(১২২) বাহ্যিক অপবিত্র বস্ত পানি ছাড়া অন্য কিছু দ্বারা পবিত্র করা যাবে কি? বাস্পের (Dry clean) মাধ্যমে কি কোট ইত্যাদি পবিত্র করা যায়?
উত্তর. (১২১) -যে কোন নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যম হচ্ছে পানি । পানি ছাড়া অন্য কোন মাধ্যমে পবিত্রতা অর্জন করা যাবেনা । চাই উক্ত পানি পরিচ্ছন্ন হোক বা পবিত্র বস্তু হোক তাতে পড়ার কারণে তাতে কোনো পরিবর্তন দেখা যাক।কেননা বিশুদ্ধ কথা হচ্ছে, পবিত্র কোন বস্তুর কারণে যদি পানির মধ্যে পরিবর্তন দেখা যায় তবে তাকে পানি বলা হবে। এর পবিত্র করণের ক্ষমতা বিনষ্ট হবে না। এইপানি নিজে পবিত্র অন্যকে পবিত্র করতে পারে।পানির যদি না পাওয়া যায় বা পানি ব্যবহার করতে ক্ষতির আশংকা দেখা যায় ,তবে তায়াম্মুমের দিকে অগ্রসর হবে।দুহাত মাটিতে মেরে তা দ্বারা মুখমণ্ডল মাসে করবে এবং উভয় হাত কবজি পর্যন্ত মাসে করবে ।আর বাহ্যিক ও প্রকাশ্য নাপাক বস্তু থেকে পবিত্রতা অর্জন করার পদ্ধতি হচ্ছে যেকোনো পবিত্র বস্তু দ্বারা তা প্রসারিত করা অতএব পানি বা পেট্রোল বা কোন তরলপদার্থ বা শুষ্ক বস্তু দ্বারা যদি পরিপূর্ণরূপে উক্ত নাপাকি অপসারিত করা সম্ভব হয় তবেই তা পবিত্র হয়ে যাবে। কিন্তু কুকুরের নাপাকি (মুখ দেওয়া উচ্ছিষ্ট পাত্র)পবিত্র করার জন্য অবশ্যই সাতবার পানি দ্বারা ধৌত করতে হবে এবং একবার মাটি দ্বারা মাজতে হবে।
এভাবেই আমরা জানতে পারব প্রত্যক্ষ নাপাক বস্তু থেকে কিভাবে পবিত্র হতে হয় এবং কিভাবে আভ্যন্তরীণ নাপাকী থেকে পবিত্রতা অর্জন করতে হয়।
উত্তর. (১২২) - বাহ্যিক নাপাক বস্ত অপসারিত করা উদ্দিষ্ট ইবাদত নয়। অর্থাৎ ইহা ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এ দ্বারা উদ্দেশ্য হচ্ছে উক্ত নাপাক বস্ত থেকে মুক্ত হওয়া। অতএব যে কোন বস্ত দ্বারা যদি তা অপসারিত করা সম্ভব হয় এবং তার চিহ্ন বিদূরিত করা যায়, তবে উক্ত বস্ত তাকে পবিত্রকারী হবে। চাই তা পানি হোক বা পেট্রোল অথবা যে কোন বস্ত হোক। এমনকি বিশুদ্ধ মতানুযায়ী সূর্যের তাপ বা বাতাসের মাধ্যমেও যদি উক্ত বস্ত অপসারিত হয়, তবে সে স্থান পবিত্র হয়ে যাবে। একথাটি শায়খুল ইসলাম ইমাম ইবনু তায়মিয়া (রহঃ)এর পসন্দ। কেননা অপবিত্র বস্তটি প্রত্যক্ষ থাকলেই উক্ত স্থানটি নাপাক থাকবে, যখনই উহা অপসারিত হয়ে যাবে তখনই উক্ত স্থান পবিত্র হবে। অবশ্য নাপাক বস্তটির রং যদি উঠানো সম্ভব না হয়, তবে কোন অসুবিধা নেই। এ ভিত্তিতে আমরা বলতে পারি ড্রাই ক্লিনের মাধ্যমে যদি কোট ইত্যাদি সাফ করা হয় এবং তা থেকে বাহ্যিক নাপাকী দূরীভূত হয়ে যায়, তবে তা পবিত্র হয়ে যাবে।
যদিও এ পানি পরিবর্তন হয়ে থাকে তবুও উহা পবিত্র। কেননা বাইরের কোন নাপাক বস্ত দ্বারা তার পরিবর্তন সৃষ্টি হয়নি। বরং দীর্ঘ সময় থাকার কারণে এই পরিবর্তন এসেছে। এ দ্বারা ওযু বা গোসল করলে তা বিশুদ্ধ হবে। কিন্তু যদি নিশ্চিত হয় যে, কোন অপবিত্র বস্ত পড়ার কারণে তাতে পরিবর্তন এসেছে তবে তা নাপাক বলে গণ্য হবে।
হে প্রশ্নকারী আপনি জেনে রাখুন! এবং যারাই এই প্রশ্নের উত্তর পাঠ করবে তাদেরও জেনে রাখা উচিৎ যে, প্রত্যেক মু’মিনের জন্য ইসলামী শরীয়তের বিধি-বিধান সমূহের হেকমত হচ্ছে, আল্লাহর নিম্ন লিখিত এই বাণীটিঃ
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمْ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ
“আল্লাহ ও তাঁর রাসূল কোন বিষয়ে নির্দেশ দিলে কোন মু’মিন পুরুষ কিংবা মু‘মিন নারীর সে বিষয়ে ভিন্ন কোন সিদ্ধান্তের অধিকার থাকবে না।” (সূরা আহযাব- ৩৬) কুরআন ও সুন্নাহ্ থেকে প্রমাণিত কোন বিষয় ওয়াজিব বা হারাম সম্পর্কে কেউ প্রশ্ন উঠালেই আমরা তাকে বলবঃ এটা আপনার স্রষ্টা আল্লাহ্ তা’আলার নির্দেশ কিংবা আপনার রাসূল মুহাম্মাদ (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নির্দেশ। বিষয়টি মেনে নেয়ার জন্য এটুকু কথাই একজন মুমিনের জন্য যথেষ্ট। এই কারণে আয়েশা (রাঃ)কে যখন জিজ্ঞেস করা হল, ‘কি ব্যাপার, ঋতুবতী নারী রোযার কাযা আদায় করবে, অথচ নামাযের কাযা আদায় করবে না?’ তিনি জবাবে বললেন,
كَانَ يُصِيبُنَا ذَلِكَ فَنُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّوْمِ وَلَا نُؤْمَرُ بِقَضَاءِ الصَّلَاةِ
“আমরা ঋতুবতী হতাম, আমাদেরকে রোযা কাযা আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হত, কিন্তু নামায কাযা আদায় করতে নির্দেশ দেয়া হত না।” কুরআন ও সুন্নাহ্র উক্তি পাওয়া গেলে অন্য কোন হেকমত অনুসন্ধান করা উচিৎ নয়। বিনা দ্বিধায় মু’মিন সেটা মেনে নিবে এবং আমল করবে। কোন প্রশ্ন করবে না। অবশ্য উক্ত নির্দেশের হেতু ও হেকমত অনুসন্ধান করা নিষেধ নয়। কেননা তাতে ১) আন্তরিক প্রশান্তি বৃদ্ধি হয়, ২) বিষয়টির কারণ ও হিকমত জানা থাকলে ইসলামী শরীয়তের শ্রেষ্ঠত্ব প্রস্ফুটিত হয়। ৩) তাছাড়া বিষয়টির কারণ জানা থাকলে, একই কারণ বিশিষ্ট অন্য কোন বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন উক্তি না পাওয়া গেলে, সেখানে কেয়াস করা সম্ভব হবে। শরীয়তের বিষয়ে হেকমত জানা থাকলে উল্লেখিত তিনটি উপকার পাওয়া যায়।
উল্লেখিত ভূমিকার পর উপরে বর্ণিত প্রশ্নের জবাবে আমরা বলবঃ নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত হয়েছে, পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার করা হারাম, নারীর জন্য হারাম নয়।
এর কারণ হচ্ছে, মানুষের সৌন্দর্যের জন্য স্বর্ণ হচ্ছে সর্বাধিক মূল্যবান বস্ত। বস্তটি সৌন্দর্য ও গয়না হিসেবে ব্যবহার করার জন্য। আর পুরুষের এটা দরকার নেই। অর্থাৎ পুরুষ এমন মানুষ নয় যে, তাকে অন্যের সাহায্য নিয়ে পরিপূর্ণ হতে হবে। বরং তার পৌরুষত্বের কারণে সে নিজেই পরিপূর্ণ মানুষ। তাছাড়া নিজের দিকে অন্য মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য পুরুষের সৌন্দর্য অবলম্বন করারও দরকার নেই। কিন্তু নারী এর বিপরীত। নারী অপূর্ণ, তার সৌন্দর্যকে পূর্ণতা দান করা দরকার। একারণে সর্বোচ্চ মূল্যে গয়না দিয়ে তাকে সৌন্দর্য মন্ডিত করার প্রয়োজন দেখা যায়। যাতে করে তার ঐ সৌন্দর্য স্বামী-স্ত্রীর মাঝে সদ্ভাব সৃষ্টি করে, স্বামীর কাছে স্ত্রী হয়ে উঠে আবেগময়ী ও আকর্ষনীয়। আর একারণেই নারীর জন্য স্বর্ণ দ্বারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা বৈধ করা হয়েছে, পুরুষের জন্য নয়। আল্লাহ তা’আলা নারী প্রকৃতির বিবরণ দিতে গিয়ে এরশাদ করেনঃ
أَوَمَنْ يُنَشَّأُ فِي الْحِلْيَةِ وَهُوَ فِي الْخِصَامِ غَيْرُ مُبِينٍ
“যে অলংকারে মন্ডিত হয়ে লালিত-পালিত হয় এবং তর্ক-বিতর্ককালে স্পষ্ট বক্তব্যে অসমর্থ?” (তাকে কি তোমরা আল্লাহর সন্তান হিসেবে সাব্যস্ত করবে?) (সূরা যুখরুফঃ ১৮) আর এভাবেই শরীয়তে পুরুষের জন্য স্বর্ণ ব্যবহার হারাম হওয়ার হেকমত সুস্পষ্ট হয়ে গেল।
যে সমস্ত পুরুষ স্বর্ণ ব্যবহারে অভ্যস্ত, এ উপলক্ষ্যে আমি তাদেরকে নসীহত করে বলতে চাইঃ তারা এ কাজের মাধ্যমে আল্লাহ ও রাসূলের নাফারমানী করেছে। নিজেদেরকে নারীদের কাতারে শামিল করেছে। নিজেদের হাতে বা গলায় জাহান্নামের আগুনের আঙ্গার পরিধান করেছে। যেমনটি নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে প্রমাণিত হয়েছে। তাদের উপর আবশ্যক হচ্ছে, আল্লাহ সুব্হানাহু ওয়া তা’আলার কাছে তওবা করা। তবে শরীয়তের সীমারেখার মধ্যে পুরুষের জন্য রৌপ্য ব্যবহার বৈধ রয়েছে। অনুরূপভাবে অন্য পদার্থও ব্যবহার করা যাবে। যেমন আংটি বা ঘড়ি ইত্যাদিও ব্যবহারও করা যাবে। তবে কোন ক্রমেই যেন তা অপচয়ের পর্যায়ে না পড়ে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।
একান্ত প্রয়োজন দেখা না দিলে পুরুষের জন্য স্বর্ণের দাঁত লাগানো জায়েয নয়। কেননা পুরুষের জন্য স্বর্ণ পরিধাণ করা ও তা গয়না হিসেবে ব্যবহার করা হারাম। কিন্তু নারীর ক্ষেত্রে যদি সচরাচর স্বর্ণের দ্বারা দাঁত বাঁধানো প্রচলিত থাকে তবে কোন অসুবিধা নেই, স্বর্ণের দাঁত ব্যবহার করতে পারে। কেননা নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
أُحِلَّ الذَّهَبُ وَالْحَرِيرُ لِإِنَاثِ أُمَّتِي وَحُرِّمَ عَلَى ذُكُورِهَا
“আমার উম্মতের নারীদের জন্য স্বর্ণ ও রেশম ব্যবহার বৈধ করা হয়েছে। এবং পুরুষদের জন্য তা হারাম করা হয়েছে।” অবশ্য খেয়াল রাখতে হবে তা যেন অপচয়ের পর্যায়ে না পড়ে।
এ অবস্থায় নারী বা একান্ত প্রয়োজনে স্বর্ণের দাঁত ব্যবহারকারী পুরুষ যদি মৃত্যু বরণ করে তবে উক্ত স্বর্ণ খুলে নিতে হবে। কেননা স্বর্ণ একটি সম্পদ। যার অধিকারী হচ্ছে মৃতের উত্তরাধিকারীগণ। স্বর্ণসহ দাফন করে দিলে একটি সম্পদকে নষ্ট করা হল। কিন্তু যদি দাঁত খুলতে গিয়ে তার মাড়ি কাটা বা ভাঙ্গার দরকার পড়ে, তবে সে অবস্থায় স্বর্ণ বের করা যাবে না। কেননা মুসলমান জীবিত ও মৃত সর্বাবস্থায় সম্মানিত।
কোন মানুষের জন্য এমন কারো সামনে নিজের লজ্জাস্থান উম্মুক্ত করা জায়েয নয় যার জন্য তার লজ্জাস্থান দেখা হালাল নয়। ওযুখানায় প্রস্রাব করার জন্য যদি লজ্জাস্থান উম্মুক্ত করে, তবে নিঃসন্দেহে মানুষ উহা প্রত্যক্ষ করবে, ফলে সে এতে হবে গুনাহগার। ফিক্বাহবিদগণ উল্লেখ করেছেন, এ অবস্থায় তার উপর ওয়াজিব হচ্ছে পানি ব্যবহারের পরিবর্তে কুলুখ ব্যবহার করা। মানুষের দৃষ্টির আড়ালে দূরে কোথাও গিয়ে হাজত পূরা করবে এবং পাথর বা ঢিলা বা টিসু প্রভৃতি দ্বারা কুলুখ নিবে। ঐ বস্ত দ্বারা তিনবার লজ্জাস্থান মুছবে। তারা বলেন, কেননা যদি ইসে-ন্জা (পানি ব্যবহার) করে তবে মানুষের সামনে লজ্জাস্থান প্রকাশ হয়ে পড়বে। আর এটা হারাম। আর যা না করলে হারাম কাজ থেকে বাঁচা যাবে না তা করা ওয়াজিব।
মোট কথা, কোন ক্রমেই মানুষের সামনে লজ্জাস্থান প্রকাশ করা জায়েয নয়। বরং সাধ্যানুযায়ী চেষ্টা করবে এমন স্থানে যাওয়া যা হবে মানুষের দৃষ্টির আড়ালে।
নিম্ন লিখিত দু’টি শর্তের ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে প্রস্রাব করা যায়ঃ
১) প্রস্রাবের ছিটা থেকে সে নিরাপদ থাকবে।
২) কেউ যেন তার লজ্জাস্থানের প্রতি দৃষ্টিপাত না করতে পারে।
বিদ্বানগণ বলেন, কুরআন শরীফ সাথে নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা জায়েয নয়। কেননা একথা সর্বজন বিদিত যে, পবিত্র কুরআন এমন সম্মান ও মর্যাদাবান বস্ত যা সাথে নিয়ে টয়লেটের মত স্থানে প্রবেশ করা সমিচীন নয়।
আল্লাহর নাম সম্বলিত কাগজ যদি বাইরে প্রকাশিত না থাকে বরং তা পকেটের মধ্যে থাকে বা গোপনে অপ্রকাশিত অবস্থায় থাকে, তবে তা সাথে নিয়ে টয়লেটে প্রবেশ করা জায়েয। সাধারণত অনেক নাম তো এমন রয়েছে যা আল্লাহ্র নামের সাথে সম্পর্কযুক্ত। যেমন আবদুল্লাহ বা আবদুল আজীজ প্রভৃতি।
টয়লেটের মধ্যে ওযু করলে মনে মনে বিসমিল্লাহ্ বলবে, মুখে উচ্চারণ করে বলবে না। কেননা ওযু ও গোসলে ‘বিসমিল্লাহ্’ ওয়াজিব হওয়ার বিষয়টি শক্তিশালী নয়। ইমাম আহমাদ (রহঃ) বলেন, ‘ওযুতে বিসমিল্লাহ্ বলার ব্যাপারে নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) থেকে বিশুদ্ধ কোন হাদীছ নেই।’ এজন্যে মুগনী গ্রন্থের লিখক মুওয়াফ্ফাক বিন কুদামা মত প্রকাশ করেছেন যে, ওযুর সময় ‘বিসমিল্লাহ্’ বলা ওয়াজিব নয়।
এ মাসআলায় বিদ্বানদের থেকে কয়েকটি মত পাওয়া যায়ঃ
একদল বিদ্বান বলেন, বন্ধ ঘর ছাড়া অন্য কোথাও কিবলা সামনে বা পিছনে রেখে প্রস্রাব-পায়খানা করা হারাম। তারা আবু আইয়্যুব আনসারী (রাঃ)এর হাদীছকে দলীল হিসেবে গ্রহণ করেছেন। নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
إِذَا أَتَيْتُمُ الْغَائِطَ فَلَا تَسْتَقْبِلُوا الْقِبْلَةَ وَلَا تَسْتَدْبِرُوهَا بِبَوْلٍ وَلَا غَائِطٍ وَلَكِنْ شَرِّقُوا أَوْ غَرِّبُوا قَالَ أَبُو أَيُّوبَ فَقَدِمْنَا الشَّامَ فَوَجَدْنَا مَرَاحِيضَ قَدْ بُنِيَتْ قِبَلَ الْقِبْلَةِ فَنَنْحَرِفُ عَنْهَا وَنَسْتَغْفِرُ اللَّهَ
“তোমরা পেশাব-পায়খানায় গেলে পায়খানার সময় বা প্রস্রাব করার সময় কিবলাকে সামনে রাখবে না এবং পিছনেও রাখবে না। বরং পূর্ব ও পশ্চিম দিক ফিরে বসবে।” আবু আইয়্যুব বলেন, আমরা শাম দেশে গিয়ে দেখি সেখানকার টয়লেট কা’বার দিকে তৈরী করা আছে। আমরা তা ব্যবহার করার সময় বাঁকা হয়ে বসতাম অতঃপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতাম।
এ বিষয়টি ছিল খোলা মাঠে। কিন্তু বন্ধ ঘরের মধ্যে যদি হয়, তবে কিবলা সামনে বা পিছনে রাখাতে কোন দোষ নেই।
ইবনু ওমার (রাঃ) বর্ণিত হাদীছে বলা হয়েছে, তিনি বলেনঃ
ارْتَقَيْتُ فَوْقَ بَيْتِ حَفْصَةَ فَرَأَيْتُ النَّبِيَّ صَلَّى اللَّه عَلَيْهِ وَسَلَّمَ يَقْضِي حَاجَتَهُ مُسْتَدْبِرَ الْقِبْلَةِ مُسْتَقْبِلَ الشَّأْمِ
“আমি একদা হাফসার বাড়ীর ছাদে উঠলাম। দেখলাম নবী (ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) শামের দিকে মুখ করে কা’বার দিকে পিছন ফিরে তাঁর প্রয়োজন পূরণ করছেন।”
বিদ্বানদের মধ্যে কেউ কেউ বলেন, ঘেরা স্থানে হোক বা খোলা স্থানে হোক কোন সময়ই কিবলা সম্মুখে বা পশ্চাতে রাখা যাবে না। তাদের দলীল হচ্ছে পূর্বেল্লিখিত আবু আইয়্যুব আনসারীর হাদীছ। আর ইবনু ওমরের হাদীছ সম্পর্কে তাদের জবাব হচ্ছেঃ
প্রথমতঃ ইবনু ওমারের হাদীছটি হচ্ছে নিষেধাজ্ঞার পূর্বের।
দ্বিতীয়তঃ নিষেধাজ্ঞাই প্রাধান্য পাবে। কেননা নিষেধাজ্ঞা আসল থেকে স্থানান্তরিত হয়েছে। আর আসল হচ্ছে জায়েয। তাই জায়েয থেকে স্থানান্তর হয়ে নাজায়েযের বিধানই গ্রহণযোগ্য।
তৃতীয়তঃ আবু আইয়্যুব বর্ণিত হাদীছ নবী (ﷺ)এর উক্তি। আর ইবনু ওমারের হাদীছ তাঁর কর্ম। রাসূল (ﷺ)এর মৌখিক নির্দেশের হাদীছ কর্মের হাদীছের সাথে সংঘর্ষশীল হতে পারে না। কেননা কর্মে বিশেষত্ব ও ভুলের সম্ভাবনা থাকে বা অন্য কোন ওযরেরও সম্ভাবনা থাকতে পারে।
এ মাসআলায় আমার মতে, প্রাধান্যযোগ্য কথা হচ্ছে,
খোলা ময়দানে ক্বিবলা সামনে বা পিছনে রেখে শৌচকার্য করা হারাম। চার দেয়ালে ঘেরা স্থানে কিবলাকে পিছনে রাখা জায়েয হবে সামনে রাখা জায়েয নয়। কেননা কিবলার সম্মুখবর্তী হওয়ার হাদীছ সংরক্ষিত। এখানে বিশেষত্বের কোন সম্ভাবনা নেই। কিন্তু পশ্চাতে রাখার নিষেধাজ্ঞাকে নবীজীর কর্ম দ্বারা বিশিষ্ট করে দেয়া হয়েছে। তাছাড়া সম্মুখে রাখার চাইতে পশ্চাতে রাখার বিষয়টি সহজ, এই কারণে (আল্লাহ ভাল জানেন) ঘেরার মধ্যে থাকলে বিষয়টিকে হালকা করা হয়েছে। তবে সর্বক্ষেত্রে উত্তম হচ্ছে কিবলাকে সম্মুখে বা পশ্চাতে না রাখা।