প্রশ্নোত্তরে রমযান ও ঈদ চাঁদ দেখা অধ্যাপক মোঃ নূরুল ইসলাম ১২ টি
কিসের ভিত্তিতে সিয়াম পালন শুরু করতে হয়?

চাঁদ দেখার ভিত্তিতে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন :

صُومُوا لِرُؤْيَتِهِ وَأَفْطِرُوا لِرُؤْيَتِهِ

[১] তোমরা চাঁদ দেখে রোযা রাখ এবং চাঁদ দেখেই তা ভঙ্গ কর (অর্থাৎ ঈদ কর)। (বুখারী : ১৯০৯; নাসাঈ : ২১১৬)

تَرَاءَى النَّاسُ الْهِلاَلَ فَأَخْبَرْتُ رَسُولَ اللهِ -صلى الله عليه وسلم- أَنِّي رَأَيْتُهُ فَصَامَهُ وَأَمَرَ النَّاسَ بِصِيَامِهِ

[২] ইবনে ‘উমার রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মানুষ দলে দলে চাঁদ দেখতে শুরু করল। এমনি সময় আমি চাঁদ দেখে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে জানালাম। আমার এ সংবাদের উপর ভিত্তি করে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রোযা রাখলেন এবং সবাইকে রোযা রাখার নির্দেশ দিলেন। (আবূ দাঊদ : ২৩৪)

جَاءَ أَعْرَابِيٌّ إِلَى النَّبِيِّ -صلى الله عليه وسلم- فَقَالَ إِنِّي رَأَيْتُ الْهِلاَلَ يَعْنِي رَمَضَانَ فَقَالَ أَتَشْهَدُ أَنْ لاَ إِلٰهَ إِلاَّ اللهُ قَالَ : نَعَمْ، قَالَ : أَتَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللهِ قَالَ: نَعَمْ، قَالَ : يَا بِلاَلُ أَذِّنْ فِي النَّاسِ فَلْيَصُومُوا غَدًا

[৩] এক গ্রাম্য ব্যক্তি এসে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জানালেন, আমি তো চাঁদ দেখেছি অর্থাৎ রমাযানের চাঁদ। অতঃপর রাসূল বললেন, তুমি কি লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ-(কালিমার) উপর ঈমান এনেছ? লোকটি উত্তর দিল : হ্যাঁ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আবার জিজ্ঞেস করলেন : তুমি কি আশহাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ (অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর রাসূল) এ কথার উপর ঈমান এনেছ? লোকটি উত্তর দিল : হ্যাঁ। অতঃপর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাহাবী বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহু কে বললেন, হে বেলাল! মানুষকে জানিয়ে দাও, তারা যেন আগামীকাল থেকে রোযা রাখে। (আবূ দাঊদ : ২৩৪০ হাদীসটি দুর্বল)

কমপক্ষে কতজন লোকে চাঁদ দেখলে এ সাক্ষী গ্রহণযোগ্য হবে?

কমপক্ষে একজন লোকে দেখলেও হবে। উপরে বর্ণিত (আগের প্রশ্নে) হাদীসগুলো এর দলীল।

চাঁদ দেখার ক্ষেত্রে সাক্ষীর কি ধরণের গুণাবলী থাকা দরকার?

একজন সাধারণ মানুষের সাক্ষ্যও গ্রহণ করা যাবে যদি তার সততা প্রশ্নবিদ্ধ না হয়। যদি তার আকল বুদ্ধিতে কোন দুর্বলতার ইঙ্গিত বহন না করে এবং এর মধ্যে যদি কোন ব্যক্তির স্বার্থ না থাকে।

আকাশ মেঘলা হলে বা অন্য কোন কারণে চাঁদ দেখা না গেলে কি করব?

এমন হলে ৩০ দিন পুরা করবে এবং এরপরের দিন থেকে সিয়াম পালন শুরু করবে। হাদীসে আছে-

الشَّهْرُ تِسْعٌ وَعِشْرُونَ لَيْلَةً فَلاَ تَصُومُوا حَتَّى تَرَوْهُ فَإِنْ غُمَّ عَلَيْكُمْ فَأَكْمِلُوا الْعِدَّةَ ثَلاَثِينَ

মাস হল ২৯ রাত্রি। তবে চাঁদ না দেখে তোমরা রোযা রেখ না। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে ফলে চাঁদ দেখা না যায়, তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ কর। (বুখারী : ১৮০৮)

পঞ্জিকা বা ক্যালেন্ডারের হিসাব অনুযায়ী রোযা রাখা যাবে কি?

না, চাঁদ না দেখে শুধুমাত্র পঞ্জিকার লেখা বা ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রোযা বা ঈদ করা যাবে না।

বিভিন্ন কারণে চাঁদ দেখতে না পারলেও রমযান হয়তো শুরু হয়ে গেছে এমন সন্দেহ করে রোযা রাখা শুরু করা যাবে কি?

সন্দেহের দিন থেকে রোযা রাখা শুরু করা- এটা কোন বুজুর্গী কাজ নয় বরং এটা গুনাহের কাজ। সন্দেহের দিন রোযা রাখতে নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পূর্ণ নিষেধ করেছেন। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা বৈধ নয়। হাদীসে আছে,

مَنْ صَامَ الْيَوْمَ الَّذِي يَشُكُّ فِيهِ النَّاسُ فَقَدْ عَصَى أَبَا الْقَاسِمِ -صلى الله عليه وسلم-

যে ব্যক্তি সন্দেহ সংশয়পূর্ণ দিনে রোযা রাখবে সে নিশ্চিতই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে অমান্য করল। (তিরমিযী : ৬৮৬)

অধিক পরহেযগারী কাজ মনে করে যদি কেউ দু’ একদিন আগে থেকেই রোযা পালন শুরু করে তাহলে কি সওয়াব হবে?

না, হবে না। বরং এটা গুনাহের কাজ। হাদীসে আছে,

لاَ تَصُومُوا قَبْلَ رَمَضَانَ صُومُوا لِلرُّؤْيَةِ وَأَفْطِرُوا لِلرُّؤْيَةِ فَإِنْ حَالَتْ دُونَهُ غَيَابَةٌ فَأَكْمِلُوا ثَلَاثِينَ

‘‘তোমরা রমযান শুরু হওয়ার আগেই রোযা রাখা শুরু করো না। চাঁদ দেখে রোযা শুরু কর এবং পরবর্তী চাঁদ দেখেই রোযা রাখা বন্ধ কর। যদি আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকে তবে আরো একদিন অপেক্ষা করে (শাবান মাস) ত্রিশ দিন পূরণ কর।’’ (নাসাঈ : ২১৩০)

যে ব্যক্তি শাবান মাসে আগে থেকেই নফল রোযা রাখার অভ্যস্ত সে কি রমযান শুরু হওয়ায় আগের দু’ একদিন নফল রোযা রাখতে পারবে?

হ্যাঁ, ঐ ব্যক্তি পারবে। এ ধরণের লোকের জন্য তা বৈধ। হাদীসে আছে,
لاَ تَقَدَّمُوا رَمَضَانَ بِصَوْمِ يَوْمٍ وَلاَ يَوْمَيْنِ إِلاَّ رَجُلٌ كَانَ يَصُومُ صَوْمًا فَلْيَصُمْهُ
চাঁদ না দেখেই রোযা রাখা শুরু করে তোমরা রমযানকে এক বা দু’দিন এগিয়ে নিয়ে এসো না। (অর্থাৎ এক বা দু’দিন আগে থেকেই রোযা রাখা শুরু করে দিও না)।
তবে যে ব্যক্তি আগে থেকে নফল রোযা রাখতে অভ্যস্ত তার বিষয়টি ভিন্ন। (মুসলিম : ১০৮২)

চাঁদ দেখার বিষয়টি নিশ্চিত হতে না পারায় কেউ যদি এমনভাবে নিয়ত করে যে, যদি চাঁদ উঠে থাকে তাহলে এটা আমার ফরজ রোযা আর যদি না উঠে থাকে তাহলে হবে নফল রোযা এরূপ দোদুল্যমান নিয়ত করা কি জায়েয হবে?

না, এরূপ নিয়ত করা জায়েয নয়। এমন সন্দেহজনক কোন রোযা শুদ্ধ হবে না।

কেউ যদি দূরবীন দিয়ে চাঁদ দেখে তবে কি তা জায়েয?

হ্যাঁ, দেখতে পারে। এতে নিষেধের কিছু নেই। তবে দূরবীন ব্যবহার করা জরুরী নয়। মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টির উপর নির্ভর করাই যথেষ্ট।

দেখানো হচ্ছেঃ থেকে ১০ পর্যন্ত, সর্বমোট ১২ টি রেকর্ডের মধ্য থেকে পাতা নাম্বারঃ 1 2 পরের পাতা »