে আছে যে, প্রান্তরবাসীগণ নবি (ﷺ) এর হস্তপদ চুম্বন করিতেন। .... কাফি ফেকহের কেতাব, উহা কোন হাদিসের কেতাব নহে, উহাতে কোন কথা হাদিস বলিয়া লিখিত থাকিলেই যে হাদিস হইবে, ইহা স্বীকার করা যাইতে পারে না। মওজুয়াতে কবিরের ৫৫ পৃষ্ঠায় লিখিত আছে যে, কাফি প্রণেতা বলিয়াছেন যে, হাদিসে আছে, বেহেশতবাসীদিগের ভাষা আরবি ও ফার্সি হইবে কিন্তু ইহা হাদিস নহে, বরং জাল কথা। এক্ষণে আমাদের বক্তব্য এই যে, কাফি কেতাবের লিখিত কথাটি কোন বিশ্বাসযোগ্য হাদিসের কেতাবে আছে? উহার সনদ কি? মুফতি সাহেব অগ্রে উহার ছনদ বর্ণনা করুন, পরে উহা প্রমাণস্থলে ব্যবহার করিবেন।’’[3]
তিনি আরো বলেন: ‘‘উক্ত কেতাব ৯ পৃষ্ঠা: ফতোয়া হাবি কেতাবে আসিয়াছে একব্যক্তি নবী করিম ﷺ এর নিকট আসিয়া বলিয়াছিল, হে রছুলুল্লাহ ﷺ, আমি প্রতিজ্ঞা করিয়াছি যে, বেহেশতের চৌকাঠে এবং হুরগণকে চুম্বন করিব, তখন হজরত তাহাকে তাহার মায়ের পায়ে এবং বাপের কপালে চুম্বন করিতে আদেশ করিলেন। আমাদের উত্তর: ইহা ফেকহের কেতাবের হাদিস, ইহা কোন বিশ্বাসযোগ্য হাদিসের কেতাবে আছে এবং ইহার সনদ কি, মুফতি সাহেব যতক্ষণ প্রকাশ করিতে না পারেন, ততক্ষণ ইহা হাদিস বলিয়া প্রকাশ করা জায়েজ হইতে পারে না। মোল্লা আলি কারী মওজুয়াতে কবির কেতাবের ৭৪ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন: ‘যে ব্যক্তি রমজানের শেষে জুমায় একটি ফরজ নামাজ কাজা পড়িবে তাহার জীবনের ৭০ বৎসরের প্রত্যেক নামাজের কাজা আদায় হইয়া যাইবে’, এই হাদিসটি নিশ্চয় বাতীল কেননা কোন এবাদত বহু বৎসরের কাজার বিনিময় হইতে পারে না, ইহার উপর এজমা হইয়াছে। নেহায়া কিম্বা হেদায়ার অবশিষ্ট টীকাগুলিতে কাজায় ওমরির কথা উল্লিখিত থাকিলেও উহা অগ্রাহ্য, যেহেতু তাহারা মোহাদ্দেস ছিলেন না এবং তাহারা কোন মোহাদ্দেস পর্যন্ত হাদিসের সনদ উল্লেখ করেন নাই। জনাব মুফতি সাহেব, যখন নেহায়া, কেফায়া, এনায়া কেতাবের বিনা ছনদের হাদিস বাতীল হইল, তখন হাবি কেতাবের বিনা ছনদের হাদিস কেন অগ্রাহ্য হইবে না? এমাম জালালদ্দিন সিউতি লয়ালিয়ে মছনুয়া কেতাবের ৯০ পৃষ্ঠায় লিখিয়াছেন: ‘এবনো আদি ও বয়হকি এই হাদিসটি উল্লেখ করিয়াছেন, যে ব্যক্তি মাতার ললাট চুম্বন করে উহা তাহার পক্ষে দোজখের অন্তরাল স্বরূপ হইবে। ইহা জইফ হাদিস।’ ইহাতে বুঝা যায় যে, হাবি কেতাবের হাদিসটি বাতীল।’’[4]
[2] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, এজহারোল-হক, পৃ ৬-৭।
[3] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, প্রাগুক্ত, পৃ ১২-১৩।
[4] মোহাম্মদ রুহুল আমিন, এজহারোল-হক, পৃ ১৪-১৬।
আল্লামা রুহুল আমিন বলেন: ‘‘এইরূপ তাছাওয়াফের কেতাবে অনেক জাল হাদিছ আছে, পীরান পীর ছাহেব গুনইয়াতোত্তালেবিন কেতাবের ১৪৫-১৪৬ পৃষ্ঠায় নইম বেনে হাম্মদের ছনদে নিম্নোক্ত জাল হাদিছটি উল্লেখ করিয়াছেন: ‘হজরত বলিয়াছেন আমার উম্মাত ৭৩ ফেরকা হইবে, তম্মধ্যে আমার উম্মতের মধ্যে প্রধান বিভ্রাটকারী উহারা হইবে- যাহারা আপন আপন রায়ে কার্য্যসমুহে কেয়াছ করিবে এবং হালালকে হারাম করিবে ও হারামকে হালাল করিবে। মিজানোল-এতেদাল ৩।২৩৮পৃষ্ঠা: ... মোহাম্মদ বেনে আলি বলেন, আমি উক্ত হাদিছ সম্বন্ধে (এমাম) এহইয়া বেনে মইনের নিকট জিজ্ঞাসা করিয়াছিলাম ইহাতে তিনি বলিয়াছিলেন, উক্ত হাদিছের কোন মূল নাই (অর্থাৎ উহা বাতীল হাদিছ)। এইরূপ পীরান পীরের ‘ছের্রোল আছরার’ কেতাবের ২/৯ পৃষ্ঠায় আছে: ‘‘আমি খেদাকে দাড়িহীন যুবকের আকৃতিতে দেখিয়াছি।’’ ইহাকে হাদিছ বলিয়া উল্লেখ করা হইয়াছে। কিন্তু মিজানোল এতেদাল কেতাবে ইহাকে জাল কথা বলিয়া প্রমাণ করা হইয়াছে। এইরূপ তাছাওয়াফের অনেক কেতাবে দুই চারটি জাল হাদিছ দেখিতে পাওয়া যায়, এক্ষেত্রে তাছাওয়াফের কেতাব পড়া নাজায়েজ হইবে কি?...’’[1]
ফুরফুরার পীর আল্লামা আবূ জাফর সিদ্দিকী (১৩১২/১৯০৬-১৪২৩/২০০২) বিংশ শতকের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙালী আলিম ও পীর। তিনি তাঁর পিতা ফুরফুরার পীর আবূ বকর সিদ্দিকীর নির্দেশে ‘‘আল-মাউযূআত’ নামে জাল হাদীস সংকলনে উর্দুভাষায় একটি পুস্তক রচনা করেন। ১৯২৯ খৃস্টাব্দে তিনি গ্রন্থটি সংকলন সমাপ্ত করেন ১৯৩৩ খৃস্টাব্দের পরে তিনি গ্রন্থটি প্রকাশ করেন। ১৯৪৩ খৃস্টাব্দে মাসিক নেদায়ে ইসলামের মাধ্যমে তিনি বইটির বঙ্গানুবাদ শুরু করেন। আবু জাফর সিদ্দিকীর পূর্বে কোনো ভারতীয় আলিম কোনো ভারতীয় ভাষায় এ বিষয়ে গ্রন্থ লিখেছেন বলে জানা যায় না। বিশেষত কোনো বাঙালী আলিম রচিত জাল হাদীস বিষয়ক সর্বপ্রথম গ্রন্থ এটি।
গ্রন্থটির ভূমিকায় তিনি সমাজে জাল হাদীসের প্রসার, এর ভয়াবহতা, এবং জাল হাদীস বিষয়ক কিছু মূলনীতি উল্লেখ করেছেন। এছাড়া ইলমুর রিজাল ও জাল হাদীস বিষয়ক যে সকল গ্রন্থের উপর তিনি নির্ভর করেছেন সেগুলির তালিকা প্রদান করেছেন। মূল পুস্তকে তিনি আরবী বর্ণমালার ক্রমানুসারে (Alphabeticlly) সমাজে প্রচলিত প্রায় সাড়ে চার শত জাল হাদীস সংকলন করেছেন। প্রতিটি হাদীসের মূল আরবী এবং উর্দু অনুবাদ, তথ্য সূত্র উল্লেখ করেছেন। মাঝে মাঝে অনেক মূল্যবান তথ্য উল্লেখ করেছেন। পরিশিষ্টে বাংলার মুসলিমদের মধ্যে প্রচলিত ভিত্তিহীন অনেক গল্প, কাহিনী, কুসংস্কার ও ভুল মাসআলা আলোচনা করেছেন। সর্বোপরি জাল হাদীস নির্ভর বা ইসলামী আকীদা বিরোধী বইপুস্তকের একটি তালিকা বইটির শেষে উল্লেখ করেছেন।
গ্রন্থের একেবারে শেষে গ্রন্থকার আল্লামা আবু জাফর সিদ্দিকী ‘‘নিবেদন’’ নামে নিম্নের নিবেদনটি লিখেছেন: ‘‘পাঠকদের সমীপে এ গোনাহগারের নিবেদন এই যে, ভাল দুআর সাথে স্মরণ করবেন, যেন আল্লাহ এ ব্যক্তির গোনাহগুলি ক্ষমা করে দেন। আর মানবীয় দুর্বলতার কারণে যদি কোনো ভুল পাওয়া যায়, অথবা কোনো হাদীস মাউযূ (জাল) নয় বলে সন্দেহ হয়, তবে সনদ-সহ হাদীসটি অনুলিপি করে আমার নিকট পাঠিয়ে দিবেন; যেন রাবীগণের গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ক ‘আসমাউর রিজাল’ গ্রন্থাদির আলোকে সে বিষয়ে তাহকীক বা গবেষণা করা যায়। যদি প্রকৃতই সে হাদীসটি কোনো প্রকারের হাদীস বলে প্রমাণিত হয় তবে দ্বিতীয় মুদ্রণে সে হাদীসটি বাদ দেওয়া হবে। শুধু কিতাবের বরাত দেওয়া যথেষ্ট নয়। অর্থাৎ এ কথা বলা যথেষ্ট নয় যে, অমুক গ্রন্থে এ হাদীস উল্লেখ করা হয়েছে। তবে যদি কোনো গ্রন্থ ইলম হাদীসের ভাল গ্রন্থ হয়, সে গ্রন্থে জাল হাদীসের আধিক্য না থাকে এবং সে গ্রন্থের লেখকও ভাল হন তাহলে তা গ্রহণযোগ্য হতে পারে।’’ শেষ। ফুরফুরা শরীফ, রবীউস সানী মাস, ১৩৪৮ হি (সেপ্টেম্বর ১৯২৯খৃ)