মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) কোন হিকমত ও যুক্তির ফলে মুসলিমকে কতকগুলি দিনে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন। সেই দিনগুলি পরবর্তীতে আলোচিত হল।
সমস্ত উলামা এ ব্যাপারে একমত যে, উভয় ঈদের দিন রোযা রাখা হারাম। তাতে সে রোযা ফরয হোক; যেমন রমাযানের কাযা বা নযরের রোযা, অথবা নফল হোক। যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) ঐ দিনে রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন।[1]
ঈদুল আযহার পরবর্তী ৩ দিন রোযা রাখা বৈধ নয়। কেননা, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তাশরীকের দিনগুলো পানাহার ও আল্লাহর যিক্র করার দিন।’’[1]
যে ব্যক্তির প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার রোযা রাখা অভ্যাস আছে এবং তা যদি তাশরীকের কোন দিন পড়ে, তাহলে তার জন্যও ঐ রোযা রাখা বৈধ নয়। কারণ, সুন্নত কাজ করে হারাম-বিধান লংঘন করা যাবে না।[2]
অবশ্য যে (অমক্কাবাসী) হাজী মিনায় হজ্জের হাদ্ই (কুরবানী) দিতে সক্ষম হয় না, তার জন্য ঐ দিনগুলিতে বিনিমেয় রোযা রাখা বৈধ।
মহান আল্লাহ বলেন,
(فَمَنْ تَمَتَّعَ بِالْعُمْرَةِ إِلَى الْحَجِّ فَمَا اسْتَيْسَرَ مِنَ الْهَدْيِ، فَمَنْ لَّمْ يَجِدْ فَصِيَامُ ثَلاَثَةُ أَيَّامٍ فِي الْحَجِّ وَسَبْعَةٍ إِذَا رَجَعْتُمْ، تِلْكَ عَشَرَةٌ كَامِلَةٌ)
অর্থাৎ, সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি হজ্জের আগে উমরাহ করে হালাল হয়ে লাভবান হতে (তামাত্তু হজ্জ করতে) চায় সে সহজলভ্য কুরবানী পেশ করবে। কিন্তু যদি কেউ কুরবানী না পায়, তাহলে তাকে হজ্জের সময় ৩দিন এবং ঘরে ফিরে ৭দিন এই পূর্ণ ১০দিন রোযা পালন করতে হবে। (কুরআনুল কারীম ২/১৯৬)
আয়েশা ও ইবনে উমার (রাঃ) বলেন, ‘যে হাজী হাদ্ই দিতে অপারগ সে ছাড়া আর কারো জন্য তাশরীকের দিনগুলিতে রোযা রাখার অনুমতি নেই।’[3]
[2] (আসইলাতুন অআজবিবাতুন ফী সবলাতিল ঈদাঈন ২৩পৃঃ)
[3] (বুখারী ১৯৯৭, ১৯৯৮নং)
জুমআর দিন হল মুসলিমদের সাপ্তাহিক ঈদ। তা ছাড়া এ দিন হল যিক্র ও ইবাদতের দিন। তাই তাতে সাহায্য নিতে এ দিনে রোযা না রাখা মুস্তাহাব। পক্ষান্তরে যদি কেউ জুমআর আগে একদিন অথবা পরে একদিন রোযা রাখে, অথবা তার অভ্যাসের কোন রোযা (যেমন শুক্লপক্ষের শেষ দিন) পড়ে, অথবা ঐ দিনে আরাফা বা আশূরার রোযা পড়ে, তাহলে তার জন্য সেদিনকার রোযা রাখা মকরূহ নয়।
এক জুমআর দিনে জুয়াইরিয়াহ বিনতে হারেষ রোযা রেখেছিলেন। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) তাঁর নিকট এসে বললেন, ‘‘তুমি কি গতকাল রোযা রেখেছ?’’ তিনি বললেন, ‘জী না।’ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘আগামী কাল রোযা রাখার ইচ্ছা আছে কি?’’ তিনি বললেন, ‘জী না।’ নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বললেন, ‘‘তাহলে তুমি রোযা ভেঙ্গে ফেল।’’[1]
আবূ হুরাইরা (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমাদের মধ্যে কেউ যেন জুমআর দিন রোযা না রাখে। অবশ্য যদি তার একদিন আগে অথবা পরে একটি রোযা রাখে, তাহলে তা রাখতে পারে।’’[2]
অন্য এক বর্ণনায় বলেন, ‘‘অন্যান্য রাত ছেড়ে জুমআর রাতকে কিয়ামের জন্য খাস করো না এবং অন্যান্য দিন ছেড়ে জুমআর দিনকে রোযার জন্য খাস করো না। অবশ্য কেউ তার অভ্যাসগত রোযা রাখলে ভিন্ন কথা।’’[3]
কাইস বিন সাকান বলেন, ‘আব্দুল্লাহর কিছু সঙ্গী-সাথী জুমআর দিনে রোযা রেখে আবূ যার্র (রাঃ)-এর নিকট গেলে তিনি তাদেরকে বললেন, ‘তোমাদের উপর কসম রইল! তোমরা অবশ্যই রোযা ভেঙ্গে ফেল। কারণ, জুমআহ হল ঈদের দিন।’[4]
[2] (আহমাদ, মুসনাদ ২/৪৯৫, বুখারী ১৯৮৫, মুসলিম ১১৪৪, আবূ দাঊদ ২৪২০, তিরমিযী, ইবনে মাজাহ ১৭৭৩, ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ ৯২৪০নং, ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ, বাইহাকী)
[3] (মুসলিম ১১৪৪নং)
[4] (ইবনে আবী শাইবাহ, মুসান্নাফ ৯২৪৪নং)
ফরয বা নির্দিষ্ট নফল (যেমনঃ অভ্যাসগত শুক্লপক্ষের দিন, আরাফা বা আশূরার) রোযা ছাড়া কেবল শনিবার সাধারণ অনির্দিষ্ট নফল রোযা রাখা বৈধ নয়। যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমরা ফরয ছাড়া শনিবার রোযা রেখো না। তোমাদের কেউ যদি ঐ দিন আঙ্গুরের লতা বা গাছের ডাল ছাড়া অন্য কোন খাবার নাও পায়, তাহলে সে যেন তাই চিবিয়ে খায়।’’[1]
ত্বীবী বলেন, ‘ফরয’ বলতে রমাযানের ফরয রোযা, নযর মানা রোযা, কাযা রোযা, কাফ্ফারার রোযা এবং একই অর্থে সুন্নাতে মুআক্কাদাহ রোযা, যেমনঃ আরাফা, আশূরা এবং অভ্যাসগত (শুক্লপক্ষের দিনের) রোযা শামিল।[2] অর্থাৎ ঐসব রোযা অন্যান্য দলীলের ভিত্তিতে শনিবারে রাখতে নিষেধ নয়। যেহেতু তারীখের সাথে নির্দিষ্ট সুন্নত রোযাসমূহ যে কোন দিনেই রাখা যাবে।
যেমন তার আগে বা পরে একদিন রোযা রাখলে শনিবার রাখা বৈধ। যেহেতু মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) জুয়াইরিয়াকে বললেন, ‘‘তুমি কি আগামী দিন (অর্থাৎ, শনিবার) রোযা রাখবে?’’ আর তার মানেই হল, শুক্র ও শনিবার রোযা রাখলে মকরূহ হবে না।[3]
এই দিনে রোযা রাখা নিষেধ হওয়ার পশ্চাতে যুক্তি ও হিকমত এই যে, ইয়াহুদীরা এই দিনের তা’যীম করত, এই দিন উপবাস করত এবং কাজ-কর্ম ছেড়ে ছুটি পালন করত। সুতরাং সেদিন রোযা রাখলে তাদের সাদৃশ্য প্রকাশ পায়। পক্ষান্তরে আগে বা পরে একদিন মিলিয়ে অথবা নযর বা কাযা রোযা রাখলে সেদিন রোযা রাখা মকরূহ হবে না।[4]
কিন্তু উম্মে সালামাহ (রাঃ) বলেন যে, ‘নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) শনিবার রোযা রাখতেন।’[5] বাহ্যতঃ এই হাদীসটি পূর্ববর্ণিত আমলের বিরোধী। তবুও সামঞ্জস্য সাধনের জন্য বলা যায় যে, যখন অবৈধকারী ও বৈধকারী দুটি হাদীস পরস্পর-বিরোধী হয়, তখন অবৈধকারী হাদীসকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। তদনুরূপ মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর কথা ও আমল পরস্পর-বিরোধী হলে তাঁর কথাকেই অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অতএব এই নীতির ভিত্তিতে কেবল শনিবার রোযা রাখা মকরূহ হবে।[6]
অথবা উম্মু সালামাহ (রাঃ) তাঁকে কোন অভ্যাসগত রোযা রাখতে দেখেছেন।
[2] (তুহফাতুল আহওয়াযী ৩/৩৭২)
[3] (আশ্শারহুল মুমতে’ ৬/৪৬৬)
[4] (ফাইযুর রাহীমির রাহমান, ফী আহকামি অমাওয়াইযি রামাযান ৭৯পৃঃ)
[5] (আহমাদ, মুসনাদ ৬/৩২৩, ৩২৪, ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ ২১৬৭, ইবনে হিববান, সহীহ ৯৪১নং, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/৪৩৬, বাইহাকী ৪/৩১৩)
[6] (তামামুল মিন্নাহ, আল্লামা আলবানী ৪০৭পৃঃ)
কিছু উলামা কেবল রবিবার রোযা রাখাকে মকরূহ মনে করেছেন। কারণ, রবিবার হল খৃষ্টানদের ঈদ। যেহেতু রোযা রাখাতে এক ধরনের দিনের তা’যীম প্রকাশ পায়। আর কাফেররা তাদের প্রতীক হিসাবে যার তা’যীম করে তার তা’যীম কোন মুসলিমের জন্য বৈধ নয়। পক্ষান্তরে তার সাথে তার পরের দিন একটি রোযা রাখলে আর মকরূহ থাকে না।[1] যেমন ঐ দিনে কোন নযর, কাযা, আরাফা বা আশূরার রোযা রাখা নিষেধ নয়।
সন্দেহের দিন হল ৩০শে শা’বান; যখন ২৯ তারিখে আকাশ ধূম্র বা মেঘাচ্ছন্ন থাকার ফলে চাঁদ দেখা সম্ভব হয় না। পক্ষান্তরে ২৯ তারীখে আকাশ পরিষ্কার থাকলে ৩০ তারিখ সন্দেহের দিন থাকে না।
বলা বাহুল্য, ১লা রমাযান কি না তা সন্দেহ করে পূর্বসতর্কতামূলক কাজ ভেবে ঐ দিন রোযা রাখা হারাম। এ কথার দলীল হল আম্মার বিন ইয়াসের (রাঃ)-এর উক্তি, ‘যে ব্যক্তি সন্দেহের দিন রোযা রাখল, সে আসলে আবুল কাসেম (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর নাফরমানী করল।’[1]
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমরা রমাযানের আগে আগে এক অথবা দুই দিনের রোযা রেখো না। অবশ্য তার অভ্যাসগত কোন রোযা হলে সে রাখতে পারে।’’[2]
আর যেহেতু সন্দেহের দিন রোযা রাখা মহান আল্লাহর শরীয়ত-গন্ডীর এক প্রকার সীমালংঘন। কারণ, মহান আল্লাহ বলেন,
(فَمَنْ شَهِدَ منْكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ)
অর্থাৎ, তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে সে যেন এ মাসে রোযা রাখে। (কুরআনুল কারীম ২/১৮৫)
আর মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখে ঈদ কর। কিন্তু আকাশে মেঘ থাকলে শা’বানের গুনতি ৩০ পূর্ণ করে নাও।’’[3]
যে ব্যক্তি সনেদহের সাথে ৩০শে শা’বান রোযা রাখে, অতঃপর বুঝতে পারে যে, সেদিন সত্য সত্যই ১লা রমাযান ছিল, সে ব্যক্তি এতদ্সত্ত্বেও ঐ দিনকার রোযা কাযা করবে। কারণ, সে আসলে ভিত্তিহীন রোযা রেখেছে। আর যে ব্যক্তি ভিত্তিহীন রোযা রাখে, তার রোযা যথেষ্ট নয়। সে তো আসলে চাঁদ না দেখে, চাঁদের অস্তিত্বের প্রমাণ না নিয়ে রোযা রেখেছে; যদিও প্রকৃতপক্ষে চাঁদ মেঘের আড়ালে বিদ্যমান ছিল।[4]
অবশ্য ঐ সন্দেহের দিন ৩০শে শা’বান যদি কেউ তার অভ্যাসগত রোযা (যেমন সোম অথবা বৃহস্পতিবার বলে) রাখে, তাহলে তা দূষণীয় নয়; যেমন সে কথা হাদীসেও স্পষ্টভাবে উল্লেখিত হয়েছে।
[2] (বুখারী ১৯১৪, মুসলিম ১০৮২নং)
[3] (বুখারী ১৯০০, মুসলিম ১০৮০নং)
[4] (ফিকহুস সুন্নাহ ১/৩৯৬, তাযকীরু ইবাদির রাহমান, ফীমা অরাদা বিসিয়ামি শাহরি রামাযান ৩৯পৃঃ)
নিষিদ্ধ দিনগুলি ছাড়া বছরের প্রতি দিন রোযা রাখা মকরূহ অথবা হারাম। কারণ, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘সে রোযা রাখল না, যে সমস্ত দিনগুলিতে রোযা রাখল।’’[1]
তিনি আরো বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন রোযা রাখে, তার রোযা হয় না এবং সে পানাহারও করে না।’’[2]
তিনি আরো বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি প্রতিদিন রোযা রাখে, তার প্রতি জাহান্নামকে এত সংকীর্ণ করা হয়, পরিশেষে তা এতটুকু হয়ে যায়।’’ আর এ কথা বলার সাথে সাথে তিনি তাঁর হাতের মুঠোকে বন্ধ করলেন।[3]
এখানে জাহান্নাম সংকীর্ণ হওয়ার অর্থ এই যে, জাহান্নামে তার বাসস্থান সংকীর্ণ হবে। যেহেতু সে নিজের জন্য কাঠিন্য পছন্দ করে, কষ্ট সত্ত্বেও তাতে নিজের আত্মাকে উদ্বুদ্ধ করে, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর আদর্শ থেকে বিমুখতা প্রকাশ করে এবং এই মনে করে যে, সে যা করছে তা তাঁর আদর্শ থেকে উত্তম![4]
পক্ষান্তরে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘শোন! আমি তোমাদের সবার চাইতে বেশী আল্লাহকে ভয় করে থাকি, তোমাদের সবার চাইতে আমার তাকওয়া বেশী। কিন্তু আমি রোযা রাখি, আবার তা ত্যাগও করি। রাতে নামায পড়ি, আবার ঘুমিয়েও থাকি। বিবাহ করে স্ত্রী-মিলনও করি। সুতরাং যে ব্যক্তি আমার সুন্নত-বিমুখ হবে, সে আমার দলভুক্ত নয়।’’[5]
[2] (আহমাদ, মুসনাদ ৪/২৪, নাসাঈ, ইবনে মাজাহ ১৭০৫, ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ ২১৫০নং, হাকেম, মুস্তাদ্রাক ১/৪৩৫, সহীহুল জামেইস সাগীর, আলবানী ৬৩২৩নং)
[3] (আহমাদ, মুসনাদ ৪/৪১৪, বাইহাকী ৪/৩০০, ইবনে খুযাইমাহ, সহীহ ২১৫৪, ২১৫৫নং)
[4] (দ্রঃ ফাতহুল বারী ৪/১৯৩, যামাঃ ২/৮৩)
[5] (বুখারী ৫০৬৩, মুসলিম ১৪০১নং, প্রমুখ)
মাঝে ইফতারী না করে এবং সেহরীও না খেয়ে একটানা দুই অথবা ততোধিক দিন রোযা রাখাকে ‘সওমে বিসাল’ বলা হয়। এই শ্রেণীর রোযা রাখতে আল্লাহর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) নিষেধ করেছেন। যেহেতু তাতে রয়েছে অতিরঞ্জন এবং আত্মপীড়ন।
মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘তোমরা ‘সওমে বিসাল’ থেকে দূরে থাক।’’ এ কথা তিনি ৩ বার পুনরাবৃত্তি করলেন। সাহাবাগণ বললেন, ‘কিন্তু হে আল্লাহর রসূল! আপনি তো বিসাল করে থাকেন?’ তিনি বললেন, ‘‘এ ব্যাপারে তোমরা আমার মত নও। কারণ, আমি রাত্রি যাপন করি, আর আমার প্রতিপালক আমাকে পানাহার করিয়ে থাকেন। সুতরাং তোমরা সেই আমল করতে উদ্বুদ্ধ হও, যা করতে তোমরা সক্ষম।’’[1]
অবশ্য ইফতারী না করে সেহরী খাওয়া পর্যন্ত ‘বিসাল’ করা চলে; যদি তাতে রোযাদারের কোন কষ্ট না হয়। যেহেতু আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, ‘‘তোমরা ‘বিসাল’ করো না। কিন্তু যদি তোমাদের মধ্যে কেউ তা করতেই চায়, তাহলে সে সেহরী পর্যন্ত করুক।’’[2]
[2] (বুখারী ১৯৬৭নং)
স্বামী-স্ত্রীর জীবন বড় মধুর, বড় যৌনসুখময় রোমাঞ্চকর। স্ত্রীর তুলনায় স্বামীই এ সুখ বেশী উপভোগ করে থাকে। তাই মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) মহিলাকে নিষেধ করলেন, যাতে স্বামী ঘরে থাকলে তার বিনা অনুমতিতে স্ত্রী রোযা না রাখে।
আবূ হুরাইরা কর্তৃক বর্ণিত, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) বলেন, ‘‘মহিলা যেন স্বামীর বর্তমানে তার বিনা অনুমতিতে রমাযানের রোযা ছাড়া একটি দিনও রোযা না রাখে।’’[1]
উলামাগণ উক্ত নিষেধকে হারামের অর্থে ব্যবহার করেন। আর সে জন্যই বিনা অনুমতিতে স্ত্রী নফল রোযা রাখলে স্বামীর জন্য তা নষ্ট করে দেওয়া বৈধ মনে করেন। যেহেতু এটা স্বামীর প্রাপ্য হক এবং স্ত্রীর তরফ থেকে তার অধিকার হরণ। অবশ্য এ অধিকার কেবল নফল রোযায়, রমাযানের ফরয রোযার ক্ষেত্রে স্বামীর সে অধিকার থাকবে না। আর ফরয রোযা রাখতে স্ত্রীও স্বামীর অনুমতির অপেক্ষা করবে না।
পক্ষান্তরে স্বামী ঘরে না থাকলে তার বিনা অনুমতিতে স্ত্রী নফল রোযা রাখতে পারে। রোযা রাখার পর দিনের বেলায় স্বামী ঘরে ফিরলে, তার অধিকার আছে, সে স্ত্রীর রোযা নষ্ট করতে পারে।
অনুরূপভাবে স্বামী অসুস্থ অথবা সঙ্গমে অক্ষম হলেও স্ত্রী তার বিনা অনুমতিতে রোযা রাখতে পারে।[2]
[2] (ফিকহুস সুন্নাহ ১/৩৯৭)
খাস রজব মাসে রোযা রাখা মকরূহ। কারণ, তা জাহেলিয়াতের এক প্রতীক। জাহেলী যুগের লোকেরাই এ মাসের তা’যীম করত। পক্ষান্তরে সুন্নাহতে এর তা’যীমের ব্যাপারে কিছু বর্ণিত হয় নি। আর এ মাসের নামায ও রোযার ব্যাপারে যা কিছু বর্ণনা করা হয়ে থাকে, তার সবটাই মিথ্যা।[1]