১। ঘুমাবার আগে তাহাজ্জুদের নিয়ত করে ঘুমাতে হবে। এতে সে শেষ রাত্রে ঘুম থেকে জেগে নামায পড়তে সক্ষম না হলেও তার জন্য তাহাজ্জুদের সওয়াব লিখা হবে।
হযরত আবু দারদা (রাঃ) নবী (ﷺ) এর নিকট হতে বর্ণনা করে বলেন, তিনি বলেছেন, “রাত্রে উঠে তাহাজ্জুদ পড়বে এই নিয়ত (সংকল্প) করে যে ব্যক্তি নিজ বিছানায় আশ্রয় নেয়, অতঃপর তার চক্ষুদ্বয় তাকে নিদ্রাভিভূত করে ফেলে এবং যদি এই অবস্থাতেই তার ফজর হয়ে যায় তবে তার আমলনামায় তাই লিপিবদ্ধ হয় যার সে নিয়ত (সংকল্প) করেছিল। আর তার ঐ নিদ্রা তার প্রতিপালকের তরফ হতে সদকাহ্ (দান) রুপে প্রদত্ত হয়।” (নাসাঈ, ইবনে মাজাহ্, ইবনে খুযাইমাহ্, সহীহ তারগীব ৫৯৮নং)
২। ঘুম থেকে উঠে, চোখ মুছে দাঁতন করা এবং সূরা আলে ইমরানের শেষের ১০ আয়াত পাঠ করা সুন্নত। (বুখারী ১৮৩নং, মুসলিম, সহীহ)
৩। ওযূ করার পর হাল্কা দুই রাকআত পড়ে তাহাজ্জুদের নামায শুরু করা কর্তব্য। মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমাদের কেউ (তাহাজ্জুদের জন্য) রাত্রে উঠলে সে যেন তার নামায হাল্কা দুই রাকআত দিয়ে শুরু করে।” (মুসলিম, সহীহ)
৪। তাহাজ্জুদ পড়ার জন্য নিজের স্ত্রীকে জাগানো মুস্তাহাব। এর জন্য রয়েছে পৃথক মাহাত্ম। মহানবী (ﷺ) বলেন, “আল্লাহ সেই ব্যক্তিকে রহ্ম করেন, যে ব্যক্তি রাত্রে উঠে নামায পড়ে ও নিজ স্ত্রীকে জাগায় এবং সেও নামায পড়ে। কিন্তু সে যদি উঠতে না চায় তাহলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়। আল্লাহ সেই মহিলাকে রহ্ম করেন, যে মহিলা রাত্রে উঠে নামায পড়ে ও নিজ স্বামীকে জাগায় এবং সেও নামায পড়ে। কিন্তু সে যদি উঠতে না চায় তাহলে তার মুখে পানি ছিটিয়ে দেয়।” (আহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ১৩০৮, নাসাঈ, সুনান, ইবনে হিব্বান, সহীহ, হাকেম, মুস্তাদরাক, জামে ৩৪৯৪নং)
তিনি বলেন, “যখন কোন ব্যক্তি তার স্ত্রীকে রাত্রে উঠিয়ে উভয়ে (তাহাজ্জুদ) নামায পড়ে অথবা ২ রাকআত নামায পড়ে, তখন তাদের উভয়কে (আল্লাহর) যিক্রকারী ও যিক্রকারিণীদের দলে লিপিবদ্ধ (শামিল) করা হয়।” (আবূদাঊদ, সুনান ১৩০৯নং, প্রমুখ)
৫। রাত্রে নামায পড়তে পড়তে ঘুম এলে বা ঢুললে নামায ত্যাগ করে ঘুমিয়ে যাওয়া কর্তব্য। মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমাদের কেউ যখন নামায পড়তে পড়তে ঢুলতে শুরু করে, তখন সে যেন শুয়ে পড়ে; যাতে তার ঘুম দূর হয়ে যায়। নচেৎ, কেউ ঢুলতে ঢুলতে নামায পড়লে সে হয়তো বুঝতে পারবে না, সম্ভবত: সে ক্ষমা চাইতে গিয়ে নিজেকে গালি দিয়ে বসবে। (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১২৪৫নং)
তিনি বলেন, “তোমাদের মধ্যে কেউ রাতে উঠে (নামায পড়তে শুরু করে) তার জিভে কুরআন পড়া জড়িয়ে গেলে এবং সে কি বলছে তা বুঝতে না পারলে, সে যেন শুয়ে পড়ে।” (মুসলিম)
তিনি বলেন, “তোমাদের প্রত্যেকে যেন মনে উদ্দীপনা থাকা পর্যন্ত নামায পড়ে। ক্লান্ত হয়ে পড়লে যেন বসে যায়।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১২৪৪নং)
একদা তিনি মসজিদে দুই খুঁটির মাঝে লম্বা হয়ে রশি বাঁধা থাকতে দেখে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, “এটা কি?” সাহাবাগণ বললেন, এটি যয়নাবের। তিনি নামায পড়েন। অতঃপর যখন আলস্য আসে অথবা ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তখন ঐ রশি ধরে (দাঁড়ান)। তিনি বললেন, “খুলে ফেল ওটাকে। তোমাদের প্রত্যেকে যেন চাঙ্গা থাকা অবস্থায় নামায পড়ে। আর যখন সে অলস অথবা ক্লান্ত হয়ে পড়বে, তখন সে যেন শুয়ে পড়ে।” (বুখারী, মুসলিম, সহীহ)
৬। নিজেকে কষ্ট দিয়ে লম্বা তাহাজ্জুদ পড়া বিধেয় নয়। বরং স্বাভাবিকভাবে ক্ষমতায় যতটা কুলায়, ততটাই নামায পড়া উচিৎ। মহানবী (ﷺ) বলেন, “তোমরা তত পরিমাণে আমল কর যত পরিমাণে তোমরা করার ক্ষমতা রাখ। আল্লাহর কসম! আল্লাহ (সওয়াব দিতে) ক্লান্ত হবেন না, বরং তোমরাই (আমল করতে) ক্লান্ত হয়ে পড়বে।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১২৪৩)
৭। অল্প হলেও তা নিরবচ্ছিন্নভাবে নিয়মিত করে যাওয়া উচিৎ এবং ভীষণ অসুবিধা ছাড়া তা ত্যাগ করা উচিৎ নয়। মহানবী (ﷺ)-কে জিজ্ঞাসা করা হল যে, ‘কোন (ধরনের) আমল আল্লাহর অধিক পছন্দনীয়?’ উত্তরে তিনি বললেন, “সেই আমল, যে আমল নিরবচ্ছিন্নভাবে করে যাওয়া হয়; যদিও তা পরিমাণে কম হয়।” (বুখারী, মুসলিম, মিশকাত ১২৪২নং) মহানবী (ﷺ)-এর আমল ছিল নিরবচ্ছিন্ন। তিনি একবার যে আমল করতেন, তা বাকী রাখতেন (ত্যাগ করতেন না)।” (মুসলিম, সহীহ) তিনি আব্দুল্লাহ বিন উমার (রাঃ)-কে বলেন, “হে আব্দুল্লাহ! তুমি অমুকের মত হয়ো না; যে তাহাজ্জুদ পড়ত, পরে সে তা ত্যাগ করে দিয়েছে।” (বুখারী, মুসলিম, সহীহ)
রসূল (ﷺ)-এর কাছে এক ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হল, যে ফজর পর্যন্ত ঘুমিয়ে থেকেছে। তিনি বললেন, “ও তো সেই লোক, যার উভয় কানে শয়তান পেশাব করে দিয়েছে।” (বুখারী, মুসলিম, সহীহ)
একদা তিনি ইবনে উমারের প্রশংসা করে বললেন, “আব্দুল্লাহ কত ভাল লোক হয়, যদি সে রাতে তাহাজ্জুদ পড়ে!” এ কথা শোনার পর ইবনে উমার (রাঃ) রাতে খুব কম ঘুমাতেন। (বুখারী, মুসলিম, সহীহ)