মালিকানার দিক থেকে কারবার তিন প্রকারেরঃ-
১- ব্যক্তিগত (PRIVATE PROPRIETORSHIP) কারবার।
২- অংশীদারী (PARTNERSHIP) কারবার।
৩- যৌথ (JOINT STOCK COMPANY) কারবার।
প্রথমোক্ত দুই প্রকারের কারবার ও ব্যবসা মানুষ যখন থেকে কারবার করতে শুরু করেছে, তখন থেকেই প্রচলিত। ইসলামী ফিক্হবিদগণ উভয়ের মৌলিক ও সবিস্তার বিবরণ এবং বিভিন্ন রীতি-নিয়ম (ফিক্হ গ্রন্থে) উল্লেখ করেছেন। এই শ্রেণীর কারবারের বর্তমান পরিস্থিতি অতীতের থেকে মৌলিকভাবে ভিন্নতর নয়। আর এ জন্যই এখানে আমরা তার বিস্তারিত আলোচনার দিকে যাচ্ছি না। সুতরাং এ স্থলে কেবল অংশীদারী কারবারের বিভিন্ন প্রকারভেদ উল্লেখ করব। অবশ্য কোম্পানী বা যৌথ কারবার ব্যবসায়ের এক নতুন শ্রেণী, যার অস্তিত্ব ফিকহ্বিদ্গণের যুগে বর্তমান ছিল না। তাই এই ধরনের কারবারের বিস্তারিত বিবরণ অধিকরূপে দিতে চেষ্টা করব।
অংশীদারী কারবারের বিভিন্ন প্রকার-ভেদ
ইসলামী ফিক্হবিদ্গণ এই কারবারের নিম্নোক্ত প্রকারসমূহ বর্ণনা করেছেনঃ-
১- ‘শারিকাতুল মুফাওয়াযাহ’ (THE PARTNERSHIP OF NEGOTIATION) আপোষচুক্তিমূলক অংশীদারী-
ফকীহবৃন্দের পরিভাষায় শারিকাতুল মুফায়াওযাহ এই যে, দুই (বা ততোধিক ব্যক্তি) কোন কারবার করার উপর এই শর্তের সাথে চুক্তিবদ্ধ হবে যে, উভয়ে এ কারবারে অংশীদার হয়ে নিজ নিজ মাল বা অর্থ বিনিয়োগ করবে। কারবারের ব্যাপারে এক অপরের তরফ থেকে সব রকমের লেনদেনে উভয়েই অনুমতিপ্রাপ্ত থাকবে, উভয়েই লাভের ক্ষেত্রে চুক্তি অনুযায়ী শরীক হবে এবং নোকসানের ক্ষেত্রে নিজ নিজ মাল বা অর্থের পরিমাণ ও হার অনুপাতে সকলে ভাগী হবে। উল্লেখ্য যে, এর শর্তাবলী বড় সূক্ষম।
২- ‘শারিকাতুল আনান’ (THE EQUAL SHARES IN THE PARTNERSHIP) বা সমঅংশের অংশীদারীঃ-
এই কারবারে দুটি লোক নিজ নিজ মাল বা অর্থ সহ এই শর্তে শরীক হয় যে, উভয়ে এ মালে ব্যবসা করবে এবং নিজ নিজ মালের পরিমাণ ও হার অনুপাতে উভয়েই লাভ ও নোকসানে শরীক হবে।
এই কারবার ও ‘শারিকাতুল মুফাওয়াযাহ’ এর মাঝে পার্থক্য হল এই যে, ‘মুফাওযাহ’তে উভয় অংশীদার সর্বাবস্থায় এক অপরের প্রতিনিধি ও প্রতিভূ হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে ‘আনান’ এ উভয়ের মধ্যে কেউই মালের ব্যাপারে স্বাধীনভাবে নাড়াচাড়া করতে পারে না। অবশ্য চুক্তির শর্ত অনুযায়ী সীমিত বিষয়ে নাড়াচাড়া করতে পারে।
৩- শারিকাতুল আ’মাল বা আবদান (THE PARTNERSHIP OF THE BODIES) বা দৈহিক অংশীদারী-
এই কারবারে দুই অথবা ততোধিক কারিগর ব্যক্তি কোন বিশেষ কাজ এক সঙ্গে করতে এই শর্তে চুক্তিবদ্ধ হয় যে, কাজের মজুরী চুক্তি অনুসারে উভয়ের মাঝে ভাগ-বাটোয়ারা হবে।
এতে এক বা বিভিন্ন পেশার বিভিন্ন লোক হতে পারে। যেমন ছুতোর ও দর্জির এই কারবারে এক অপরের শরীক হিসাবে একত্রে কাজ করা বৈধ।
৪- ‘শারিকাতুল উজুহ’ (THE PARTNERSHIP OF THE ESTEEM) বা প্রতিপত্তিমূলক অংশীদারী-
এই কারবারে দুই অথবা ততোধিক ব্যক্তি নিজেদের প্রভাব-প্রতিপত্তির ভিত্তিতে ধারে কোন পণ্য ক্রয় করার চুক্তি করে সেই ক্রীত পণ্য নিয়ে সকলে ব্যবসা করে। অতঃপর পণ্যের মালিককে মূল্য পরিশোধ করে যে লাভ অবশিষ্ট থাকে, তা আপোসে ভাগাভাগি করে নেয়। আর নোকসানের ক্ষেত্রেও সকলেই সমান ভাগী থাকে।
৫- ‘শারিকাতুল মুযারাবাহ’ (THE SPECULOTION) বা ঝুঁকিবিশিষ্ট অংশীদারী-
এই কারবারে এক ব্যক্তি নিজের মাল অপর ব্যক্তিকে ব্যবসা করার জন্য প্রদান করে এবং চুক্তি অনুপাতে উভয়েই লাভের ভাগী হয়। কিন্তু নোকসান হলে তা শুধু মাল-ওয়ালাই বহন করে এবং যে ব্যবসা করে, সে নোকসানের ভাগী হয় না। কারণ, তার পরিশ্রম ব্যর্থ হওয়াটাই নোকসানের ভাগী হওয়া।
প্রিয় পাঠক! উপরোল্লেখিত সকল শ্রেণীর ব্যবসা ও কারবারকে শরীয়ত বৈধ চিহ্নিত করেছে এবং এর মধ্যে কোন প্রকার কারবারকেই হারাম ও অবৈধ গণ্য করেনি। পক্ষান্তরে যদি কোন এক বা একাধিক ব্যক্তি এই ধরনের কোন অংশীদারী কারবার করতে চুক্তিবদ্ধ হয়, তাহলে শরীয়ত তাদেরকে উৎসাহিত ও উদ্বুদ্ধ করে। কারণ উক্ত প্রকার কারবারগুলোর মধ্যে কোন কারবারেই সূদ বা সূদের গন্ধও নেই।
আসুন এবারে আমরা তৃতীয় প্রকার কারবার ‘কোম্পানী’ প্রসঙ্গে আলোচনা শুরু করি।