পানি বিভিন্ন প্রকার হয়ে থাকে। তবে তা নিম্নোক্ত দু’প্রকারের বাইরে নয়। যথা:
১। সাধারণ পানি (পবিত্র পানি):
এ প্রকার পানি তার সৃষ্টিগত মৌলিকতার উপর বজায় থাকে। এটা ঐ সমস্ত পানি যা ভূমি থেকে উদ্ভূত হয় অথবা আকাশ থেকে বর্ষিত হয়। মহান আল্লাহ্ বলেন:
﴿وَيُنَزِّلُ عَلَيْكُمْ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً لِيُطَهِّرَكُمْ بِهِ﴾
অর্থাৎ: তিনি আকাশ হতে তোমাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করেন, আর যাতে এর মাধ্যমে তিনি তোমাদেরকে পবিত্র করেন। (সূরা আনফাল-১১)
এ প্রকার পানির অন্তর্ভুক্ত হলো: নদীর পানি, বরফগলা পানি, তুষারের পানি ও কুপের পানি। এমনকি তাতে পানি দীর্ঘ সময় থাকার কারণে যদি তার পরিবর্তন ঘটে অথবা এমন পবিত্র বস্ত্ত মিশে যায় যা তা থেকে দূর করা সম্ভব নয় তবুও তা এ প্রকার পানির অন্তর্ভুক্ত হবে।
অনুরূপভাবে সাগরের পানি। মহানাবী (ﷺ) কে সাগরের পানি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন: هُوَ الطَّهُورُ مَاؤُهُ الْحِلُّ مَيْتَتُهُ
অর্থাৎ: সাগরের পানি পবিত্র এবং এর মৃত প্রাণী (মাছ ইত্যাদি) খাওয়া হালাল।[1]
আলিমদের ঐকমত্যে: এ প্রকার পানি দ্বারা ওযূ, গোসল করা বৈধ। যদি তাতে পবিত্র বস্ত্ত মিশ্রিত হয়, তাহলে পানি পদবাচ্য থাকা পর্যন্ত তা দ্বারা পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ হবে। উম্মে হানী (রা.) এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে-
عَنْ أُمِّ هَانِئٍ رَضِيَ اللَّهِ عَنْهَا: أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ اغْتَسَلَ هُوَ وَمَيْمُونَةُ مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ فِي قَصْعَةٍ فِيهَا أَثَرُ الْعَجِينِ
উম্মে হানী (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ও মায়মূনা (রা.) একই পাত্রে গোসল করতেন, তা এমন পাত্র ছিল যাতে আটার খামিরের চিহ্ন ছিল।[2]
যে সমস্ত মহিলারা মহানাবী (ﷺ) এর কন্যা যায়নাব (রা.) কে গোসল করিয়েছিলেন, তাদেরকে তিনি নির্দেশ দিয়েছিলেন:
اغْسِلْنَهَا ثَلاَثًا، أَوْ خَمْسًا، أَوْ أَكْثَرَ مِنْ ذَلِكَ إِنْ رَأَيْتُنَّ ذَلِكَ، بِمَاءٍ وَسِدْرٍ، وَاجْعَلْنَ فِي الآخِرَةِ كَافُورًا
তোমরা তাকে তিনবার, পাঁচবার কিংবা চাইলে এরচেয়ে অধিকবার বরই পাতা দিয়ে গোসল দাও এবং শেষবার কর্পুর ব্যবহার করবে।[3]
আর পানিতে পবিত্র বস্ত্ত মিশ্রিত হওয়ার ফলে যদি পানি নাম থেকে অন্য কোন নামে পরিচিতি লাভ করে যেমন চা, তাহলে এ দ্বারা পবিত্রতা অর্জন বৈধ হবে না। অনুরূপভাবে অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা অর্জন বৈধ হবে না সে বস্ত্ত দ্বারা, যে বস্ত্ত অন্য কোন পবিত্র বস্ত্ত থেকে প্রস্ত্ততকৃত। যেমন: গোলাপের পানি, ইত্যাদি। কেননা এগুলো প্রকৃত পক্ষে পানি নয়। ইবনুল মুনযির বলেন,[4] আমি বিদ্বানগণের অভিমত তদন্ত করে দেখেছি যে, সর্বাধিক অভিমত হলো: গোলাপের পানি, গাছের পানি ও স্প্রে থেকে নির্গত সুগন্ধিযুক্ত তরল পানি দ্বারা ওযূ জায়েয নয়। সাধারণ পানি পদবাচ্য ছাড়া পবিত্রতা অর্জন বৈধ নয়।
২। নাপাক পানি:
এটা এমন পানি যাতে নাপাক জিনিসের মিশ্রণ ঘটে এবং তার কোন একটি বৈশিষ্ট্য নষ্ট হয়ে যায়, ফলে তার রং গন্ধ অথবা স্বাদের পরিবর্তন ঘটে এবং ব্যবহারকারী ধারণা করে যে, সে নাপাক পানি ব্যবহার করছে। এ প্রকার পানি দ্বারা ওযূ করা বৈধ নয়। কেননা এটা নিজেই নাপাক।
[2] সহীহ; নাসাঈ (২৪০), ইবনে মাজাহ (৩৭৮)।
[3] সহীহ; বুখারী (১২৫৩), মুসলিম (৯৩৯)।
[4] আল-মুগনী (১/১১), আল মুহালস্না (১/১৯৯)।
ওযূকারীর অঙ্গ থেকে ঝরে পড়া পানি বা অনুরূপ পানিকে الماء المستعمل বা ব্যবহৃত পানি বলে। এ প্রকার পানি প্রবিত্রতা দানকারী পানি থেকে ব্যতিক্রম, না ব্যতিক্রম নয়, এ ব্যাপারে বিদ্বানগণ মতভেদ করেছেন।
বিশুদ্ধ মতামত হলো: যতোক্ষণ পর্যন্ত তা সাধারণ পানি পদবাচ্য থাকে এবং এমন নাপাকী মিশ্রিত না হয় যাতে পানির বৈশিষ্ট্য সমূহে কোন প্রভাব পড়ে (অর্থাৎ: রং, গন্ধ ও স্বাদ অবিকৃত থাকে), ততক্ষণ তা পবিত্রকারী থাকবে। এটা আলী ইবনে আবি তালিব, ইবনে উমার, আবূ উমামা ও সালফে সালেহীনের একটি দলের অভিমত। ইমাম মালিক (রাহি.) এর প্রসিদ্ধ মতামত এটাই। ইমাম শাফেঈ ও আহমাদ (রাহি.) তাদের দু’টি রেওয়ায়াতের একটিতে এ অভিমত ব্যক্ত করেছেন। ইবনে হাযম ও ইবনুল মুনযিরও এ মতামতের প্রবক্তা। শায়খুল ইসলাম এ মতামতটি পছন্দ করেছেন।[1] নিম্নোক্ত বাণীগুলো এ মাতমতকে শক্তিশালী করে:
(১) মৌলিকভাবেই পানি পবিত্র। তাকে কোন জিনিস অপবিত্র করতে পারে না। মহনাবী (ﷺ) বলেন, الْمَاءُ طَهُورٌ لَا يُنَجِّسُهُ شَيْءٌ অর্থাৎ: পানি পবিত্র। তাকে কোন জিনিস অপবিত্র করতে পারে না।[2] তবে তার কোন একটি বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন হলে অথবা পবিত্র বস্ত্ত মিশ্রনের ফলে তা সাধারণ পানি পদবাচ্য থেকে বহির্ভূত হলে তা নাপাক হয়ে যাবে।
(২) সাহাবাগণ মহানাবী (ﷺ) এর ওযূর অতিরিক্ত পানি ব্যবহার করতেন বলে প্রমাণিত:
(الف) عن أَبى جُحَيْفَةَ، قالُ: خَرَجَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللَّهِ ﷺ بِالهَاجِرَةِ، فَأُتِيَ بِوَضُوءٍ فَتَوَضَّأَ، فَجَعَلَ النَّاسُ يَأْخُذُونَ مِنْ فَضْلِ وَضُوئِهِ فَيَتَمَسَّحُونَ بِهِ
(ক) আবূ যুহাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন: একবার দুপুরে নাবী (ﷺ) আমাদের সামনে বেরিয়ে এলেন। তাকে ওযূর পানি এনে দেয়া হলো। তখন তিনি ওযূ করলেন। লোকেরা তার ওযূর ব্যবহৃত পানি নিয়ে গায়ে মাখতে লাগল।[3]
হাফেয ফাতহ গ্রন্থে (১/৩৫৩) বলেন: সম্ভবতঃ সাহাবাগণ মহানাবী (ﷺ) এর ওযূর অঙ্গ থেকে ঝরে পড়া পানি গ্রহণ করতেন। এর মাধ্যমেই ব্যবহৃত পানি পবিত্র হওয়ার সুস্পষ্ট দলীল পাওয়া যায়।
(খ) মিসওয়ার বিন মুখরামাহ এর হাদীসে বর্ণিত হয়েছে- وَإِذَا تَوَضَّأَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَادُوا يَقْتَتِلُونَ عَلَى وَضُوئِهِ-অর্থাৎ: নাবী যখন ওযূ করতেন তখন তার ব্যবহৃত পানির উপর তারা (সাহাবায়ে কেরাম) যেন হুমড়ি খেয়ে পড়তেন।[4]
عن أَبى مُوسَى: دَعَا النَّبِيُّ ﷺ بِقَدَحٍ فِيهِ مَاءٌ، فَغَسَلَ يَدَيْهِ وَوَجْهَهُ فِيهِ، وَمَجَّ فِيهِ، ثُمَّ قَالَ لَهُمَا: اشْرَبَا مِنْهُ، وَأَفْرِغَا عَلَى وُجُوهِكُمَا وَنُحُورِكُمَا
অর্থাৎ: আবূ মুসা আল-আশআরী (রাঃ) বলেনঃ নাবী (ﷺ) একটি পাত্র আনতে বললেন, যাতে পানি ছিল। তারপর তিনি তার মধ্যে উভয় হাত ও চেহারা মুবারাক ধৌত করলেন এবং তার মধ্যে কুলি করলেন। তারপর তাদের দু’জন (আবূ মুসা (রা.) ও বিলাল (রা.)) কে বললেন: তোমরা এ থেকে পান কর এবং তোমাদের মুখমণ্ডলে ও বুকে ঢাল।[5]
عَنِ ابْنِ عُمَرَ، قَالَ: كَانَ الرِّجَالُ وَالنِّسَاءُ يَتَوَضَّئُونَ فِي زَمَانِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ جَمِيعًا
(৩) ইবনে উমার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসূলুলাহ এর যামানায় পুরুষ এবং মহিলা একত্রে ওযূ করতেন।[6]
অপর বর্ণনায় রয়েছে-
كُنَّا نَتَوَضَّأُ نَحْنُ وَالنِّسَاءُ عَلَى عَهْدِ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ، نُدْلِي فِيهِ أَيْدِيَنَا
অর্থাৎ: আমরা পুরুষ ও মহিলারা রাসূল (ﷺ) এর যামানায় একসাথে এক পাত্রে ওযূ করতাম এবং এ সময় কখনও কখনও একের হাত অপরের সাথে লেগে যেত।
عنابْنَ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ يَغْتَسِلُ بِفَضْلِ مَيْمُونَةَ
(৪) আবদুলাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন: রাসূল (ﷺ) তার স্ত্রী মাইমূনাহ এর গোসলের পর অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করতেন।[7]
عَنِ الرُّبَيِّعِ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ مَسَحَ بِرَأْسِهِ مِنْ فَضْلِ مَاءٍ كَانَ فِي يَدِهِ
(৫) রুবাই বিনতে মুয়াবিবয (রা.) হতে বর্ণিত: নাবী কারীম (ﷺ) তার হাতের অতিরিক্ত পানি দ্বারা মাথা মাসাহ করেন।[8]
(৬) ইবনে মুনযির ‘আওসাত্ব’ গ্রন্থে (১/২৮৮) বলেন: বিদ্বানগণের ঐকমত্যে, ওযূকারী ও গোসলকারীর অঙ্গ প্রত্যঙ্গ থেকে ও কাপড় থেকে ঝরে পড়া পানি পবিত্র। সুতরাং এ অভিমতটি ব্যবহৃত পানি পবিত্র হওয়া প্রমাণ করে। অতএব তা যেহেতু পবিত্র তাই তা দ্বারা ওযূ নাজায়েয বলা যাবে না। যারা এর বিপরীত মন্তব্য করেন, তাদের উপযুক্ত প্রমাণ থাকতে হবে।
অপর একদল আলিম বলেন: ব্যবহৃত পানি দ্বারা ওযূ বৈধ নয়। এটা ইমাম মালিক, আওয়ায়ী ও ইমাম শাফেঈ (রাহি.) এর দু’টি অভিমতের একটি অভিমত। ‘আসহাবে রায়’ এ অভিমতই পোষণ করেছেন।[9] কিন্তু তাদের উপযুক্ত এমন কোন প্রমাণ নেই যার উপর নিশ্চিত হওয়া যায়। সুতরাং প্রকৃত দাবীর দিকে ফিরে যাওয়াই উচিৎ।
[2] হাসান; আবূ দাউদ (২৬৬), তিরমিযী (৩৬), নাসঈ (১/১৭৪)।
[3] সহীহ; বুখারী (১৮৭)।
[4] সহীহ; বুখারী (১৮৯)।
[5] সহীহ; বুখারী (১৮৮)।
[6] সহীহ; বুখারী (১৯৩); আবূ দাউদ (৭৯), নাসাঈ (১/৫৭) ইবনে মাজাহ (৩৮১), এখানে পরের অংশটি আবু দাউদে সহীহ সনদে বর্ণিত হয়েছে।
[7] সহীহ; মুসলিম (৩২৩) এ হাদীসটি সহীহাইনে এসেছে "كانا يغتسلان من إناء واحد" এ শব্দে।
[8] হাসান; আবূ দাউদ (১৩০), আদ-দারাকুতবী (১/৮৭)।
[9] আল-ইসিত্মযকার (১/২৫৩), আত-তামহীদ (৪/৪৩), আলমুগনী (১/১৯), আল-আউসাত (১/২৮৫)।
মহিলাদের ওযূ বা গোসলের অতিরিক্ত পানি দ্বারা পুরুষের পবিত্রতা অর্জনের বিধানের ব্যাপারে আলিমগণের মাঝে দু’টি অভিমত লক্ষ্য করা যায়:
১ম মতামত: মহিলাদের ব্যবহৃত অতিরিক্ত পানি দ্বারা পুরুষের পবিত্রতা অর্জন করা বৈধ নয়। এটা ইবনে উমার, আবদুল্লাহ ইবনে সারজাস, উম্মুল মুমিনীন জুয়ায়রিয়্যাহ বিনতে হারেস, হাসান, আহমাদ ইবনে হাম্বল, ইসহাক্ব, শাবী ও দাউদ জাহেরী এর মতামত।[1]
তাদের দলীল হলো:
عَنِ الْحَكَمِ بْنِ عَمْرٍو وَهُوَ الْأَقْرَعُ، أَنَّ النَّبِيَّ ﷺ نَهَى أَنْ يَتَوَضَّأَ الرَّجُلُ بِفَضْلِ طَهُورِ الْمَرْأَةِ
(১) হাকাম হতে বর্ণিত: নাবী কারীম (ﷺ) মহিলাদের ব্যবহারের অতিরিক্ত পানি দ্বারা পুরুষদের ওযূ করতে নিষেধ করেছেন।[2]
عَنْ حُمَيْدٍ الْحِمْيَرِيِّ، قَالَ: لَقِيتُ رَجُلًا صَحِبَ النَّبِيَّ ﷺ أَرْبَعَ سِنِينَ، كَمَا صَحِبَهُ أَبُو هُرَيْرَةَ، قَالَ: نَهَى رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ أَنْ تَغْتَسِلَ الْمَرْأَةُ بِفَضْلِ الرَّجُلِ، أَوْ يَغْتَسِلَ الرَّجُلُ بِفَضْلِ الْمَرْأَةِ ، زَادَ مُسَدَّدٌ: «وَلْيَغْتَرِفَا جَمِيعًا»
(২) হুমায়েদ আল-হিময়ারী হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: আমি এমন এক ব্যক্তির সাথে সাক্ষাৎ করি, যিনি চার বছর যাবৎ রাসূলুলাহ (ﷺ) এর খেদমতে ছিলেন- যে ভাবে আবূ হুরাইরা রাসূলের খেদমত করতেন। তিনি বলেন: রাসূল (ﷺ) মহিলাদেরকে পুরুষদের অতিরিক্ত পানি দ্বারা গোসল করতে নিষেধ করেছেন এবং একইভাবে পুরুষদেরকে মহিলাদের ব্যবহারের অতিরিক্ত পানি দ্বারা গোসল করতে নিষেধ করেছেন। মুসাদ্দাদ এর সঙ্গে যোগ করেছেন যে, নারী-পুরুষ একসাথে একই পাত্র হতে হাত দিয়ে পানি উঠানো নিষেধ।[3]
عَنْ عَلِيٍّ، قَالَ: كَانَ النَّبِيُّ ﷺ وَأَهْلُهُ يَغْتَسِلُونَ مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ، وَلَا يَغْتَسِلُ أَحَدُهُمَا بِفَضْلِ صَاحِبِهِ
(৩) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণিত: রাসূল (ﷺ) এবং তার পরিজন একই পাত্রে গোসল করতেন। তবে তাদের একজন অপরজনের উদ্বৃত্ত পানি দিয়ে গোসল করতেন না।[4]
২য় অভিমত: মহিলাদের ব্যবহৃত, অতিরিক্ত পানি দ্বারা পুরুষের পবিত্রতা অর্জন বৈধ। এটা উমার, আবূ হুরাইরা, আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস, ইবনে উমার, সা’দ ইবনে আবি ওয়াক্কাহসহ সালফে সালেহীনের একটি দলের অভিমত। আবূ ওবাইদ ও ইবনুল মুনযিরও এ মতামত ব্যক্ত করেছেন। এটা ইমাম আবূ হানীফা, মালিক ও শাফেঈ (রাহি.) এর মাযহাব। একটি বর্ণনা মতে আহমাদও এ মতামত ব্যক্ত করেছেন।[5] তাদের দলীল হলো:
عنابْنَ عَبَّاسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللهِ ﷺ كَانَ يَغْتَسِلُ بِفَضْلِ مَيْمُونَةَ
(১) আবদুলাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেছেন, রাসূল (ﷺ) তার স্ত্রী মাইমূনাহ এর গোসলের পর অবশিষ্ট পানি দিয়ে গোসল করতেন।[6]
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ، قَالَ: اغْتَسَلَ بَعْضُ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ ﷺ فِي جَفْنَةٍ، فَجَاءَ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِيَتَوَضَّأَ مِنْهَا أَوْ يَغْتَسِلَ، فَقَالَتْ: لَهُ يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنِّي كُنْتُ جُنُبًا؟ فَقَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ الْمَاءَ لَا يُجْنِبُ
(২) ইবনে আব্বাস (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: একদা নাবী কারীম (ﷺ) এর কোন এক স্ত্রী বড় একটি পাত্রের পানি দ্বারা গোসল করছিলেন। এমতাবস্থায় নাবী করীম (ﷺ) সেখানে ওযূ অথবা গোসল করার জন্য আগমন করলেন। তখন তিনি (পত্নী) বললেন: ইয়া রাসূলুলাহ! আমি অপবিত্র ছিলাম। জবাবে রাসূল (ﷺ) বললেন: নিশ্চয়ই পানি অপবিত্র হয় না।[7]
عَنْ عَائِشَةَ قَالَتْ: «كُنْتُ أَغْتَسِلُ أَنَا وَالنَّبِيُّ ﷺ مِنْ إِنَاءٍ وَاحِدٍ كِلاَنَا جُنُبٌ وفى رواية نَغْتَرِفُ مِنْهُ جَمِيعًا
(৩) আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আমি ও নাবী জানাবাত অবস্থায় একই পাত্র থেকে পানি নিয়ে গোসল করতাম । অপর এক বর্ণনায় রয়েছে, আমরা অঞ্জলিপূর্ণ করে তা থেকে একই সাথে পানি নিতাম।[8]
বিশুদ্ধ মতামত:
যারা ১ম মতামত অনুযায়ী মহানাবী (ﷺ) এর সাথে চার বছর অবস্থান করা ব্যক্তির হাদীসকে সঠিক মনে করেন, তাদের সে হাদীসের ব্যাপারে ইমাম বাইহাক্কী নেতি বাচক দৃষ্টি ভঙ্গি প্রকাশ করেছেন এবং ২য় অভিমতটিকে প্রাধান্য দিয়েছেন। দু’ভাবে এ দলীলগুলোর মাঝে সমতা আনয়ন করা সম্ভব:[9]
(১) নিষেধাজ্ঞার হাদীসগুলোকে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ থেকে ঝড়ে পড়া পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনে করবে। আর জায়েযের হাদীসগুলোকে পাত্রে অবশিষ্ট থাকা পানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য মনে করবে। ইমাম খাত্ত্বাবী এ ভাবেই সমাধান দিয়েছেন।
(২) দু’টি বৈধ হওয়া সত্ত্বেও সতর্কতার জন্য নিষেধাজ্ঞার বিধান দেয়া হয়েছে।
আমার বক্তব্য: সম্ভবতঃ ২য় অভিমতটিই উত্তম। আল্লাহ্ই সর্বাধিক অবগত।
[2] আইম্মায়ে কেরাম এর ত্রম্নটি বর্ণনা করেছেন; আবূ দাউদ (৮২) তিরমিযী (৬৪), নাসাঈ (১/১৭৯), ইবনে মাজাহ (৩৭৩), আহমাদ (৫/৬৬) ইমাম বুখারী, দারাকুত্বনী ও নববী এর ত্রম্নটি বর্ণনা করেছেন। কিন্তু ইবনে হাজার আসকালানী ও আলবানী একে সহীহ আখ্যা দিয়েছেন। আল-ইরওয়া (১/৪৩)।
[3] এ হাদীসের সনদ সহীহ; আবূ দাউদ (৮০), নাসাঈ (১/১৩০) বাইহাকী (১/১৯০)।
[4] যঈফ; ইবনে মাজাহ (১/১৩৩)।
[5] মুসান্নাফ আঃ রাযযাক (১/১১০), ইবনে আবী শায়েবাহ (১/৩৮) আল-আউসাত্ব (১/২৯৭), আবু উবাইদ এর আত্ম-ত্বাহুর (২৩৬) আল মাসবূত্ব (১/৬১), আল-উম্ম (১/৮), আল-মুগনী (১/২৮৩)।
[6] সহীহ; এর তাহক্বীক পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে।
[7] আবূ দাউদ (৬৮), তিরমিযী (৬৫), নাসাঈ (১/১৭৩) ইবনে মাজাহ (৩৭০), কতিপয় উলামা সিমাক এর ইকরামার সূত্রে বর্ণিত বেওয়ায়াত এর ত্রম্নটি বর্ণনা করে। এ রেওয়ায়াতটিকে ‘মুযতারিব’ আখ্যা দিয়েছেন। কিন্তু হাফেয ইবনে হাজার আসকালানী তাঁর ফাতহুলবারী গ্রন্থে এ মমত্মব্যকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। কেননা শু’বা তার থেকে রেওয়ায়াত করেছেন। এছাড়া তিনি তার ওসত্মাদদের বর্ণিত হাদীসকে সহীহ মনে করেন। (আলস্নাহই অধিক অবগত)।
[8] সহীহ; বুখারী (২৯৯), মুসলিম (৩২১)।
[9] ফতহুল বারী (১/৩০০), সুবুলস সালাম (১/২৮), নাসলুল আওতার (১/২৬)।