এ কথা প্রথমেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, যে কোন ইবাদত কবুল হওয়ার মূল ভিত্তি হল তওহীদ। আর তা শুদ্ধ হওয়ার মৌলিক শর্ত হল ২টি; ইখলাস ও মুহাম্মাদী তরীকা। সুতরাং যে নামায মুহাম্মাদী তরীকায় নেই, তাতে পূর্ণ ইখলাস থাকলেও তা বিদআত। মহানবী (ﷺ) বলেন, “যে ব্যক্তি আমাদের এ (দ্বীন) ব্যাপারে নতুন কিছু উদ্ভাবন করবে যা তার পর্যায়ভুক্ত নয়, তা প্রত্যাখ্যাত।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১৪০নং) “যে ব্যক্তি এমন আমল করে, যাতে আমাদের কোন নির্দেশ নেই, তা প্রত্যাখ্যাত।” (মুসলিম, সহীহ ১৭১৮নং) “আর নবরচিত কর্মসমূহ থেকে দূরে থেকো। কারণ, নবরচিত কর্ম হল বিদআত এবং প্রত্যেক বিদআতই ভ্রষ্টতা।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান, তিরমিযী, সুনান, ইবনে মাজাহ্, সুনান, মিশকাত১৬৫নং) “আর প্রত্যেক ভ্রষ্টতাই হল জাহান্নামে।” (সহিহ,নাসাঈ, সুনান ১৪৮৭নং)
সাধারণ নফল নামায নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যে কোন সময়ে ইচ্ছামত সংখ্যায় পড়া যায়। কিন্তু সেই সাধারণ নামাযকে নিজের তরফ থেকে সময়, সংখ্যা, পদ্ধতি, স্থান, গুণ (ফযীলত) বা কারণ দ্বারা নির্দিষ্ট করলে তা বিদআত বলে পরিগণিত হয়।
যে নামাযের কথা কেবল যয়ীফ বা দুর্বল হাদীসে বর্ণিত হয়েছে এবং কোন হাসান বা সহীহ হাদীসে তার বর্ণনা নেই, সে নামায বিদআত।
উপরোক্ত পটভূমিকায় নিম্নে এমন কতিপয় নামাযের কথা আলোচনা করব, যা বিদআত। আর তা কেবল জানার জন্যই; যাতে কেউ অজান্তে সেই বিদআত না করে বসে।
প্রত্যেক ফরয নামাযের পর সুন্নাতে মুআক্কাদাহ পড়ে বসে বসে ২ রাকআত নফল। মা-বাপের উদ্দেশ্যে এমন নামায বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪৫পৃ:)
উভয় ঈদের রাতে বিশেষ নামায (যইফ জামে ৫৩৫৮, ৫৩৬১) এবং এই রাত্রি জেগে ইবাদত বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ৩৩২পৃ:) ঈদুল ফিতরের রাতের ১০০ রাকআত এবং ঈদুল আযহার রাতের ২ রাকআত নামাযও বিদআত। (ঐ ৩৪৪পৃ:)
যে হাদীসে বলা হয়েছে যে, “যে ব্যক্তি ঈদুল ফিতর ও আযহার রাত্রি জাগরণ (ইবাদত) করবে, তার হৃদয় সেদিন মারা যাবে না, যেদিন সমস্ত হৃদয় মারা যাবে।” (ত্বাবারানী, মু’জাম) সে হাদীসটি জাল ও মনগড়া হাদীস। (সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৫২০, যইফ জামে ৫৩৬১নং দ্র:)
এই পুস্তকের প্রথম অংশে উল্লেখ করা হয়েছে যে, কাযা উমরী বা উমরী কাযা নামাযের অস্তিত্ব শরীয়তে নেই। বিধায় তা বিদআত।
বিদআতীরা বলে, যদি কোন লোকের বহু সময়ের নামায কাযা হয়ে থাকে এবং সে তার সংখ্যা জানে না, তবে সে জুমআর দিন ফরয নামাযের পূর্বে ৪ রাকআত নফল নামায এক সালামে আদায় করবে। এই নামাযে প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার পর আয়াতুল কুরসী ৭ বার এবং সূরা কাওসার ১৫ বার পড়বে। এই নামায পড়লে নামাযী ও তার পিতা-মাতার (?) অসংখ্যকাযা নামায নাকি আল্লাহ মাফ করে দিবেন!
আওয়াবীনের নামায আসলে চাশতের নামাযের অপর নাম। মহানবী (ﷺ) বলেন, “চাশতের নামায হল আওয়াবীনের নামায।” (জামে ৩৮২৭নং) আর এ হাদীস এ কথারই দলীল যে, মাগরেবের পর উক্ত নামের নামাযটি ভিত্তিহীন ও বিদআত। যেমন এই নামাযের খেয়ালী উপকার বর্ণনায় বলা হয়ে থাকে যে, সৃষ্টিজগৎ ঐ নামাযীর অনুগত হয়ে যায় এবং ১২ বছরের কবুল হওয়া ইবাদতের সওয়াব লিখা হয়।
যে হাদীসে মাগরেব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ের নামাযকে আওয়াবীনের নামায বলা হয়েছে, তা সহীহ নয়; যয়ীফ। (সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৪৬১৭, যইফ জামে ৫৬৭৬নং)
তিরমিযী ও ইবনে মাজাতে যে ৬ রাকআত নামায মাগরেবের পর পড়লে ১২ বছর ইবাদতের সমান হওয়ার কথা বলা হয়েছে তা সহীহ নয়। বরং তা খুবই দুর্বল হাদীস। (তিরমিযী, সুনান ৬৬, সিযা: ৪৬৯, যইফ জামে ৫৬৬১নং) যেমন ৫০ বছরের গুনাহ মাফ হওয়ার হাদীসও দুর্বল। (সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৪৬৮, যইফ জামে ৫৬৬৫নং)
তদনুরুপ এই সময়ে ২০ রাকআত নামাযে বেহেশ্তে একটি গৃহ্ লাভের হাদীসটিও জাল ও মনগড়া। (সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৪৬৭, যইফ জামে ৫৬৬২নং)
অবশ্য সাধারণভাবে নফল নামায যেমন নিষিদ্ধ সময় ছাড়া যে কোন সময়ে পড়া যায়, তেমনি মাগরেব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে সাধারণ নফল অনির্দিষ্টভাবে পড়া যায়। মহানবী (ﷺ) এই সময়ে নফল নামায পড়তেন বলে প্রমাণ পাওয়া যায়। (জামে ৪৯৬২নং)
জুমআর নামাযের পর অনেকে যোহরের নিয়তে ৪ রাকআত নামায পড়ে থাকে। যা ভিত্তিহীন, মনগড়া ও বিদআত। (আল-আজবিবাতুন নাফেআহ্, আন আসইলাতি লাজনাতি মাসজিদিল জামেআহ্, মুহাদ্দিস আলবানী ৭৪পৃ:, মু’জামুল বিদা’ ১২০, ৩২৭পৃ:)
কুরআন হিফয সহজ হওয়ার উদ্দেশ্যে জুমআর রাতে ৪ রাকআত এই নামায পড়া হয়। এর প্রথম রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ইয়াসীন, দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা দুখান, তৃতীয় রাকআতে ফাতিহার পর সূরা সাজদাহ এবং চতুর্থ রাকআতে ফাতিহার পর সূরা মুলক পড়া হয়। আর এর শেষে লম্বা দুআ করা হয়। এ আমলের জন্য যেহাদীস বর্ণনা করা হয় তা জাল ও মনগড়া হাদীস। (তিরমিযী, সুনান ৭১৯, সিলসিলাহ যায়ীফাহ, আলবানী ৩৩৭৪নং) বিধায় তা বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ৩৩৯পৃ:)
মৃতব্যক্তির কল্যাণের জন্য সওয়াব পৌঁছবার উদ্দেশ্যে নামায পড়া এবং তার সওয়াব তার নামে বখশে দেওয়া বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪০পৃ:)
শুক্রবার :
- শুক্রবারে যোহ্র ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে (?) ২ রাকআত; প্রথম রাকআতে আয়াতুল কুরসী ১ বার ও সূরা ফালাক্ব ২৫ বার এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ইখলাস ১ বার এবং সূরা ফালাক্ব ২০ বার পড়া।
- ফযীলত: মরার পূর্বে স্বপ্নে আল্লাহর ও বেহেশ্তে নিজের জায়গার দর্শন লাভ!
- এই দিনে মাগরেব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে ১২ রাকআত নামায।
- ফযীলত: বেহেশ্তে মহল লাভ, সমগ্র মুসলিম জাতির তরফ থেকে সদকাহ্ দেওয়ার সওয়াব লাভ এবং পাপ নাশ হবে।
- এই দিনে চাশতের সময় নির্দিষ্ট সূরার সাথে ৪ অথবা ১০ রাকআত নামায পড়া। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪১পৃ:)
- ফযীলত: নবীর সুপারিশে বেহেশ্ত লাভ, মা-বাপেরও গুনাহ মাফ!
- মহানবী (ﷺ)-কে দেখার উদ্দেশ্যে অনেকে জুমআর রাতে ২ রাকআত নামায পড়ে। প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ২৫ বার, সালামের পর নবীর প্রতি দরুদ ১০০০ বার। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪৩পৃ:)
শনিবার :
- শনিবারের যে কোন সময়ে ৪ রাকআত এক সালামে; প্রত্যেক রাকআতে ৩ বার সূরা কাফিরুন এবং নামায শেষে ১ বার আয়াতুল কুরসী।
- ফযীলত: ১ বছরের রোযা ও রাতের ইবাদতের এবং শহীদের সওয়াব লাভ, প্রত্যেক হ্রফের বদলে এক হজ্জ ও ওমরার সওয়াব লাভ, কিয়ামতে নবী ও শহীদানের সাথে আরশের ছায়া লাভ!!!
- শনিবার দিনগত রাতের ২০ রাকআত নামায; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ৫০ বার, সুরা ফালাক্ব একবার এবং সূরা নাস একবার। তারপর নানান দুআ ১০০ বার।
- ফযীলত: পৃথিবীর সকল মানুষের সংখ্যার সমান (প্রায় ৬০০ কোটি) সওয়াব লাভ, কিয়ামতে নিরাপত্তা লাভ এবং নবীদের সাথে বেহেশ্ত প্রবেশ!!!
রবিবার :
- রবিবার যে কোন সময়ে ৪ রাকআত ১ সালামে, প্রত্যেক রাকআতে সূরা বাক্বরারা শেষ ২ আয়াত পড়া।
- ফযীলত: নাসারাদের নর-নারীর সংখ্যার সমান নেকী লাভ, নবীর সওয়াব লাভ, হজ্জ ও উমরার সওয়াব লাভ, প্রত্যেক রাকআতের বদলে ১০০০ নামাযের সওয়াব লাভ এবং প্রত্যেক হ্রফের বদলে বেহেশ্তে মিসকের শহর লাভ!!!
- রবিবার দিনগত রাত্রে যে কোন সময়ে ৪ রাকআত ১ সালামে, প্রথম রাকআতে সূরা ইখলাস ১০ বার, দ্বিতীয় রাকআতে ২০ বার, তৃতীয় রাকআতে ৩০ বার এবং চতুর্থ রাকআতে ৪০ বার পড়া। নামাযের পর নির্দিষ্ট অযীফা ৭৫ বার করে।
- ফযীলত: দোযখী হলেও বেহেশ্ত লাভ হবে! সমস্ত জাহেরী গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। প্রত্যেক আয়াতের বিনিময়ে হজ্জ ও উমরার সওয়াব লাভ এবং আগামী সোমবারের ভিতরে মরলে শহীদ হবে।
সোমবার :
- সোমবার চাশতের সময় ২ রাকআত নামায, প্রত্যেক রাকআতে আয়াতুল কুরসী ১ বার, সূরা ইখলাস ১ বার, সূরা ফালাক্ব ১ বার এবং সূরা নাস ১ বার পড়া।
- ফযীলত: সমস্ত গুনাহ মাফ হবে।
- এই দিনে আরো ১২ রাকআত নামায।
- ফযীলত: কিয়ামতে এক হাজার বেহেশতী যেওর ও তাজ পরানো হবে, ১ লক্ষ ফিরিশ্তা এই নামাযীকে নিয়ে যাবে এবং প্রত্যেক ফিরিশ্তার অসংখ্য উপহার থাকবে!
- সোমবার দিবাগত রাত্রে ১২ রাকআত এবং প্রত্যেক রাকআতে সূরা নাসর ৫ বার করে পড়া।
- ফযীলত: বেহেশ্তে ৭ পৃথিবীর সমান বিরাট ঘর তৈরী হবে!
মঙ্গলবার :
- মঙ্গলবার দিনে চাশতের সময় অথবা সূর্য ঢলার সঙ্গে সঙ্গে ১০ রাকআত এবং প্রত্যেক রাকআতে আয়াতুল কুরসী ১ বার ও সূরা ইখলাস ৩ বার পড়া।
- ফযীলত: ৭০ দিন কোন লিখা হবে না! ৭০ বছরের গুনাহ মাফ। আর ঐ দিনে মরলে সে শহীদ হবে!
- মঙ্গলবার দিবাগত রাত্রে ২ রাকআত; প্রথম রাকআতে ১০ বার সূরা ফালাক্ব এবং দ্বিতীয় রাকআতে ১০ বার সূরা নাস পড়া।
- ফযীলত: ৭০ হাজার ফিরিশ্তা আসমান থেকে নাজেল হয়ে এই নামাযীর জন্য কিয়ামত পর্যন্ত সওয়াব লিখতে থাকবে !!!
বুধবার :
- বুধবার দিনে সকালে ১২ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে আয়াতুল কুরসী ১ বার, সূরা ইখলাস ৩ বার, সূরা ফালাক্ব ৩ বার এবং সূরা নাস ৩ বার পড়া।
- ফযীলত: সমস্ত গুনাহ মাফ, কবরের আযাব, সংকীর্ণতা ও অন্ধকার দূর হবে, নবীদের মত আমল নিয়ে কিয়ামতে উঠবে (?!) এবং কিয়ামতের কষ্ট দূর হবে।
- বুধবার মাগরেব ও এশার মাঝে ২ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে আয়াতুল কুরসী ৫ বার, সূরা ইখলাস ৫ বার, সূরা ফালাক্ব ৫ বার এবং সূরা নাস ৫ বার পড়া।
- ফযীলত: মা-বাপের নামে বখশালে মা-বাপের হ্ক আদায় হয়ে যাবে; যদিও দুনিয়াতে তারা তার উপর নারাজ ছিল (?!) সিদ্দীক ও শহীদগণের সওয়াব লাভ হবে!
বৃহ্স্পতিবার :
- বৃহ্স্পতিবার দিনে যোহ্র ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে (?) ২ রাকআত; প্রথম রাকআতে আয়াতুল কুরসী ১০০ বার এবং দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ইখলাস ১০০ বার পড়া। সালামের পর দরুদ শরীফ ১০০ বার।
- ফযীলত: রজব, শা’বান ও রমযান মাসের রোযাদারদের মত, কা’বা শরীফের হাজীদের মত এবং মুমিনদের সংখ্যা অনুপাতে সওয়াব লাভ হয়!
- বৃহ্স্পতিবার মাগরেব ও এশার মধ্যবর্তী সময়ে ১২ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ১০ বার পড়া।
- ফযীলত: ১২ বছরের দিনের রোযার এবং রাতের ইবাদত করার সওয়াব লাভ হয়!
মহ্ররম মাসের খেয়ালী নামায :
মহ্রম মাসের প্রথম তারীখের রাতে ২ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ১১ বার।
এই রাতে আরো ৬ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ১০ বার। এতে বেহেশ্তে ২০০০ মহল লাভ হবে; প্রত্যেক মহলে ইয়াকূতের ১০০০ দরজা এবং প্রত্যেক দরজায় সবুজ রঙের তখতার উপর হুর বসে থাকবে। ৬০০০ বালা দূর হবে এবং ৬০০০ সওয়াব লাভ হবে!
এই তারীখে দিনে ২ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ৩ বার। এতে দু জন ফিরিশ্তা বডিগাডG পাওয়া যায় এবং সারা বছর শয়তান থেকে নিরাপত্তা লাভ।
আশুরার রাতে ২ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ৩ বার। এতে কিয়ামত পর্যন্ত রেশন থাকবে।
এই রাতে আরো ৪ রাকআত। প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ৫০ বার। এতে ৫০ বছরের আগের ও পরের গুনাহ মাফ হয়!
আশুরার দিনে ৪ রাকআত নামায; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ৫০ বার। এতে ৫০ বছরের আগের ও পরের গুনাহ মাফ হয়! বেহেশ্তে ১০০০ নূরের মহল তৈরী হয়। এই দিনে রয়েছে আরো ৪ রাকআত খেয়ালী নামায।
অথবা যোহ্র ও আসরের মধ্যবর্তী সময়ে ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে ফাতিহার পর আয়াতুল কুরসী ১০ বার, সূরা ইখলাস ১১ বার এবং নাস ও ফালাক্ব ৫ বার। নামায শেষে ইস্তিগফার ৭০ বার। এ নামাযও বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪০-৩৪১পৃ:)
এই মাসের ১ থেকে ১০ তারীখ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন যোহরের পর ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ১৫ বার। এ নামায হযরতহাসান-হোসেনের রুহের উপর বখশে দিলে কিয়ামতে তাঁদের সুপারিশ (!) লাভ হবে।
সফর মাসের খেয়ালী নামায :
প্রথম তারীখের রাতে এশার পর ৪ রাকআত; প্রথম রাকআতে সূরা কাফিরুন ১৫ বার। দ্বিতীয় রাকআতে সূরা ইখলাস ১৫ বার। তৃতীয় রাকআতে সূরা ফালাক্ব ১৫ বার এবং চতুর্থ রাকআতে সূরা নাস ১৫ বার। এতে সমস্ত বালা থেকে রেহাই পাওয়া যায় এবং খুব বেশী সওয়াব লাভ হয়।
এই মাসের শেষ বুধবার বা আখেরী চাহার শোম্বার চাশতের সময় ২ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ১১ বার।
এ মাসের ১ম স প্তা হের জুমআর রাতে এশার পরে ৪ রাকআত নফল এবং তার খেয়ালী সওয়াবের কথার উল্লেখ রয়েছে অনেক কিতাবে।
রবিউল আওয়াল মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসের প্রথম হতে ১২ তারীখ পর্যন্ত প্রত্যেক দিন ২০ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ২১ বার। এই নামায নবী (ﷺ)-এর নামে বখশে দিলে তিনি নামাযীকে বেহেশ্তের সুসংবাদ দেবেন!
অনেকের মতে এ মাসে নিয়মিত দরুদ পড়লে ধনী হওয়া যায়।
রবিউস-সানী মাসের বিদআতী নামায :
এই মাসের ১, ১৫ ও ২৯ তারীখে ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ৫ বার। এতে ১০০০ সওয়াব লাভ, ১০০০ পাপ মাফ এবং ৪টি হুর লাভ হবে।
অনেকের খেয়াল মতে এ মাসের ১৫ তারীখে মাগরেবের পর ৪ রাকআত নামায পড়লে উভয়কালে কামিয়াবী লাভ হয়। এ মাসের শেষ রাতে ৪ রাকআত নামায পড়লে কবরের আযাব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
জুমাদাল আওয়াল মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসের প্রথম তারীখের রাতে ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ১১ বার। এতে ৯০,০০০ বছরের নেকী লাভ হবে এবং ৯০,০০০ বছরের গুনাহ মোচন হয়ে যাবে!
কারো খেয়াল মতে এ মাসের প্রথম তারীখে ২০ রাকআত নামায পড়তে হয়।
জুমাদাস সানী মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসের প্রথম তারীখের রাতে ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ১৩ বার। এতে ১ লাখ নেকী লাভ হবে এবং ১ লাখ গুনাহ মোচন হবে!
এ রাতে ১২ রাকআত নামাযের কথাও বর্ণনা করা হয়ে থাকে।
রজব মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসে ১, ১৫, ও শেষ তারীখে গোসল করলে (গঙ্গাজলে স্নান করার মত) প্রথম দিনকার শিশুর মত নিষ্পাপ হওয়া যায়! এই মাসে ৩০ রাকআত নামায এবং তার ৫টি রাত ইবাদত করার খেয়ালী ফযীলত বর্ণনা করা হয়ে থাকে।
কারো মতে এ মাসের ১৫ তারীখে এশার পরে ৭০ রাকআত নামায পড়লে পৃথিবীর বৃক্ষরাজি পরিমাণ সওয়াব লাভ হয়। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪১পৃ: দ্র:)
স্বালাতুর রাগায়েব :
এই মাসে জুমআর রাতে এশার পরে ১২ রাকআত নামায পড়া হয়ে থাকে। ৬ সালামে প্রত্যেক রাকআতে সূরা ফাতিহার পর সূরা ক্বাদর ৩ বার এবং সূরা ইখলাস ১২ বার পড়তে হয়। নামায শেষে ৭০ বার দরুদ শরীফ এবং আরো অন্যান্য দুআ ও সিজদাহ। এ সবই বিদআত। (বিশেষ দ্র: তাবয়ীনুল আজাব, বিমা অরাদা ফী ফাযলি রাজাব, মাজমূউফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ্ ২/২, মু’জামুল বিদা’ ৩৩৮-৩৩৯, ৩৪২পৃ:)
শবেমি’রাজের নামায :
এই মাসের ২৭ তারীখে এশা ও বিতরের মাঝে ৬ সালামে ১২ রাকআত নামায। আর নামাযের পর ১০০ বার কলেমায়ে তামজীদ (?) এবং নির্দিষ্ট দুআ পাঠ। এই দিন দান করতে হয়। ঐ দিনের রোযা এবং ঐ রাতের ইবাদত ১০০ বছর রোযা এবং ১০০ রাত ইবাদত করার সমান! (মু’জামুল বিদা’ ৩৪১ ও ৩৪৫পৃ:)
শা’বান মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসের ১ তারীখের রাতে ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ১৫ বার। এতে বেশুমার সওয়াব লাভ হয়।
এই মাসে যে কোন রাতে ১ সালামে ৮ রাকআত নামায পড়ে হযরত ফাতেমার নামে বখশে দিলে তিনি ঐ নামাযীর জন্য শাফাআত না করে বেহেশ্তে এক পা-ও দিবেন না!
শবেবরাতের নামায :
শবেবরাত আসলে শবেকদরের ভ্রান্ত রুপ। শবেকদরের আসল ছেড়ে শবেবরাতের নকল ইবাদত নিয়ে মাতামাতি করে ভাল বরাত বা ভাগ্য লাভের জন্য লোকে ১০০ রাকআত নামায পড়ে থাকে। আর প্রত্যেক রাকআতে ১০ বার সূরা ইখলাস পড়ে থাকে। এ নামাযও মনগড়া বিদআত। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪১-৩৪২পৃ:) শবেবরাতের নামায পড়লে নাকি ২০টি হজ্জের এবং ২০ বছর একটানা ইবাদতের সওয়াব পাওয়া যায়! আর ১৫ তারীখে রোযা রাখলে নাকি অগ্র-পশ্চাৎ ২ বছর রোযা রাখার সওয়াব পাওয়া যায়।
এ রাতে নামায আদায়ের পূর্বে নাকি গোসলও করতে হয়। আর সে গোসলের সওয়াবও রয়েছে নাকি খেয়ালী; এ গোসলের প্রতি ফোঁটার পানির বিনিময়ে ৭০০ রাকআত নফল নামায আদায়ের সওয়াব আমল-নামায় লিখা হয়ে থাকে!!!
এ রাতে বালা দূর করা, আয়ু বৃদ্ধি করা এবং অভাবমুক্ত হওয়ার নিয়তে ৬ রাকআত নামায পড়া হয়। পড়া হয় সূরা ইয়াসীন সহ্ আরো মনগড়া দুআ। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪২পৃ:) ঘরে ঘরে জ্বালানো হয় দীপাবলী। বানানো হয় নানা রকম খাবার। আর এ সবের পশ্চাতে এক একটি মাহাত্ম বর্ণনা করা হয়।
এ ছাড়া আরো কত শত খেয়ালী ইবাদত ও সওয়াবের কথা পাওয়া যায় একাধিক বাজারী বই-পুস্তকে; যার সবগুলোই বিদআত এবং সে সবের একটিও সহীহ দলীল নেই।
রমযান মাসের খেয়ালী শবেকদরের নামায :
শবেকদরের সারা রাত্রি জাগরণ করে ইবাদত করতে হয়, নামায পড়তে হয়। কিন্তু কেবল ২৭ তারীখের রাতে তারাবীহ্র পর খাস শবেকদরের নামায পড়ে বিদআতীরা। তাতে তারা প্রত্যেক রাকআতে সূরা ক্বাদর এত এত বার এবং সূরা ইখলাস এত এত বার পড়ে থাকে। যার কোন দলীল ও ভিত্তি নেই। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪৫পৃ:)
শওয়াল মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসের ১ তারীখের রাতে অথবা ঈদের নামাযের পর ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ২১ বার। এতে বেহেশ্তের ৮টি দরজা খোলা এবং দোযখের ৭টি দরজা বন্ধ হয়ে যায়। মরার পূর্বে বেহেশ্তে নিজের স্থান দেখা যায়।
এ ছাড়া দিনে অথবা রাতে আরো ৮ রাকআত নামাযের কথা বলা হয়।
যুলক্বা’দাহ্ মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসের ১ তারীখের রাতে ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ২৩ বার। এতে বেহেশ্তে ৪০০০ লাল ইয়াকূতের ঘর তৈরী হয়! প্রত্যেক ঘরে জওহারের সিংহাসন থাকবে!! প্রত্যেক সিংহাসনে হুর বসা থাকবে; তাদের কপাল সূর্য অপেক্ষা বেশী উজ্জ্বল হবে!!!
এ ছাড়া এই মাসের প্রত্যেক রাতে ২ রাকআত নামায পড়লে ১ জন শহীদ ও ১ হজ্জের সওয়াব লাভ হবে! আর এই মাসের প্রত্যেক শুক্রবার ৪ রাকআত নামায পড়লে ১টি হজ্জ ও ১টি উমরার সওয়াব হবে!!
যুলহজ্জ মাসের খেয়ালী নামায :
এই মাসের ১ তারীখের রাতে ৪ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা ইখলাস ২৫ বার। এতে বেশুমার সওয়াব লাভ হয়।
এ মাসের প্রথম ১০ দিনের বিতরের নামাযের পর ২ রাকআত; প্রত্যেক রাকআতে সূরা কাওসার ৩ বার এবং সূরা ইখলাস ৩ বার পড়লে ‘মাকামে ইল্লীন’ (?) লাভ হবে, প্রত্যেক কেশের বদলে ১০০০ নেকী এবং ১০০০ দ্বীনার সদকা করার সওয়াব লাভ হবে!
এ ছাড়া আরো কত মনগড়া নামাযের কথা রয়েছে অনেক বই-পুস্তকে। আসলে সওয়াব তাদের নিজের পকেট থেকে বলেই এত এত সওয়াব অর্জনের ব্যাপারে আশ্চর্য ও অবাক হওয়ার কোন কারণ নেই। প্রাত্যহিক ও মাসিক ঐ শ্রেণীর নির্দিষ্ট নামায যে বিদআত, সে প্রসঙ্গে উলামাদের স্পষ্ট উক্তি রয়েছে। (মু’জামুল বিদা’ ৩৪২পৃ: দ্র:)