কওমার পর নবী মুবাশ্‌শির (ﷺ) তকবীর বলে সিজদায় যেতেন। নামায ভুলকারী সাহাবীকে সিজদাহ করতে আদেশ দিয়ে বলেছিলেন, “স্থিরতার সাথে সিজদাহ বিনা নামায সম্পূর্ণ হবে না।” (আবূদাঊদ, সুনান ৮৫৭ নং,হাকেম, মুস্তাদরাক)

সিজদায় যাওয়ার পূর্বে ‘রফ্‌য়ে ইয়াদাইন’ করার বর্ণনাও সহীহ হাদীসে পাওয়া যায়। (সহিহ,নাসাঈ, সুনান ১০৪০ নং, দারাক্বুত্বনী, সুনান) সুতরাং কখনো কখনো তা করলে কোন দোষ হবে না।

সিজদায় যাওয়ার সময় আল্লাহর নবী (ﷺ) তাঁরহাত দু’টিকে নিজ পাঁজর থেকে দূরে রাখতেন। (আবূ য়্যা’লা, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ ৬২৫ নং)

এ সময় সর্বপ্রথম তিনি তাঁর হাত দু’টিকে মুসাল্লায় রাখতেন। তারপর রাখতেন হাঁটু। এ ব্যাপারে বর্ণিত হাদীসগুলি অধিকতর সহীহ। (আবূদাঊদ, সুনান ৭৪৬, সহিহ,নাসাঈ, সুনান ১০৪৪, মিশকাত ৮৯৯, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩৫৭, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ১৪০পৃ:, উদ্দাহ্‌ ৯৬পৃ:)

প্রথমে হাঁটু রাখার হাদীসও বহু উলামার নিকট শুদ্ধ। তাই তাঁদের নিকট উভয় আমলই বৈধ। সুবিধামত হাত অথবা হাঁটু আগে রাখতে পারে নামাযী। (ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়্যাহ্‌ ২২/৪৪৯, ফাতহুল বারী, ইবনে হাজার ২/২৯১, উদ্দাহ্‌ ৯৬পৃ:, ইবনে বায; কাইফিয়্যাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), মারাসা ১২৭পৃ:, ইবনে উসাইমীন; রিসালাতুন ফী সিফাতি স্বালাতিন নাবী (ﷺ) ৯পৃ:, আলমুমতে’, শারহে ফিক্‌হ, ইবনে উষাইমীন ৩/১৬৫-১৫৭, ফাতহুল মা’বূদ বিসিহ্‌হাতি তাক্বদীমির রুকবাতাইনি ক্বাবলাল য়্যাদাইনি ফিস সুজুদ)

তিনি বলতেন, “হাত দু’টিও সিজদাহ করে, যেমন চেহারা করে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে কেউ যখন (সিজদার জন্য) নিজের চেহারা (মুসাল্লায়) রাখবে, তখন যেন সে তার হাত দু’টিকেও রাখে এবং যখন চেহারা তুলবে, তখন যেন হাত দু’টিকেও তোলে।” (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক, আহমাদ, মুসনাদ, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩১৩ নং)

সিজদাহ করার সময় তিনি উভয় হাতের চেটোর উপর ভর দিতেন এবং চোটো দু’টিকে বিছিয়ে রাখতেন। (আবূদাঊদ, সুনান,হাকেম, মুস্তাদরাক, সিফাতু স্বালাতিন নাবী (ﷺ), আলবানী ১৪১পৃ:) হাতের আঙ্গুলগুলোকে মিলিয়ে রাখতেন। (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, বায়হাকী,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২২৭) এবং কেবলামুখে সোজা করে রাখতেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৭৩২ নং, বায়হাকী, ইবনে আবী শাইবা)

হাতের চেটো দু’টিকে কাঁধের সোজাসুজি দুই পাশে রাখতেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৭৩৪, তিরমিযী, সুনান, মিশকাত ৮০১নং) কখনো বা রাখতেন দুই কানের সোজাসুজি। (আবূদাঊদ, সুনান ৭২৩, ৭২৬, সহিহ,নাসাঈ, সুনান ৮৫৬নং)

কপালের সাথে নাকটিকেও মাটি বা মুসাল্লার সঙ্গে লাগিয়ে দিতেন। (আবূদাঊদ, সুনান, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩০৯ নং)

তিনি বলতেন, “সে ব্যক্তির নামাযই হয় না, যে তার কপালের মত নাককেও মাটিতে ঠেকায় না।” (দারাক্বুত্বনী, সুনান ১৩০৪ নং, ত্বাবারানী)

নামায ভুলকারী সাহাবীকে তিনি বলেছিলেন, “তুমি যখন সিজদাহ করবে, তখন তোমার মুখমণ্ডল ও উভয়হাত (চেটো) কে মাটির উপর রেখো। পরিশেষে যেন তোমার প্রত্যেকটা হাড় স্বস্থানে স্থির হয়ে যায়।” (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ ৬৩৮ নং)

এই সময় তাঁর উভয় হাঁটু এবং উভয় পায়ের পাতার শেষ প্রান্তও সিজদারত হত। পায়ের পাতা দু’টিকে তিনি (মাটির উপড়) খাড়া করে রাখতেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৮৭৯, সহিহ,নাসাঈ, সুনান ১০৫৩, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৩৮৪১নং, বায়হাকী) এবং খাড়া রাখতে আদেশও করেছেন। (তিরমিযী, সুনান ২২৮নং, হাকেম, মুস্তাদরাক) পায়ের আঙ্গুলগুলোকে কেবলার দিকে মুখ করে রাখতেন। (বুখারী ৮২৮নং, আবূদাঊদ, সুনান) গোড়ালি দু’টিকে একত্রে মিলিয়ে রাখতেন। ( ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ ৬৫৪ নং,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২২৮)

সুতরাং উক্ত ৭ অঙ্গ দ্বারা তিনি সিজদারত হতেন; মুখমণ্ডল (নাক সহ্‌ কপাল) দুইহাতের চেটো, দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের পাতা।

তিনি বলেন, “আমি সাত অঙ্গ দ্বারা সিজদাহ করতে আদিষ্ট হয়েছি; কপাল, -আর কপাল বলে তিনি নাকেওহাত ফিরান- দুই হাত (চেটো), দুই হাঁটু এবং দুই পায়ের প্রান্তভাগ।” (বুখারী, মুসলিম, জামে ১৩৬৯ নং)

তিনি আরো বলেন, বান্দা যখন সিজদাহ করে, তখন তার সঙ্গে তার ৭ অঙ্গ সিজদাহ করে; তার চেহারা, দুইহাতের চেটো, দুই হাঁটু ও দুই পায়ের পাতা।” (মুসলিম, আহমাদ, মুসনাদ, ইবনে হিব্বান, সহীহ, সহিহ,নাসাঈ, সুনান ১০৪৭, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান ৮৮৫ নং)

তিনি বলেন, আমি (আমরা) আদিষ্ট হয়েছি যে, (রুকূ ও সিজদার সময়) যেন পরিহিত কাপড় ও চুল না গুটাই।” (বুখারী, মুসলিম, জামে ১৩৬৯ নং)

এক ব্যক্তি তার মাথার লম্বা চুল পিছন দিকে বেঁধে রাখা অবস্থায় নামায পড়লে তিনি বলেন, “এ তো সেই ব্যক্তির মত, যে তার উভয়হাত বাঁধা অবস্থায় নামায পড়ে।” (মুসলিম, সহীহ ৪৯২, আআহমাদ, মুসনাদ, ইবনে হিব্বান, সহীহ, আবূদাঊদ, সুনান, ৬৪৭ নং, নাসাঈ, সুনান, দারেমী, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ ১/৩০৪) তিনি চুলের ঐ বাঁধনকে শয়তান বসার জায়গা বলে মন্তব্য করেছেন। (আবূদাঊদ, সুনান ৬৪৬ নং, তিরমিযী, সুনান, ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ, ইবনে হিব্বান, সহীহ) এ ব্যাপারে বিস্তারিত আলোচনা আসছে ‘নামাযে নিষিদ্ধ বা মাকরুহ কর্মাবলী’র অধ্যায়ে।

আল্লাহর নবী (ﷺ) সিজদায় নিজেরহাতের প্রকোষ্ঠ বা রলা দু’টিকে মাটিতে বিছিয়ে রাখতেন না। (বুখারী ৮২৮ নং, আবূদাঊদ, সুনান) বরং তা মাটি বা মুসাল্লা থেকে উঠিয়ে রাখতেন। অনুরুপ পাঁজর থেকেও দূরে রাখতেন। এতে পিছন থেকে তাঁর বগলের সাদা অংশ দেখা যেত। (বুখারী ৩৯০, মুসলিম, ইরওয়াউল গালীল, আলবানী ৩৫৯নং) তাঁর হাত ও পাঁজরের মাঝে এত ফাঁক হত যে, কোন ছাগলছানা সেই ফাঁকে পার হতে চাইলে পার হতে পারত। (মুসলিম, আআহমাদ, মুসনাদ, আবূদাঊদ, সুনান ৮৯৮ নং,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২২৮, ইবনে হিব্বান, সহীহ)

সিজদার সময় তিনি কখনো কখনো হাত দুটিকে পাঁজর থেকে এত দূরে রাখতেন যে, তা দেখে কতক সাহাবী বলেন, ‘আমাদের মনে (তাঁর কষ্ট হ্‌চ্ছে এই ধারণা করে) ব্যথা অনুভব হত।’ (আবূদাঊদ, সুনান ৯০০নং, ইবনে মাজাহ্‌, সুনান)

এ ব্যাপারে তিনি আদেশ করে বলতেন, “যখন তুমি সিজদাহ কর, তখন তোমার হাতের দুই চেটোকে (মাটির উপর) রাখ এবং দুই কনুইকে উপর দিকে তুলে রাখ।” (মুসলিম, সহীহ ৪৯৪নং, আআহমাদ, মুসনাদ) “তোমরা সোজা ভাবে সিজদাহ কর। তোমাদের মধ্যে কেউ যেন কুকুরের মত দুই প্রকোষ্ঠকে বিছিয়ে না দেয়।” (বুখারী ৮২২, মুসলিম, আবূদাঊদ, সুনান, আহমাদ, মুসনাদ) “তোমার দুই হাতের প্রকোষ্ঠকে হিংস্র জন্তুদের মত বিছিয়ে দিও না। দুই চেটোর উপর ভর কর ও পাঁজর থেকে (কনুই দু’টিকে) দূরে রাখ। এরুপ করলে তোমার সঙ্গে তোমার প্রত্যেক অঙ্গ সিজদাহ করবে।” (ইবনে খুযাইমাহ্‌, সহীহ,হাকেম, মুস্তাদরাক ১/২২৭)